ঘুম মানুষের এক অতি আবশ্যক শারীরবৃত্তিয় প্রক্রিয়া। তাই, ভালো ঘুম যেমন সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে, ঠিক তেমনই ঘুমের ঘাটতি নানা রোগের জন্ম দেয়। অতএব, ঘুম নিয়ে অবহেলা নয়। আর যদি ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে, তাহলে কী হতে পারে কিংবা সতর্ক থেকে চিকিৎসা করালে কী সুফল পাবেন, জেনে নেওয়া দরকার৷
Sleep Apnea কী?
নিদ্রাকালীন শ্বাসব্যাঘাতকে বলা হয় ‘Sleep Apnea’। এটি ঘুম কম হওয়া এবং নাক ডাকার সমস্যা। নানা কারণে এক বা একাধিকবার ঘুমের মধ্যে শ্বাসব্যাঘাত ঘটলে তা বিপদসংকেত হিসাবে ধরে নিতে হবে।
স্লিপ অ্যাপনিয়ার লক্ষণ কী?
এক নয়, স্লিপ অ্যাপনিয়ার একাধিক লক্ষণ প্রকাশ্যে আসে। যেমন– নাকডাকা, দিবানিদ্রা, স্মৃতিভ্রম, ওজন বৃদ্ধি, ক্লান্তি, রক্তচাপ বৃদ্ধি, রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যাওয়া প্রভৃতি।
স্লিপ অ্যাপনিয়া কত রকমের?
স্লিপ অ্যাপনিয়ার তিনটি ধরন আছে– অবস্ট্রাক্টিভ, সেন্ট্রাল এবং মিক্সড। অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া বা ওএসএ খুব কমন ফর্ম। বংশগত কারণে, ওজন বাড়লে, অ্যালার্জি থাকলে, শ্বাসনালি সংকুচিত হলে অথবা টনসিল বাড়লে অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার কবলে পড়তে হয়। সিএসএ বা সেন্ট্রাল স্লিপ অ্যাপনিয়ার কবলে পড়লে শ্বাসপ্রশ্বাসে বিঘ্ন ঘটে। এটি অভ্যন্তরীণ সমস্যা। সংখ্যায় কম হলেও, সিএসএ-র কারণে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। এছাড়া, রয়েছে মিক্সড স্লিপ অ্যাপনিয়া। এটি অবস্ট্রাক্টিভ এবং সেন্ট্রাল-এর মিশ্রণে ঘটে। তাই, সবরকম কারণে সমৃদ্ধ এই ফর্ম।
স্লিপ অ্যাপনিয়ার ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার কোনও বিশেষ কারণ আছে কি?
ধূমপান, মদ্যপান, দীর্ঘদিন রাত জাগা কিংবা অতিরিক্ত মানসিক চাপ থাকলে স্লিপ অ্যাপনিয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
এই রোগে আক্রান্ত হলে ক্ষতিকারক কী কী সমস্যায় পড়তে হয়?
স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত হলে ব্লাড প্রেসার এবং ব্লাড সুগার বেড়ে যেতে পারে। রোগী যদি আগে থেকেই হাইপারটেনসিভ কিংবা ডায়াবেটিক হয়ে থাকেন, স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত হলে ওষুধ খেয়েও এসব রোগ আয়ত্তে না থাকার সম্ভাবনা থাকবে। স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত হলে দিনের বেলাতেও যেহেতু ঘুমে চোখ জুড়িয়ে আসে মাঝেমধ্যে, তাই গাড়ি চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কমতে পারে স্মৃতিশক্তি। এছাড়া, কোনও সামাজিক অনুষ্ঠানে গিয়েও অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারেন। কারণ, কথা বলতে বলতে কিংবা কথা শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়তে পারেন মাঝেমধ্যে। কমতে পারে দৃষ্টিশক্তিও। তাই, স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত হলে সময়মতো চিকিৎসা করানো আবশ্যক। তা যদি না হয়, তাহলে মস্তিষ্ক সহ শরীরের ভাইটাল অরগান্স-এ অক্সিজেন পৌঁছোবে কম, ফলে নানারকম সমস্যা কিংবা অসুখের জন্ম নেবে। ত্বক রুক্ষ হতে পারে, চেহারায় বার্ধক্যের ছাপ পড়তে পারে, মেজাজ খিটখিটে হতে পারে, প্রাণোচ্ছলতা কমবে, যৗনমিলনে অনীহা তৈরি হবে, ফ্যাটি লিভার, হাইপার টেনশন, ডায়াবেটিস, ব্রেন স্ট্রোক, কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ প্রভৃতিতে আক্রান্ত হতে পারেন। রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতাও কমতে পারে শরীরে। শুধু তাই নয়, দৌড়োনোর সময় কিংবা সাঁতার কাটার সময় দম বন্ধ হয়ে হঠাৎই মৃত্যু ঘটতে পারে।