ওরাল হেলথ কেয়ার বা মৌখিক স্বাস্থ্য রক্ষা কেবল দাঁত এবং মাড়ির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ভালো মৌখিক স্বাস্থ্য পরিষ্কার দাঁতের চেয়েও বেশি কিছু, এটি সামগ্রিক সুস্থতার মাধ্যম। দন্তচিকিৎসক এবং চিকিৎসক উভয়েই মুখ এবং শরীরের সংযোগকে রোগ প্রতিরোধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হিসাবে মনে করেন, তাই ওরাল হেলথ কেয়ার-এর বিষয়ে বিশেষ পরামর্শ দিয়েছেন। সর্বোত্তম মৌখিক স্বাস্থ্য সামগ্রিক স্বাস্থ্যকে মজবুত করে, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং এমনকি কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করে। এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য এবং পরামর্শ দিয়েছেন ডেন্টিস্ট ডা. সোনিয়া দত্ত।
অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস-এর (এআইআইএমএস) গবেষকদের মতে, মৌখিক স্বাস্থ্যবিধি স্ট্যান্ডার্ড অনকোলজি কেয়ারের সঙ্গে একীভূত করা উচিত। কারণ, কেবল আরামের জন্য নয়, বেঁচে থাকা উন্নত করার জন্যও মৌখিক স্বাস্থ্যরক্ষা জরুরি। আরও একটি প্রমাণ হল--- INHANCE অর্থাৎ ‘ইন্টারন্যাশনাল হেড অ্যান্ড নেক ক্যান্সার এপিডেমিওলজি’ এক সমীক্ষার মাধ্যমে জেনেছে যে, ভালো মৌখিক স্বাস্থ্যবিধি (দাঁতের নিয়মিত চেক-আপ, প্রতিদিন ব্রাশ করা) মাথা এবং ঘাড়ের ক্যান্সারের ঝুঁকিকে সামান্য হলেও হ্রাস করে। তাই, নিয়মিত দাঁতের পরীক্ষা-নিরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু সুস্থ দাঁত বজায় রাখার জন্য নয় বরং মৌখিক ক্যান্সারের প্রাথমিক সতর্কতার লক্ষণ সনাক্ত করার জন্য। সন্দেহজনক ক্ষত, স্থায়ী আলসার বা টিস্যুর গঠনের পরিবর্তন সনাক্ত করতে পারেন দন্ত চিকিৎসকরা, যা অন্যথায় অবহেলিত হতে পারে। তামাক এড়িয়ে চলা এবং অ্যালকোহল সীমিত করা ক্যান্সারের ঝুঁকি আরও কমায়।পাশাপাশি, এই ব্যবস্থাগুলি শুধু মৌখিক স্বাস্থ্য রক্ষা করে না বরং দীর্ঘমেয়াদী ক্যান্সার প্রতিরোধ কৌশলগুলিতে শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবেও কাজ করে, বিশেষকরে মাথা এবং ঘাড়ের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে।

মৌখিক স্বাস্থ্য এবং নির্দিষ্ট কিছু ক্যান্সারের মধ্যে সংযোগ:
- মাথা ও ঘাড়ের ক্যান্সার: দীর্ঘস্থায়ী মাড়ির রোগ এবং দুর্বল মৌখিক স্বাস্থ্যবিধি প্রদাহ এবং কোষীয় পরিবর্তন বৃদ্ধি করে, যা মুখ, গলা এবং স্বরযন্ত্রে ম্যালিগন্যান্সির কারণ হতে পারে
- পাচনতন্ত্রের ক্যান্সার: পেরিওডেন্টাল রোগ পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয় এবং কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের ঝুঁকির সঙ্গে যুক্ত
- ফুসফুস এবং প্রোস্টেট ক্যান্সার: মৌখিক রোগজীবাণু এবং সিস্টেমিক প্রদাহ প্রতিরোধের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে
- মিউকোসাইটিস এবং সংক্রমণের মতো জটিলতা হ্রাস করে ক্যান্সারের চিকিৎসার ফলাফল উন্নত করে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় এবং সিস্টেমিক প্রদাহ হ্রাস করে
- ডেন্টিস্ট-এর সাহায্যে নিয়মিত চেক-আপ, মৌখিক ম্যালিগন্যান্সির প্রাথমিক সনাক্তকরণ নিশ্চিত করে এবং বিপদমুক্ত করতে সাহায্য করে।
ক্যান্সার রোগীদের জন্য, বিশেষকরে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল অথবা যাদের জটিল কোনও থেরাপি চলছে, তাদের জন্য মুখের স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা কেবল আরামের বিষয় নয়। এটি সরাসরি বেঁচে থাকার ফলাফল এবং জীবনের মানকে প্রভাবিত করে। ডাবর রেড পেস্টের মতো আয়ুর্বেদিক পেস্ট দিয়ে দিনে দুবার ব্রাশ করা, ফ্লসিং করা এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল মাউথওয়াশ ব্যবহারের মতো সহজ অভ্যাসগুলি ব্যাকটেরিয়ার ভার কমিয়ে এবং মুখের সামগ্রিক ভারসাম্য বজায় রেখে এই ঝুঁকিগুলি উল্লেখযোগ্য ভাবে কমাতে পারে।





