ওরা পুরোপুরি অসুস্থ কিন্তু নয়, ওরা স্পেশাল চাইল্ড। কারণ ওরা কোনও না কোনও দিক থেকে স্পেশাল। ওদের মধ্যেও প্রতিভা থাকে। সমাজ তবু ওদের অবহেলা করে৷এই পরিস্থতিতে একমাত্র সিনেমা, পত্রপত্রিকা–সহ এবং নানা গণ-মাধ্যমই ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আমরা যারা সামাজিক সচেতনতা, সামাজিক দায়বদ্ধতা, ভালো সিনেমার পক্ষে কথা বলি, তারা প্রত্যেকেই এই বিষয়টা জানেন। কারও আপনজনের যদি কোনও সম্যস্যা থাকে, তাহলে তাকে অবশ্যই পরামর্শ দেওয়া উচিত একজন কাউন্সেলরের সাহায্য নেওয়ার। কারণ এই বিষয়টাকে তারাই অনুধাবন করতে পারবেন। আমারা যারা ওই শিশুদের অন্যভাবে দেখে অভ্যস্ত, তাদেরও দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনা দরকার৷

আমাদের চারপাশে বিভিন্ন মানুষের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা , খালি চোখে যা সব সময় ধরা পড়ে না৷ ‘হু’-র এর রিপোর্ট অনুযায়ী, আসন্ন সময়ে প্রতি ১০০টি শিশুর মধ্যে ২০টি শিশু জন্মাবে বিশেষ চাহিদা নিয়ে৷ থাকবে গগনচুম্বী প্রতিবন্ধকতা৷ যাদের চিরস্থায়ী বিকলাঙ্গতা মন বা মস্তিষ্কে থেকেই যাবে৷ বহিরঙ্গে আর পাঁচটা স্বাভাবিক শিশুর সঙ্গে দৃশ্যতই যার কোনও ফারাক নেই৷ কিন্তু  সে স্বাভাবিক সামাজিক আদানপ্রদানে যেমন অক্ষম, তেমনই অপারগ প্রাত্যহিক কাজকর্মেও৷ তার থাকতে পারে অটিজম , থাকতে পারে সেরিব্রাল পালসি , কস্টেলো বা ন্যূনান -এর মতো সিনড্রোম , থাকতে পারে স্পিচ-ল্যাঙ্গুয়েজ-কমিউনিকেশন নিড, গ্লোবাল ডেভেলপমেন্টাল ডিলে বা অ্যাটেনশন-ডেফিসিট-হাইপার-অ্যাক্টিভিটি -ডিসঅর্ডার ৷ এক মুহূর্তও চুপটি করে এক জায়গা. বসে থাকতে পারবে না সে,সব সময় তার আচরণে থাকবে অস্বাভাবিক ছটফটানি৷ছোটো থেকেই এই আচরণ দেখেও অনেক মা-বাবা অবহেলা করেন৷ কারণ এটা যে মানসিক রোগ, তা তারা মানতেই পারেন না৷  হৃদরোগ -ক্যানসার -ডায়াবেটিসের মতো এগুলিও যে এক ধরনের অসুস্থতা, আর এর যে নিরাময় সম্ভব– বাবা-মায়েদের আগে তা বোঝা জরুরি৷না হলে, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুটি , সমাজ -সংসার -স্কুলের অবিমৃষ্যকারিতায় ও অবহেলায় , ক্রমশ আরও বিপর্যস্ত হবে৷

শিশুর মায়েরা যদি গোড়া থেকেই শিশুর বিকাশে কোনও অস্বাভাবিকতা খেয়াল করেন, তাহলে আনেক আগে থেকেই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া যায়৷  সেক্ষেত্রে অনেক  প্রতিবন্ধকতাকে শৈশবেই বিনাশ করা সম্ভব৷ প্রয়োজন ‘আর্লি ইন্টারভেনশন ও আর্লি ডায়াগনোসিস ’৷যত আগে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করবেন শিশুবিকাশ বিশেষজ্ঞ, তত ভালো ফল পাওয়া যাবে৷

কয়েকটি বিপজ্জনক মাইলস্টোন ডেভেলপমেন্টের কথা বলা যাক৷ ৬ মাস বয়সে শিশু যদি উপুড় না হয় , এপাশ ওপাশ না করে , কোনও কিছু ধরার চেষ্টা না করে , অদ্ভুত শব্দ করে ফোকলা দাঁতে না হাসে , মা -বাবাকে আদর না করে, তাহলে সতর্ক হোন৷ ১ বছর বয়সে যদি হামাগুড়ি দিতে বা কোনও কিছু ধরে না দাঁড়াতে পারে , বাবা /মামা না বলতে পারে , শেখা জিনিস ভুলে যায় ও কোনও কিছু আঙুল দিয়ে দেখাতে না পারে– তাহলে সেটা অস্বাভাবিক৷ ২ বছর বয়সে যদি দুধ খাব, বাড়ি যাব-র মতো শব্দ না বলতে পারে , পেন -ব্রাশ -সাবান -চামচের কী কাজ না বুঝতে পারে , কোনও কাজ বা বলা শব্দ নকল না করতে পারে , সোজা হয়ে হাঁটতে না পারে ও ছোটোখাটো সাধারণ নির্দেশ বুঝতে না পরে – তাহলে বিষয়টিকে মোটেই অবহেলা করবেন না৷৪ বছরে যদি লাফাতে না পারে , আঁকিবুঁকি না কাটে , অন্য শিশু বা বাইরের লোকের কাছে যেতে না চায় , জামা পড়া -ঘুম -চান -টয়লেট সবেতেই বিস্তর ঝামেলা করে , নিজের প্রিয় গল্প না বলতে পারে , আমি বা তুমির ব্যবহার না শেখে , সদৃশ -বিসদৃশের ফারাক না বোঝে এবং কথা অস্পষ্ট বলে– তাহলে সেটা মোটেই স্বাভাবিক নয়৷

শিশুকে যদি এই অবস্থায় বুলি করে কিংবা অবহেলা করে সমাজ, স্কুল ও বাড়ির লোক– তাহলে অল্পেই সে অধৈর্য-বিরক্ত -অসুখী হয়ে পড়বে , স্কুলের রেজাল্ট খারাপ হতে থাকবে , অন্যকে উত্ত্যক্ত করবে,  বিপজ্জনক ঝুঁকি নেবে , নিয়ম মানতে  চাইবে না৷  প্রাথমিক শিক্ষকেরা এই ধরনের অসঙ্গতি বাবা -মার নজরে আনলে ও তাড়াতাড়ি ট্রিটমেন্ট শুরু হলে ,এই  শিশুদেরও সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব৷

ওদের পাশে থাকুন, সহানুভূতির সঙ্গে৷সমাজকে সুন্দর করে তোলার এটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ৷

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...