এক আমেরিকান সার্ভে রিপোর্ট অনুযায়ী জানানো হয়েছে যে, দুই সন্তানের যত্ন নেওয়ার জন্য এবং পরিবারের সদস্যদের জন্য রান্না করতে যে সময় এবং শ্রম দান করেন মা, আউটসোর্স করলে এর জন্য ব্যায় করতে হবে ৪,৫০০ থেকে ৫,২০০ ডলার। যে-সব পরিবারে মাসে ৩,০০০ ডলার আয়, সেই পরিবারগুলোকে মধ্যবিত্ত পরিবার ধরা হয় আমেরিকায়। এর থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে, পরিবারের মহিলা সদস্যটি যদি অন্যের বাড়িতে একই শ্রম দান করেন, তাহলে তিনি তার পারিবারিক উপার্জনের থেকে বেশি অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
ভারতেও মহিলাদের পরিস্থিতি খুব আলাদা কিছু নয়। এখানে হয়তো বাড়িতে শ্রমদানকারী আয়াদের পারিশ্রমিক আমেরিকার মতো অত বেশি নয় কিন্তু আয়াদের দুর্ব্যবহার সহ্য করতে হয় গৃহিণীদেরই। তাই, শিক্ষিত, বুদ্ধিমতী মায়েরা যদি কোনও চাকরি করে থাকেন, তাহলে কোনও অবস্থাতেই সেই চাকরি ছাড়া উচিত নয় তাদের। কারণ, বাইরের কাজে যে সন্তুষ্টি কিংবা অর্থলাভ হয়, তা বাড়ির কাজে কখনও-ই সম্ভব নয়। কিন্তু অনেক পরিবারে দেখা যায় যে, পরিবারের সদস্যদের অনুরোধে কিংবা চাপে পড়ে অনেক মহিলা মা হওয়ার পর চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন।
অবশ্য বিষয়টা এমন নয় যে, সন্তানকে অবহেলা করে কিংবা তার শৈশব ছিনিয়ে নিয়ে মা যাবেন চাকরি করতে! আসলে নিজের স্বপ্নপূরণ করেও কীভাবে সন্তান লালনপালন করা যায়, সেই বিষয়ে দেখানো হচ্ছে সুন্দর সমাধানের পথ। কিন্তু কী সেই পথ?
নারী-পুরুষ উভয়কেই সন্তানের যত্ন নিতে হবে। স্বামী-স্ত্রী উভয়েই যদি উপার্জন করেন, তাহলে সন্তানকে বড়ো করে তুলতে কর্মী নিয়োগ করলে, সেই খরচের অর্থ মা-বাবা দু'জনে মিলে বহন করতে পারেন। মোটকথা সন্তান যখন দু'জনেরই ভালোবাসার ফসল, তখন সন্তানের দায়-দায়িত্ব বহনও করতে হবে দু'জনকেই।
সন্তানের যত্ন নিতে গিয়ে শুধু মা যদি অমানুষিক পরিশ্রম করেন, তাহলে এক সময় তিনি বিদ্রোহী হয়ে উঠতে পারেন। আর এর ফলে যদি বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে, তাহলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে সন্তানের। তাই, মায়ের উপর সমস্ত বোঝা চাপিয়ে দিয়ে বাবা যদি নাকে সরষের তেল দিয়ে ঘুমোন, তাহলে পরোক্ষে তিনি সন্তানের শৈশব ছিনিয়ে নিচ্ছেন, সন্তানের চরম ক্ষতি করছেন। অতএব, সমস্যার শিকড় গভীরে যাওয়ার আগে, সমাধানের উপায় খুঁজে বের করুন। এক্ষেত্রে মনে রাখবেন, সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই সঠিক সময়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিন। দায়িত্ব এড়িয়ে নয়, নিজে কিছুটা দায়িত্ব নিয়ে স্ত্রী এবং সন্তানের পাশে দাঁড়ান।