মিনু আপন মনে কাজ করে। গল্প করে পাড়ার। ওর বিধবা জীবনের। কিন্তু সুরাহা পেল না দিয়া। আজ অবধি এরকম হয়নি। তবে কি মস্তিষ্কের বিকৃতি সত্যিই! মিনু ঘুমায় রাতে। শীত করে, আবার দিয়ার দরজায় দাঁড়িয়ে থাকে মেয়েটা... কাঁদে। চিৎকার করে। কান চেপে থাকে দিয়া। কেউ বিশ্বাস করছে না। ও বিশ্বাস করাতেও পারছে না। দাঁতে দাঁত চেপে সইতে থাকে মানসিক ভ্রম থেকে নির্গত এই অশরীরীর যন্ত্রণা। কখনও সখনও থাকতে না পেরে দিয়া নিজেই চিৎকার করে। মানব ডাক্তার দেখিয়েছে। ডাক্তার একপাতা ওষুধ প্রেসক্রাইব করেছে। সাফ জানিয়েছে, এগুলো ভৌতিক ব্যাপার নয়। নার্ভ ফাংশন ডিসটার্ব করছে। এখন যেন একটু কাছে কাছে থাকে মানব।
মিনুর পাল্লায় পড়ে তিনটে গোল্ড মেডেলিস্ট তান্ত্রিকও ঘোরা হয়ে গেছে। ঘরে ধুনো ঝাঁটা লেবু লংকা, যাগযজ্ঞ সব করিয়েছে মানব। হাতে হরেকরকম আকারের তাবিজও পরেছে। এই জল, সেই জল, কত জল খেয়েছে! নিয়ম মেনে পুজো জপ সব করেছে। তারপরও শীত করছে দিয়ার। এখনও কাঁদছে মেয়েটা। কাঁদতে কাঁদতে ক্রমশ এগিয়ে আসে। মাছিগুলো সারাক্ষণ ভনভন করছে! গায়ে এসে বসছে দিয়ার। দিয়া চোয়াল শক্ত করে জিজ্ঞেস করল, “কী চাই তোমার? আমার সঙ্গে তোমার কী শত্রুতা?”
—সংসাআআআআর! হাড় হিম করা দুর্গন্ধযুক্ত বাতাস বেরিয়ে আসে মেয়েটার পচনযুক্ত মুখ থেকে।
—আমার সংসার কেন চাও? মাছি তাড়াতে তাড়াতে প্রশ্ন করে দিয়া।
মানবের কাছে সরে সরে যায় মেয়েটা। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে কাঁদে। সেই বিশ্রী কান্না। তারপর বলে, 'সানন্দা!”
চোয়াল শক্ত করে বসে থাকে দিয়া। ভোর অবধি। মানব ঘুম থেকে উঠে হাই তোলে। কৃত্রিম ভাবে জিজ্ঞেস করে, “কী হল? সারারাত তোমার ঘুম হয়নি নাকি?”
—সানন্দাকে চেনো?
কথা আটকায় মানবের।
—কে সানন্দা? আমি চিনি না।
সারারাত তোমার পাশে বসে চিৎকার করে কেঁদেছে।
—আবার শুরু করেছ? এত কিছু করেও শান্তি পাওনি?
—হয় জানাও সানন্দা কে, না হয় আমি সুইসাইড করব। আমি আর পারছি না মানব। আমার জীবনটা শেষ হয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন। কিচ্ছু হবে না এই হাজাররকম পুজো তন্ত্রমন্ত্র দিয়ে।