বিনা খরচে জীবন থেকে স্ট্রেস তাড়ানোর একটি মাত্র উপায় আছে, আর সেটা হচ্ছে জমিয়ে হাসা। নির্দ্বিধায় বলা চলে, ‘দ্য ওনলি বেস্ট মেডিসিন’। মন খুলে, প্রাণ ভরে যে হাসতে পারে, তার মতো সুখী আর কেউ নয়। হাসি, মানুষকে মুহূর্তে দৈহিক, মানসিক শান্তি দিয়ে রিল্যাক্স করে দিতে সাহায্য করে। প্রাণখোলা হাসি মানুষের স্ট্রেস হরমোন কমিয়ে প্রাণচঞ্চল রাখে।
হাসতে পারার সহজ প্রবণতা মানুষকে একে অপরের সঙ্গে বেঁধে রাখতে সাহায্য করে। সকলেই মনে করে ‘হাসি’ হচ্ছে খানিকটা ছোঁয়াচে অসুখের মতো। একজনের মুখের হাসি অন্যের মুখেও হাসি ফোটায়। একজন মানুষ যদি সত্যিকারের প্রাণখোলা হাসি হাসেন, তাহলে তিনি তো উপকার পাবেনই, সঙ্গে আরও যারা আশেপাশে রয়েছেন, তারাও তার সংস্পর্শে মুড হালকা করে নিতে পারবেন। এমনই হাসির মাহাত্ম্য।
আজ প্রতিটি মানুষের কাঁধে দায়িত্ব। সংসারের দায়িত্ব, স্কুল-কলেজে পড়াশোনা এবং সর্বশেষে চাকরির সুবিশাল জগৎ এবং পেশার সম্মান রক্ষার্থে কাজের চাপ। বহু মানুষই আছেন, যারা অফিসের স্ট্রেস সহ্য করতে পারেন না। মনের মধ্যে নানা ধরনের নেগেটিভ চিন্তাধারায় তারা মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। কিন্তু এভাবে তো জীবন চলতে পারে না। মানসিক বিপর্যস্ততা কাজের গতিকেও হ্রাস করে ফেলে। নিজের কাজ করতে অসুবিধা হয়, উপরন্তু কাজের নিস্তেজতা অপরের কাজের ইচ্ছেকেও প্রশমিত করে।
সুতরাং কাজের গতি ফিরিয়ে আনতে কাজের চাপকে ‘স্ট্রেস’ হিসেবে নিলে চলবে না। তার উপযুক্ত মোকাবিলা করার জন্য মনকে যেমন সজাগ ও শক্ত করার প্রয়োজন আছে, তেমনই পরিবেশকে ফ্রেন্ডলি এবং লাইট রাখাটাও বাঞ্ছনীয়। হাসতে হাসতে প্রবলেম সলভ করতে পারলে মেন্টাল স্যাটিসফ্যাকশনও থাকে। প্রত্যেক মানুষেরই উচিত সর্বদা হাসিখুশি থাকার পদ্ধতি রপ্ত করা।
অফিসে প্রথম পদার্পণ ইন্টারভিউ-এর মাধ্যমে। জীবনে প্রথম নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ। মনের মধ্যে নানা দোলাচল, বুক ঢিপঢিপ, টেনশনে মনে হয় বুঝি হাত-পা-এর পেশি অবশ হয়ে আসছে। তবু মুখে রাখুন হাসি, দেখবেন অনেক কম নার্ভাস লাগছে। আর ইন্টারভিউ নিতে যারা বসে আছেন তারা মুখের হাসিটিই প্রথম লক্ষ্য করবেন। আপনার সেই মুহূর্তের ওই প্লেজেন্ট পার্সোনালিটি-ই হয়তো বাজিমাত করে দিতে পারে। প্রশ্ন-উত্তর পালার ভারী পরিবেশ কিছুটা হলেও সহজ হবে।
চাকরিটা আপনার হয়ে গেল। প্রোবেশনে রয়েছেন আপনি। অফিসে নতুন সহকর্মীদের মনে জায়গা করে নিতে পারলেই কাজের সুবিধা। নিশ্চিন্তে সকলের সহযোগিতাই কাম্য আপনার। সুতরাং নম্র স্বভাবের সঙ্গে মুখের হাসিটি বজায় রাখা একান্ত দরকার। দফতরে যদি কারও মনে আপনার প্রতি বিদ্বেষও থাকে, আপনার হাসিমুখ তাকে তার মনোভাব বদলাতে বাধ্য করবে।
কাজে মন আছে বুঝতে পারলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আপনাকে কাজে বহাল রেখে দেবে। কাজের দায়িত্বর সঙ্গে ওয়ার্ক প্রেশারও বাড়বে। আর ওয়ার্ক প্রেশার বাড়া মানে আরও বেশি স্ট্রেস। তাই কাজের ফাঁকে খানিকটা মানসিক চাপ কমাতে সহকর্মীদের সঙ্গে আড্ডার ছলে কিছুটা ঠাট্টাতামাশা, হাসি-মশকরা করুন। এই হালকা মুডেই সহকর্মীদের সঙ্গে দফতরের জরুরি কোনও আলোচনাও কিন্তু অনায়াসে সেরে ফেলা যায়। এতে নিজের কাজের স্ট্রেসও কিছুটা কমবে এবং অপরের কাছেও এটি ‘চাপ দেওয়া হচ্ছে’ বলে বিবেচিত হবে না। অফিসে বন্ধুত্বের পরিবেশ বজায় থাকবে।
মানুষ নিজের ব্যক্তিত্ব হারিয়ে ফেলার ভয় পায়। অনেক পরিবারে বাচ্চাদের হাসার প্রবণতাকে দোষ বলে মেনে নেওয়া হয়। কিন্তু সময়, জায়গা এবং মানুষ বিবেচ্যে, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী এবং পরিচিত জনের সঙ্গে প্রাণখুলে হাসাটা কিন্তু মোটেই দোষের নয়। অনেক সময় কেউ কেউ ভেবে নেন অফিসে কোনওরকম হাসাহাসি করলেই বুঝি তার সম্মান যাবে, তাকে কেউ আর মানবে না। এরকম ধারণা থাকাটা ঠিক নয়। অফিসের পুরো সময়টা যদি গাম্ভীর্যের মধ্যে কেটে যায়, তাহলে ভুল বোঝাবুঝির একটা জায়গা আপনা থেকেই তৈরি হয়ে যায়। অফিস পলিটিক্স থাকবে না— এরকম অফিস বোধহয় নেই। তাই শত্রু-মিত্র মিলিয়ে সকলের সঙ্গেই ব্যবহার ভালো রাখতে হবে, যাতে আপনার হাসিমুখ এবং মিষ্টি ব্যবহার শত্রুভাবাপন্ন মানসিকতাকেও আপনার প্রতি আকর্ষিত হতে বাধ্য করে।
অফিসে অনেকেই হয়তো আপনাকে নিয়ে ‘জোক’ করতে পারে যাতে আপনি হার্ট হন। হেসে জোকটিকে গ্রহণ করতে চেষ্টা করুন৷ দুঃখটাকে হাসির পিছনে লুকিয়ে রাখুন। সম্ভব হলে নিজেই নিজেকে নিয়ে মজা করুন যাতে অফিসের সেই সাময়িক টেনশন মিটে যেতে পারে। সকলেই টেনশন রিলিজ্ড হতে পারবেন।
ভুলত্রুটি সকলেরই হয়৷ অফিসেও যে আমরা কোনও ভুল করি না, জোর দিয়ে সেটা বলা যায় না। অনেক সময় সকলের অলক্ষ্যে নিজেরাই নিজেদের ভুলগুলো বুঝতে পারি। যারা হেসে নিজেদের দোষ স্বীকার করতে পারে, তাদের মন পরিষ্কার জলের মতো স্বচ্ছ থাকে। অপরাধ করে ফেলার স্ট্রেসও থাকে না। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই সচেতন ভাবে অন্যের উপর দোষ চাপিয়ে দেয়। তাই অপরাধবোধ তাদের মনের মধ্যেই চেপে বসে থাকে, ফলত স্ট্রেস বাড়তে থাকে।
সুতরাং বাইরের পরিবেশের মতোই অফিসেও স্ট্রেস কাটাবার এবং মন ভালো রাখার মূল মাধ্যম হল হাসি। হাসি যেমন আপনার মনের আয়না, তেমনি অন্যকেও তৃপ্ত করার সহজ সরল মাধ্যম। তবে কয়েকটি কথা মাথায় রাখা দরকার।
কী করা উচিত
- হাসি মুছে যেতে দেবেন না। সবসময় হাসিমুখে থাকুন
- সুযোগ খুঁজুন প্রাণখুলে হাসার
- হাসিমুখে অসুবিধাগুলি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করুন
- সকলে যেখানে হাসিমুখে রয়েছে সেখানে মুখ গোমড়া রাখবেন না, হাসিতে যোগ দিন।
কী করা উচিত নয়
- অপরকে দেখে হাসবেন না
- অপরকে ছোটো করে, বাহবা পেতে হাসার চেষ্টা করবেন না
- ইচ্ছে না করলে বোকার মতো হাসবেন না
- অযথা, অসময়ে হাসবেন না।