এখন আমরা এমন এক আবহাওয়ার মধ্যে আছি, যা খুবই অদ্ভূত। এখন দ্রুত তাপমাত্রা ওঠানামা করছে। ভোরবেলায় গায়ে পাখার হাওয়া লাগালে গা শিরশির করছে, কিন্তু দুপুরে আবার বেশ গরম লাগছে। আর তাপমাত্রার এই দ্রুত ওঠানামার কারণে, সর্দিকাশি, ভাইরাল সংক্রমণ এবং অ্যালার্জি-র সমস্যা বাড়ছে।

আসলে, এই খামখেয়ালি আবহাওয়া যেমন অস্বস্তিকর, ঠিক তেমনই শরীরের জন্যও সুখকর নয়। কারণ, এই সময় অ্যালার্জি থেকে শুরু করে নানারকম স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। অতএব, কীভাবে সমস্যা এড়িয়ে চলবেন কিংবা সুস্থ থাকবেন, সেই বিষয়ে তিনজন চিকিৎসকের বক্তব্য এবং পরামর্শ তুলে ধরা হচ্ছে।

ডা. এম এস পুরকাইত-এর পরামর্শ  

এই সময় বাতাসে পরাগরেণু এবং অন্যান্য অ্যালার্জেন ভাসতে থাকে, যা আমাদের নাক-মুখ দিয়ে ফুসফুসে গিয়ে অ্যালার্জিক কাশি এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই এই সময় আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে এবং দুপুরের প্রখর রোদ এড়িয়ে চলতে হবে। শুধু তাই নয়, শরীরকে একটা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রাখতে হবে। নয়তো স্বাস্থ্যহানি ঘটতে পারে এবং চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।

অদ্ভুত এই আবহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আরও বেশি সময় হাঁটাচলা এবং ব্যায়াম করতে হবে। প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে তাজা শাকসবজি। আর কোনওরকম অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিলে, দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো দ্রুত চিকিৎসা করাতে হবে।

ডা. কেতকী সুবেদার ঘোষ-এর পরামর্শ 

বর্তমান আবহে চোখের যত্ন নিতে হবে বিশেষ ভাবে। কারণ, এই সময় চোখে অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে এবং সংক্রমণের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই, কীভাবে চোখের যত্ন নেবেন, সেই বিষয়ে জেনে নিন বিশদে।

  • পরাগ এবং ধুলো থেকে আপনার চোখকে রক্ষা করুন। পরাগ এবং ধুলো চোখের অ্যালার্জিকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। যার ফলে চোখে চুলকানি, লাল ভাব এবং চোখ দিয়ে জল পড়ার সমস্যা হতে পারে। অতএব, বাড়ির বাইরে থাকাকালীন চোখে সানগ্লাস ব্যবহার করুন। সেইসঙ্গে, বাইরে থেকে আসার পর নিজের মুখ এবং হাত ধুয়ে নিন সাবান দিয়ে।
  • চোখ স্পর্শ করা বা রগড়ানো বন্ধ করুন। কারণ, যদি আপনার অ্যালার্জি থাকে, তাহলে চোখে আঙুল দিয়ে রগড়ালে চোখ আরও জ্বালাপোড়া করতে পারে। তাই, সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে নিয়মিত আপনার চোখ এবং চোখের পাতা পরিষ্কার করুন। অন্যের মেক-আপ ভাগ করে নেওয়া এড়িয়ে চলুন এবং পরিষ্কার ব্রাশ ব্যবহার করুন।
  • বাগানে গাছের পরিচর্যা করর সময় চোখে চশমা কিংবা সানগ্লাস পরুন। সেইসঙ্গে, মাঠে খেলা চলাকালীন কিংবা খেলা শেষ করে হাত না ধুয়ে চোখে হাত দেবেন না। আর কোনও রাসায়নিক পদার্থ যাতে চোখের ভিতর না যায়, সেই বিষয়ে সতর্ক থাকুন।
  • কৃত্রিম টিয়ার ড্রপ ব্যবহার করুন— দীর্ঘক্ষণ রোদে থাকলে চোখ শুষ্ক, চুলকানির সমস্যা এবং কখনও কখনও লাল এবং জল পড়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমন সমস্যা হলে, চক্ষু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে দেখা করুন এবং তাঁর পরামর্শ মতো চোখের ড্রপ ব্যবহার করুন, এতে উপশম হবে।
  • ঘরের বাতাস বিশুদ্ধ রাখুন — ঘরের পরিবেশ বিশুদ্ধ এবং স্বাস্থ্যকর রাখা একটি কর্তব্য। এতে চোখের সংক্রমণের সম্ভাবনা কমে।
  • সুষম খাবার খান এবং হাইড্রেটেড থাকুন। কারণ, দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখতে সাহায্য করে সুষম খাবার এবং জল। মনে রাখবেন, ভিটামিন এ, সি এবং ই সমৃদ্ধ খাবার, সবুজ শাকসবজি, শুকনো ফল এবং দুধ, চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এই জাতীয় ডায়েট চার্ট চোখের অ্যালার্জি কমাতেও সাহায্য করে। আর পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করা উচিত চোখের আর্দ্রতার মাত্রা বজায় রাখার জন্য।
  • ন্যূনতম শান্তিপূর্ণ ঘুম অপরিহার্য। চোখ এবং শরীরকে আরাম দেওয়ার জন্য ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম আবশ্যক। আর ঘুমানোর সময় ইলেকট্রনিক গ্যাজেটগুলি দূরে রাখুন। কারণ, স্ক্রিন-এর উজ্জ্বল আলো চোখের উপর চাপ সৃষ্টি করে।
  • ঘুমের সময়কালের ধারাবাহিকতা বজায় রাখুন। শোওয়ার ঘরে গাঢ় রঙের পর্দা ব্যবহার করুন। এড়িয়ে চলুন প্রখর রোদ। কারণ, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি চোখের চরম ক্ষতি করে দিতে পারে।
  • এই সময় নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা করান।

ডা. ঈশা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর পরামর্শ

এই সময় অ্যালার্জি, শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ এবং মশাবাহিত রোগের শিকার হতে পারেন যে-কেউ। এক্ষেত্রে মনে রাখবেন, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা এবং ওষুধ প্রাকৃতিক এবং কার্যকর সমাধানে খুব ভালো ভূমিকা নিয়ে থাকে। কখন কী করবেন এই সময়, তা জেনে নিন বিশদে

হালকা লক্ষণ: অ্যালার্জি এবং এই সময়ের অন্যান্য রোগের লক্ষণগুলি হালকা থাকা অবস্থায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা শুরু করুন।

গুরুতর লক্ষণ: অ্যালার্জি-র কারণে যদি আপনার উচ্চ জ্বর (১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইটের উপরে), শ্বাসকষ্ট, শরীরে তীব্র ব্যথা কিংবা গলা শুকিয়ে যাওয়ার সমস্যা অনুভব করেন, তাহলে তখনই চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চিকিৎসা শুরু করুন। নিজে থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে কিংবা ওষুধের দোকানে অনুরোধ করে অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে খাবেন না। কারণ, কোন অ্যান্টিবায়োটিক খেলে আপনার রোগ সারবে এবং শরীরের ক্ষতি হবে না, তা নিয়ে একমাত্র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

উচ্চঝুঁকিপূর্ণ সমস্যা: যদি আপনার আগে থেকে হাঁপানি, ডায়াবেটিস প্রভৃতি সমস্যা থাকে কিংবা আপনি প্রবীণ ব্যক্তি হন, তাহলে জটিলতা প্রতিরোধ করার জন্য তাড়াতাড়ি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা করানোই ভালো।

অ্যালার্জিক রাইনাইটিস

গাছ এবং ফুলের পরাগরেণু থেকে হাঁচি, পিচুটিতে চোখ আটকে যাওয়া এবং চুলকানির সমস্যা হতে পারে। যদি লক্ষণগুলির মধ্যে মুখের ফোলাভাব, তীব্র সাইনাসের চাপ কিংবা ক্রমাগত শ্বাসকষ্ট হতে থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চিকিৎসা করান দ্রুত।

ইনফ্লুয়েঞ্জা (ফু)

ভাইরাল মিউটেশনের কারণে এই সময় ইনফ্লুয়েঞ্জার (ফ্লু) শিকার হতে পারেন। তাই, এই সময় অসুস্থ ব্যক্তিদের থেকে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এড়িয়ে চলুন এবং ঘন ঘন হাত ধুয়ে নিন ভালো সাবান দিয়ে৷ সেইসঙ্গে, এই সময় মশারি ব্যবহার করুন এবং কোথাও জল জমতে দেবেন না।

বিশেষ সতর্কতা

  • বাইরের খাবার খাদ্য বিষক্রিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। অতএব, এই সময় বাইরের খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন
  • প্রখর রোদ এড়িয়ে চলুন। কারণ, বেশি রোদে পোড়ার ফলে ফুসকুড়ি এবং ডার্মাটাইটিস হতে পারে
  • প্রতিরক্ষামূলক পোশাক এবং সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন

• যদি ত্বকে ফোসকা, লালচে ভাব অথবা জ্বলে যাওয়ার মতো যন্ত্রণা অনুভব করেন ক্রমাগত, তাহলে বরফ কাপড়ে জড়িয়ে যন্ত্রণার জায়গায় চেপে ধরুন।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...