ঘরের ভেতরের সাজসজ্জা যাতে একঘেয়ে না লাগে, তার জন্য অনেকেই চান অন্দরসজ্জায় কিছু পরিবর্তন আনতে। বিশেষকরে যারা কিছুটা শৌখিন, তারা বদলাতে চান ঘরের সাজ। আর এই সাজ বদলের বিষয়টি নিয়ে অনেককে তো আবার চিন্তিত থাকতেও দেখা যায়। কোথায় কী পরিবর্তন করবেন, কী পরিবর্তন করলে দৃষ্টিনন্দন হবে, এর জন্য কত খরচ হবে, প্রভৃতি বিষয় নিয়ে ভাবনা শুরু হয়ে যায় নতুন বছর শুরু হওয়ার এক-দু’মাস আগে থেকেই।
বৈঠকখানা বা বসার ঘরের ডেকোরেশন নিয়ে বেশিরভাগ মানুষকেই আগাম প্ল্যান করতে দেখা যায়। কারণ বহিরাগত অতিথিদের জন্য যেহেতু বসার ঘরটি বরাদ্দ থাকে, তাই এই বসার ঘর বা ড্রয়িং রুমটির সৌন্দর্য বজায় রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন। এই প্রসঙ্গে একটি বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন — গৃহস্থের রুচি এবং আভিজাত্যের প্রতিফলন ঘটে ড্রয়িংরুমে। তাই বসার ঘরের সোফা, চেয়ার-টেবিল, অন্যান্য ফার্নিচার কিংবা জানলা-দরজার পর্দা বদলে নতুন রূপ দিতে চান শৌখিন মানুষেরা। তাই আপনজনের সঙ্গে আলোচনা পরামর্শ করে পরিবর্তন আনুন অন্দরসজ্জায়।
গৃহসজ্জায় কীভাবে এবং কতটা বদল আনলে অতিথিরা আপনার রুচি ও সৃজনশীলতার প্রশংসা করবেন, তা জেনে নেওয়া আবশ্যক। সেইসঙ্গে, কতটা কম খরচে অন্দরসজ্জায় পরিবর্তন এনে আপনার মনের ইচ্ছে পূরণ করতে পারবেন, সেই বিষয়ে আপনার জন্য রইল গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ।
ড্রয়িংরুম-ডেকর
ফ্যাশনের মতো, অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জারও পরিবর্তিত করা উচিত প্রতি বছর। মনে রাখা দরকার যে, বসার ঘরটি হল কেন্দ্রবিন্দু। এখন সহজ এবং মার্জিতশৈলী পছন্দ করেন বেশিরভাগ মানুষ। বাড়ির আভ্যন্তরীণ সাজসজ্জার পরিবর্তন করতে চাওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। যেমন আমরা প্রতিদিন একই জিনিস দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পড়ি। যা আমরা আগে ভাবিনি, তেমনই কিছু পরিবর্তন করে অর্থাৎ কিছু আসবাবপত্রের স্থান পরিবর্তন করে কিংবা দেয়ালের রং পরিবর্তন করে ঘরের আভ্যন্তরীণ রূপ বদলে ফেলা যায়।
বাড়ির বসার ঘরের রূপ পরিবর্তন করতে হলে আপনাকে গাছপালা এবং ফুল দিয়ে সাজাতে হবে। কারণ প্রাকৃতিক আবহ সর্বদা পরিবেশকে আকর্ষণীয় করে তোলে।
প্রথমে, আপনার বাড়ির বসার ঘরের রং পরিবর্তন করুন বছর শুরুর আগেই। হালকা নীল, হালকা সবুজ এবং ফ্যাকাশে হলুদের প্যাস্টেল শেড ব্যবহার করতে পারেন। রং হয়ে গেলে ওয়াল হ্যাঙ্গিং-সহ কিছু বেতের ফ্রেম ঝুলিয়ে রাখুন দেয়ালে এবং কয়েকটি সস্তা ফ্লোর ল্যাম্পের সঙ্গে একাধিক স্ট্রিং লাইট যুক্ত করুন। অ্যাকসেন্ট লাইট, স্ট্রিং লাইট, এলইডি লাইট, বিভিন্ন রঙের বাল্ব, লকেট লাইট, ঝাড়বাতি, টেবিল ল্যাম্প, ফ্লোর ল্যাম্প এবং সিলিং লাইট সমান পরিমাপের ব্যবহার করুন। আপনার বাড়ির নকশার থিমের উপর ভিত্তি করে এমন লাইট ব্যবহার করুন, যা আপনার ঘরকে আলোকিত করবে এবং নান্দনিকতাও বজায় রাখবে। এর জন্য কান্ট্রি এবং রেট্রো ল্যাম্পশেড স্ট্রিং লাইট ব্যবহার করতে পারেন।
বসার ঘরের দেয়ালের রং এবং মাপ অনুযায়ী মানানসই সোফা সেট রাখুন। সঙ্গে ম্যাচ করে রাখুন কুশন। যদি দুটো সোফা থাকে, তাহলে ওই দুটো সোফার মাঝখানে রাখতে পারেন বাহারি ল্যাম্প শেড। এছাড়া ড্রইং রুম-এর যে-কোনও কোণ-এ রাখতে পারেন কোনও পাতাবাহার গাছ। মেঝেতে লাল কিংবা নীল রং-এর কার্পেট বিছিয়েও বসার ঘরের ভোল বদলে দিতে পারেন অনায়াসে।
বসার ঘরে গাছ রাখার জন্য ব্যবহার করতে পারেন পিতলের পাত্র কিংবা টেরাকোটার পাত্র। রাখতে পারেন ফিশ অ্যাকোয়ারিয়াম। যদি বেশি জায়গা থাকে তাহলে বিদ্যুৎ চালিত কৃত্রিম ঝরনার ব্যবস্থাও করতে পারেন। এতে ঘরের শোভা যেমন বাড়বে, ঠিক তেমনই পজিটিভ এনার্জিও তৈরি হবে ঘরে।
বসার ঘরের সেন্টার টেবিলটিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, অতিথিকে চা কিংবা খাবার দেওয়ার জন্য এটি যেমন ব্যবহার করবেন, ঠিক তেমনই আপনার নিজের নানারকম কাজেও ব্যবহার করতে পারবেন। তাই সেন্টার টেবিলটির রূপও যেন সুন্দর হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। কাঠ এবং কাচ দিয়ে তৈরি সেন্টার টেবিলই এক্ষেত্রে ব্যবহার করা ভালো। আর বসার ঘরের জানলার পর্দা ব্যবহারেও যত্নশীল হবেন। কারণ পুরো ঘরের সৌন্দর্যের অনেকটাই নির্ভর করবে এই পর্দার উপর। ঘরের রং-এর সঙ্গে মানানসই রং-এর পর্দা কিনে এনে ব্যবহার করুন। তবে যে রং-এর পর্দাই ব্যবহার করুন না কেন, বসার ঘরে যদি নেটের পর্দা ব্যবহার করেন, তাহলে বেশি ভালো লাগবে। এই নেটের পর্দাগুলো দেখতে যেমন ভালো লাগবে, ঠিক তেমনই আলো-বাতাসও ঢুকবে।
ডাইনিং-ডেকর
মনে রাখবেন, ডাইনিং-এর প্রধান ফার্নিচার হল ডাইনিং-টেবিল এবং চেয়ার। আজকাল রট আয়রন, পিভিসি ও স্টিলের নানারকম ডাইনিং সেট পাওয়া যায়। জায়গা অনুযায়ী গোল টেবিল সেট কিনে নিতে পারেন। তবে লক্ষ্য রাখবেন ডাইনিং টেবিল রাখার পর চেয়ার রাখার জন্য যেন ভালোমতো জায়গা থাকে। ডাইনিং এরিয়ার সাইডে একটি ফোল্ডিং সেলফ এবং কিচেন ট্রলি রাখার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা বরাদ্দ করুন। একটা এক্সট্রা ছোটো টেবিলও রাখতে পারেন ডাইনিং এরিয়ায়। এতে রান্নাঘর থেকে খাবার এনে ওই টেবিলের উপর রাখতে পারবেন।
ডাইনিং এরিয়ায় একটি ঝুলন্ত লাইট (পেনডেন্ট লাইট) ব্যবহার করতে পারেন। এতে ডাইনিং রুম-এর শোভা বাড়িয়ে তুলবে। দেয়ালে কিছু ছবি লাগাতে পারেন। তবে যদি একাধিক ছবি ব্যবহার করেন তাহলে তা সরলরেখা বরাবর রাখবেন। ফল কিংবা সবজির ছবি ল্যামিনেশন করে ব্যবহার করতে পারেন দেয়ালে।
কিচেন-ডেকর
কিচেনে বাড়তি জিনিস থাকলে তা সরিয়ে ফেলুন। নতুন বছরে কিচেনকে ছিমছাম এবং পরিচ্ছন্ন রূপ দিন। কিচেন স্টোরেজ-এ বাসনপত্র সাজিয়ে রাখুন ঠিক ভাবে। সহজেই যাতে বাসনপত্র বের করা যায় কিংবা ব্যবহারের পর আবার সহজেই রাখা যায়, সেইমতো শেলফ ব্যবহার করুন। বাজারে খুব কম দামে আজকাল পিভিসি স্টোরেজও পাওয়া যায়। আপনি এক্ষেত্রে ওপেন স্টোরেজও ব্যবহার করতে পারেন। এই ওপেন স্টোরেজ-এর দামও খুবই কম। যদি একাধিক শেলফ ব্যবহার করেন, তাহলে সবক’টি শেলফ-এর রং যেন একই হয় এবং তা যেন ঘরের রং-এর সঙ্গে মানানসই হয়।
বেডরুম-ডেকর
যদি পরিকল্পনা মাফিক বেডরুম না সাজানো থাকে, তাহলে বেডরুম-এর সৌন্দর্য যেমন নষ্ট হবে, ঠিক তেমনই মানসিক শাস্তিও বিঘ্নিত হবে। মনে রাখবেন, শোয়ার ঘরটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সারাদিন পরিশ্রমের পর শরীর-মনের আরাম একান্ত ভাবেই জরুরি। তাছাড়া শোয়ার ঘরের নান্দনিকতা আপনাকে আরও রোমান্টিক করে তুলবে। তাই ভালো মানের খাট ব্যবহার করুন এবং সেই মতো বিছানা পাতুন। প্রতিদিন বদলে ফেলুন বেডকভার
শোয়ার ঘরে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা যেমন রাখবেন, ঠিক তেমনই এমন আলোও রাখবেন, যা আলো-আঁধারি ব্যালেন্স করে সুন্দর এক আবহ তৈরি করবে। আর এরই পাশাপাশি, শোয়ার ঘরের দেয়ালটাকেও সাজিয়ে তুলুন সুন্দর কিছু পেইন্টিং দিয়ে। ঘরের কোণে সুন্দর টবে রাখতে পারেন গ্রিন প্ল্যান্ট। আর বেডরুম-এর সিলিং ফ্যানটাও যেন সুন্দর দেখতে হয়। এয়ারকন্ডিশনার থাকলে তা অবশ্যই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।
স্পেশাল টিপ্স
- বাড়িতে পোষ্য থাকলে ওদের জন্য সুন্দর ভাবে থাকা-খাওয়া এবং শোওয়ার ব্যবস্থা রাখুন। এতে পরিচ্ছন্নতা এবং নান্দনিকতা বজায় থাকবে
- জুতো রাখার জন্য সুন্দর ব্যবস্থা করুন। তবে যেখানেই জুতোর তাক করুন-না কেন, তা যেন ঢাকা থাকে
- ড্রয়িং রুমে ফিশ অ্যাকোয়ারিয়াম রাখলে, সুন্দর দেখতে মাছ রাখুন সেখানে। নিয়ম মতো জল বদলান অ্যাকোয়ারিয়াম-এর। এতে সৌন্দর্য বজায় থাকবে
- বসার ঘরে ব্যবহার করুন ডিজাইনার কুশন
- যদি পিতলের টব না কিনতে পারেন বেশি দামের জন্য, তাহলে মাটির হাঁড়ি কিংবা কলসি কিনে নিজেই তেল রং দিয়ে সুন্দর রূপ দিয়ে তা গাছ লাগানোর টব হিসাবে ব্যবহার করুন
- বসার ঘরে ব্যবহার করুন বড়ো মিরর। আর সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলতে, ওই মিরর-এর চারপাশে ভালো আঠা দিয়ে লাগিয়ে দিন শামুক কিংবা ঝিনুকের খোল
- ঘরে প্লাস্টিকের ফুল গাছ থাকলে তা মাঝেমধ্যে অবশ্যই সাবান দিয়ে ওয়াশ করে রাখবেন।