আজকাল বেশির ভাগ মহিলাই ওয়ার্কিং উয়োম্যান। প্রেগন্যান্ট অবস্থাতেও তাদের কর্মক্ষেত্রে যেতে হয়। নিউক্লিয়ার ফ্যামিলিতে মাথার ওপর বড়ো কেউ থাকেন না অনেক সময়। তাই ওয়ার্কিং প্রেগন্যান্ট-কে নিজেই নিজের যত্ন নিতে হয়।
এই সময় শুধু নিজের দেখভাল নয়, প্রয়োজন নিজের গর্ভস্থ শিশুর পুষ্টির কথা ভাবা। কারণ তার শারীরিক বিকাশ হয় ভ্রূণ অবস্থা থেকেই। জেনে নিন, কীভাবে Working Pregnant নিজের ও শিশুর যত্ন নেবেন গর্ভকালীন অবস্থায়।
দিনের শুরু কীভাবে করবেন
মর্নিং সিকনেস প্রাথমিক ভাবে অনেক মহিলারই হয়। ঘুম থেকে উঠে জানালা খুলে দিন, যাতে ঘরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও রোদ প্রবেশ করতে পারে। রোদে থাকে ভিটামিন ডি, যা আপনার ও ক্রমশ বাড়তে থাকা শিশুর হাড়ের জন্য উপকারী। সকালে চায়ের বদলে এক গ্লাস গরম দুধ খান। যদি মর্নিং ওয়াক-এর জন্য বাইরে না যেতে পারেন, চেষ্টা করুন ছাদে বা লনে একটু হাঁটতে। ৫-১০ মিনিট ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম অবশ্যই করুন। ব্যায়াম আপনাকে তরতাজা রাখবে এবং হাত-পায়ে ক্র্যাম্প ধরা থেকে বাঁচাবে। শরীরে রক্ত চলাচলও বৃদ্ধি পাবে।
সবসময় হেলদি ডায়েট
প্রেগন্যান্সির সময় ব্যালেন্সড্ ও হেলদি ডায়েট একান্ত জরুরি। তাই অফিসে গেলেও লাঞ্চ বক্স গুছিয়ে নিন। প্রয়োজনে দু-তিনটে কৌটো নিন, ছানা, ফল, ড্রাইফ্রুট্স রাখুন কাজের ফাঁকে খাবার জন্য। মেন-লাঞ্চ-এ অবশ্যই, চিকেন বা মাছ, ভাত বা রুটি, সবজি, ডাল নিয়ে যান। সহকর্মীরা কী ভাববে এত খেলে, এই ধরনের ধারণাকে প্রশ্রয় দেবেন না। এই সময় খিদে পাওয়া স্বাভাবিক। তাই নির্দ্বিধায় খিদে পেলেই কলা, আপেল বা গ্রিন স্যালাড খান। খালি পেটে কোনও সময়ই থাকবেন না।
লিকুইড ইনটেক বাড়ান
কর্মরতা মহিলাদের উচিত এই সময় যথেষ্ট পরিমাণে পানীয় গ্রহণ করা। জুস, সুপ, শেক, দুধ, হেলথ্ ড্রিংক– যখনই সময় পাবেন এমন নানা ভাবে তরল পদার্থের সাহায্যে শরীরে জলীয় উপাদান বজায় রাখুন। অফিসে চা খাওয়ার অভ্যাস থাকলে টি ব্যাগ ব্যবহার করে লিকার টি পান করুন।
এছাড়া ডেয়ারি প্রোডাক্টস অবশ্যই গ্রহণ করুন। পনির, ছানা, দই ডায়েটে বাধ্যতামূলক। দিনে একবার অন্তত স্যুপ বা স্টিউ খান। সবজি ও চিকেন দিয়ে বানানো এই স্টিউ এসময় খুব উপকারী। ব্যস্ততার কারণে যদি রোজ স্টিউ না বানাতে পারেন, তাহলে একদিনই একটু বেশি করে বানিয়ে ফ্রিজে রাখুন যাতে আরও দুদিন গরম করে খেতে পারেন।
বিশ্রাম আবশ্যক
দৗড়োদৗড়ি ও ব্যস্ততা আপনার শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক। কিন্তু অফিসের ধকল সামলেও সুস্থ থাকার সমাধান, পর্যাপ্ত ঘুম। অফিসে এক জায়গায় বসে অনেকক্ষণ কাজ করা, সারাদিন কম্পিউটারের পর্দায় দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখা, প্রেগন্যান্সি পিরিয়ডে সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই টানা কাজ না করে একটু হাঁটাচলা বা ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করুন। প্রতি এক ঘন্টা অন্তর কম্পিউটার থেকে চোখ সরিয়ে, চোখ বুজে বিশ্রাম নিন।
পলিউশনের সমস্যা গর্ভস্থ শিশুর জন্যও ক্ষতিকারক। প্রতিদিন সকালে বাগানে বা পার্কে হাঁটুন ফ্রেশ অক্সিজেনের জন্য। সবুজ শাক-সবজি খান।
প্রেগন্যান্সির সময় অফিসের কাজের স্ট্রেস বেশি নেবেন না। টেনশন অ্যাভয়েড করুন। ৫ মাস পেরোলেই সপ্তাহে এক বা দুদিন ছুটি নিন। গর্ভপাতের আশঙ্কা কর্মরতাদের সবসময় থাকে। তাই আপনার দায়িত্ববোধ সবচেয়ে বেশি থাকা উচিত এ সময়ে। তাই নিজেকে সুরক্ষিত রাখাটাও আপনার কর্তব্য।
পর্যাপ্ত ঘুম
ভালো ও গভীর নিদ্রা এ সময় অত্যন্ত জরুরি। ঘুমোনোর আগে দুশ্চিন্তামুক্ত হবার জন্য ভালো মিউজিক শুনুন, ভালো বই পড়ুন। লেট নাইট করবেন না, যতই কাজ থাকুক ঘুমের সময়টা বরাদ্দ রাখুন। অন্ততপক্ষে ৮ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন। অফিসের কাজ বাড়িতে আনবেন না। যদি কোনও কাজ অসম্পূর্ণ থাকে সেটা পরের দিন অফিসে এসে সম্পূর্ণ করুন। প্রয়োজনে সহকর্মীদের সাহায্য নিন। ঘুমের সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করবেন না ওয়ার্ক লোড-এর কারণে।
খুশি থাকুন, পরিবারের সঙ্গে কোয়ালিটি টাইম উপভোগ করুন। নবজাতকের পথ চেয়ে অপেক্ষা করুন। মাতৃত্বের অনুভব সবচেয়ে সুখকর অনুভব একজন নারীর জীবনে।