ধর্মের আফিমে বুঁদ হয়ে যাঁরা একসময় মন, ধন ও সম্পদ সমর্পণ করেছিলেন গুরুর পায়ে, তাদের অনেকেরই এখন ভুল ভেঙে গেছে তথাকথিত বাবাজিদের স্বরূপ প্রকাশিত হওয়ার পর৷সমাজের নানা জায়গায় এই সব ভণ্ড যোগীদের দাপট প্রভাব বিস্তার করছে মানুষের জীবনে৷তারই প্রতিফলন দেখা গেছে সম্প্রতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠা একটি ওয়েব সিরিজে৷পরিচালক প্রকাশ ঝা নির্মিত তাঁর ডেবিউ ওয়েব সিরিজ ‘আশ্রম’-এর প্রতিটি পরতে রয়েছে স্বঘোষিত গডম্যান রাম রহিমের ছায়া। জাতপাতের বৈষম্য, মানুষের অন্ধবিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে খুন, ধর্ষণ থেকে নির্বীজকরণ-এমন নানা অত্যাচারের শিকার হয়েছেন ভণ্ড যোগীর ভক্তরা৷। সমস্ত উপাদানই মজুত রয়েছে এই সিরিজে। প্রথম সিজনের সাফল্যের পর এসেছে দ্বিতীয় সিজনও৷পরিচালক প্রকাশ ঝার সিগনেচার কাজগুলির ছাপ এতে স্পষ্ট৷
গণতন্ত্রের চেনা চেহারা দিয়েই কাহিনির সূত্রপাত হয়। সেই সূত্র ধরেই স্বঘোষিত গডম্যান কাশীপুরওয়ালে বাবা ওরফে বাবা নিরালা ওরফে মন্টির কাহিনিতে পৌঁছায়। বাবা নিরালার চরিত্রে ববি দেওলকে বেছেছেন পরিচালক। তাঁকে সেই চেহারাও দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কেরিয়ারের এই পর্যায়ে ববি সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী একটি চরিত্রে অভিনয় করলেন যা তাঁর মেনস্ট্রিম সিনেমার থেকে একেবারেই আলাদা৷ মন্টির ভয় মেশানো হিংস্রতার সময়ে নিজেকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছেন তিনি। বাবা নিরালার ডানহাত ভোপার ভূমিকায় চন্দন রায় সান্যাল নিজের প্রতিভার সদ্ব্যবহার করেছেন।পোড় খাওয়া অভিনেতাদের পাশাপাশি নতুনদের নিয়ে কাজ করেছেন প্রকাশ। পম্মির চরিত্রে অদিতি পোহাঙ্কর, সত্তির চরিত্রে তুষার পাণ্ডের অভিনয়ে সাবলীল। বাঙালির কাছে অন্যতম পাওনা ত্রিধা চৌধুরী৷ সবচেয়ে বেশি প্রশংসা যদি কারও প্রাপ্য হয় তা অভিনেতা দর্শন কুমারের। রাফ অ্যান্ড টাফ পুলিশ উজাগর সিংয়ের চরিত্রে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন দর্শন।
কিন্তু দর্শকদের ভালো লাগা বা পছন্দের উর্ধে গিয়েও একটি প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়া যাচ্ছে না, সেটা হল বিতর্ক৷ ধর্মীয় ভাবাবেগে বিশ্বাসী আমাদের দেশে যেখানে যুগ যুগ ধরে গুরুবাদ প্রাধান্য পেয়ে এসেছে, সেখানে এই সাহসী বিষয়টিকে উপস্থাপিত করা নিয়ে বিতর্ক তো হবেই৷ কিছুদিন আগেই বড়োসড়ো বিতর্কের জেরে জেরবার হয়েছিল এই জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজ। হিন্দুদের ধর্মীয় ভাবাবেগে ও সংষ্কৃতিতে আঘাত হেনেছে ববি দেওল অভিনীত ‘আশ্রম’ ওয়েব সিরিজটি, এই অভিযোগে কর্ণি সেনার তরফে আইনি নোটিস পাঠানো হয়েছিল ওয়েব সিরিজ ‘আশ্রম’ এর সম্প্রচারকারী ওটিটি প্ল্যাটফর্মকে। সেই সঙ্গে ওয়েব সিরিজের পরিচালক প্রকাশ ঝা-কেও পাঠানো হয়েছিল নোটিস।।কর্ণি সেনার ক্ষোভ থেকে রেহাই পাননি সিরিজের পরিচালক প্রকাশ ঝাও।
এর আগে সমস্যার মুখে পড়ে আরেক অত্যন্ত জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজ ‘মির্জাপুর’ এর দ্বিতীয় সিজন। তবে দর্শকদের দিক থেকে নয়, অভিযোগ আসে অন্য এক অপ্রত্যাশিত দিক থেকে। মির্জাপুর সাংসদ অনুপ্রিয়া প্যাটেল অভিযোগ করেন, এই ওয়েব সিরিজ তাদের শহরের ভাবমূর্তিকে নষ্ট করছে।মির্জাপুরের সাংসদের অভিযোগ, এই ওয়েব সিরিজের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়ানো হচ্ছে। মির্জাপুরের সম্পর্কে ভুল ধারনা রটানো হচ্ছে। এই ওয়েব সিরিজের বিরুদ্ধে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানান তিনি।এই পরিস্হতিতে ওয়েব সিরিজের মাধ্যমে কতদিন পর্যন্ত গণসচেতনতার কাজটি করে যাওয়া যাবে, তা নিয়েই দানা বাঁধছে সন্দেহ৷