আবার শীতকাল ফিরে এসেছে! আমাদের দেশের মতো গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশগুলিতে, স্বস্তি আনতে সাহায্য করে শীতকাল। তবে, সাম্প্রতিক জলবায়ু পরিবর্তন এবং বিশ্ব উষ্ণায়নের সঙ্গে আমরা যা দেখেছি, তা হল— একটি অত্যন্ত অনিয়মিত শীতকাল। শীতকালে এখন মাঝেমধ্যে বৃষ্টিপাতও দেখতে পাই, যা আগে কখনও দেখা যায়নি। এর ফলে তাপমাত্রার ওঠানামা এবং ডেঙ্গু ছড়ায়। অন্যান্য সংক্রমণও বৃদ্ধি পায় এবং হজমের সমস্যা দেখা দেয়। যা আমাদের কপালে ভাঁজ ফেলে। তাই, শীতকালে স্বস্তি পেলেও, সর্বদা সতর্ক থাকা উচিত। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন কলকাতা-র মণিপাল হাসপাতালের ( সল্ট লেক স্পেশালিটি ক্লিনিক ) কনসালট্যান্ট জিআই সার্জন ডা. সঞ্জয় মণ্ডল।
শীতকালে বিয়ে এবং পিকনিকের জোয়ার চলতে থাকে। আর তাই ভারী এবং তেল-মশলাযুক্ত খাবার খাওয়ার হিড়িক চলে। অতএব, যা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ, তা হল— ভালো খাবার মানে তেল-মশলাযুক্ত ভারী এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার নয়। এসব খাবার খেলে হজমের সমস্যা গুরুতর হতে পারে।
এই প্রসঙ্গে জেনে রাখুন, হঠাৎ তাপমাত্রা কমে গেলে কখনও কখনও শরীরের বিপাক ক্রিয়া হ্রাস করে এবং এর ফলে খাবার হজমে ব্যাঘাত ঘটে।
আমরা সাধারণত অতিরিক্ত তেল-মশলাযুক্ত আমিষ খাবার খেতে ভালোবাসি। তবে, শীতকালে যদি আমরা আমাদের খাদ্যাভ্যাসের প্রতি যত্নবান না হই, তাহলে আমাদের স্বাস্থ্য গভীর সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।
শীতকালে আমাদের বেশি খাওয়ার তাগিদ থাকতে পারে কিন্তু ঠান্ডা আবহাওয়া এবং বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাতের কারণে আমাদের হজমশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে, তাই বদহজমের সমস্যা দেখা দেয়।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দূষণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং শীতকালে এটি আরও বেশি দেখা যাচ্ছে। এর সঙ্গে পর্যাপ্ত সূর্যালোকের অভাব এবং পর্যাপ্ত সূর্যালোকের সংস্পর্শের থাকার অভাব ঘটে। এর ফলে আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি সংশ্লেষণ হ্রাস পায়, যা শেষ পর্যন্ত হাড় দুর্বল করে। আবহাওয়া যত ঠান্ডা, সূর্যালোকের সংস্পর্শ তত কম। খুব চরম পরিস্থিতিতে এর জন্য অতিরিক্ত ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে। এছাড়া, ঠান্ডা আবহাওয়ায় আমরা চা এবং কফির মতো প্রচুর গরম পানীয় পান করতে বাধ্য হই, তবে মনে রাখা উচিত যে, এগুলিতে প্রচুর ক্যালোরি থাকে এবং দীর্ঘমেয়াদে আমাদের জন্য ক্ষতিকারক। ক্যাপুচিনো পানীয় থেকে সাবধান থাকুন!
মনে রাখবেন, আজকাল ‘পুষ্টির অভাব’ নিয়ে খুব বেশি চিন্তা না করে বরং ‘অতিরিক্ত অস্বাস্থ্যকর খাবার’ খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। এছাড়াও, ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে বাইরের কার্যকলাপ সীমিত হতে পারে এবং এর ফলে ওজন আরও বাড়তে পারে।
ঠান্ডা আবহাওয়ায় উত্তেজক পানীয় গ্রহণের অভ্যাস থাকে অনেকের। কিন্তু অতিরিক্ত অ্যালকোহল শুধু স্বল্পমেয়াদেই নয়, দীর্ঘমেয়াদেও ক্ষতিকারক। অতিরিক্ত অ্যালকোহল স্বল্পমেয়াদে রিফ্লাক্স এসোফ্যাগাইটিস এবং গ্যাস্ট্রাইটিসের দিকে পরিচালিত করে এবং দীর্ঘমেয়াদে লিভারের সিরোসিস, হৃদরোগ, প্যানক্রিয়াটাইটিস এবং স্থূলত্বের দিকে পরিচালিত করে। তাছাড়া, নিয়মিত বেশি মাত্রায় অ্যালকোহল গ্রহণ করলে দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে, এমনকি মস্তিষ্কের ভারসাম্যও নষ্ট হতে পারে।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, শীতকালে আমরা কম তরল পান করি, বিশেষকরে জল এবং এর ফলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। যার ফলে কিডনির সমস্যা, যেমন– কিডনিতে পাথর হতে পারে। ডিহাইড্রেশনের ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য, পাইলস এবং ফিসারের সমস্যাও বেড়ে যায়।
নিজেকে হাইড্রেটেড রাখার জন্য নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল, বিশেষকরে জল গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, শীতকাল এমন একটি সময়, যখন শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি থাকে, তাই আমাদের সঠিক যত্ন এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ যে, স্বাস্থ্যকর খাবারই সুস্বাস্থ্য এবং সঠিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রদান করে এবং এটি রোগ এবং সংক্রমণের সম্ভাবনা কমাতে পারে।





