মাদুরাই নেমে অপেক্ষা করছি গাড়ির। এবারের জার্নি একটা বেশ অচেনা ডেস্টিনেশনে। নাম কোল্লিমালাই। তামিলনাড়ুর এই স্বল্প পরিচিত শৈলশহর মন কেড়েছিল ইন্টারনেট-এ খোঁজ তল্লাশ করার সময়ই। এবার প্রতিক্ষা, দুচোখ ভরে দেখার। জানুয়ারিতে অস্বাভাবিক তাপমাত্রা নেমে যায় এখানকার। ফলে ওই মাসটা বাদ দিয়ে ফেব্রুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের যে-কোনও সময়ই যাওয়া যায় কোল্লিমালাই।

নামাক্বাল জেলার অন্তর্গত কোল্লিমালাই ঘাট রোড ধরে চলেছে গাড়ি। পথে ৭০টি হেয়ার পিন বাঁক। আমাদের বুকিং ছিল সিলভারলাইন নামের একটি হোটেল-এ। অপূর্ব লোকেশন। গোলমরিচের বাগান আর ধানজমির বর্গক্ষেত্রে সবুজের সমারোহ। প্রচুর ওষধি গাছপালা ভরা জঙ্গল, পাহাড়ের গায়ে লেপটে আছে। কোথাও ঘন কুয়াশার জাল, কোথাও মেঘের ফাঁক দিয়ে সূর্যের উঁকিঝুঁকি।

Weekend getaway Kolli hills

পরদিন সকাল সকাল তৈরি হয়ে বেরিয়ে পড়ি আগায়া গঙ্গাই জলপ্রপাত দেখতে। আরাপালিশ্বর মন্দিরের অদূরে এই জলপ্রপাত, পর্যটকদের অচিরেই মন কেড়ে নেবে। মন্দিরের গা ঘেঁষে প্রায় ১০০০টি সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে এলে, পৌঁছোনো যায় প্রপাতের পাদদেশে। কেউ কেউ পাহাড় বেয়ে ট্রেক করে কয়েকটি প্রাচীন গুহা দেখতে যান বটে, কিন্তু আঞ্চলিক মানুষরা জানালেন এই সব গুহা বস্তুত সাপের ডেরা। সেই শুনে আমরা ট্রেক-এর ভাবনা ত্যাগ করে উঠে এলাম মন্দির প্রাঙ্গণে।

আরাপালিশ্বর মহাদেব এ অঞ্চলের পূজিত দেবতা। দ্রাবিড় শৈলীতে নির্মিত এই মন্দির, রাজা ভালভিল ওরির জীবনকালে সৃষ্ট। দক্ষিণী-স্টাইলের চূড়া ও গোপুরম বিশিষ্ট মন্দির দেখে, আমরা এগিয়ে যাই কোল্লি হিল্স-এর বোটানিক্যাল গার্ডেনের উদ্দেশে।

কোল্লি হিল্স-এর বোটানিক্যাল গার্ডেন এই জায়গাটির অন্যতম দ্রষ্টব্য। গোলাপ বাগান, অপূর্ব একটি ভিউ পয়েন্ট, ইকো কটেজ ও চিলড্রেন পার্ক-যুক্ত এই উদ্যান, খনিক বিশ্রামের জন্য আদর্শ। এর অদূরে তামিলনাড়ু সরকারের তৈরি ওষধি উদ্যান। আয়ুর্বেদিক ওষুধ-এ ব্যবহৃত নানা গাছ গাছড়ার সমাহার এই উদ্যানে।

বিকেলে আমাদের গন্তব্য ছিল ভাসালুয়াপাট্টি বোট হাউস। এখানে প্রমোদ ভ্রমণের ব্যবস্থা থাকায় উইকএন্ড বেশ জমজমাট। বিরাট হ্রদ ও চারপাশে জঙ্গলময় পাহাড়ের বিস্তার, জায়গাটিকে সমৃদ্ধ করেছে।

Kolli hills

হোটেলে ফেরার আগে ড্রাইভার বলল, একটা সুন্দর ফলস আছে এ অঞ্চলে, নাম মাসিলা, দেখতে যাবেন? আমরা যেতে আগ্রহ প্রকাশ করি। মাসিলা বস্তুত তিনধাপে ভূমি স্পর্শ করে। আমরাই যেহেতু সেদিনের শেষতম টুরিস্ট, তাই ফাঁকাই ছিল জায়গাটি। অপূর্ব এই ঝরনাধারা! শান্ত পরিবেশে আরও কিছুক্ষণ থাকা যেত, কিন্তু সন্ধ্যা নেমে আসছে দেখে ফিরে আসতে হল।

পরদিন ভোরে চলে গেলাম সেকুপেরিয়া ভিউপয়েন্ট দেখতে। পাখির চোখে পাহাড়ের উপর থেকে চারপাশের দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হতে হয়। বহু বন্য ফুলে চারপাশের পাহাড় ঢেকে আছে। বুনো ফুলের গন্ধে জায়গাটা ম’ম’করছে। সঙ্গে নানা রঙের প্রজাপতি।  দুপুরে লাঞ্চ সেরে আমাদের ফিরে যাওয়ার কথা। বেঙ্গালুরু থেকে অনেকেই সপ্তাহান্তের ছুটি কাটাতে এসেছেন এখানে। সকলের মুখেই পরিতৃপ্তির ভাব। কোল্লি হিল্স পর্যটককে হতাশ করে না, পরম ভালো লাগায় ভরিয়ে তোলে।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...