সকাল সাতটা নাগাদ রবি চা বানিয়ে এনে সঙ্গীতাকে বিছানায় দিয়ে দিত। পাশেই রবিকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে সঙ্গীতা বুঝতে পারল শাশুড়ি বা শ্বশুর কেউ রান্নাঘরে ঢুকেছেন।

সঙ্গীতা বুঝতে পারছিল না উঠবে না শুয়েই থাকবে ঠিক তখনই শয়নকক্ষের দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ কানে গেল৷ অগত্যা বিছানা ছাড়তে বাধ্য হল সঙ্গীতা। দরজা খুলতেই দেখল শাশুড়ি চায়ের ট্রে হাতে নিয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে।

—রবিকে তুলে দাও বউমা। আর দু’জনে চা খেয়ে নাও। আজকে তোমার শ্বশুরমশাই নিজের হাতে চা বানিয়েছেন। মনে হচ্ছে, ব্রেকফাস্ট-টাও আজকে উনিই বানাবেন। সঙ্গীতার হাতে ট্রে-টা ধরিয়ে আরতি ফিরে গেলেন।

সঙ্গীতা কিছুটা কুণ্ঠা বোধ করছিল। তাকিয়ে দেখল রবি ঘুম ভেঙে খাটে উঠে বসেছে। রবিকে জাগতে দেখে সঙ্গীতা কিছুটা অনুযোগের সুরে বলল, “তুমি তো জানো তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙে গেলে আমার সারাদিন মাথাযন্ত্রণা হতে থাকে। তোমার মা-বাবাকে বলে দিও আমাকে যেন তাড়তাড়ি ঘুম থেকে তুলে না দেন।

রবি হাত বাড়িয়ে ট্রে থেকে চা নিয়ে চুমুক দিল। কিছুটা আশ্চর্য হয়ে বলল, ‘বাবা আগে তো চা পর্যন্ত বানাতে পারত না আর আজ ব্রেকফাস্টও বানাচ্ছে? কী ব্যাপার ঠিক বুঝতে পারছি না।’

সঙ্গীতার আর একটু শোয়ার ইচ্ছা ছিল কিন্তু রান্নাঘরে ক্রমান্বয়ে বাসনের আওয়াজ হওয়ার ফলে ও আর ঘুমোতে পারল না। বাড়ির বউ হওয়ায় মনে হল রান্নাঘরে গিয়ে শ্বশুর-শাশুড়িকে সাহায্য করাটা ওর উচিত।

চা খেয়ে সঙ্গীতা রান্নাঘরের দিকে পা বাড়াল, পিছনে রবি। রান্নাঘরে পৌঁছে দুজনেই দেখল রমাকান্ত আলুর দম রান্নায় ব্যস্ত। আরতি একপাশে ময়দা মাখছেন।

সঙ্গীতা রান্নাঘরে ঢুকে শ্বশুরকে হাসি মুখে বলল, ‘বাবা আপনি কেন রান্না করছেন! আমাকে দিন, আপনি বরং বাইরে একটু ঘুরে আসুন।’ রমাকান্ত হেসে ফেললেন সঙ্গীতার কথা শুনে।

—বউমা, আমি তোমার শাশুড়ির কাছ থেকে কিছু কিছু রান্না শিখেছি। এখন এসব করতে আমার বেশ ভালোই লাগে৷ এক কাজ করো ঝটপট মুখ হাত ধুয়ে জলখাবার খেয়ে তুমি আর রবি আজকে কোথাও ঘুরে এসো।

—মা, বাবা কবে থেকে রান্না করা শিখল? বাবার কী প্রয়োজন রান্না করার ঠিক বুঝতে পারলাম না! অবাক হয়ে রবি বলল।

তোর বাবার জেদের কাছে কারও জেতার উপায় আছে নাকি? বাড়ির সব কাজ মিলেমিশে স্বামী-স্ত্রী দু’জনেরই করা উচিত। কোভিডের সময় তোর বাবা যখন বাড়িতে বসে ছিল তখনই মাথায় এই ভূত চেপেছিল। এক সপ্তাহের ভিতরে মাংস, সবজি, ভাত রান্না করা— সব শিখেছে আমার কাছে। কিছু মাছও রান্না করতে পারে তবে সব নয়। বাড়িতেও এখন উনি বেশিরভাগ সময় রান্নায় সাহায্য করেন।’ বলে আরতি তাকালেন স্বামীর দিকে।

—এটা তো দারুণ ব্যাপার। প্রশংসা ভরা চোখে রবি বাবার দিকে তাকাল।

—আমরা যতদিন আছি রান্নাবান্না আমি আর আরতি সামলে নেব। রমাকান্ত বললেন।

—ঠিক আছে। আজ আলুর দম আর লুচি খেয়ে দেখি ক’দিন তোমার রান্না বরদাস্ত করতে পারব! নিজের ঠাট্টাতে নিজেই হেসে ফেলল রবি।

—বাবা, আপনি রান্নাঘরে কাজ করবেন, এটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। এই বলে সঙ্গীতা ধনেপাতা কাটতে ব্যস্ত রমাকান্তর হাত থেকে ছুরিটা নেওয়ার চেষ্টা করল।

—ছাড়ো বউমা।

আরতি উঠে সঙ্গীতার হাত ধরে টেনে ওকে দরজার দিকে নিয়ে গেল। ‘চলো আমরা কিছুক্ষণ সামনের পার্কটায় ঘুরে আসি। এত সুন্দর পার্কটা। ততক্ষণ রবি ওর বাবাকে সাহায্য করুক।’

সঙ্গীতার ‘না… না…’, সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে আরতি ওকে টেনে বাড়ির বাইরে নিয়ে এলেন। এদিকে রমাকান্তও রবিকে জোর করে লুচি ভাজার দায়িত্বে নিয়োগ করলেন।

পার্কে গিয়ে আরতি সঙ্গীতাকে কিছু এক্সারসাইজ শেখালেন। ফেরার সময় সঙ্গীতা নিজেকে খুব ফ্রেশ অনুভব করছিল। মনটা ওর অনাবিল আনন্দে ভরে উঠেছিল।

—মা, বিয়ের পর থেকে আমার ওজন সমানে বেড়েই চলছিল। আপনি যেগুলো দেখালেন ওগুলো করলে আমি ফিট থাকতে পারব? আশার আলো জ্বলে উঠল সঙ্গীতার চোখে-মুখে।

—হ্যাঁ, অবশ্যই ফিট থাকতে পারবে। তবে একটা সমস্যা আছে! উদ্বেগ ভরা কণ্ঠে আরতি জানালেন।

—কী সমস্যা, মা?

—সকালে উঠে তার জন্য পার্কে আসতে হবে।

—আমি সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়ব।

হঠাৎই আরতি উৎফুল্ল হয়ে বলে উঠলেন, ‘বউমা আমরা একটা কাজ করব। রোজ রবি আর তোমার শ্বশুরকে জলখাবার বানাবার দায়িত্ব দিয়ে আমরা পার্কে চলে আসব।’

—হ্যাঁ, ঠিক বলেছেন মা। বাড়ির কাজও হল আবার আমাদের শরীরচর্চাও হল। আমার ওজনও কমবে আবার বাড়ি ফিরে গরম গরম জলখাবারও পেয়ে যাব। সঙ্গীতা মনের আনন্দ চেপে রাখতে পারল না।

এদিকে রমাকান্ত রান্নাঘরে কাজ করতে করতে ছেলেকে বলছিলেন, ‘রবি আমি তোমার মায়ের কাছ থেকে অনেক কিছু বানাতে শিখেছি। কারণ আরতির শরীর সবসময় ভালো থাকে না। তোমাকেও দেখি রোজ ব্রেড-মাখন খেয়ে অফিস যাচ্ছ। আমি তোমাকে কয়েকটা রান্না শিখিয়ে দিচ্ছি যেগুলো করতে খুব কম সময় লাগে আর হেলদিও। এতে তোমার আর বউমার দুজনেরই খুব সুবিধে হবে।

—তোমাকে রান্নায় সাহায্য করতে পেরে আমারও খুব ভালো লাগছে বাবা। তুমি আমাকে আরও কিছু রান্না শিখিয়ে দাও। রবি আনন্দের সঙ্গে বলল।

—ঠিক আছে, ফ্রেশ হয়ে চলে এসো টেবিলে। বাপ-ছেলে একসঙ্গে ব্রেকফাস্ট করব।

—মা আর সঙ্গীতার আসার অপেক্ষা করব না?

—আরে তোর বউ যতক্ষণ বাইরে ঘুরছে ততক্ষণই ভালো। মায়ের সঙ্গে ওকেও পার্কে রোজ পাঠা। দেখলাম বউমা একটু ওয়েট গেন করেছে যেটা ওর শরীরের পক্ষেও খারাপ।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...