যাঁরা লেখালেখি করেন কিংবা যাঁরা বই পড়তে ভালোবাসেন, তাঁদের জন্য বইমেলা বয়ে নিয়ে আসে খুশির হাওয়া। আর তাই শারদোৎসবের পরে এই রাজ্যের সবচেয়ে বড়ো উৎসব— আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা। সেই বইমেলার জন্য আর বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না। কারণ, ৪৯তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার উদবোধন ২২ জানুয়ারি, ২০২৬ এবং এই বইমেলা চলবে ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৬ পর্যন্ত। গতকাল কলকাতা-র এক অভিজাত হোটেলে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে জানানো হয়েছে, এবারও আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার উদবোধন করবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্মানীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন দেশ ও বিদেশের বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যিক ও অন্যান্য গুণীজন। এবারও আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে সল্টলেক অঞ্চলের বইমেলা প্রাঙ্গনে।

সাংবাদিক সম্মেলনে, আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার আয়োজকদের পক্ষ থেকে গভীর কৃতজ্ঞতা জানানো হয় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কারণ, আয়োজকরা  জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর সার্বিক সহযোগিতা ছাড়া এই বিশাল উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব নয়। শুধু তাই নয়, বইমেলা প্রাঙ্গণকে সাজিয়ে তোলার জন্য এবং সুন্দর ভাবে আয়োজন করতে সাহায্য করার জন্য কৃতজ্ঞতা জানানো হয়েছে নগরোন্নয়ন দপ্তর, কে এম ডি এ, তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, বিধাননগর পুলিশ, কলকাতা পুলিশ, বিধাননগর পৌরসংস্থা সহ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অন্যান্য দপ্তরকে।

উল্লেখ্য, বেশ কয়েক বছর ধরে আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা পৃথিবীর বৃহত্তম পাঠকধন্য বই উৎসব। ২০২৫ সালের বইমেলায় এসেছিলেন ২৭ লক্ষ বইপ্রেমী মানুষ, বই বিক্রির পরিমাণ ২৩ কোটি টাকা। মেলার এই অভাবনীয় সাফল্যে আয়োজকরা যেমন আনন্দিত, তেমনই  চিন্তান্বিতও। কারণ, আগামী বইমেলায় অংশগ্রহণের জন্য অনেক নতুন প্রকাশক আবেদন করেছেন। অথচ বইমেলা প্রাঙ্গণের পরিসর এতটুকুও বাড়ানো যায়নি। তদসত্ত্বেও গতবার সামান্য কিছু নতুন স্টল দিতে পেরেছেন আয়োজকরা। তাই অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানানো হয়েছে, আগামী বইমেলায় স্টলের সংখ্যা আর বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।

তবে, আনন্দ প্রকাশ করে জানানো হয়েছে যে, আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় এই প্রথম ফোকাল থিম কান্ট্রি হিসেবে অংশগ্রহণ করছে আর্জেন্তিনা – যে দেশের সঙ্গে ভারত তথা বাংলার অতি নিকট সম্পর্ক। এই অংশগ্রহণের মাধ্যমে দুদেশের মধ্যে পারষ্পরিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে বলে মনে করেন আয়োজকরা।

সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ভারতে আর্জেন্তিনা দূতাবাসের দুজন প্রতিনিধি। বইমেলায় ফোকাল থিম হিসেবে অংশগ্রহণের বিষয়ে তাঁরা আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।

আগামী ২০২৭ আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার সুবর্ণজয়ন্তী। এই উপলক্ষ্যে আয়োজকরা চাইছেন,  যেসব আলোকচিত্রী প্রথম ২০ বছর অর্থাৎ ১৯৭৬ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত ময়দানে আয়োজিত বইমেলার দুর্লভ সব ছবি তুলেছেন, তাঁদের আলোকচিত্রের একটি প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনী করার ইচ্ছে রয়েছে। এইসব দুর্লভ ও স্মৃতিবিজড়িত আলোকচিত্রের মধ্যে সেরা ১০-টিকে যথাযোগ্য মূল্যে পুরস্কৃত করার কথা জানানো হয়েছে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে। ২০২৬ বইমেলার প্রেস কর্ণারে তাঁদের পাঠানো সব ছবিই মনোনয়ন সাপেক্ষে প্রদর্শিত হবে। আয়োজকদের এও  ইচ্ছে, আগামী সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষে এই ছবিগুলি বইমেলার স্মরণিকায় প্রকাশ করার। ই-মেলে স্বচ্ছন্দে সংগ্রহে থাকা যে-কোনও বইমেলার ছবি পাঠাতে পারেন আলোকচিত্রীরা। ছবি পাঠাবার শেষ দিন ১০ ডিসেম্বর ২০২৫।

প্রতিবছরের মতো আগামী ২০২৬ বইমেলায় অংশগ্রহণ করতে চলেছেন গ্রেট ব্রিটেন, আমেরিকা, জার্মানি, অষ্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, স্পেন, পেরু, কলম্বিয়া, জাপান, থাইল্যান্ড এবং লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশ। আলোচনা চলছে আরও কিছু দেশের সঙ্গে। অন্যান্য বছরের তুলনায় ২০২৬ এ আরও বেশি সংখ্যক দেশের উপস্থিতি আশা করছেন আয়োজকরা। এছাড়া থাকছে ভারতের অন্যান্য রাজ্যের প্রকাশনাও, যেমন দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, তামিলনাডু, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, বিহার, অসম, ঝাড়খন্ড, কর্ণাটক, ওডিশা এবং ত্রিপুরা। যথারীতি থাকবে লিটল ম্যাগাজিন প্যাভিলিয়ন, চিলড্রেনস প্যাভিলিয়ন ও অন্যান্য আকর্ষণও।

আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার অন্যতম আকর্ষণ, কলকাতা লিটারেচার ফেস্টিভ্যাল। অনুষ্ঠিত হবে ২৪ এবং ২৫ জানুয়ারি, ২০২৬।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...