ফরেস্ট চেক পোস্ট থেকে অগ্রিম অনুমতি নেওয়া ছিল। হেডলাইটের আলোয় দুপাশের ঘন জঙ্গলের বুক চিরে এই রোমাঞ্চকর পথ নিমেষে আবিষ্ট করে ফেলল। চকিতে চোখে পড়ল একটি চিতল, যে হেডলাইটের আলোয় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দৗড় দিল জঙ্গলের সবুজে। এই জঙ্গল মূলত বাইসনের জন্য বিখ্যাত। বহুরকমের পাখপাখালিও আছে। আমাদের রাত্রিযাপনের জন্য পৌঁছে গেলাম ধুদ্রুকুসুম বন-আবাসে।

দেবড়িগড় ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি সম্পর্কে খুব বেশি আলোচনা হয় না। অথচ এ এক অপূর্ব জঙ্গল। আমাদের থাকার জায়গাটি প্রায় জঙ্গলের হাতায় অবস্থিত। পথে আসার সময়ই আমাদের প্রয়োজনীয় রেশন তুলে এনেছি। ডিম, চিকেন সবই পর্যা৫ পরিমাণে। ধুদ্রুকুসুমের পথ খুঁজতে বেশ সমস্যা হয়েছিল। আমাদের কপাল ভালো যে ধুদ্রুকুসুমের রেঞ্জ অফিসারের দেখা মিলেছিল, যার সাহায্যে এই রাত্রিবাস সম্ভব হল। কেয়ার টেকারের সহায়তায় কাঠ জ্বেলে শুরু হল আমাদের তন্দুরি চিকেন তৈরি, সেই সঙ্গে একজন স্থানীয় রাঁধুনি জুটে গেল আমাদের রাতের খাবারের ব্যবস্থাপনায়।

travel

পরদিন সকালে ফরেস্ট গাইড নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম জঙ্গল ভ্রমণে। শুনলাম শুধু বাইসন-ই নয়, এই জঙ্গলে লেপার্ড, সম্বর, শ্লথ ভল্লুক, লঙ্গুর, সজারুও আছে পর্যাপ্ত। গাইড আমাদের সদ্য ছেড়ে যাওয়া পায়ের ছাপ দেখিয়ে জানাল এগুলি লেপার্ডের। এক ঠান্ডা হিমস্রোত অনুভব করলাম পাঁজরে। মহানদীর ঠান্ডা হাওয়া, নাকি হিংস্র পশুটির কথা ভেবে, তা ঠিক ঠাওর করতে পারলাম না।

travel

জিপে করে এই জঙ্গল সফরে আমরা যাব চৗরাসিমাল কটেজে। ২১ কিমি দূরত্বের সবটুকু গহিন জঙ্গুলে পথ। বাইসনের একটি হার্ড দেখে গাড়ি থামল। চলল আমাদের ছবি তোলা। আরও কিছুটা এগোতে দেখলাম দুটি ময়ূর এবং একটি শ্লথ ভল্লুক। পাখির কলকাকলিতে গোটা বনান্তর মুখর হয়ে আছে। ঝোপের এদিক সেদিকে হরিণের ইতস্তত ঝাঁক। বেশ কিছু সল্ট লিক তৈরি করা আছে জঙ্গলময়। সেটার লোভেই পশুরা এদিক ওদিক দর্শন দিচ্ছে আমাদের।

চৌরাসিমাল ফরেস্ট কটেজ পৌঁছে চা খেয়ে, পায়ে হেঁটে একটা জায়গায় পৌঁছোলাম। সেখানে স্থানীয় জেলেরা তাদের বাসস্থান তৈরি করেছে। মহানদীর একটা অংশ ওই জঙ্গলের গা ঘেঁষে বইছে। সেখানে মাছ ধরাই এই জেলেদের রুজিরুটি জোগাড় করতে সাহায্য করে। একটা প্রায়

৫ কিলো ওজনের কাতলা মাছ ধরা পড়ল আমরা থাকতে থাকতেই। এটিকেই নিয়ে চললাম আমরা ধুদ্রুকুসুম। আজ লাঞ্চটা বেশ জমে যাবে!

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...