—কবে থেকে জ্বর আসছে? টেস্টের রিপোর্ট কবে পাবে? প্রতীকের কথায় একতা বুঝল প্রতীক ওর দিদি অনুপমার সঙ্গে কথা বলছে। অনুপমাদের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো নয়। তা সত্ত্বেও ও বা ওর স্বামী সোমনাথ নিজেদের আর্থিক পরিস্থিতি উন্নত করার কোনও চেষ্টাই করত না। ওদের কাজ ছিল পরিচিতদের কাছে টাকার জন্য হাত পাতা।

পেশায় ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিনিয়র সোমনাথের দু’বছর আগেই চাকরি চলে গেছে। ওই সময় সোমনাথ ইলেক্ট্রিকের জিনিস বিক্রির ব্যাবসা শুরু করার ইচ্ছা প্রকাশ করাতে, প্রতীক টাকা দিয়ে সাহায্য করে ব্যাবসা শুরু করতে। বেশ কিছুদিন সব ঠিকঠাক চলার পর সোমনাথ অভিযোগ করা আরম্ভ করে যে— এই ব্যাবসায় লাভ ওর চাহিদামতো হচ্ছে না। আর এত বছর চাকরি না করার জন্য চাকরি পাওয়াও মুশকিল হচ্ছে।

এদিকে অনুপমাও এই অসহনীয় পরিস্থিতির কথা সকলের কাছে বলে আর্থিক সাহায্য চাওয়া আরম্ভ করে। প্রতীকের বড়ো ভাই কিছু সাহায্য করলেও, শেষমেশ প্রতীকের উপরেই নির্ভর করা শুরু করে অনুপমা। প্রতীকও সাধ্যমতো বড়ো দিদিকে সাহায্য করতে কার্পণ্য করত না।

আজ আবার অনুপমার ফোন আসাতে একতা নড়েচড়ে বসল। বুঝতে পারল নতুন কোনও সমস্যার কথা শোনাতেই দিদির এই ফোন। একতার খালি শম্ভুনাথজির মেসেজগুলোই মনে পড়ে যাচ্ছিল। কয়েক মুহূর্ত আগেই স্বামী-স্ত্রী মিলে ফ্ল্যাট কেনার কথা বলছিল আর এখন যদি অনুপমাদিকে আর্থিক সাহায্য করতে হয় তাহলে হয়তো প্রতীক ফ্ল্যাট কেনার চিন্তা এখন বন্ধ করে দেবে, এই ভেবে একতা মনে মনে ভয় পেল।

একতার মনে হল এই সমস্যা থেকে একমাত্র মুক্তির পথ হল মহারাজজিকে কিছু অর্থ দান করা। কারণ একমাত্র শম্ভুনাথজি ভোগবিলাস থেকে দূরে, ভক্তি সাধনায় সাধারণ ভাবে জীবনযাপন করছেন। সুতরাং দান করার জন্য ওনার থেকে ভালো অন্য কোনও ব্যক্তি হতেই পারে না। শম্ভুনাথজিও নিশ্চই এই দানের অর্থ মানবকল্যাণেই খরচ করেন।

প্রতীক অনুপমার সঙ্গে ফোনে কথা বলায় ব্যস্ত থাকায় মেনুকার্ড দেখে অনুপমাই পানের ফ্লেভারযুক্ত আইসক্রিম অর্ডার করে দিল।

ফোন ছাড়তেই একতা প্রতীককে জিজ্ঞেস করল, “দিদি ফোন করেছিল?’

—হ্যাঁ, বাড়ি ফিরে এ ব্যাপারে কথা বলছি। মনে মনে কিছু নিয়ে চিন্তিত মনে হল প্রতীককে।

আইসক্রিম খেতে খেতেই নানা চিন্তা একতার মাথায় খেলা করছিল। হঠাৎ-ই পাঁচটা টেবিল ছেড়ে কোণের একটা টেবিলে একতার নজর স্থির হল। নিজের চোখকেই বিশ্বাস হচ্ছিল না একতার। শম্ভুনাথজি ওখানে বসে নানা পদে আহার করতে ব্যস্ত। পরনে সবসময়ের মতো পট্টবস্ত্রের বদলে টি-শার্ট এবং জিন্‌স। সঙ্গে ওনার গা ঘেঁষে চেয়ারে বসে এক সুদর্শনা নারী। অথচ শম্ভুনাথজি নিজেকে বলেন সংসারত্যাগী সন্ন্যাসী।

রেস্তোরাঁর একজন কর্মচারী এসে ওই মহিলার সামনে একটি কেক এনে রাখল। শম্ভুনাথজি ওই মহিলার হাত ধরে কেক কাটলেন তারপর ‘হ্যাপি বার্থডে’ বলে মহিলাকে আলিঙ্গন করে চেয়ারে আবার বসে পড়লেন। একটি কেকের টুকরো নিয়ে মহিলার মুখে ঢোকাতেই একতা শম্ভুনাথজির থেকে চোখ সরিয়ে নিল।

—এটাই তাহলে মহারাজের মানব কল্যাণমূলক কাজ, যাতে দানের অর্থ শম্ভুনাথজি খরচ করেন। এই ভেবে একতা বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়ল।

বাড়িতে এসে প্রতীক ফোনের কথাটা খুলে বলল। একতা ঠিকই সন্দেহ করেছিল। সোমনাথ অসুস্থ থাকায় অনুপমারা বাড়ি ভাড়ার টাকা দিতে পারেনি। সোমনাথ যা টাকা জোগাড় করতে পেরেছিল সব ডাক্তার আর ওষুধে খরচ হয়ে গিয়েছে।

—এবার তাহলে ওদের কত টাকা দিতে হবে? বিরক্ত হয়ে একতা প্রশ্ন করল!

অনেক করেছি এবার আর নয়। প্রতীকের গলায় বিদ্রোহের আঁচ শুনে একতা একটু অবাকই হল!

—মানে… এবার আর তুমি টাকা দেবে না?

—না! অনেক সাহায্য করেছি দিদি, জামাইবাবুকে। এরা বেচারা সেজে অন্যকে লুটছে। খারাপ সময় কাউকে সাহায্য করা আলাদা ব্যাপার কিন্তু কেউ যদি অন্যের রোজগারের উপর লক্ষ্য রেখে নিজেরা অসহায় সেজে অপরকে লুটতে থাকে, তাহলে তো সেটা মেনে নেওয়া যায় না। মনে আছে গত বছর কাজের জন্য আমেদাবাদে গিয়েছিলাম? তখন একদিন দিদিদের কাছে থেকেছিলাম। —হ্যাঁ, মনে আছে। শান্ত ভাবে একতা উত্তর দিল।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...