সপ্তর্ষি আলিবাবা চল্লিশ চোরের ডেরায় যখন ঢুকছে, তখন মর্জিনা না এসে পারে। সে কৌতূহলী হয়ে পাশ ফিরে তাকাতেই চাঁপাফুলের গন্ধ ভেসে এল।
না, এ তো মর্জিনা নয়। মর্জিনা হলে ঘাঘরা পরা মাথায় ফেট্টি বাঁধা থাকত, রেশমি কালো ওড়নায় মুখ ঢাকা থাকত! গালে টোল ফেলে মুচকি হাসির ঝিলিক মেরে যে দাঁড়িয়ে আছে, তার পরনে সবুজ রঙের জর্জেট শাড়ি। ওকে দেখে সপ্তর্ষির ফুলদির কথা মনে পড়ে গেল… “তোর দ্বিতীয় প্রেমটা সুখের হবে।”
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, বলে সপ্তর্ষি মহিলাটির হাত থেকে সানগ্লাসটা নিল আর ঠিক তখনই তার শরীরে মহিলার ফুলের মতো নরম হাতের ছোঁয়ায় বিদ্যুৎ তরঙ্গ খেলে গেল। এই শপিং মলটার বিশেষত্ব হল যে-কোনও জিনিস মার্কেট প্রাইসের চেয়ে কিছু কম অথচ খাঁটি । একটা হ্যান্ড ট্রলি টেনে নিয়ে পা বাড়াতেই আবার ভেসে এল সেই সুন্দরী মহিলাটির মিঠে কণ্ঠস্বর, ‘এক্সকিউজ মি, আমাকে একটা জেন্টস পারফিউম পছন্দ করে দেবেন?’ একটু পর সে আবার বলল, ‘আমি একজনকে প্রেজেন্ট করব। আসলে আমি জেন্টস পারফিউম ঠিক পছন্দ করতে পারি না।’
সপ্তর্ষি যে পারফিউম বিশেষজ্ঞ, সেটা মহিলাটি জানল কীভাবে? ও কি অন্তর্যামী? এটা ঠিক যে সপ্তর্ষি পারফিউমের ব্যাপারে খুব সিরিয়াস। মনপসন্দ না হলে কেনে না। দুনিয়ার সব পারফিউম তার ড্রেসিং টেবিলে জড়ো করা থাকে, একই সেন্ট সে সবসময় ব্যবহার করে না। সাত দিনে সাতরকম পারফিউম ব্যবহার না করলে তার চলে না। সে কারণে পাড়ার বন্ধুরা তাকে ‘পারফিউম ম্যান’ বলে ডাকে।
সপ্তর্ষি তাকে পারফিউমের র্যাক-এর সামনে নিয়ে এসে বলল, “আমার পছন্দ করা পারফিউম যদি আপনার সেই একজনের পছন্দ না হয় ?” –আমার বিশ্বাস, আপনার চয়েস খারাপ হবে না।
কীভাবে বুঝলেন?
—আপনার টি শার্টের গন্ধ।
কথা শুনে সপ্তর্ষি চড়া মেক-আপ করা মহিলাটির কাজল টানা চোখের নীল মণির দিকে তাকাল। বাঙালি মহিলার চোখের রং নীল? সত্যি ভাবা যায় না। মনে হয় সে তার হরিণীর মতো চোখ দু’টোকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য নীল রঙের লেন্স ব্যবহার করেছে। সেই সঙ্গে মনে হয় কোনও সূক্ষ্ম চুমকি বসিয়েছে তার নীল নয়নের মণিতে। যে চুমকির টানে সপ্তর্ষি এক্কেবারে ফিউজড। সাধারণত অচেনা মহিলার সঙ্গে সেধে কথা বলে না সে, তা সে যতই অপ্সরা হোক। কিন্তু এখন সে মনে মনে না বলে পারল না, ‘৫০০ বছর আগে আমি যদি সম্রাট আকবর হতাম, তা হলে ১০০০ স্বর্ণ মুদ্রা দিয়ে তোমাকে কিনে নিতাম।’
সপ্তর্ষিকে বিড়বিড় করতে দেখে মহিলাটি আরও কাছে সরে এসে বলল, “কিছু বলছেন?’
আপনাকে ঠিক ‘জোধা আকবর’ ছবির ‘জোধাবাই’ ঐশ্বর্য রাইয়ের মতো দেখতে। শুধু ঐশ্বর্য রাই ফরসা আর আপনি শ্যামাঙ্গী ব্ল্যাক ভেনাস,’ বলে সপ্তর্ষি মেয়েটির উন্নত স্তনচূড়া থেকে একটু সরে দাঁড়াল।
থ্যাংক ইউ ফর ইয়োর কমপ্লিমেন্ট। আর আমার নামটাও দারুণ দিয়েছেন, ‘ব্ল্যাক ভেনাস’।
—আপনাকে যদি ‘ভেনাস’ বলে ডাকি, কিছু মনে করবেন না তো?
—কিছু মনে করব না।
এরই মধ্যে হঠাৎ লোডশেডিং হওয়ায় ঝুপ করে নেমে এল অন্ধকার। শপিং মলের ক্রেতাদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়ে গেল। কর্মচারীরা ব্যস্ত হয়ে পড়ল থরে থরে সাজানো র্যাকের জিনিস সামলাতে।
যদিও কেউ লোডশেডিংয়ের সুযোগে র্যাক থেকে জিনিস হাতিয়ে গেটের সামনে দাঁড়ানো ইউনিফর্ম পরা বন্দুকধারী কর্মচারীর চোখে ধুলো দিয়ে পালাতে পারবে না। তবু সাবধানের মার নেই। সপ্তর্ষি হঠাৎ অনুভব করল মেয়েটির স্তনচূড়া যেন ধারালো তলোয়ার হয়ে তার বুক এফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, ওর একটা নরম উষ্ণ কোমল হাত উঠে এসেছে তার হাতের উপর।
—ভেনাস, আপনার গরম লাগছে? একটু অপেক্ষা করুন। এখনই জেনারেটর চালু হয়ে যাবে, সপ্তর্ষি মেয়েটির স্তনচূড়ার চকিত স্পর্শে রোমাঞ্চিত হয়ে বলল।
মহিলাটি ফিসফিস করে জলতরঙ্গের সুরে বলল ‘একটুও না। আচ্ছা, আজ অষ্টমীতে কী করছেন? চলুন না, সাউথ ক্যালকাটায় ঠাকুর দেখতে। অবশ্য যদি আপনার কোনও গার্লফ্রেন্ড থাকে, তা হলে আমার কিছু বলার নেই।”
(ক্রমশ…)