ইমোশনাল মানুষ সংখ্যায় কম হলেও আছেন এই সমাজে। এদের সঙ্গে সারাজীবন কাটানো খুব কঠিন মনে হতে পারে কারও কারও ক্ষেত্রে। কখন কী কারণে ইমোশনাল হয়ে পড়বেন আবেগপ্রবণ লোকেরা, তা বুঝে ওঠা মুশকিল। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে সংবেদনশীলতা থাকবে অবশ্যই, কিন্তু তা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে গেলে সমস্যা তৈরি করে। দাম্পত্য সম্পর্কে গভীরতা বজায় রাখতে গেলে পরস্পরের মতামতকে যেমন গুরুত্ব দিতে হবে, ঠিক তেমনই সম্মান এবং ভরসা করতে হবে। সত্যি এটাই যে, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক তখনই মধুর হবে, যখন একজন অন্যজনকে স্পেস দেবে।

অনেক দম্পতি পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকেন, কোয়ালিটি টাইম দেন, কিন্তু কখনও আবার পরিস্থিতি বদলে যেতেও দেখা যায়। যদি কারও জীবনসঙ্গী বেশি ইমোশনাল হন, তাহলে তিনি চান তার সঙ্গী সর্বদা যেন ছায়াসঙ্গী হয়ে থাকে। ব্যক্তি স্বাধীনতা তেমন গুরুত্ব পায় না তার কাছে। তাই, আজীবন তাকে মানিয়ে নেওয়াও মুশকিল হয়ে ওঠে। কখন কোন বিষয় সঙ্গীর অপছন্দ হবে, তা বুঝে উঠতে না পারলে মনোমালিন্য, ঝগড়া ইত্যাদির আবহ তৈরি হতে পারে।

মনোবিদ ডা. সখুজা এ বিষয়ে জানিয়েছেন, বেশি সংবেদনশীল মানুষের সঙ্গে দীর্ঘদিন মানিয়ে চলা অনেকের ক্ষেত্রে মুশকিল হয়। তাই, সংবেদনশীল মানুষটির সঙ্গী যদি ধৈর্য, বুদ্ধি এবং সংবেদনশীলতা দিয়ে পরিস্থিতি না সামলাতে পারেন, তাহলে দাম্পত্য সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আসলে, বেশি সংবেদনশীল মানুষ বাস্তবের থেকে বেশি কল্পনাপ্রবণ চরিত্রের হন। তাই, আদর, ভালোবাসার ঘাটতি কিংবা তাকে গুরুত্ব কম দিলেই বিপত্তি। তার তখন মনে হতে পারে, সঙ্গী বা সঙ্গিনী অবহেলা করছে তাকে। এর থেকে তিনি ইনসিকিয়োর ফিল করেন। তাই, এমন মানুষের সঙ্গে বুঝেশুনে চলতে হবে।

কথার গুরুত্ব

আপনার সঙ্গী অথবা সঙ্গিনী যদি বেশি সংবেদনশীল হন, তাহলে তার সমস্ত কথা গুরুত্ব সহকারে শুনুন। তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার সঙ্গী অথবা সঙ্গিনীর মনের ভাব। আর সেই মনের ভাব অনুযায়ী ব্যবহার করুন তার সঙ্গে। যখনই আপনি অবসর পাবেন, তার সঙ্গে বসে কথা বলুন হাসিমুখে এবং অনুভব করুন তার সংবেদনশীলতা। আসল কথা, কথার মাধ্যমেই জেনেবুঝে নিতে হবে সঙ্গী অথবা সঙ্গিনীর সুখ-দুঃখের কোমল জায়গাটা।

সত্যিটা জানার চেষ্টা করুন

যদি আপনার পার্টনার সবসময় আবেগপূর্ণ কথা বলতে থাকেন এবং আপনার উষ্ণ সান্নিধ্য চান, তাহলে কথা বলেই জেনে নিন এমন হাবভাবের কারণ। যদি তিনি সহজে মুখ খুলতে না চান, তাহলে ভালোবাসা দিয়ে বোঝান যে আপনি তার পাশে আছেন সর্বদা। স্লঁরা সাধারণত একটু ডিমান্ডিং প্রকৃতির হন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এরা সঙ্গীর অ্যাটেনশন ও সময় ছাড়া কিছুই চান না। তিনি কোনও সমস্যায় পড়লে, আপনি বন্ধুর মতো তাঁর পাশে দাঁড়ান, সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করুন। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে তাকে অন্তত ‘সমস্যা কেটে যাবে’ বলে মনোবল জোগান। আপনি এসব যদি সঠিক ভাবে করতে পারেন, তাহলে দেখবেন, তিনি অনেক সিকিয়োর্ড ফিল করছেন এবং সমস্যায় পড়লে কিংবা দুঃখ হলে, কথা লুকিয়ে না রেখে, আপনার কাছে সত্যি কথা উগ্রে দেবেন।

সান্নিধ্য বাড়ান

পার্টনার-কে আপনি যত সান্নিধ্য দেবেন, ততই আপনি তার মনের ভাব বুঝতে পারবেন সহজে। আপনার উষ্ণ সান্নিধ্য তাকে ভরসা জোগাবে, মনের জোর বাড়াবে এবং আবেগ কমাতে সাহায্য করবে। আর যত তিনি আপনার ভালোবাসা অনুভব করবেন, ততই তার ইনার পাওয়ার বাড়বে এবং তখনই যদি তাকে কল্পনা আর বাস্তবের তফাতটা বোঝাতে পারেন, তাহলে সুফল পাবেন। কারণ, ভালোবাসা ভরসা এবং বিশ্বাস জোগায়। আর বিশ্বাস তৈরি হলেই তিনি আপনার কথা মতোই কাজ করবেন।

কেন বেশি আবেগপ্রবণ?

আপনার পার্টনার কেন বেশি আবেগপ্রবণ, সেই কারণ জানার চেষ্টা করুন। খোঁজ নিয়ে কিংবা কথা বলে তার কোনও বিষণ্ণ অতীত আছে কিনা তা জানার চেষ্টা করুন। ছোটো থেকে তিনি কতটা সামাজিক কিংবা কতটা বাস্তববোধ রয়েছে তার, তা জানার চেষ্টা করুন। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ছোটো থেকেই অনেকে ঘরকুনো, বাড়ির বাইরে পা রেখে কঠিন বাস্তবের মুখোমুখি হননি কিংবা অভিভাবকরা কেউ তাকে বাস্তব জ্ঞান দান করেননি সঠিক ভাবে। শুধু তাই নয়, সাহিত্য এবং সিনেমার অতি ভক্তরাও অনেকসময় বেশি কল্পনাপ্রবণ কিংবা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। সাহিত্য এবং সিনেমার সঙ্গে বাস্তবের পার্থক্যটা তাকে সেভাবে কেউ বুঝিয়ে দেননি হয়তো কিংবা তিনি নিজেও বোঝেন না। তাই, এই বেশি আবেগপ্রবণ মানুষগুলোর আবেগের সঠিক কারণ জেনে প্রয়োজনে তাকে মনোবিদের কাছে নিয়ে গিয়ে কাউন্সেলিংকরান। কারণ, অতি আবেগ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কুফলদায়ী।

ধৈর্য ধরুন

আবেগপ্রবণতা একদিনেই কমিয়ে দেওয়া যায় না, সময় লাগে। প্রথমে তাকে ভালোমন্দের তফাত বোঝান ভালোবাসা দিয়ে। তার অতি আবেগের প্রকাশে বিরক্তি কিংবা রাগ হলেও, উত্তেজিত না হয়ে ধৈর্য নিয়ে তার মাথায় হাত রাখুন। ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দিন। আপনার প্রতি তার বিশ্বাস এবং ভরসা বাড়ানোর উদ্যোগ নিন। ধৈর্য নিয়ে এসব করলে দেখবেন, আপনার পার্টনার-এর অতি আবেগ কমেছে এবং আপনাদের দাম্পত্যজীবন স্বাভাবিক হচ্ছে ধীরে ধীরে।                                                                                                        

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...