পরবর্তী রবিবার উত্তমের নির্ধারিত সময়ে এক কফিশপে বসে দীপেন এ কাহিনির একদম শুরু থেকে তাকে খুলে বলে। সঙ্গে সমর্পণও ছিল। সব শুনে উত্তম খানিক চুপ করে থাকে। তারপর বলে, ‘তোমার সমস্যাটা খুবই ব্যক্তিগত। এ সম্পর্কে কিছু বলতে গেলে আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর তোমাকে দিতে হবে। আশা করব তুমি সব সত্যি বলবে।’

—হ্যাঁ অবশ্যই, জবাব দেয় দীপেন।

—তোমার স্ত্রীর কোনও ছবি থাকলে একবার দেখাও।

দীপেন মোবাইলের গ্যালারি খুলে বেশ কয়েকটি ছবি দেখাল। উত্তম দেখল— শ্যামবর্ণা, নাক একটু ভারী, চশমার নীচে চোখ দুটি বেশ বড়ো দেখাচ্ছে, ঠোঁট যথেষ্ট পুরু, একদম সাদামাঠা গৃহবধূর ছবি।

—উনি কি নিমফোম্যানিয়াক?

দীপেন সামান্য ভ্রু কুঞ্চিত করল, তারপর জবাব দিল, ‘সেরকম মনে হয় না।’

—এ বিষয়ে কথা কাটাকাটি শুরু হবার পর থেকে বেড শেয়ার করো তোমরা?

—মাঝে মধ্যে।

—কত বয়স ওনার?

—পঞ্চাশ, আমার তো জানোই সাতান্ন। বিয়ে হয়েছে তেইশ বছর।

—বিয়ের পর থেকে এ ধরনের ঘটনা আর কখনও ঘটেছিল? আচমকা এমন সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশান তো সাধারণত ঘটে না, তাই বলছিলাম।

—ঘটে থাকতেও পারে। এ ধরনের ভাবনা মনে কখনও আসেইনি। তবে ইদানীং জানতে পেরেছি ওর দিদিরাও নানা সময় অন্য পুরুষের সঙ্গে মেলামেশা করেছে। এখনও হয়তো করে। তবে এ ব্যাপারে পাড়া-প্রতিবেশীরা বেশি একটা মুখ খোলে না।

—আর ইউ শিওর যে, তোমার স্ত্রী রঞ্জিতের সঙ্গে অ্যাফেয়ার করছে। বিষয়টা কত দূর গেছে, মানে শারীরিক পর্যায় অবধি এগিয়েছে কি?

—তা না হলে আমি এত ওরিড হই? ওদের আলোচনার সারাংশ হল, লাস্ট মিটিংটা  কেমন ছিল, এবার আগামী মিটিংটা কীভাবে আরও ইন্টিমেট করে তোলা যায়।

—কীভাবে এসব জানলে?

বারান্দায় যে বেতের চেয়ারে ও বসে, তার পিছনে, কখনওবা ঘরে শোবার ঘাটে বিভিন্ন সময় মোবাইল রেকর্ডিং মোডে লুকিয়ে রেখে জানতে পেরেছি। বহু কথাবার্তা তো আমার নিজের কানে শোনা।

—আমার সঙ্গে শেয়ার করতে পারবে?

—অবশ্যই, চাইলে এখনই তোমাকে পাঠাতে পারি, সমর্পণকে সব শুনিয়েছি।

সমর্পণ বলে, ‘সেসব শুনলে কান লাল হয়ে যাবে তোমার। ওদের দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রীর মতোন।’

—বলো কী! চোখ কপালে ওঠে উত্তমের। তারপর প্রশ্ন করে, আচ্ছা রঞ্জিত কী করে? মানে ওর পেশার কথা বলছি।

—প্রোমোটিং।

—পরিবার আছে?

—হ্যাঁ। স্ত্রী একটা কিন্ডারগার্টেন স্কুলে পড়ায়। এক মেয়ে, ক্লাস সিক্সে পড়ে।

রঞ্জিত যদি তোমার স্ত্রীর ছেলেবেলার বন্ধু হয় তাহলে লেট ম্যারেজ করেছে সম্ভবত?

একটু থেকে দীপেন বলে, ‘ঠিক তাই।’

—বড়ো কঠিন প্রতিপক্ষ তোমার, নিচু স্বরে বিড়বিড় করে উত্তম। আচ্ছা, তুমি আমার থেকে ঠিক কী ধরনের সাহায্য আশা করছ?

দীপেন, সমর্পণের দিকে তাকায় অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে।

সমর্পণ বলে, ‘দেখো তুমি স্বরাষ্ট্র দপ্তরে আছো। ভবানীভবনের উচ্চ পর্যায়ের আধিকারিক। যদি তুমি চাও, অনেক কিছু করতে পারো।’

উত্তম হাসে।

—ভুল বন্ধু, ভুল। তোমাদের যা সমস্যা তা সিভিল ইন নেচার। ক্রিমিনাল কেস-টেস নয়, অন্তত এখনও পর্যন্ত। সেক্ষেত্রে দীপেনকে স্ত্রীর বিরুদ্ধে এফআইআর করতে হবে অ্যাডাল্টারির চার্জে।

—আচ্ছা, তুমি যদি রঞ্জিতকে ফোন করে একটু ধমক-ধামক দাও, তাতে কাজ হবে না? আশান্বিত কণ্ঠে প্রস্তাব দেয় দীপেন। —ভুলে যেও না, রঞ্জিত প্রোমোটিং করে। ওর পলিটিক্যাল এবং পুলিশ কানেকশন দুটোই ভালো, এটা স্পষ্ট।

—তাহলে উপায়? কোনও পথই কি নেই?

একটু চুপ করে থাকে উত্তম, তারপর বলে, ‘তোমাকে একটা ডিসিশনে আসতে হবে দীপেন। হয় ডিভোর্স করে আলাদা হবে, নয়তো স্ত্রীর যাবতীয় কাজকর্ম মেনে নিয়ে মুখ বন্ধ করে থাকতে হবে।’

—এই বয়সে ডিভোর্সে গেলে লোকে কী বলবে?

-সেকেন্ড অপশনে গেলেও লোকে কথা বলবে। কারণ পরকীয়া কখনও চাপা থাকে না। আজ না হোক কাল জানবেই লোকে।

সমৰ্পণ বলে, ‘এনি থার্ড অপশন।’

উত্তম ওর দিকে তাকায়, বলে, ‘তার জন্য যথেষ্ট সাহস দরকার। অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে, টাকাপয়সা খরচ হবে। ধৈর্য ধরে লেগে থাকতে হবে। আচ্ছা দীপেন, স্ত্রী যদি এসব নষ্ট সম্পর্ক ছেড়ে তোমার সঙ্গে আগের মতোন সংসার করতে চায়, তুমি মেনে নেবে?’

দীপেন চুপ করে থাকে। তারপর ধীরে ধীরে ইতিবাচক মাথা নেড়ে বলে, ‘মেনে তো নিতেই হবে আমাকে, অন্তত মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে।’

খুব অসহায় লাগে ওকে। উত্তম বুঝতে পারে ওর যন্ত্রণার গভীরতা।

—শোনো তাহলে আমার প্ল্যান। তার আগে থার্ড রাউন্ডের কফিটা অর্ডার দাও। হাসে। বলে, তোমাকে খুব ঠান্ডা মাথায় এগোতে হবে। কাল থেকে একদম স্বাভাবিক আচরণ করবে স্ত্রী সঙ্গে। মুখে না বললেও ভাব দেখাবে যেন ওর অ্যাফেয়ারটা তুমি একরকম মেনেই নিয়েছ। আর দু’জন ইনফর্মারকে গোপনে নিয়োগ করবে তোমার স্ত্রীর যাবতীয় গতিবিধি নজর রাখতে। সে লোক তোমাকে আমি অ্যারেঞ্জ করে দেব। ওরা তোমার স্ত্রী এবং রঞ্জিতের যাবতীয় অন্তরঙ্গতার ছবি তুলে রাখবে। কোন হোটেলে যাচ্ছে, কোন রেস্টুরেন্টে খাচ্ছে, কোন মলে শপিং করছে, সিনেমা দেখছে, এভরিথিং শ্যাডো করবে, রেকর্ড করবে এবং সব তথ্য তোমাকে জোগান দেবে। ওদের ফোনের অডিও রেকর্ডিং আমি জোগাড় করে দেব। আর তোমার কাছে যে রেকর্ডিংগুলো আছে, ওগুলো সাবধানে রেখো। যথেষ্ট প্রমাণ হাতে এলে একজন লেডি অ্যাডভোকেট নিয়ে তুমি রঞ্জিতের স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে যাবতীয় ঘটনা জানাবে। বলবে, আমরা সংঘাত চাই না, আপোশ চাই। হয় আপনার স্বামীকে আটকান, না হলে তার প্রতিফল ভোগার জন্য প্রস্তুত হন। আমার সংসার-মান-সম্মান তো গেছেই, আপনাদেরটাও শেষ করে দেব। সব ক্লিপিংস, ফটো ইত্যাদি ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউবে আপলোড করে ভাইরাল করার ব্যবস্থা করব। তাতে একজন শিক্ষিকা হিসাবে আপনার ইমেজ কি ঠিক থাকবে? আপনার মেয়েও স্কুলে পড়ে। স্কুলের গার্জিয়ানরা জানতে পারলে কী হতে পারে একবার ভেবে দেখবেন। তারপর দ্যাখো জল কোন দিকে গড়ায়। যদি এ প্রস্তাবে রাজি থাকো, জানিও।

(ক্রমশ……)

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...