গণতান্ত্রিক সরকার মানে এমন একটি সরকার, যা জনগণের স্বার্থে শাসন চালাবে কিন্তু ঘটছে উলটোটা। গণতন্ত্রকে উপলক্ষ্য করে অর্জিত ক্ষমতা দিয়ে নেতাদের স্বার্থে শাসনকার্য চালানো হচ্ছে। আর এই শাসন এখন চলছে মন্দিরে এবং মন্দিরের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের স্বার্থে। এর ফলে ধর্মস্থানে বসবাসকারী লোকজন বেশি সুবিধে পাচ্ছেন। কিন্তু বাকি শহরগুলিতে লোকজন তেমন সুবিধে পাচ্ছেন না।
কিছুদিন আগে ওয়াটার ক্রাইসিস নিয়ে একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছিল এক ইংরেজি দৈনিকে। আপাত ভাবে এই খবরে তেমন কোনও নতুনত্ব নেই। দিল্লি-র মতো অনেক শহরেই নলবাহিত জল না পাওয়ার অভিযোগ ওঠে সারাবছর। কিন্তু জল-সংকট বাড়ছে ক্রমশ। অথচ সেই রোমান যুগেও জলের সমোচ্চশীলতার ধর্মকে কাজে লাগিয়ে জল সরবরাহ করা হতো দূর-দূরান্তে। ২০০ ফিট উঁচুতে জলাধার তৈরি করে সেই জল সরবরাহ করা হতো। ধনী-গরিব সবাই একই ভাবে জলের সুবিধে পেতেন। সবচেয়ে মজার বিষয় হল এই যে, কোনও পাম্প, বিদ্যুৎ কিংবা মেশিন ব্যবহার না করেই জলের সুবিধে দেওয়া হতো জনগণকে। এ ছিল তখনকার রোমান শাসকের কর্তব্য। এর জন্য ওই শাসকগোষ্ঠী কোনওরকম বাহবা আশা করত না কিংবা কোনও ধর্মীয় যোগ ছিল না।
ওয়াটার ক্রাইসিস নিয়ে প্রকাশিত ওই খবরটির নতুনত্ব থাক বা না-থাক, এটাই বাস্তব যে, জল- সংকট থেকে মুক্তি পেতে দিল্লিতে মহিলারা প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন বহুবার। কারণ পরিবারের সবার মুখে জল তুলে দিতে বাড়ির মহিলারাই ঘন্টার পর ঘন্টা কলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন সব কাজ ফেলে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল— বাড়ির মহিলা সদস্যরা তো শুধু জল সংগ্রহ করেন না, রান্না করা থেকে শুরু করে সংসারের প্রায় সমস্ত কাজই করতে হয় তাদের। খুব কম ক্ষেত্রেই জল সংগ্রহের কাজ করতে দেখা যায় পুরুষদের। জলের কলের সামনে বেশিরভাগ লাইনে দাঁড়াতে দেখা যায় মহিলাদেরই। অসীম ধৈর্য এবং পরিশ্রম করে মহিলারা এই কাজ করলেও, ঘরের মালিক তারা নন।
মোঘলরা অনেক জলাশয় তৈরি করেছিল। দিল্লি এবং আগ্রায় যত জলাশয় আছে, তার বেশিরভাগই মোঘল আমলে তৈরি। এছাড়া জনগণ নদীর জলও ২৪ ঘন্টা পেতেন সেই আমলে। অথচ এখন বিদ্যুৎ, কম্পিউটার, উন্নত প্রযুক্তির সুবিধে থাকা সত্ত্বেও, রাস্তার জলের কলের সামনে লম্বা লাইন দেখা যায়। এর ফলে মহিলাদের আজও শুধু জল সংগ্রহের জন্য দিনের অনেকটা সময় নষ্ট করতে হয়। এ যেন সেই সনাতনকাল ফিরে এসেছে!
বর্তমান সরকার শৌচালয় তৈরিতে খুব হইচই করেছে শুরুর দিকে। কিন্তু যদি জলের প্রয়োজন না মেটে, তাহলে জনগণ শৌচালয় পরিচ্ছন্ন রাখবে কী করে! সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, মহিলারা যদি শুধু জল সংগ্রহে বেশিরভাগ সময় নষ্ট করেন, তাহলে তাদের দক্ষতা, প্রতিভা সবকিছু প্রকাশের সুযোগ কমে যাবে। যা আসলে মহিলাদের দুর্বল করে তোলার রাজনীতি ছাড়া আর কিছু নয়।
জল সংগ্রহের জন্য এই যে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ধৈর্যের পরীক্ষা দিচ্ছেন মহিলারা, তাহলে এটা কি মন্দিরের ঢোকার জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়ানোর ট্রেনিং ধরে নেওয়া হবে?