ঘর থেকে বেরিয়ে বাবার পাশে বসে সুনীল জিজ্ঞাসা করল, 'তুমি কেমন আছো বাবা?’
—যেমন দেখছিস। খুব অবাক হয়েছিস তাই না? ভাবছিস যার মরার ব্যবস্থা পাকা করে পালিয়ে এলাম, সে এভাবে বেঁচে ফিরল কী করে ?
—না বাবা, আসলে...।
—চুপ কর, আমাকে আর আসলে বোঝাতে হবে না। ম্যানেজারকে মিথ্যা কথা বলে বাড়ি এসে আর ফিরে গেলি না। এসে সবাইকে বলে দিলি বাবা মরে গেছে, ঘটা করে শ্রাদ্ধশান্তিও করে ফেললি।
সুনীল আমতা আমতা করে বলল, 'আসলে আমি আসার দু'দিন পরে আশ্রমের একজন ফোন করে তোমার মৃত্যু সংবাদ দিল। তাই আর যাইনি।'
—চুপ কর, মিথ্যা কথা বলিস না।
–কিন্তু তুমি শ্রাদ্ধের কথা জানলে কী করে?
—গয়ায় পিণ্ডদান করতে আসা তোর মামাবাড়ির একজনের মুখে।
—গয়ায় কেন গিয়েছিলে তুমি?
—ওখানেই তো বিদ্যাদের বাড়ি, ওই নিয়ে গিয়েছিল ওর বাড়িতে, সেখানেই ছিলাম এতদিন। ওর সেবাতেই তো বেঁচে ফিরলাম আমি।
অবাক হল সুনীল, ‘কী বলছ তুমি? কীভাবে ঠিক হলে তুমি?”
—সে অনেক কথা।
সুমতি দুধ-মুড়ি নিয়ে এসেছিল। বলল, “খেতে খেতে বলো বাবা।”
তারপর বাবার মুখে মুক্তি ভবনের শেষ চারদিনের কাহিনি শুনে সুনীল তো হতবাক।
—তুই চলে আসার পর প্রথমটা আমি খুব মুষড়ে পড়েছিলাম। কিন্তু বিদ্যার সেবাযত্নে আমি যেন প্রাণ ফিরে পেলাম। জরাগ্রস্ত বৃদ্ধ বাবার সঙ্গে, সে আমারও খুব খেয়াল রাখত, যত্ন করে খাইয়ে দিত। দু'দিন পরে যখন ওর বাবা মারা গেল, আর তুইও এলি না, তখন আমার মতো বিদ্যাও পড়ল চিন্তায়। এই ক'দিনে আমার উপরে মেয়েটার এমন মায়া পড়ে গিয়েছিল যে, আমাকে অসহায় অবস্থায় ফেলে যেতে পারল না। বলল, তোমার ছেলে মিথ্যা কথা বলে পালিয়েছে, ও আর আসবে না। মুক্তি ভবন থেকে বের করে দিলে এবার তোমাকে রাস্তায় পড়ে থাকতে হবে। তার থেকে আমার সঙ্গে চলো। বাবা তো চলে গেল, এবার আমি একা, তোমার কোনও অসুবিধা হবে না। গয়ায় আমাদের বাড়ির কাছে একজন বৈদ্য আছে হাঁপানির ভালো ওষুধ দেয়, তার কাছে কিছুদিন চিকিৎসা করিয়ে তারপর তোমাকে বাড়ি রেখে আসব। বিদ্যার কথায় আমি তো হাতে চাঁদ পেলাম। পরদিন চলে গেলাম ওর বাড়িতে। তারপর সেই বৈদ্যর ওষুধ খেয়ে আর বিদ্যার সেবাযত্নে আমার হাঁপানির কষ্ট অনেকটা কমে গেল। তোদের জন্যে মনটা খুব খারাপ করছিল, বাড়ি আসতে চাইছিলাম, কিন্তু বিদ্যা ছাড়ল না। বলল, আরও কিছুদিন থাকো, পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যেও। তারপর এই বছর খানেক ওষুধ খেয়ে সুস্থ হতে চলে এলাম।