শিশু যদি মায়ের বুকের দুধ পান করে, তাহলে শিশু এবং মা উভয়েই নির্দিষ্ট কিছু রোগ থেকে রক্ষা পাবেন। অতএব, জন্মাবার পর প্রথম ছয় মাস শিশুটিকে কেবল মায়ের দুধ খাওয়ানো উচিত। এই সময় সমস্ত পুষ্টির জন্য শিশুটি মায়ের উপর নির্ভর করে। তাই, মা যখন তাঁর সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াবেন, সেই সময় পুষ্টিকর খাবার খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তিনি যা খাবেন তা তাঁর স্তনের দুধের শক্তি, প্রোটিন, পুষ্টি এবং ভিটামিন সামগ্রী নির্ধারণ করবে। মনে রাখবেন, এই সময় পুষ্টির চাহিদা বেশি থাকে এবং তা পূরণ না করা হলে মা এবং তাঁর শিশু উভয়েরই নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

চিকিৎসকদের মতে, মাতৃদুগ্ধের কোনও বিকল্প নেই। স্তন্যদানকারী মায়েদের তাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে, স্তনের দুধের গুণমান ও পরিমাণ বজায় রাখতে এবং বুকের দুধ উৎপাদন করার জন্য শক্তি সরবরাহ করতে পর্যাপ্ত পুষ্টির প্রয়োজন। স্তন্যদানের সময় খাবার গ্রহণের পরিমাণ এবং ফ্রিকোয়েন্সি অবশ্যই বাড়াতে হবে। প্রথম মাসে অতিরিক্ত ৫৫০ কিলো ক্যালোরি শক্তির প্রয়োজন হয় এবং স্তন্যদানের পরবর্তী ৬ মাসে অতিরিক্ত ৪০০ কিলো ক্যালোরির প্রয়োজন হয়। ভাত, রুটি, ঘি প্রভৃতি খাওয়ার মাধ্যমে পূরণ করা যেতে পারে পুষ্টির ঘাটতি এবং এগুলি পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড সরবরাহ করে। প্রথম মাসের পর পরবর্তী ৬ মাস প্রতিদিন ৫-৮ গ্রাম প্রোটিন বাড়াতে হবে। এসব পুষ্টি জোগান দেওয়া যেতে পারে ডাল, বাদাম, দুধ, মাছ, মাংস ডিম প্রভৃতির মাধ্যমে। দুধ খাওয়ানোর সময় প্রতিদিন ১২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন। দুধ জৈবিক ভাবে উপলব্ধ ক্যালসিয়ামের একটি ভালো উৎস। এরিথ্রপয়েসিসের উচ্চ চাহিদা মেটাতে প্রয়োজন আয়রনের। সবুজ শাকসবজি এবং তাজা ফলের মাধ্যমে পাওয়া যেতে পারে ভিটামিন এ এবং সি। দুধ খাওয়ানো মায়েদের খেতে হবে দই। কারণ, দই থেকে ভিটামিন বি-১২ পাওয়া যায়।

ভারসাম্যযুক্ত খাদ্য

যে-সব মায়েরা বুকের দুধ পান করান তাদের সন্তানকে, তাদের ক্ষেত্রে ব্যাল্যান্স ডায়েট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে প্রতিদিন আয়রন, ফলিক অ্যাসিড এবং ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণেরও পরামর্শ দেওয়া হয়। ৫০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ২৫০ মিলিগ্রাম ভিটামিন ডি-যুক্ত ক্যালসিয়াম ট্যাবলেটগুলি ছয় মাসের পরে দিনে দু’বার (মোট ১ গ্রাম ক্যালসিয়াম / দিন) অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে মনে রাখবেন, কফি এবং চা জাতীয় পানীয়গুলির অতিরিক্ত সেবনের ফলে, শরীরে বিরূপ প্রভাব ফেলে। একই ভাবে ধূমপান এবং মদ্যপানও এড়ানো উচিত। কারণ, এগুলিও একই ভাবে শরীরের ক্ষতি করে। মায়ের বুকের দুধের মাধ্যমে এগুলি শিশুর শরীরে গেলে, ওদের শরীরে অস্বস্তি, দুর্বলতা, ঘুমের ঘাটতি প্রভৃতি সমস্যা হতে পারে।

শিশুকে বুকের দুধ পান করানোর সময় সামুদ্রিক খাবার সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত মায়েদের। কারণ, এর থেকে ভিটামিন বি-১২ পাওয়া যায়। আর যদি ভিটামিন বি-১২-এর ঘাটতি হয়, তাহলে মা এবং শিশুর স্নায়বিক ক্ষতি হতে পারে। তাই, আমেরিকান ডায়েটিক অ্যাসোসিয়েশন পরামর্শ দিয়েছে, গর্ভাবস্থাকালীন এবং দুগ্ধদানের সময় ভিটামিন বি-১২ গ্রহণ করতে হবে মাকে।

বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় শক্তি এবং পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা

স্তন্যদানকারী মায়ের জন্য প্রথম ছয় মাসের জন্য অতিরিক্ত ৫০০ কিলো ক্যালোরি এবং পরবর্তী ছয় মাসে ৪০০ কিলো ক্যালোরি প্রয়োজন। প্রতিদিন ৬-৮টি রুটি খেতে হবে এর জন্য। মায়ের বুকের দুধের ১০০ মিলি ৭০ কিলো ক্যালোরি শক্তি দেয় শিশুকে। প্রসবের পরে প্রথম ছয় মাসের মধ্যে, প্রতিদিন ৭৫০ মিলিলিটার বুকের দুধ উৎপাদিত হয়।

মায়ের শারীরিক শক্তি কম থাকলে, তা প্রোটিনের মাধ্যমে পূরণ হবে। দুগ্ধদানের সময় অতিরিক্ত প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তা আছে। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের মাধ্যমে পূরণ করা যেতে পারে এই ঘাটতি। যেমন, এর জন্য একটি ডিম বা ২৫ গ্রাম পনির রাখতে হবে খাদ্য তালিকায়।

সতর্কতা

  • চা-কফি পান করা কমান
  • চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাবেন না
  • ধূমপান এবং মদ্যপান বন্ধ করুন
  • ডায়েট বা ওষুধ সেবনের মাধ্যমে ওজন হ্রাস করার প্রলোভন প্রতিরোধ করুন।

জরুরি বিষয়

  • প্রতিদিন উপযুক্ত পরমাণে জল, দুধ এবং ফলের রস পান করুন
  • বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় শারীরিক শক্তির ঘাটতি পূরণ করার জন্য আপনাকে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি খেতে হবে পুষ্টিকর খাবার

• প্রতিদিন প্রচুর তাজা ফলমূল, শাকসবজি, দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্য, মাছ, মাংস, বাদাম, মটরশুঁটি এবং মুসুর ডাল খান উপযুক্ত পরিমাণে।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...