বিশ্বব্যাপী এবং ভারতে পুরুষদের সবচেয়ে সাধারণ ক্যানসারগুলির মধ্যে একটি হল প্রস্টেট ক্যানসার। সাম্প্রতিক ভারতীয় ক্যানসার রেজিস্ট্রি অনুসারে, পুরুষদের মধ্যে প্রস্টেট ক্যান্সার শীর্ষ দশটি ক্যানসারের মধ্যে রয়েছে এবং এর প্রকোপ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষকরে শহরাঞ্চলে।
প্রস্টেট হল মূত্রাশয়ের নীচে অবস্থিত একটি ছোট গ্রন্থি, যা পুরুষ প্রজননে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কলকাতা-র মেডেলা কার্কিনোস অনকোলজি ইনস্টিটিউট-এর কনসালটেন্ট রেডিয়েশন এবং ক্লিনিক্যাল অনকোলজিস্ট ডা. শৌভিক ঘোষ এই বিষয়ে কী জানিয়েছেন, সেই তথ্য-ই পরিবেশন করা হচ্ছে বিস্তারিত ভাবে।
লক্ষণ
প্রাথমিক পর্যায়ে প্রস্টেট ক্যানসারের তেমন কোনও লক্ষণ থাকে না। তবে, এটি বৃদ্ধি ঘটলেই পুরুষদের কিছু সমস্যা হতে পারে। যেমন–ঘন ঘন প্রস্রাব, বিশেষকরে রাতে। প্রস্রাব শুরু করতে কিংবা বন্ধ করতে অসুবিধা, প্রস্রাবের গতি কম থাকা কিংবা ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব হওয়া, প্রস্রাব করার সময় ব্যথা কিংবা জ্বালা, প্রস্রাব কিংবা বীর্যের সঙ্গে রক্তক্ষরণ এবং পিঠের নীচের অংশ, নিতম্ব কিংবা উরুতে ব্যথা (যদি রোগটি ছড়িয়ে গিয়ে থাকে) ইত্যাদি।
এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, এই লক্ষণগুলি প্রস্টেট বৃদ্ধির কারণেও দেখা দিতে পারে, যা বয়স বাড়লে খুবই সাধারণ সমস্যায় পরিণত হতে পারে। অতএব, সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসা মূল্যায়ন অপরিহার্য।

প্রস্টেট-এ সমস্যার কারণ
প্রস্টেট ক্যানসারের সঠিক কারণ এখনও পুরোপুরি বোঝা যায়নি, তবে কিছু কারণ ঝুঁকি বাড়ায়। যেমন—বয়স। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ৫০ বছর বয়সের পরে সাধারণত প্রস্টেট-এর সমস্যা হয়। বাবা কিংবা ঠাকুরদা প্রস্টেট ক্যানসার-এ আক্রান্ত হওয়ার পারিবারিক ইতিহাস ঝুঁকি দ্বিগুণ করে। উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার, স্থূলতা এবং বসে থাকার অভ্যাস এই সমস্যার মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে।
এরজন্য নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং সচেতনতা, ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের প্রাথমিক ভাবে প্রস্টেট ক্যানসার সনাক্ত করতে সাহায্য করতে পারে।
চিকিৎসা
চিকিৎসায় সাফল্যের হার রোগের পর্যায়, বয়স এবং রোগীর সাধারণ স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে।
- প্রাথমিক পর্যায়: বিকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে অস্ত্রোপচার, রেডিয়েশন থেরাপি অথবা সক্রিয় নজরদারি (সতর্ক পর্যবেক্ষণ)
- উচ্চ পর্যায়: হরমোন থেরাপির সঙ্গে মিলিত রেডিয়েশন থেরাপি অত্যন্ত কার্যকর
- মেটাস্ট্যাটিক পর্যায়: হরমোন থেরাপি, কেমোথেরাপি এবং নতুন লক্ষ্যযুক্ত কিংবা ইমিউনো থেরাপির বিকল্পগুলি রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং জীবনের মান উন্নত করতে পারে।
আধুনিক রেডিয়েশন থেরাপি কৌশল, যেমন–আইএমআরটি, আইজিআরটি এবং স্টেরিও ট্যাক্টিক রেডিও থেরাপি ন্যূনতম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সহ অত্যন্ত নির্ভুল এবং নিরাপদ চিকিৎসা প্রদান করে।
সতর্কতা
- ৫০ বছরের বেশি বয়সি পুরুষদের (অথবা পারিবারিক ইতিহাস থাকলে ৪৫ বছর বয়সি) তাদের উচিত চিকিৎসকের পরামর্শ মতো প্রস্টেট স্ক্রিনিং করিয়ে নেওয়া
- পিএসএ রক্ত পরীক্ষা এবং ডিজিটাল রেকটাল পরীক্ষা হল সহজ পরীক্ষা, যা প্রাথমিক রোগ নির্ণয়ে সহায়তা করে
- একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখুন। যেমন–সুষম খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত ব্যায়াম এবং ধূমপান এড়িয়ে চলুন
- মূত্রনালীর যে-কোনও সমস্যা হলে, বিলম্ব না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
সেইসঙ্গে মনে রাখবেন, প্রস্টেট ক্যানসার যখন প্রাথমিক ভাবে সনাক্ত করা হয়, তখন এটি চিকিৎসার সাফল্য বাড়িয়ে দেয়। আসলে, সচেতনতা এবং নিয়মিত স্ক্রিনিং জীবন বাঁচাতে পারে। প্রাথমিক ভাবে রোগ শনাক্ত করাই সর্বোত্তম সুরক্ষার উপায়। ছোটো ছোটো লক্ষণগুলিকে উপেক্ষা করবেন না। কারণ, এগুলো আপনার জীবন বাঁচানোর চাবিকাঠি হতে পারে।





