চল্লিশ বছর বয়সের পর শরীরে কিছু পরিবর্তন এবং সমস্যা দেখা দেয়। যেমন– ত্বকের টানটান ভাব কমে যাওয়া, চোখের নীচে ভাঁজ পড়া, চুল পাকা, ক্লান্তি ভাব, দুর্বলতা অনুভব, গাঁটে ব্যথা, যৌনইচ্ছে কমে যাওয়া প্রভৃতি। আর এই পরিবর্তন এবং সমস্যা দূর করার জন্য অনেকেই নানারকম ক্রিম, লোশনের ব্যবহার কিংবা এনার্জি টনিক, ভিটামিন ট্যাবলেট সেবন করেও আশানুরূপ ফল না পেয়ে নিরাশ হয়ে পড়েন। কিন্তু বয়স আটকানোর জন্য এসব সঠিক মাধ্যম নয়।
জানতে হবে তারুণ্য বজায় রাখার উপযুক্ত কৌশল। না, কোনও জাদুবলে কিংবা মন্ত্রবলে নয়, আপনার রান্নাঘরে প্রতিনিয়ত যে-সামগ্রী ব্যবহার করেন, সে-সবই আপনার প্রয়োজন মেটাবে, মুশকিল আসান করবে। ভেবে দেখুন, কোনও ক্রিম, লোশন, টনিক, ট্যাবলেট নয়, মুনিঋষিরা সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য মাধ্যম করতেন প্রাকৃতিক উপাদানকে। যা হাতের কাছে পাওয়া যায়, যা সহজলভ্য, তারই উপযুক্ত ব্যবহারের ফলেই আগেকার দিনের মানুষ ১০০ বছরের বেশি বয়স পার করে দিয়েছেন।
আসলে চাই সঠিক রসদ। কারণ, মনুষ্য শরীরও মেশিনের মতো। শরীরকে সচল রাখতে হলে উপযুক্ত রসদের জোগান দিতে হবে এবং এই রসদ হল– অ্যান্টিএজিং ফুড। যার নাগাল পাওয়া অসম্ভব নয়। প্রায় সবার রান্নাঘরেই থাকে এই খাদ্য উপকরণ। আর যদি সংগ্রহে নাও থাকে, তাহলে তা বাজার থেকে সংগ্রহ করা যায় অনায়াসে। অতএব, জেনে নিন কী সেই অ্যান্টিএজিং ফুড এবং কী তার গুণ।
ডিম – ডিমে আছে ভিটামিন এ, বি এবং ই। এইসব ভিটামিন বার্ধক্য আটকাতে সাহায্য করে। শরীরের ক্ষতিগ্রস্ত কোশের মেরামতি কিংবা প্রোটিনের জোগান দেবে ডিম। তাই প্রতিদিন খান দুটো করে ডিম।
সোয়া – সোয়াবিন, সোয়া আটা, সোয়া দুধ প্রভৃতিতে ভরপুর ক্যালসিয়াম থাকে। সোয়া উপকরণ ব্যবহার করলে যেমন শরীর মজবুত থাকবে, তেমনই, ক্যানসার প্রতিরোধের ক্ষমতাও বাড়বে অনেকটাই।
বেদানা – বেদানা এজিং প্রোগ্রেস আটকায় এবং শরীরের ডিএনএ-তে অক্সিডেশনের গতি কমিয়ে দেয়। এই ফলের রস খেলে ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় থাকে এবং ত্বক উজ্জ্বল হয়। প্রতিদিন একটা বেদানা আপনার সুস্বাস্থ্য অটুট রাখবে।
গ্রিন টি – গ্রিন টি-তে থাকে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এই অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হজম শক্তি বাড়ায় এবং চেহারায় বয়সের প্রভাব পড়তে দেয় না। যদি আপনিও তারুণ্য বজায় রাখতে চান, তাহলে প্রতিদিন দু’কাপ গ্রিন টি পান করুন।
আঙুর, কমলালেবু এবং মুসম্বি – আঙুর, কমলালেবু, মুসম্বি প্রভৃতি ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। ক্যানসার উৎপাদনকারী কার্সিনোজন্স-কে শরীরের বাইরে বের করতে সাহায্য করে এইসব ফল।অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও পর্যাপ্ত মাত্রায় থাকে। সারাদিনের খাদ্যতালিকায় অবশ্যই এইসব ফল রাখুন।
ব্লুবেরি – এই ফল একটু দামি, তবে এতে গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন এবং পলিফিনল পাওয়া যায়। এই ফল খেলে চেহারায় বয়সের ছাপ যেমন কম পড়বে, তেমনই সুগার এবং ক্যানসার আটকাতেও সাহায্য করবে। তাই, প্রতিদিন না পারলেও সপ্তাহে অন্তত দু’-তিন দিন খান ব্লুবেরি।
দই – দইতে এমন কিছু ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা হজম করাতে সাহায্য করে। এতে ক্যালসিয়াম থাকার কারণে, গেঁটে বাত কিংবা অস্টিওপোরোসিস জাতীয় রোগও আটকায়। সেইসঙ্গে, ত্বকের লাবণ্য বজায় রাখতেও সাহায্য করে।
অঙ্কুরিত ছোলা – প্রতিদিন অঙ্কুরিত ছোলা খেলে নানারকম রোগের আক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। বিশেষ করে ক্যানসার আটকাতে অঙ্কুরিত ছোলার জুড়ি নেই। শুধু তাই নয়, প্রতিদিন অঙ্কুরিত ছোলা খেলে শরীরের এনার্জি বাড়বে।
স্ট্রবেরি – স্ট্রবেরিতে এক বিশেষ ধরনের ফাইবার আছে, যা পেট পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, স্ট্রবেরি ব্লাড সুগার লেভেল-কেও নিয়ন্ত্রণে রাখে। প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে স্ট্রবেরিতে, যা তারুণ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
টম্যাটো এবং তরমুজ – টম্যাটো এবং তরমুজ লাইকোপেন-এ সমৃদ্ধ। আর এই লাইকোপেন ক্যানসারের সম্ভাবনাও কমিয়ে দেয়। তাছাড়া, এই দুটি ফলে ফাইবারও আছে, যা পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এবং বার্ধক্যের ছাপ পড়তে দেয় না।
বাদাম – সবরকম বাদামে আছে স্বাস্থ্যবর্ধক ফ্যাট। এছাড়া বাদাম অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট-এও সমৃদ্ধ। তবে বেশি বাদাম খাবেন না, কারণ বাদামে প্রচুর ক্যালোরি থাকে। তাই প্রতিদিন দুটো চিনাবাদাম, দুটো পেস্তাবাদাম, দুটো কাজুবাদাম এবং একটা আখরোট খেতে পারেন। তবে একসঙ্গে নয়, সারাদিন ধরে মাঝেমধ্যে খান, ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বজায় থাকবে।