আমাদের দেশের উত্তর হিমালয়ের পর্যটন স্পটগুলি কেবল যানজট এবং নতুন হোটেল তৈরির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, স্থানীয় মানুষের জন্যও সমস্যা তৈরি করছে। শান্তিতে অবসর যাপনের জন্য যারা ১০-২০ বছর আগে জমি-বাড়ি কিনেছিলেন প্রকৃতির কোলে, তারাও এখন চিন্তিত পর্যটন কেন্দ্রের নানারকম সমস্যার কারণে। অথচ নানারকম সমস্যার পরও পর্যটন কেন্দ্রের জমির দাম বাড়ছে ক্রমশ। কিন্তু মনে রাখতে হবে, প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্র দেশের জন্য অর্থ উপার্জনের অন্যতম ক্ষেত্র, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু সেই পর্যটন ক্ষেত্র যদি মর্যাদা হারায়, তাহলে উদ্বেগ তো বাড়বেই।
পর্যটন ক্ষেত্রে হয়তো উপার্জন বাড়ছে কিন্তু যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া, গাছ কেটে হোটেল বানানো, নিয়ম না মেনে যত্রতত্র খাবারের দোকান বানানো, চারিদিকে আবর্জনার স্তূপ প্রভৃতির কারণে অনেক পর্যটন কেন্দ্র মর্যাদা হারাচ্ছে প্রতিদিন। গোয়া, কেরালা, গোটা কন্যাকুমারী, বলা যায় ভারতের সর্বত্র, যেখানে থেকে মানুষ আগে শান্তি পেত, বাণিজ্যিকরণের জন্য সেইসব পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে এখন দূষণ বাড়ছে। কিছু ছোটো গ্রামেও এখন ঘরে ঘরে নতুন হোটেল খোলা হচ্ছে কিংবা বহিরাগতরা গিয়ে ন্যাচারাল বিউটি নষ্ট করে বহুতল হোটেল তৈরি করছে।
গোয়াতে পুরোনো বাড়ির সামনে ঝোলানো বোর্ডে লেখা হয়েছে যে, ‘বাড়ির ছবি তুলে গোপনীয়তা নষ্ট করবেন না। ফোটোগ্রাফি নিষিদ্ধ।' অথচ আগে পর্যটকদের খোলাখুলি স্বাগত জানানো হতো এই গোয়াতে। পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে হয়তো জমির দাম বেড়েছে, ছোটো গ্রামগুলিও আকর্ষণের কেন্দ্রে রয়েছে, কিন্তু পর্যটকরা এখন আর ততটা খুশি নন, যতটা আগে কোথাও বেড়াতে গিয়ে খুশি হতেন।
পর্যটকদের যেভাবে বোকা বানানো হচ্ছে, তা হয়তো আর বেশিদিন চলবে না। কারণ, পর্যটকরা একসময় জেনে যাবেন, কোন-কোন পর্যটন কেন্দ্র মর্যাদা হারিয়েছে। অনেক পর্যটন কেন্দ্রে মদ এবং মাদকের ব্যাবসাকে এতটাই বাড়িয়ে তোলা হয়েছে যে, সেইসব জায়গায় ২৪ ঘন্টা বেআইনি ভাবে এইসব ‘বিষ’ বিক্রি হচ্ছে।
আগে তীর্থস্থান ছিল চালকলা, ফুল-বেলপাতা আর দেবীদেবতার কেন্দ্র, আর এখন অনেক তীর্থস্থানে মদ, মাংস এবং দেহব্যাবসা চলে। আসলে, সব ক্ষেত্রেই চলছে বাড়াবাড়ি। আর এই বাড়াবাড়ির অবসান কোনওদিন সম্ভব কিনা, তা আমরা কেউ জানি না।