সম্প্রতি সুন্দর এক আন্তর্জাতিক নৃত্য-উৎসব উপভোগ করল কলকাতাবাসী। কলকাতার আইসিসিআর-এর সহযোগিতায়, এই ৬ষ্ঠ ‘রুক্মিণী দেবী অরুন্দালে আন্তর্জাতিক নৃত্য উৎসব’-টির আয়োজন করেছিল ‘সর্বাণী-অজন্তা কলাসঙ্গম’। ভারতীয় এবং অনাবাসী ভারতীয় শিল্পীদের নিয়ে আইসিসিআর-এ আয়োজিত হয় এই নৃত্য-উৎসব। ভরতনাট্যম, ওড়িশি, কত্থক, মণিপুরি, শাস্ত্রীয়নৃত্য এবং রবীন্দ্রনৃত্য সহ বিভিন্ন ধরনের নৃত্য পরিবেশিত হয়েছে উৎসবে এবং একক, দ্বৈত ও সমবেত ভাবে নৃত্য পরিবেশন করে মোট ১৫-টি গ্রুপ।
‘রুক্মিণী দেবী অরুন্দালে আন্তর্জাতিক নৃত্য উৎসব’-এর প্রতিষ্ঠাতা, কুচিপুডি এবং ভরতনাট্যম নৃত্যশিল্পী সর্বাণী ঘোষ এই বছর কলকাতায় নৃত্য উৎসব নতুন করে শুরু করেছেন। এবারের উৎসব তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছিল, কারণ, সর্বাণী ঘোষ তাঁর শ্রদ্ধেয় গুরু ভরতনাট্যম নৃত্যশিল্পী পদ্মবিভূষণ ড. যামিনী কৃষ্ণমূর্তিকে এই অনুষ্ঠানে আন্তরিক শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। উল্লেখ্য, এই অনুষ্ঠানের মাত্র এক সপ্তাহ আগে, গত ৩ আগস্ট, ২০২৪-এ মারা গিয়েছেন ড. যামিনী কৃষ্ণমূর্তি।
ড. যামিনী কৃষ্ণমূর্তি`র সঙ্গে সর্বাণী ঘোষের সম্পর্ক ছিল তাঁর নৃত্যশিল্প যাত্রার একটি বিশেষ সময় জুড়ে, যেখানে তিনি কিংবদন্তি এই নৃত্যশিল্পী`র কাছে ছয় বছর ধরে প্রশিক্ষণ নেবার সুযোগ পেয়েছিলেন। এই মেন্টরশিপ কেবলমাত্র সর্বাণী`র দক্ষতাকেই বাড়িয়ে তোলেনি, বরং তাঁর মধ্যে থাকা শিল্পীগুণ ও সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আরও বেশি করে সমৃদ্ধ করেছে বলে মনে করেন সর্বাণী।
সিলেকশন কমিটি দিল্লি, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ এবং মুম্বই থেকে প্রতিভাবান শিল্পীদের এবং সেইসঙ্গে জার্মানির একজন বিশিষ্ট পারফর্মারকে তাঁদের পারফর্মেন্স এবং নৃত্যশিল্প ক্ষেত্রে অবদানের ভিত্তিতে বেছে নিয়েছিল। যদিও এই অনুষ্ঠানের জন্য নিউ ইয়র্ক থেকে প্রতিভাবান কত্থক নৃত্যশিল্পী বরখা প্যাটেলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল কিন্তু ব্যক্তিগত কারণে তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি বলে জানানো হয়েছে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে।
‘সর্বাণী-অজন্তা কলাসঙ্গম’-এর শিক্ষার্থীদের বিষ্ণু স্তূতি-র মাধ্যমে উৎসবের সূচনা হয়েছিল। এই বিষ্ণু স্তূতি-র প্রিমিয়ার হয়েছিল লন্ডন-এর নেহেরু সেন্টার-এ(ভারতীয় হাই কমিশন)।এরপর অসমের জনপ্রিয় শিল্পী তটিনি দাস সমবেত শাস্ত্রীয় নৃত্য পরিবেশন করেন এবং দিল্লি থেকে আসা অনসূয়া ও তাঁর গ্রুপের সদস্যরা ওড়িশি নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে সাফল্যমণ্ডিত করে তুলেছিল নৃত্যানুষ্ঠানটিকে।
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য পরিবেশনার মধ্যে ছিল সংগীত-নাটক আকাদেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত ডক্টর শ্রুতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্যা সোমভা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর মণিপুরি নৃত্য পরিবেশনা। সমিতা দাশগুপ্ত এবং অর্ণব বন্দ্যোপাধ্যায়ের জুটি তাঁদের ওড়িশি নৃত্য পরিবেশন করে দর্শকদের মুগ্ধ করেছিলেন।
‘মনোরথ গ্রুপ’-টি সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাজের ওপর একটি সূক্ষ্ম গবেষণা-ভিত্তিক নৃত্য পরিবেশন করে। এছাড়াও শিল্পী মহুল মুখোপাধ্যায় একটি সুন্দর ভরতনাট্যম ট্রায়ো পরিবেশন করেছেন।
প্রবীণ নৃত্যশিল্পী নন্দিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁর ভরতনাট্যম নিয়ে মঞ্চে উপস্থিত হয়েছিলেন। তরুণ ও প্রতিভাবান শিল্পী সৌরমি মুখোপাধ্যায় এবং লাবণ্য ওড়িশি নৃত্য পরিবেশন করেন এবং শর্মিলা বিশ্বাসের শিষ্য কৌশিক দাস একটি মনোমুগ্ধকর একক ওড়িশি নৃত্য পরিবেশন করেন।
রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার ড. কাবেরী সেন তাঁর গ্রুপ-এর সঙ্গে ওড়িশি নৃত্য পরিবেশন করেন। পাশাপাশি, পশ্চিমবঙ্গের কত্থক নৃত্যশিল্পী ড. মানব পারাই তাঁর গ্রুপ নিয়ে পরিবেশন করেন কত্থক।
এছাড়াও, আঙ্গিক পারফর্মিং আর্টস পরিবেশন করে সীতার স্বয়ম্ভর সভা। বেহালা শান্তিনিকেতন ডান্স আকাদেমি, বিম্ববতি দেবির শিষ্যরা, গুরু রীনা জানার শিষ্যরা, সুচেতা সরকার, শুভদীপা দে, শর্মিলা বিশ্বাস-এর শিষ্য কৌশিক দাস এবং ‘মনোরথ’-এর পরিচালক ড. ইলিয়া দাস মুখোপাধ্যায়-এর রবীন্দ্রনৃত্য ‘ঐক্য’ সাফল্যমণ্ডিত করে তুলেছিল অনুষ্ঠানটিকে।