জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রায় ষাট শতাংশ সময় বয়ে বেড়াতে হয় দাম্পত্য সম্পর্ককে। ফলে বিয়ে হল জীবনের এক অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তাই শুধু সৌন্দর্যে মুগ্ধ না হয়ে, গুণাগুণ বিচার করা আবশ্যক। কারণ, বিয়ের পরে সম্পর্ক দাঁড়িয়ে থাকে একটা সরু সুতোর উপর। ভারসাম্য হারালে পতন অনিবার্য। তাই বিয়ের আগে পরস্পরকে চিনুন, জানুন ভালো ভাবে। মনে রাখবেন, দাম্পত্য সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পায় শারীরিক এবং মানসিক বিষয়।
তাই, যদি বিবাহিত জীবনকে সুখের, শান্তির করে তুলতে চান কিংবা সফল করে তুলতে চান, তাহলে বিয়ের আগে হবু জীবনসঙ্গীকে যাচাই করে নিন সঠিক ভাবে। অবশ্য শুধু যাচাই করে নেওয়াই নয়, নিজের পছন্দ-অপছন্দের বিষয়টিও হবু সঙ্গীকে জানিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া নিন।
যাচাই পর্ব এবং সিদ্ধান্ত
যদি সবকিছু উভয়ের মনের মতো হতে পারে মনে হয়, তবেই সেই সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যান, নয়তো সম্পর্কে ইতি টানুন। কারণ, দাম্পত্যে যখন অপছন্দের কিছু আসে, তখনই সমস্যা দেখা দেয়। সম্পর্ক তখন ভেঙে যায়। তাই সম্পর্ক গড়ার আগে যেমন সতর্ক হওয়া উচিত, ঠিক তেমনই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য এমন মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করা উচিত, যার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবেন। তাই, মানসিক এবং শারীরিক চাহিদার বিষয়ে দু’জনে খোলাখুলি আলোচনা করে তারপর বিয়ের সিদ্ধান্ত নিন।
এক্ষেত্রে আপনারা যদি দীর্ঘদিনের প্রেমিক-প্রেমিকাও হন, তাহলেও আবেগে ভেসে গিয়ে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেবেন না। কারণ, শারীরিক এবং মাননিক চাহিদা পূরণ না হলে সম্পর্কে ফাটল ধরবেই। অবশ্য শুধু শারীরিক এবং মানসিক চাহিদা পূরণের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিলেই চলবে না, গুরুত্ব দিতে হবে আর্থিক বিষয়টিকেও। কারণ, অন্তত মোটামুটি একটা আর্থিক সচ্ছলতা না থাকলে বিয়ে করা উচিত নয়।
মনে রাখবেন, সম্পর্কের শুরুতে আর্থিক অসচ্ছলতার বিষয়টি অতটা গুরুত্ব না পেলেও কিংবা মানিয়ে নিলেও, অদূর ভবিষ্যতে সমস্যা আসবেই। অবশ্য আরও কয়েকটি বিষয়কে দাম্পত্যে গুরুত্ব দিতেই হবে। এর মধ্যে রয়েছে বাসস্থান এবং খাদ্যাভ্যাস। যেখানে দু’জনে বসবাস করবেন, সেই বাসস্থানটিকে মানিয়ে নিতে পারবেন কিনা, তা দেখে নিয়ে তবেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নিন।
এছাড়া, কে কীরকম খাবার খেতে পছন্দ করেন, তাও বিয়ের আগে আলোচনা করে নিন। যদি খাওয়ার বিষয়ে কারওর কোনও সমস্যা থাকে, তাহলে সমস্যা সমাধানের পথ বের করে রাখুন আগেভাগে। কারণ, ছোটো ছোটো অপছন্দের বিষয় নিয়েও সম্পর্কে তিক্ততা তৈরি হতে পারে।
বিয়ের আগে পরিবারের বাকি সদস্যদের সঙ্গেও আলাপ-পরিচয় করে নিন দু’জনে। তাদের আচার-আচরণ অপছন্দ হলে কীভাবে মানিয়ে নেবেন, তাও দু’জনে মিলে আলোচনা করে রাখুন। প্রয়োজনে আপনারা দু’জনে শুরু থেকেই পরিবারের থেকে আলাদা থাকবেন, এমন সিদ্ধান্ত জানিয়ে সম্মতি আদায় করে রাখুন পরিবারের সদস্যদের থেকেও। অবশ্য শুধু এই বিষয়গুলিই নয়, দাম্পত্য সম্পর্ককে সফল করার জন্য আর কী কী উপায় এবং কৌশল অবলম্বন করবেন, তাও জেনে নেওয়া জরুরি।
বিশ্লেষণ
প্রেমের সম্পর্কের মধ্যেও সমস্যা দেখা দেওয়া খুবই স্বাভাবিক বিষয়। বিশেষকরে আজকাল জীবনযাপন জটিলতর হচ্ছে। ব্যক্তিগত জীবনেও সম্পর্কের উপর চাপ পড়ছে। কারণ, মানুষের জীবনের দুটি দিক রয়েছে। একটি দিকে রয়েছে তার কর্মজীবন, তো অন্যদিকে অবশ্যই ব্যক্তিগত জীবন। এই দুইয়ের সামঞ্জস্য জরুরি। তবে দুটো দিক সমানতালে সামলাতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেওয়া খুবই স্বাভাবিক।
ভালোবাসার সম্পর্কের প্রথমের দিনগুলোতে মানুষ বেশ আনন্দেই থাকেন। তাদের জীবনে তখন চিন্তার কোনও জায়গা প্রায় থাকে না বললেই চলে। মনের সঙ্গে মন মিলে তখন মানুষ আগামী দিনগুলোর স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকে। তবে কিছুদিন পেরোনোর পরই সমস্যা শুরু হয়ে যায়। তখনই সম্পর্কের ‘তার’ কিছুটা হলেও কেটে যায়। এবার এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে কিছুটা ঝামেলা তাও না হয় সহ্য করে নেওয়া যায়, কিন্তু ঝামেলা নিয়মিত হলেই বিপদ।
কারণ, এমনটা হওয়ার অর্থ হল— আপনাদের সম্পর্কের কেমিস্ট্রিতে কোথাও একটা সমস্যা হয়ে গেছে ধরে নিতে হবে। এক্ষেত্রে প্রথমেই যদি এই সমস্যার সমাধান না করতে পারেন, তবে ভবিষ্যতে সমস্যা আরও বাড়বে বই কমবে না। তাই সতর্ক হয়ে যাওয়াটাই বিশেষ ভাবে প্রয়োজন। অবশ্য দাম্পত্য সমস্যার সমাধান করতে হলে, কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতেই হবে।
পরিবর্তন কারও স্বভাব, চলন-বলন আপনার পছন্দ না-ও হতে পারে, কিন্তু তাই বলে তাকে বোঝানোর পরিবর্তে সবসময় অপমান করাও শোভা পায় না। মনে রাখবেন, আপনি যেমন অন্যের কিছু বিষয় পছন্দ করেন না কিংবা মানতে পারেন না, ঠিক তেমনই আপনার কোনও বিষয় অন্যের কাছেও অপছন্দের হতে পারে। যেমন কেউ হয়তো জোরে জোরে কথা বললে আপনার অস্বস্তি হয়, ঠিক তেমনই আপনি হয়তো খাবার চিবানোর সময় অস্বাভাবিক আওয়াজ করেন— যা অন্যের কাছে অস্বস্তিকর হতে পারে। অতএব, ক্ষমার মনোভাব রাখা জরুরি সংসারে সুখশান্তি বজায় রাখার জন্য।
আপনি ঠিক যেমনটা চান, আপনার সঙ্গীর প্রকৃতি হুবহু সেটা না-ও হতে পারে। তাই বলে তাকে আপনার মতো ধাঁচে গড়ে তুলতে চেষ্টা করবেন না। মনে রাখুন, প্রতিটি মানুষ প্রকৃতিগত ভাবে স্বতন্ত্র। কোনও কিছু আপনার চোখে খুব বেমানান লাগলে, তার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করুন। বুঝিয়ে বললে তিনিও নিজেকে ঠিকই শুধরে নেবেন। এছাড়া, সঙ্গী যদি নিজেকে পালটাতে না চান, তাহলে জোর করতে যাবেন না। সেটা হতে পারে পোশাক কিংবা আচরণ। কারণ, এটির ফলাফল কখনওই শুভ হবে না আপনার সুন্দর সম্পর্কটির পক্ষে। প্রয়োজনে আপনি নিজেকে কিছুটা বদলে নিয়ে তার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করুন।
প্রশংসা
আপাতদৃষ্টিতে আপনার চোখে না পড়লেও, বাস্তবে আরও অনেকের মতোনই সম্পর্কের কিছু খুঁটিনাটি বিষয়কে হয়তো আপনিও এড়িয়ে যাচ্ছেন। ব্যাপারগুলো ঠিক চোখে পড়ার মতোন না হলেও, এই একেকটি ছোট্ট ছোট্ট ঘটনাই আপনার সম্পর্ককে করে তুলতে পারে সজীব আর প্রাণবন্ত। তাই, ছোটো ছোটো সাফল্যতেও পরস্পরকে প্রশংসা করুন, সমর্থন করুন।
বিশ্বাস
পৃথিবীর আর সবার চাইতে আপনি আপনার সঙ্গীর কাছে আলাদা কেন? কারণ এই যে, সে বিশ্বাস করে যে, সবকিছু লন্ডভন্ড হয়ে পৃথিবী অন্যদিকে চলে গেলেও আপনি তাকে ছেড়ে যাবেন না। তার পাশে থাকবেন। তাকে বোঝার চেষ্টা করবেন। আর এই বিশ্বাসটুকুই আপনাকে আপনার সঙ্গীর চোখে আলাদা করে তোলে। করে তোলে অনন্য। তাই সেই বিশ্বাসের মর্যাদা দিয়ে সঙ্গীর পাশে থাকুন সবসময়।
মনে রাখবেন, বিবাহিত জীবনে সাফল্য আনার বিষয়টি খুব চ্যালেঞ্জিং একটি বিষয়। তাই, একে অপরকে বোঝান— আপনারা একসঙ্গে থাকবেন বলেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অতএব, সমস্যা এলে দু’জনে মিলে সমস্যামুক্ত হওয়ার চেষ্টা করবেন।
স্বাধীনতা
শুধু ভালোবাসা দিয়ে কোনও সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা যায় না। নারী-পুরুষ উভয়েরই স্বাধীনতাবোধ রয়েছে। স্বাধীন চিন্তা ও নিজের একটি স্বতন্ত্র জগৎ রয়েছে প্রতিটি মানুষেরই। ভালোবাসার সম্পর্ক এমনই হওয়া উচিত, যা পরস্পরের স্বাধীনতা, মূল্যবোধ ও সম্মানের বিষয়টিকে অক্ষত ও সুরক্ষিত রাখবে।
হঠকারী সিদ্ধান্ত নেবেন না
প্রাচীন রীতিনীতি অনুযায়ী, মেয়ের বিয়ের পর মা-বাবার দায়িত্ব অনেকটাই কমে যেত। বলা যায়, তারা দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলতেন। এছাড়া তাদের আর কোনও রাস্তাও ছিল না। কারণ, মেয়ের বিয়ের পর মা-বাবার অধিকারও খর্ব হতো। মেয়েকে মেনে চলতে হতো শ্বশুরবাড়ির রীতিনীতি এবং শাসন। তাই, মেয়ের বাবা-মা চাইলেও মেয়ের সংসারে নাক গলাতে পারতেন না। কিন্তু বর্তমানে অনেক কিছুর বদল ঘটেছে। বেশিরভাগ সংসারে এখন স্বামীর থেকে স্ত্রী-র কথা-ই বেশি চলে। আর এইজন্য, মেয়ের শ্বশুরবাড়ির সমস্ত ছোটোবড়ো ঘটনাতেও এখন হস্তক্ষেপ করেন মেয়ের মা।
এখন মেয়ে তার সংসারের সবকিছু শেয়ার করে নিজের মায়ের সঙ্গে। স্বামী কিংবা শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে ছোটোখাটো ঝগড়া অথবা মনোমালিন্য হলেও সেই খবর চলে যায় মেয়ের মায়ের কানে। এর ফলে, যে ঝগড়া বা মনোমালিন্য খানিক পরেই হয়তো মিটে যেত, তা মেয়ের মায়ের ইন্ধনে জটিল রূপ নেয় অনেকসময়।
মেয়েকে বোঝানোর পরিবর্তে যখন মেয়ের মা তার শ্বশুর-শাশুড়ির কাছে ঝগড়া-বিবাদের বিষয়ে কৈফিয়ত চান, তখন ঝগড়া-মনোমালিন্যের বিষয়টি আর সাধারণ স্তরে থাকে না। শুরু হয় বাগবিতণ্ডা এবং অবশেষে হার-জিতের অবধারিত লড়াই। আর ঠিক এই অবস্থায় সবথেকে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় জামাই। সে তখন তার মা-বাবাকেও কিছু বোঝাতে পারে না, আবার স্ত্রী কিংবা শ্বশুর-শাশুড়িকেও কিছু বলার সাহস পায় না।
আর তখন থেকেই এই সাংসারিক কূটকচালির জেরে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে চিড় ধরা শুরু হয়। আর এসব জটিলতার অন্তরালে থাকে ইগো বা হার না মানার মতো এক ধরনের অহংবোধ। কেউ ভুল বললে কিংবা ভুল করলে অবশ্যই তার বিরোধিতা করা যায়। কিন্তু শুধু অহংকারের বশবর্তী হয়ে হঠকারী পদক্ষেপ নেওয়াও এক ধরনের মূর্খতা, এটা মাথায় রাখেন না অনেকে।
জেদ করবেন না
বিয়ের পর প্রথমদিকে যতদিন স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে আবেগ থাকে, ততদিন ঝগড়া মনোমালিন্য শুরু হলেও তা স্থায়িত্ব পায় না। কিন্তু আবেগ যখন কমতে থাকে, তখন শুরু হয় হার না মানার জেদ। কেউ সামান্য ভুল কিছু বলে ফেললে কিংবা ভুল করলে তখন আর মানিয়ে নেওয়া কিংবা ভুল শোধরানোর সময় কেউ কাউকে দেয় না। আসলে এ এক ধরনের অহংবোধ। যার ইগো যত প্রকট, সে তত বেশি জেদি। আর এই ধরনের জেদ ধীরে-ধীরে সংসারে ঘুণ ধরিয়ে দেয়।
হয়তো মেয়ের মা-বাবাও চান না মেয়ের সংসারে অশান্তি হোক। কিন্তু বারবার মেয়ের কাছ থেকে তার শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের বিষয়ে অভিযোগ শুনতে শুনতে, মেয়ের মা-বাবাও অনেক সময় ধৈর্য হারিয়ে এবং আশঙ্কিত হয়ে ভুল পদক্ষেপ নিয়ে ফেলেন। আবার অনেকসময় অদূরদর্শিতার কারণেও ছোটোখাটো সমস্যায় আতঙ্কিত হয়ে অতি সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে নেন মেয়ের মা-বাবা এবং মেয়েটি নিজেও।
স্বেচ্ছাচারিতা নয়
এক ছাদের নীচে একসঙ্গে বসবাস করলেও, প্রত্যেকে নিজের সত্তা নিয়ে বাঁচেন। তাই, প্রথমে সবাইকে মানিয়ে নিয়ে চলার মন্ত্র শিখতে হবে। সম্মান পেতে গেলে, সম্মান দিতেও হবে অন্যকে। আপনার অধিকারের বিষয়ে সচেতনও থাকতে হবে। কোথাও বেশি অধিকার ফলানোও যেমন ক্ষতিকারক, ঠিক তেমনই আপনজন আপনাকে বিশ্বাস করে নানারকম স্বাধীনতা দিয়েছেন মানেই আপনি স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠবেন— এটাও ঠিক নয়। মনে রাখবেন, স্বাধীনতারও সীমা-পরিসীমা আছে। স্বাধীনতা লাগামছাড়া হলেই তা স্বেচ্ছাচারিতার রূপ নেয়। আর স্বেচ্ছাচারিতার জন্ম হয় এক ধরনের অহংবোধ থেকে এবং এই ধরনের অহংবোধের জন্ম নেয় প্রকৃত শিক্ষার অভাব এবং অদূরদর্শিতার কারণে।
প্রথমে শুভাকাঙ্ক্ষীর বিশ্বাসের মর্যাদা দিতে শিখুন। যেমন, আপনি কোথায় যাচ্ছেন তা যেমন বাড়ির কাউকে জানিয়ে যাওয়া উচিত, ঠিক তেমনই কোথাও গিয়ে ফিরতে দেরি হলে ইনফর্ম করে দিন স্বামী কিংবা শ্বশুর-শাশুড়িকে। এতে আপনার প্রতি তাদের ভালোবাসা আরও বেড়ে যাবে এবং আপনি কোথাও গিয়ে বিপদে পড়লে আপনজনের সাহায্য পাবেন দ্রুত। কিন্তু যদি অহংকারের বশে আপনি ‘ডোন্ট কেয়ার’ মনোভাব নিয়ে চলেন, তাহলে সম্পর্কে ভালোবাসার বন্ধন আলগা হবে, তৈরি হবে দূরত্ব এবং সংসারে ঘুণপোকা বাসা বাঁধবে।
জীবনে সাধ অনেক থাকতে পারে কিন্তু সেইমতো সাধ্য থাকতে হবে। তা যদি না থাকে, তাহলে আপশোস না করে হাসিমুখে তা মেনে নিতে হবে। আবার আপনার যদি প্রচুর অর্থ-সম্পদ থাকে, তাহলে সেসবের অহংকারে অন্যকে ছোটো করা কিংবা অপমানজনক ইঙ্গিত করাও উচিত নয়। মনে রাখবেন, চিরদিন একই অবস্থা থাকে না সবার।
আজ আপনার ভালো অবস্থা আছে, কাল না-ও থাকতে পারে। আবার অন্যের আজ খারাপ অবস্থা আছে, কাল সে আপনার থেকেও বিত্তবান হতে পারে। অতএব, অর্থ-সম্পত্তির অহংকার বর্জন করুন। মানুষের সঙ্গে সবকিছু তছনছ হয়ে যেতে পারে। মুহূর্তের ভুল কিংবা আচমকা কোনও বড়ো দুর্ঘটনা অথবা বড়ো কোনও অসুখে মানুষ অনেকসময় সর্বস্ব হারিয়ে ফেলে। তাই, ভেবেচিন্তে পা ফেলুন।
তুলনামূলক বিচার করবেন না
এমনকিছু বিষয় আছে, যে-সব ক্ষেত্রে তুলনামূলক বিচার করা ঠিক নয়। যেমন, শ্বশুরবাড়ির অবস্থা যদি আপনার বাপেরবাড়ির থেকে খারাপ হয়, তাহলে কথায় কথায় সেই প্রসঙ্গ তুলে স্বামী কিংবা শ্বশুরবাড়ির লোকেদের অপমান করবেন না। আবার, অন্যের যা আছে আপনাদের তা নেই বলে হীনমন্যতায় ভোগাও উচিত নয়। কারণ আপনি এই বিষয়ে আপশোস করলে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাবেন আপনার স্বামী। তিনিও তা অ্যাচিভ করতে চাইবেন আপনাকে খুশি করার জন্য এবং এই অ্যাচিভ করতে গিয়ে তিনি হয়তো এমন কিছু ভুল করে বসবেন কিংবা অনৈতিকতার আশ্রয় নেবেন— যা বিপদ ডেকে আনতে পারে। অতএব, ‘সাকসেস অ্যাট এনি কস্ট’ এই নীতি বর্জন করুন। আপনার যা আছে তাতেই সন্তুষ্ট থাকার চেষ্টা করুন।
গঠনমূলক চিন্তাভাবনা জরুরি
অহংকার আমাদের গঠনমূলক চিন্তাভাবনার মানসিকতা নষ্ট করে দেয়। তাই, যারা বেশি অহংকারী, তারা কনস্ট্রাকটিভ হতে পারেন না। আর কনস্ট্রাকটিভ হতে না পারলে, জীবনে সুখশান্তি অধরাই থেকে যাবে। আপনার সবকিছু অনেক আছে মানেই বিশ্বসেরা আর যার কম আছে সে নরাধম— এমন ভাবনা আসলে আপনার মূর্খতারই নামান্তর। এই ধরনের অহংকার আপনাকে একসময় অন্যদের থেকে আলাদা করে দেবে, আপনি ধীরে-ধীরে ভালোবাসা বর্জিত একা একটা মানুষে পরিণত হবেন। আর একাকিত্ব মানেই অবসাদ এবং অবসাদ মানেই সবকিছু থেকেও কিছুই নেই। এক্ষেত্রে অহংবোধ মন থেকে ঝেড়ে ফেলে, ভালোবাসা দিয়ে আপন করে নিতে হবে জীবনসঙ্গীকে।
কথা বলে সমস্যা মেটান
ঝামেলা হতেই পারে। এবার সেই ঝামেলার পর মুখ গোমড়া করে একে অপরের সঙ্গে কথা বন্ধ করে দিলে কিন্তু সমস্যা না মেটাই স্বাভাবিক৷ এক্ষেত্রে দ্রুত কথা বলে নেওয়াটাই হল বুদ্ধিমানের কাজ। যে-কোনও সমস্যা কিন্তু আলোচনা করে মেটানো যায়। সমস্যা এড়িয়ে গেলে ঝামেলা তো মিটবেই না, বরং আরও জটিল হবে। তাই শুরুতেই সতর্ক হয়ে যাওয়াটা খুবই জরুরি।
পরস্পরের মতামতকে সম্মান দিন
পরস্পরের মতামতকে সম্মান দেওয়াটা খুবই জরুরি। অপরের ইচ্ছে অনিচ্ছেকেও মাঝেমধ্যে গুরুত্ব দিতে শিখুন। এতে সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে। সবসময় যদি আপনি নিজের মতটা সঙ্গীর উপর চাপাতে যান, তাহলে তার বিরক্তি আরও বাড়বে। তাকে গুরুত্ব দেওয়ার মাধ্যমেও সমস্যার সমাধান হওয়া সম্ভব।
ঝগড়ার মুহূর্তেও কুকথা নয়
অনেকেই এই ভুল করে থাকেন। আসলে তারা ভাবেন না যে, ঝগড়ার সময় কিছু খারাপ কথা বললে সমস্যা দেখা দেবে। তাই ঝগড়ার সময়ে এই ভুল করা চলবে না। আপনি যদি কথায় কথায় খারাপ কথা বলতে শুরু করে দেন, তবে অনেক সমস্যাই দেখা দিতে পারে। আপনার সঙ্গী কিন্তু আপনার ওই রাগের মুহূর্তে বলা কথাগুলোই মনে রাখতে পারেন সারাজীবন। এমনকী ঝগড়ার মুহূর্তে খারাপ কিছু কথা বললে তার প্রতিঘাত আরও বেশি। ডিভোর্স পর্যন্ত হতে পারে।
তাই সম্পর্কে মাধুর্য বজায় রাখতে পরস্পরকে সম্মান করুন। পরস্পরের প্রাইভেসিকে সম্মান করুন। দু’জনে, একে অপরকে স্পেস দিন। এতে সম্পর্কের দমবন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হবে না। হৃদ্যতাও অটুট থাকবে।