আমাদের শরীরের সৌন্দর্যের অন্যতম অংশ চুল। তাই চুল বাঁচানোর চেষ্টা করা উচিত। বৃষ্টির জল ক্ষারযুক্ত এবং দূষিত হয়। তাই যদি মাথার চুল ভিজে যায় বৃষ্টির জলে, তাহলে তখনই উপযুক্ত ব্যবস্থা এবং যত্ন না নিলে, চুলের ক্ষতি হতে পারে। কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করে কীভাবে চুলের স্বাস্থ্যরক্ষা করবেন, সেই বিষয়ে জেনে নিন বিশদে।

O বৃষ্টির জলে মাথার চুল ভিজে গেলে, বাড়ি ফিরে প্রথমে ভালো জলে চুল ধুয়ে নিন

O চুলের রং এবং স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য কালারসেভ শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করুন

O চুল ওয়াশ করার পর ভালো ভাবে শুকিয়ে নিন

O শুকনো চুলে হালকা ভাবে নারকেল তেলের প্রলেপ দিয়ে এক রাত্রি কিংবা কয়েক ঘণ্টা রেখে আবার ভালো শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন। এতে চুল নরম এবং স্বাস্থ্যোজ্জ্বল থাকবে।

ঘরোয়া উপায়

এগ মাস্ক: ডিমের সাদা অংশের সঙ্গে এক চা-চামচ মধু মিশিয়ে চুলে লাগান ভালো ভাবে। তিরিশ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন।

কোকোনাট মিল্ক: ডাবের হালকা শাঁসের সঙ্গে গোলমরিচের গুঁড়ো এবং মেথিদানার গুঁড়ো মিশিয়ে মাথার চুলে মাখুন। কুড়ি মিনিট বাদে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।

গ্রিন টি: দু’প্যাকেট গ্রিন টি গরম জলে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর ওই জল ঠান্ডা হলে, ধীরে ধীরে স্কাল্প-এ মাসাজ করুন। এক ঘণ্টা পর চুল ধুয়ে নিন।

ওনিয়ন অ্যান্ড আমলা: দু’টেবিল চামচ ছোটো পেঁয়াজের রসের সঙ্গে এক চা-চামচ আমলকীর রস মিশিয়ে চুলের গোড়ায় লাগান। তিরিশ মিনিট বাদে শ্যাম্পু করে নিন।

তেলে উপকার

বর্ষাকালে মাথার চুলে তেল মাখা নিয়ে নানা জনের নানা মতামত আছে। অনেকেই এই সময় চুলে তেল মাখতে চান না। কারণ তাঁরা মনে করেন এই সময় চুল এমনিতেই ভেজা ভেজা বা ড্যাম্প থাকে, তাই তেলের আর দরকার নেই। এই ধারণা ভুল। বলাই বাহুল্য আমরা মাথায় যত রকমের তেল মাখি, তার মধ্যে কোকোনাট অয়েল-এর ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। নারকেল তেল কেন এত জনপ্রিয় জানেন? কারণ এই তেলে আছে অপরিহার্য ফ্যাটি অ্যাসিড, প্রোটিন ইত্যাদি। এগুলো আপনার স্ক্যাল্পে পুষ্টি জোগাবে এবং চুল গোড়া থেকে মজবুত করবে। বর্ষাকালে চুল নির্জীব ও ফ্রিজি বা জট পাকানো হয়ে যায়। প্রতিদিন নারকেল তেল মাখলে এই সমস্যা থাকবে না।

এছাড়া ব্যবহার করতে পারেন আমন্ড অয়েল। আমন্ড অয়েলে আছে ভিটামিন ‘ই’। এই তেল স্ক্যাল্পে মাসাজ করলে হেয়ার ফলিকল মজবুত হয় এবং শুষ্ক চুলে আর্দ্রতা আসে। আর্দ্রতা বজায় থাকলে চুল শুষ্ক হওয়ার সমস্যাও আর হয় না। এই তেলের সঙ্গে সামান্য একটু অলিভ অয়েল মিশিয়ে মাসাজ করলে আরও ভালো ফল পাবেন।

দূষণ

ধুলো, ধোঁয়ার সঙ্গে যুঝতে যুঝতে চুল হয়ে পড়ে প্রাণহীন। এই অবস্থায় চুলের জৌলুশ ফেরাতে প্রয়োজন কিছু বাড়তি যত্নের, যা আপনার চুলের নানা সমস্যায় সমাধানের পথ করে দেবে। চুলের শুষ্কতা কিংবা ডগা ফেটে যাওয়ার সমস্যা দূর করবে। চুল পড়া থামাবে। নতুন চুল গজাতেও সুফলদায়ী হবে।

দিন বদলালেও লম্বা ঘন চুলের ক্রেজ কখনও ফুরোয় না। কিন্তু সমস্যা হল লম্বা চুল মেনটেইন করা। নিত্যদিনের দৌড়ঝাঁপ, দূষণ, ঘাম, নোংরা— সবই চুলের জন্য ড্যামেজিং। তার উপর আমরা এখন প্রাকৃতিক উপাদানের বদলে কেমিক্যাল প্রোডাক্টস দিয়ে হেয়ার

কেয়ার-এর কথা ভাবি। এতে আখেরে ক্ষতি বাড়ে। চুলের ন্যাচারাল বিউটি, নরম ভাব, ঔজ্জ্বল্য— সবই আস্তে আস্তে হ্রাস পেতে থাকে। সুতরাং সময় থাকতে সচেতন হয়ে উঠুন। বেসিক জিনিস অর্থাৎ শ্যাম্পুটা এমন বায়ুন যাতে প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে। জেনে নিন কী উপাদান থাকলে তা চুলের জন্য উপকারী।

গ্রিন অ্যাপেল

গ্রিন অ্যাপেলে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, ফাইবার, প্রোটিন, পটাশিয়াম, আয়রন প্রভৃতি। গ্রিন অ্যাপেল খেলেও শরীরে যেমন প্রচুর উপকার মেলে, ঠিক তেমনই এই উপাদান যদি শ্যাম্পুতে থাকে, এতে চুল হয়ে ওঠে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল। গ্রিন অ্যাপেল এক্সট্র্যাক্ট আপনার মাথার স্ক্যাল্প পরিষ্কার করে দেয়। তাছাড়া এই এক্সট্র্যাক্ট-এ থাকা নিউট্রিয়েন্ট, চুলের বাড়তি তেল শুষে নেয় এবং চুল ফ্রেশ হয়ে ওঠে। এতে চুল ময়েশ্চারাইজ করারও কিছু তত্ত্ব থাকে, যার ফলে ড্যামেজ হওয়া চুল মেরামত হতে পারে। চুলে বাড়তি ভলিউম ও শাইন এনে দেয় গ্রিন অ্যাপেল-যুক্ত শ্যাম্পু।

অ্যালোভেরা

অ্যালোভেরায় আছে প্রোটোলিটিক, এনজাইমস যা স্ক্যাল্পের মৃত কোশ ঝরাতে সাহায্য করে। এছাড়া মাথার ত্বকে, চুলের গোড়ায় জমে থাকা ড্যানড্রাফ ও চুলকানি সারাতেও অব্যর্থ। অনেকে অ্যালোভেরাকে বেস্ট কন্ডিশনার-এর আখ্যাও দিয়ে থাকেন। অ্যালোভেরা ফর হেয়ার রিপিয়ার — তাই প্রমাণিত এক নিরাময়। অনেক সময়ই অতিরিক্ত কেমিক্যাল-যুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহারে চুলে যে-শুষ্কভাব চলে আসে, তা নিরাময়ের একমাত্র রাস্তা হয়ে দাঁড়ায় অ্যালোভেরা। চুলের হারানো আর্দ্রতা ফিরিয়ে দিয়ে নরম মোলায়েম করে তোলে এই প্রাকৃতিক উপাদানটি। এতে ফলিক অ্যাসিড আর ভিটামিন বি-১২ থাকার ফলে চুল পড়াও বন্ধ হয়।

চুলের সমস্যা

বর্ষায় চুলের অনেকরকম সমস্যার মধ্যে সব থেকে কমন হল চুলের আঠা ভাব, খুসকি এবং তৈলাক্ত চুল। আবহাওয়ায় আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকায় চুল হয়ে পড়ে প্রাণহীন এবং রুক্ষ। বর্ষায় তাপমাত্রা কমে যায় ঠিকই কিন্তু অসম্ভব হিউমিডিটি বেড়ে যাওয়াতে চুলের অবস্থাও খুব খারাপ হয়ে পড়ে। বর্ষার জলে ক্লোরিনের মাত্রা বেড়ে যাওয়াতে চুল ব্লিচ হয়ে যায় এবং এটা চুলের ক্ষতিও করে।

বর্ষার জলে চুল ভিজলে এই সমস্যাগুলো আরও বেড়ে যায়। তাই বৃষ্টিতে ভিজে গেলে অবশ্যই বাড়িতে এসে প্রথমেই শ্যাম্পু করে নেওয়া দরকার। হেয়ার কেয়ার-এর বিশেষ খেয়াল রাখা উচিত যাতে বৃষ্টিতে চুল সবসময় শুকনো থাকে এবং চুল ভিজে থাকলে সঙ্গে সঙ্গে তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছে নেওয়া উচিত। বর্ষায় লিভ-অন কন্ডিশনার চুলের জন্য ব্যবহার করতে পরামর্শ দেন ডার্মাটোলজিস্টরা।

বর্ষায় আর একটি সমস্যা হল প্রাণহীন, তৈলাক্ত, নেতিয়ে পড়া চুলের গুচ্ছ। চুল তৈলাক্ত হলে স্বভাবতই তা দেখতে খারাপ লাগে এবং এটি স্ক্যাল্পকেও রুক্ষ করে তোলে। এইরকম প্রাণবিহীন চুলে দরকার প্রতিনিয়ত শ্যাম্পু করা, যা চুলকে দেবে ভলিউম। বর্ষায় সবথেকে জরুরি হল চুল নিয়মিত পরিষ্কার রাখা।

চুল ম্যানেজেবল এবং উজ্জ্বল করে তোলার জন্য প্রত্যেকবার চুল ধোওয়ার পর সিরাম লাগানো প্রয়োজন। রোজ ব্যবহারের জন্য কী শ্যাম্পু বেছে নেবেন বিচার করা খুবই প্রয়োজন। যে-কোনও মাইল্ড পিএইচ ব্যালেন্সড শ্যাম্পু বর্ষাকালের জন্য সব থেকে ভালো। বর্ষায় চুল কীরকম থাকবে, তা অনেকটাই নির্ভর করে সঠিক শ্যাম্পু নির্বাচনের উপরে।

সপ্তাহে একদিন অন্তত হট অয়েল মাসাজ চুলের জন্য উপকারী। এতে স্ক্যাল্পে তেল ঢুকে চুলে পুষ্টি জোগাতে সাহায্য করে। রুক্ষ এবং ভঙ্গুর চুলকে তেল নতুন করে প্রাণোজ্জ্বল করে তোলে। চুল পড়ে যাওয়া অথবা ভেঙে যাওয়া আটকাতে তেলের অবদান অনেকটাই। মন এবং নার্ভাস সিস্টেম-কে রিল্যাক্স রাখতে এবং হেয়ার কেয়ার-এর জন্য তেল লাগানো খুবই প্রয়োজন।

এইক্ষেত্রে বাড়ির রূপচর্চাও কার্যকরী। যাদের চুল সাধারণ, তারা চুলে আম এবং মিন্ট একসঙ্গে পেস্ট বানিয়ে লাগালে উপকার পাবেন। এটা চুলে উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে এবং চুলকেও মসৃণ করে।

যাদের চুল খুব শুকনো, তাদের ৩টি পাকাকলা এবং মধু মিশিয়ে চুলে লাগালে এবং ৫০ মিনিট মতো চুলে লাগিয়ে রাখলে চুলের রুক্ষ ভাব চলে যাবে এবং চুল নরম হবে। যাদের চুল খুব তৈলাক্ত, তারা যদি স্ক্যাল্পে পুদিনার পেস্ট লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট রাখতে পারেন এবং তারপর শ্যাম্পু করে নেন তাহলে তৎক্ষণাৎ উপকার পাওয়া যাবে।

নিজেই পছন্দ করুন স্টাইল

নিজেই বেছে নিন কী ধরনের হেয়ার স্টাইল আপনাকে মানাবে এবং সঙ্গে আরামও দেবে। যদিও ছোটো চুলই বর্ষাকালের জন্য উপযুক্ত, তাও বেছে নেওয়া উচিত এমন স্টাইল, যেখানে চুল শুকিয়ে যাওয়ার পর যেন নিজের জায়গায় সহজেই সেট করে যেতে পারে। বর্ষায় চুল স্ট্রেট করা, অতিরিক্ত গরম তাপ দিয়ে চুল কোঁচকানো অথবা কার্ল করানো উচিত নয়। কারণ আবহাওয়ায় অতিরিক্ত আর্দ্রতা চুলকে প্রাণহীন করে তোলে। শহরের একজন নামি হেয়ার-স্পেশালিস্ট জানালেন, ‘বর্ষাকাল, চুলের জন্য খুব খারাপ সময়। যতরকম চুলের সমস্যা সব এই সময় বেশি হয়ে থাকে। উচিত হচ্ছে চুল ছোটো রাখা, যাতে চুল শুকোতে এবং চুলের যত্ন নেওয়া সহজ হয়। কাঁধ অবধি লম্বা চুল যত্ন করা সম্ভব হয়।”

প্রয়োজনীয় টিপস

O মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে নিয়মিত শ্যাম্পু করুন যখনই চুল বৃষ্টিতে ভিজে যাবে।

O ভেজা অবস্থায় চুল বাঁধবেন না।

O ভেজা চুলে ব্রাশ ব্যবহার করবেন না।

O সীমিত সংখ্যায়, চুলে লাগাবার উপকরণ ব্যবহার করুন বিশেষত শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনিং করার সময়।

O একই কোম্পানির প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন।

O হেয়ার স্প্রে-র ব্যবহার না করলেই ভালো৷

O চুল শ্যাম্পু করার অন্তত দু-তিন ঘণ্টা আগে চুলে তেল লাগিয়ে রাখতে পারলে উপকার পাওয়া যাবে।

O চুল ড্রাই করার জন্য ব্লো-ড্রায়ার ব্যবহার করবেন না।

O সপ্তাহে একবার করে অবশ্যই হট অয়েল মাসাজ করুন। এতে চুল শক্ত এবং স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হবে।

O ভিটামিন ‘ই’-যুক্ত খাবার খান এবং প্রচুর পরিমাণ জল পান করুন।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...