কিছু টিভি চ্যানেল যেভাবে ছোটো ছোটো বিষয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করেছে, তা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যখন নিজে দক্ষিণ আফ্রিকা-র নামিবিয়া থেকে প্রথমে ৮-টি এবং তারপর ১২-টি চিতাবাঘ এনে মধ্যপ্রদেশের কুনো জাতীয় অভয়ারণ্যে ছেড়ে দিয়েছিলেন, তখন তা নিয়ে হইহই হয়েছিল। এই ধরনের কাজ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিল না কিন্তু তা-ও তিনি করেছেন প্রচারের আলোয় আসার জন্য।
কত চিতা বাঘ নিয়ে আসা হল, ওরা এখন কেমন আছে, বাচ্চার জন্ম দিতে পারছে কিনা— এসব এখন গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী যখন চিতাবাঘ নিয়ে এসে মধ্যপ্রদেশের কুনো জাতীয় অভয়ারণ্যে ছেড়ে দিয়েছিলেন, তখন এক ন্যাশনাল চ্যানেল কিছু দিন ‘চিতাময়ী’ হয়ে উঠেছিল হয়তো নরেন্দ্র মোদীকে খুশি করার জন্য। কিন্তু দু-বছর পর চিতা বাঘের বিষয়ে আর কোনও খবর নেই। এখন সেই ব্যাপারে মুখ খুলতেও নারাজ মধ্যপ্রদেশের ওয়াইল্ড লাইফ অফিসার। তাঁর সাফাই, জাতীয় নিরাপত্তা কিংবা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গোপনীয়তা রক্ষার কারণে তিনি চিতা বাঘের বিষয়ে জানাতে পারবেন না!
চ্যানেল যখন লাইভ টেলিকাস্ট করছিল তখন কি জাতীয় নিরাপত্তার বিষয় ছিল না? তখন কি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গোপনীয়তা রক্ষার বিষয় ছিল না? এই প্রশ্নের কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি অবশ্য।
আমাদের অভিযোগ চ্যানেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নয়, ওয়াইল্ড লাইফ অফিসারের বিরুদ্ধে নয়, আবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাজের বিরুদ্ধেও নয়, বরং আমাদের প্রশ্ন টিভি-র দর্শকদের প্রতি— কেন তারা ৮ থেকে ১০ ঘন্টা ওই ফালতু বিষয় দেখে সময় নষ্ট করলেন? কারণ, এখন আসল তথ্য যদি না পাওয়া যায়, তাহলে ওই চ্যানেল-এ চোখ রেখে সময় নষ্ট কেন?
কিছু চ্যানেল ‘ব্রেকিং নিউজ’ উল্লেখ করে ইঁদুরকে হাতি বলে দর্শকদের বোকা বানানোর চেষ্টা করে অনেক সময়। ধর্মের দোকানদাররা যেমন মিথ্যে প্রচার করে ভক্তদের বোকা বানায়, ঠিক তেমনই কিছু টিভি চ্যানেল- এও এই ধরনের মিথ্যে প্রচার চলছে। এই বিজ্ঞানের যুগেও কিছু মানুষ এখনও কেন অবিবেচক হয়ে উঠছেন কিংবা সবকিছু অন্ধের মতো বিশ্বাস করে নিচ্ছেন, তা ভাবলে অবাক হতে হয়!
রাজনৈতিক নেতা-মন্ত্রীরা এমন ভাব দেখান কিংবা সভা-সমিতিতে এমন বক্তব্য রাখেন, যেন আগে সবকিছু বেঠিক ছিল, এখন সবকিছু ঠিকঠাক চলছে। অথচ বাস্তব এটাই যে, যার যা করার নয়, তিনি সেটাই করছেন।





