কথায় বলে বড়োদের দেখে শেখে শিশুরা। সুতরাং, বড়োরা যা করবে শিশুদের সামনে, শিশুরা তা-ই অনুসরণ কিংবা অনুকরণ করবে অনায়াসে। মা, বাবা কিংবা পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা প্রয়োজনের তাগিদে কিংবা অভ্যাসবশত এখন দিনের অনেকটা সময়-ই কম্পিউটার, ল্যাপটপ কিংবা মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। আর এসব দেখতে-দেখতেই বেড়ে উঠছে শিশুরা। এমনও দেখা যায়, শিশুকে কোলে রেখেই মা-বাবা মোবাইল, কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছেন। ফলে, ছোটো থেকে শিশুরাও এসবের ব্যবহার রপ্ত করে ফেলছে।
এরই পাশাপাশি, স্কুল-এর Computer ক্লাস, বাড়িতে প্রোজেক্ট ওয়ার্ক প্রভৃতির জন্যও আবশ্যক হয়ে পড়ছে কম্পিউটার। এছাড়া, ভিডিয়ো গেমস তো আছেই। আর ছোটো থেকেই এসবের অতি-ব্যবহারের কুপ্রভাব পড়ছে ওদের চোখে, ঘাড়ে, পিঠে, কাঁধে এবং মাথায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, সঠিক সময়ে সতর্ক না হলে, এই কুপ্রভাব সুদূরপ্রসারী হবে এবং নানারকম রোগের শিকার হতে হবে। অতএব, এ বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা উচিত।
মোবাইল, ল্যাপটপ কিংবা কম্পিউটারের কতটা কুপ্রভাব শিশুদের চোখের উপর পড়ছে বলে মনে হয় আপনার?
কম্পিউটারের কুপ্রভাব শিশুদের চোখের উপর কতটা পড়বে, তা নির্ভর করবে কতক্ষণ শিশুটি তার অমূল্য চোখদুটিকে ব্যবহার করছে তার উপর। কারণ, সাধারণত এই সময় তাদের ভিস্যুয়াল স্কিল সুগঠিত হয় না। তাই, খুব কাছ থেকে (Near Point) কাজ করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে।
আর এই ভিশ্যুয়াল স্কিল যেসব বিষয়ের ওপর নির্ভর করে, তা হল–
> দৃষ্টির সুক্ষতা (Sharpness)
> দৃষ্টির লক্ষ্যবিন্দু (Fixation Point)
> অভিযোজন (Accommodation)
> দৃষ্টি ক্ষেত্র (Field of vision)
> নিকটবর্তী বিন্দুতে ফোকাস্ করা (Convergence)
> দুটি চোখ দ্বারা প্রাপ্ত মিলিত দৃষ্টি (Binocular Fusion)
কম্পিউটারে দীর্ঘক্ষণ কাজ করলে বাচ্চাদের কী কী অসুবিধা হয়?
চোখ ব্যথা ছ আত্মসচেতনতা কম হওয়ার জন্য কম্পিউটারে একনাগাড়ে অনেকক্ষণ গেমস্ খেললে বা কাজ করলে চোখের পেশি বিরতি না পাওয়ায় ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এতে, বস্তুকে ফোকাস করার ক্ষমতা হ্রাস পায় (Accommodative Spasm) এবং চোখে পাওয়ার আসে (Refractive Error)।
চোখে জ্বালা ও শুষ্কতা ছ দীর্ঘক্ষণ একদৃষ্টিতে কম্পিউটারে তাকিয়ে থাকলে চোখের পলক পড়ে না। এতে চোখের অশ্রু বাষ্পীভূত হয়ে চোখের শুষ্কতা বৃদ্ধি পায় আর অতিরিক্ত আলো ও উজ্জ্বলতা যা মেশিন থেকে চোখের উপর পড়ে, তাতে চোখ জ্বালা করতে থাকে। এর ফলে শিশুরা হাত দিয়ে চোখ রগড়াতে শুরু করে, ফলত, অন্যান্য সমস্যার সূত্রপাত হয়।
চোখের ঝাপসা ভাব ছ শিশুর চোখে আগে থেকেই পাওয়ার থাকলে অথবা কম্পিউটারের সি্্ক্রনের আলোর উজ্জ্বলতা সঠিক না থাকলে বা সি্্ক্রনে ময়লা জমে থাকলে দৃষ্টি পরিষ্কার হয় না, অক্ষরগুলি ঝাপসা দেখায়।
মাথা-ঘাড়-পিঠে-কাঁধে যন্ত্রণা ছ বড়োরা চেয়ারে বসে যে উচ্চতা থেকে কম্পিউটার দেখে, শিশুরা একই চেয়ারে বসে সেই উচ্চতা পায় না, উপরন্তু তারা কাজ করার সময় চূড়ান্ত মনোযোগের কারণে কম্পিউটারের দিকে এগিয়ে যায় এতে তাদের অবস্থান সঠিক হয় না। এর ফলে ঘাড়, পিঠ, কাঁধ এবং মাথায় যন্ত্রণা দেখা দেয়।
এই বিষয়ে অভিভাবকদের কী পরামর্শ দেবেন আপনি?
> স্কুল লাইফ শুরু করার আগে একবার শিশুর চক্ষু-পরীক্ষা করাতে হবে
> একজন কম্পিউটার দৃষ্টি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী মনিটরের উচ্চতা, দূরত্ব কৗণিক অবস্থান, চোখ এবং মনিটরের দূরত্ব (১৮ থেকে ২৮ ইঞ্চি) ঠিক আছে কিনা দেখে নেওয়া দরকার
> মনিটরের অ্যান্টিগ্লেয়ার সি্্ক্রন লাগিয়ে দিতে হবে এবং সি্্ক্রনে অক্ষরের আকার, রং এবং উজ্জ্বলতার মাত্রা নির্দিষ্ট করে দেওয়া প্রয়োজন
> ক্লাসের শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে নিন যে, কম্পিউটারে কাজ করার সময় শিশুর চোখে কোনও সমস্যা হচ্ছে কিনা, চোখ রগড়াচ্ছে কিনা, চোখ লাল হচ্ছে কিনা, মাথা বেঁকিয়ে দেখছে কিনা। কোনওরকম অসুবিধা দেখা দিলে চক্ষু চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
> সর্বোপরি অনেকক্ষণ একনাগাড়ে বাচ্চাকে কম্পিউটারে বসতে দেবেন না। প্রয়োজনে, বিরতি নিয়ে চোখে দু-তিনবার জলের ঝাপটা দিয়ে আবার বসুক। এছাড়া, পুষ্টিকর খাদ্যবস্তু যেন গ্রহণ করে এবং রাতের ঘুম যেন ভালো হয় সেদিকে নজর রাখুন
> মোবাইল ফোনে যদি দিনে ৪ ঘন্টার বা তার বেশি সময় কোনও বাচ্চা চোখ রাখে, তাহলে তার ‘ডাবল ভিশন’ মানে একটা জিনিসকে দুটো দেখার প্রবণতা হয়
> এছাড়া দীর্ঘক্ষণ মোবাইল ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকলে বাচ্চাদের মাইনাস পাওয়ার আসতে পারে