এমন কি ওর আগে কখনও হয়েছিল? চিন্তিত মুখে হীরককে জিজ্ঞেস করল সুখেন।
—কখনও শুনিনি। হলে আমি জানতাম। হীরক চিন্তিত মুখেই উত্তর দিল।
—তাহলে?
—সেটাই তো ভাবছি। কী এমন হল হঠাৎ।
—দেখুন কেউ কি হঠাৎ করে এমন পাগলামি শুরু করে? বউভাতের পর সবে তিনদিন হয়েছে। এখনও অষ্টমঙ্গলাতেও যাওয়া হয়নি।
—ঠিক কী হয়েছিল বলুন তো?
—দেখুন আপনি তো নিজেই জানেন ফুলশয্যার রাত পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। সেদিন রাতে একটা মেয়েলি অসুবিধার কথা বলে আমাকে কাছে ঘেঁষতে দেয়নি। একথা আমি অবশ্য কাউকে বলিনি। কিন্তু পরদিন সকাল থেকেই শুরু করেছে গোলমাল।
—কেমন গোলমাল ?
—প্রথমে বিনা কারণে হি হি করে হাসছিল মাঝেমাঝে। তারপর শুরু করল আমাকে তুই তোকারি। তখনও আমি ভেবেছি ও মজা করছে। কিন্তু তারপর যা করল তা আর...।
—কী করল?
—দেখুন দাদা অত বলতে পারব না। তবে শুনে রাখুন, আজকে ও আমার বউদির চুলের মুঠি ধরে নেড়ে দিয়েছে।
—সর্বনাশ। সুখেনের শেষ কথাটা শুনে হীরকের চোখ গোল হয়ে গেল।
—এখন এই ঘটনার পর বউদি বলছে আলাদা হয়ে যাবে। ওর এই পাগলামির জন্য বাড়িতে একি অশান্তি শুরু হল বলুন তো৷
—বুঝতে পারছি।
—দেখুন দাদা, বিয়ে ঠিক করে দিয়েছেন আপনারা। এখন শুধু আহা উহু করলে তো চলবে না।
দু'জনের কথা হচ্ছিল হীরকের বাবা বোধনবাবুর চেম্বারে বসে। ব্যাপারটা একটু খুলেই বলা যাক। হীরকের বাবা বোধনবাবু ঘটকগিরি করেন। তবে তিনি কিন্তু যে-সে ঘটক নন। তার বিপুল পসার। রুরাল বেঙ্গলি মেট্রিমনি ডট কম নামে একটা ঘটকালি ওয়েবসাইট আছে তার। বর্ধমান পাতালবাজারের কাছে বিরাট অফিস। বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া থেকে শুরু হয়ে পুরুলিয়া আর মেদিনীপুরের কত ছেলেমেয়ের বিয়ে যে তিনি দিয়েছেন তার ঠিক নেই। মোনালিসা বলতে গেলে বোধনবাবুর পাড়ার মেয়ে। মোনালিসা আর সুখেনের বিয়েটা তিনিই ঠিক করেছেন। কিন্তু বিয়ের পর মোনালিসা শ্বশুরবাড়ি গিয়ে যে পাগলামি শুরু করেছে, তাতে বোধনবাবুকে জেল খাটতে না হয়। অবশ্য ছেলে হীরকও যে ছাড় পাবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। অথচ এই বিয়েটার ঘটকালি করতে হীরক রাজি ছিল না। সে অনেকবার তার বাবাকে বারণ করেছে। কিন্তু বোধনবাবু শোনেননি। মোটা টাকা ঘটক বিদায় পাওয়ার লোভে এই বিয়েটা ঠিক করে দিয়েছিলেন। আজকে তার ফল ভুগতে হচ্ছে। এখন বোধনবাবুকে বললে তিনি কিছুতেই নিজের দোষ মানবেন না।