‘তোর একটা কবিতায় দেখলাম লিখেছিস, ‘সাদা তালের মতো তুলতুলে। তুই দেখেছিস কোনও সাদা তাল?’

‘না, মানে…’ তো তো করতে থাকে পথিক।

‘তোকে বলেছি না, যা দেখিসনি তা নিয়ে লিখবি না, ভুল লিখবি…’

একমুখ ধোঁয়া হতভম্ব পথিকের মুখের উপর দিয়ে আকাশে ছুড়ে দেয় লেনাদি। বয় কাট চুল, টিকালো নাক, ধারালো মুখ, সাদা শার্ট আর নীল ফেডেড জিন্স পরা লেনাদি, কলেজের মারকাটারি সুন্দরীদের মধ্যে একজন।

‘দেখিসনি তো…?’ গলার স্বর খাদে নামিয়ে লেনাদি বলল, ‘আমি দেখাব তোকে…।’ বলেই স্কুটিতে চড়ে সাঁ করে বেরিয়ে গেল কলেজ থেকে।

হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল পথিক!

একদিন এতটা লাজুক ছিল সে, মুখে ভালোবাসার কথাও কাউকে বলতে পারেনি। তখন ইলেভেন চলছে। সে এক নভেম্বরের সকালবেলা। পিউ টিউশানি যাচ্ছে। পথিক পিছু পিছু হাঁটছে। আর তার বুকের মধ্যে ধুকপুকুনি। হাতে রাখা চিরকুট ঘামে ভিজছে। নির্জন জায়গার অপেক্ষায়।

ফলো করে কিছুটা যাবার পর পিউ বুঝতে পারে পথিক ওকে অনুসরণ করছে। ও ঘুরে দাঁড়ায়।

‘কী রে পথিক, তুই এই রাস্তায়…কোথায় যাবি?’

‘তোর সাথে একটা কথা ছিল…’

‘ওহ, হ্যাঁ, বল…’

চিঠিটা হাত বাড়িয়ে এগিয়ে দেয় পথিক। ‘এটা একটু পড়ে দ্যাখ।’

পথিক মাথা নীচু করে দাঁড়িয়েছিল দুরুদুরু বুকে। এভাবে আগে কেউ কাউকে প্রোপোজ করেছে কি না তার জানা নেই। চিঠিতে লেখা ছিল ‘আই লভ ইউ, পিউ’ ব্যস, এতটুকুই।

‘তুই এই কথাটা তো আমাকে মুখেও বলতে পারতিস…’

প্রায় তিরিশ সেকেন্ড পর স্তব্ধতা ভেঙে বলেছিল পিউ।

ওদিকে তখন পথিকের বুকে অবিরাম হাতুড়ি পেটা চলেছে। তার পরের শব্দগুলো শোনার জন্য।

‘দ্যাখ, আমি তোকে বন্ধুর মতো দেখি। তোর সাথে আমার সম্পর্কটা বন্ধুর মতো থাকলেই ভালো!’

হিমালয়ের চূড়া থেকে কোন অতল খাদের গভীরে যেন তলিয়ে যেতে লাগল পথিক। শরীর যেন ভারশূন্য পালকের মতো ভাসছে। যে-কোনও দিকেই উড়ে চলে যেতে পারে। শহরের সব শব্দ, সব কোলাহল যেন তার কানের তিন ফুট দূরে এসে থমকে গেছে। আর কিছুই শুনতে পাচ্ছে না পথিক। কতক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে ছিল সে, জানে না। আবার সম্বিত ফেরে পিউ-এর কথায়। ‘সরি, কিছু মনে করিস না। টিউশনির দেরি হচ্ছে, চলি…’

চলে গেছিল পিউ। আর তখনই মুখ তুলে তাকিয়ে ছিল পথিক। নাহ, পিউ আর পিছন ফিরে তাকায়নি। মেয়েরা সত্যিই কখনও পিছন ফিরে তাকায় না…

‘কী রে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অত কী ভাবছিস?’ দূর থেকে হাঁক দেয় সঞ্জয়দা ‘ইউনিয়ন রুমে আয়, কথা আছে।’

লেনাদির আহ্বানে মশগুল থাকা পথিক চমকে ওঠে। লেনাদির সাথে পথিকের পরিচয়ও ইউনিয়ন রুমেই। তখন ওরা সদ্য ঢুকেছে। ফ্রেশারস ওয়েলকাম হয়নি তখনও।

দুই

কলেজ শুরুর প্রথম দিনই পিউকে দেখেছিল পথিক। ও উইমেন্স এ ভর্তি না হয়ে বিবেকানন্দে ভর্তি হয়েছে, জেনে ভিতরে ভিতরে খুশিই হয়েছিল। তবে পিউ কে সিগারেট খেতে দেখে খুব অবাক হয়েছিল।

 

কলেজে গিয়ে তার মনে হয়েছিল পুকুর থেকে যেন সমুদ্রে এসে পৗঁছেছে। গার্জেনদের চোখ রাঙানি নেই, মাস্টারমশাইদের শাসন নেই। হঠাৎ এতটা স্বাধীনতা পেয়ে গিয়ে বেশ মজাই লাগছিল পথিকের।

 

পথিক ভেবেছিল পড়াশোনার সাথে হালকা করে থাকবে ছাত্র রাজনীতিতে। আর সবাই যেমন থাকে। কিন্তু ইউনিয়ন রুমের মোহ ক্রমশ বাড়তে থাকে তার কাছেও। কারণ পিউও সেখানে যাতায়াত শুরু করেছে ততদিনে। স্কুলের রাজনীতি-নির্বোধ ছেলেগুলো এখানে এসে কীভাবে তুখোড় নেতা হয়ে ওঠে, সে দেখতে থাকে চোখের সামনে।

 

সঞ্জয়দা তখন নতুন ব্যাচকে সমাজতন্ত্রে দীক্ষিত করতে উন্মুখ। কলেজ শুরুর দু’একদিনের মধ্যেই ফাঁকা ক্লাসগুলোয় গিয়ে শুরু করল রুম মিটিং। তারপর ইউনিয়ন রুমে নিরন্তর দীক্ষাদান তো আছেই।

 

‘শোন, সেকেন্ড ইয়ার, থার্ড ইয়ারে অলরেডি আমাদের তৈরি ছেলেরা আছে। সে নিয়ে চিন্তা নেই। এই যে ফ্রেশ মাইন্ডগুলো স্কুল পেরিয়ে কলেজে এল, এদের মাথায় কোনও পলিটিক্যাল থট নেই। অন্য কেউ চষে দেবার আগে রাজনীতির বীজটা আমাদের পুঁতে দিতে হবে। দেখতে হবে আমাদের ছেড়ে কেউ অন্যদিকে চলে না যায়…’

 

সিগারেট ধরিয়ে নিজের মার্ক করা চেয়ারে বসে ধোঁয়া ছাড়ল সঞ্জয়দা। বাকিরা উলটো দিকের সারি সারি চেয়ারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসা। কয়েকজন নীচে পাতা ম্যাট্রেসের উপর গোল হয়ে বসে ওয়াল ম্যাগাজিনের ছবি অাঁকছে।

 

‘আয় লেনা…আয়…এই এদের একটু ক্লাস নিচ্ছিলাম।’

 

লেনা নাম্নি ফরসা, লম্বা, সুন্দরী, জিন্স পরিহিত সঞ্জয়দার সহপাঠিনী কমরেড ইউনিয়ন রুমে ঢুকল। তার সাথে পাঁচটা মেয়ে। সব ফাস্ট ইয়ারের। যাদের মধ্যে পিউ একজন।

 

তাদের দেখিয়ে বলল, ‘এই যে আমার লেডি ব্রিগেড… কী বলছিলি বল, এরাও শুনুক…’

 

‘তোমাদের ক’জনের উপরেই আমরা ভরসা করছি। তোমাদের যে যার নিজের নিজের ক্লাসকে নেতৃত্ব দিতে হবে। তাছাড়াও সার্বিক ভাবে কলেজে পার্টির স্বার্থটা দেখতে হবে।’ সিগারেটে টান দেওয়ার ফাঁকে ফাঁকে যথেষ্ট পজ দিয়ে কথাগুলো আমাদের সবার দিকে ছুড়ে দিল সঞ্জয়দা।

 

ম্যাগাজিনের কাজ করতে থাকা সেকেন্ড ইয়ারের একজন পকেট থেকে বের করে একটা সিগারেট ধরাল। দু’টান দিয়েই পাশের জনকে ধরিয়ে দিল। তারপর এল ফার্স্ট ইয়ারের হাতে। দু’একজন টান দিয়েই কেশে ফেলল। বাকিরা তাই দেখে হাসতে লাগল।

 

দীপাঞ্জন তার কানে কানে বলল, ওটা সিগারেট নয় শালা, ব্যাগড়া ভরা আছে। তাই দু’টান করে দিচ্ছে…’

 

পথিক তখনও ‘ব্যাগড়া’ মানে শোনেনি। পরে জানল গাঁজা ভরা আছে। কলেজের গেটেই ছাত্রদের জন্য নাকি গাঁজা ভরা সিগারেট বিক্রি করা হয়। ছাত্ররা তো আর ক্যাম্পাসে কলকে মুখে দিয়ে গাঁজা টানতে পারে না!

 

কথা শেষ করে সঞ্জয়দা আর লেনাদি ভিতরের কেবিনে গিয়ে বসল। বাইরের ঘরে নতুন পুরোনো ইউনিয়নপন্থী ছাত্র ছাত্রীরা গল্প, গান, কবিতায় মশগুল হয়ে গেল।

 

পথিক যেন সেদিন নতুন করে মানুষ চিনল। মানুষ যে এত ক্যালকুলেশন করে অন্য মানুষের সঙ্গে মেশে, তা ওর অজানা ছিল। কমরেডদের কথা বলা, গল্প করার পিছনেও যে পার্টি তথা সমাজতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাবার তাগিদ থাকে, সে তখনই জানতে পারল।

 

পথিক বারবার পিউয়ের দিকে তাকাচ্ছিল। পিউয়ের কোনও হেলদোল নেই। ও কী অনায়াসে তার এতদিনের সহপাঠী, তার প্রেমে প্রত্যাখ্যাত ছেলেটাকে অগ্রাহ্য করছে! মেয়েরা পারেও বটে!

 

তিন

 

পথিকের কাছে কলেজ আর ইউনিয়ন রুমের আকর্ষণটাই ছিল পিউয়ের জন্য। সারাক্ষণ ক্লাসে মন বসত না। শুধু বসে বসে ওর কথা ভাবত। আর ক্যান্টিন, ইউনিয়ন রুম, লাইব্রেরি, কলেজের মাঠ, শালজঙ্গল যেখানেই ওর দেখা পেত পথিকের শরীরে যেন বিদ্যুৎ খেলে যেত।

 

দু’এক বার সামান্য দলবদ্ধ হাই হ্যালো ছাড়া অন্য কথাই বলেনি আজ পর্যন্ত। বর্ধমান শহরের অন্য আর পাঁচটা অচেনা মেয়ের মতোই শীতল সম্পর্কটা। কিন্তু কেন হবে? নিজেকে প্রশ্ন করে পথিক, কিন্তু উত্তর খুঁজে পায় না। ওর সাথে ছ’টা বছর একসাথে পড়ার কোনও রেখাপাতই নেই! পথিকও নাছোড়…। সে নিজেকে বলে এর শেষ দেখবই…কী এমন রহস্য আছে, যে বন্ধু বন্ধুই রয়ে যাবে? প্রেমিক হতে পারবে না!

 

সেদিন ওদের কবিতা পত্রিকার নতুন সংখ্যাটা ইউনিয়ন রুমে কয়েকজন বন্ধুকে দিচ্ছিল পথিক। লেনাদি বলল, ‘পথিক তুই নাকি ‘ভূমি’তে, লিখিস!’

 

‘ওই আর কি…’ মৃদু হেসে জবাব দেয় পথিক।

 

পত্রিকার পাতা ওলটাতে ওলটাতে তার প্রেমের কবিতাটা দেখে বলল, ‘ও! এটা তোর লেখা…?’

 

পথিক ঘাড় নাড়ে।

 

পড়া শেষ করে তার দিকে চেয়ে হাসে লেনাদি। সিগারেটে টান মেরে বলে, ‘উমম্….কী লিখেছিস যেন… ‘তারপর লঘু অথচ গম্ভীর পদক্ষেপে হেঁটে চলে গেলে তুমিয একবারও পিছন ফিরে তাকালে নায সত্যি, মেয়েরা কখনও পিছন ফিরে তাকায় না…!’

 

‘তুই মেয়েদের কী জানিস? অ্যাঁ? এর আগে কটা প্রেম করেছিস? আর এখন তোর কটা গার্লফ্রেন্ড আছে, বল শুনি….’ তর্জনি আর মধ্যমার মাঝে চেপে ধরা সিগারেট নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে লেনাদি।

 

‘এর আগে একটাও প্রেম করেনি’, বলল দীপাঞ্জন।

 

‘আর একটাও গার্লফ্রেন্ড নেই বেচারির’, যোগ করেছিল গণেশ।

 

‘একটাই সরু লাইন করতে গেছিল, মেয়েটি প্রথম দিনই ভাই না বন্ধু কী একটা বলে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছিল।’ হি হি করে হাসে আলতাফ।

 

‘হুম… তোর ক্লাস নিতে হবে রোজ। না হলে মেয়েদেরকে না জেনেই প্রেমের কবিতা লিখতে যাবি, দিয়ে হোঁচট খাবি। আই মিন, ভুলভাল লিখবি। কাল থেকে অফ পিরিয়ডে আমার কাছে আসবি, রোজ আধঘন্টা করে মেয়েরা কী করে, কী চায় তোকে শেখাব…’

 

‘হা হা হি হি…।’ লেনাদির সাথে সবাই যোগ দেয় হাসিতে।

 

ইউনিয়ন রুমে সেদিন অনেকক্ষণ ধরে গান, কবিতা, গল্প হল। পিউ কী রকম একটা গম্ভীর হয়ে বসে রইল। সঞ্জয়দা তার সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন আমাদের চোখে একটু পর পর মাখিয়ে দিতে থাকল।

 

‘শোন, শোন… হো চি মিন বলেছিলেন, ‘পোয়েট্রি মাস্ট বি ক্ল্যাড ইন স্টিল। আ পোয়েট শুড নো হাউ টু ফাইট।’ তোদের ওই শান্তনু রায় এর ছেলে ভোলানো কবিতায় শুধু ‘আমি-তুমি’… এই তো…? এর বাইরে খেটে খাওয়া মানুষের কথা কোথায়! যত বোগাস কবিতা সব!’

 

‘আরে কী বলছ? জানো তুমি লোকটার কী বিশাল ফ্যান

 

ফলোয়িং?’

 

‘রাখ তোর ফ্যান। আগে ভাতের কথা ভাব, তারপর ফ্যান নিয়ে ভাববি। আমার সব ভালো করে পড়া আছে। মানুষে মানুষে সম্পর্ক বলতে উনি বোঝেন প্রেম, অবৈধ প্রেম, ভাই বোনে প্রেম…তোরাও তাই গিলছিস, আর নিজেরাও তেমন লিখছিস…’

 

সেদিন ইউনিয়ন রুম থেকে বেরিয়ে একা একা হাঁটছে পথিক। দ্রুত পা চালিয়ে পাশাপাশি এল পিউ। ‘তুই খবরদার লেনাদির কাছে যাবি না। ফরসা কচি ছেলেদের খুব পছন্দ করে ডাইনিটা। আর ব্যাগে সবসময় কন্ডোম নিয়ে ঘোরে…’ দাঁড়ায় না পিউ, পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে কথাগুলো ছুড়ে দিয়ে হনহনিয়ে হেঁটে চলে যায়।

 

চার

 

‘কী, আমার কাছে ক্লাস করতে এলি না তো?’ সিগারেটে টান দিতে দিতে বলল লেনাদি।

 

দিন পনেরো পর বাইক শেডের সামনে মুখোমুখি দেখা। ইউনিয়ন রুমে এর মধ্যে বারকতক দেখা হলেও কিছু বলেনি লেনাদি। পথিক সেদিনের কথাটাকে ঠাট্টাই ভেবেছিল।

 

তাই কী উত্তর দেবে পখিক ভাবছিল।

 

‘না, মানে…’ তো তো করতে থাকে ঊনিশ বছরের পথিক।

 

‘তোকে বলেছি না, যা দেখিসনি তা নিয়ে লিখবি না, ভুল লিখবি…। আমার কাছে আসিস, দেখাব…’ বলে স্কুটিতে চড়ে সাঁ করে চলে যায় লেনাদি।

 

সাতপাঁচ ভাবছিল পথিক। সত্যি-মিথ্যা, রোমাঞ্চ, পিউয়ে-র সাবধানবাণী…। তার মাঝে হাঁক দিয়ে গেল সঞ্জয়দা। তবু ইউনিয়ন রুমে গেল না পথিক।

 

পাঁচ মিনিট পর তার মোবাইলে একটা মেসেজ ঢুকল। ন্তুপ্প ২ প্পম্ভ ব্জপ্প ্ত্রব্ধ ন্সন্ধ্রুন্ন্স্ত্র, ্ত্রন্দ্রব্ধব্জ ন্ধ্রচ্ঞন্দ্র ু ন্ধ্রব্জ, ঢঅচ্ঞচ্ঞ ব্দন্ধ্রভ্র ব্ভ ভ্রন্ধ্রব্ধ হ্মব্জপ্সপ্পব্দস্তু.

 

বুক ধড়ফড় করতে থাকে পথিকের। ও মাঠের ঘাসে বসে পড়ে। পা কাঁপছে, দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। ভাগ্যিস আশেপাশে কেউ নেই এখন। ঘাসের উপর পিঠ এলিয়ে দিয়ে আকাশের দিকে তাকায়। উত্তেজনায় তার নিঃশ্বাস ক্রমশ গরম হয়ে উঠছে, বুঝতে পারে পথিক। সে কলেজের আনাড়ি ছোকরা। সদ্যাগত, তাকে ‘সাদা তাল’ দেখতে আমন্ত্রণ করছে কলেজের হার্টথ্রব ইউনিয়ন নেত্রী থার্ড ইয়ারের লেনাদি! নিষিদ্ধ ফলের আকর্যণ পথিককে চুম্বকের মতো টানতে থাকে।

 

আবার মনে পড়ে পিউয়ে-র কথা। ভীষণ রাগ হয় পিউয়ে-র উপর। মনে হয় কেন শুনবে সে ওর কথা? সবাই কত হাসি গল্প করে তাদের বান্ধবীদের সাথে। ফোন করে, মেসেজ করে। ঘুরতে যায়… আরও কত কী… সে কেন বঞ্চিত থাকবে এই সুখ থেকে…

 

এক অপ্রতিরোধ্য রোমাঞ্চ তাড়িয়ে নিয়ে যায় পথিককে। কলেজের খেলার মাঠ, শাল জঙ্গল ছাড়িয়ে, বাজারের শেষে ছাতার দিঘির পাড়ে ছোট্ট অতিথিনিবাস, ক্ষণিকা। হাফ প্যান্ট আর ফিনফিনে গেঞ্জিতে অপেক্ষা করছিল লেনাদি…

 

সেদিন লেনাদি আরও অনেক কিছু দেখিয়েছিল। এক প্রকার হাতে ধরে শিখিয়েছিল শরীরের কোন ভাঁজে লুকিয়ে আছে কতটা সুখ, দুগ্ধফেননিভ ফর্সা নরম তাল তাল মাংসের মধ্যে হারিয়ে যেতে যেতে পথিকের প্রথমবারের জন্য মনে হয়েছিল জীবনটা সত্যিই সুন্দর…।

 

লেনাদি আলস্য জড়ানো চোখে বিড়বিড় করছিল, ‘হোয়াই ইউ পিপল ডোন্ট ডু ইট ফর আওয়ারস!

 

পাঁচ

 

সেদিন মাথায় একটা কবিতা ঘুর ঘুর করছিল পথিকের। একটা অফ পিরিয়ড পেতেই ও ভাবল কবিতাটা নামিয়ে ফেলতে হবে। সাদা কাগজ আর পেন তার পকেটেই থাকে। বই খাতা ক্লাস রুমে রেখে ও হাঁটতে লাগল। খেলার মাঠ, শাল জঙ্গল পেরোলে কলেজের পাঁচিল। পাঁচিলের ওপারেই ছোট্ট ক্যানেল। কুলকুল জলের শব্দ। দূরে তাকালে দেখা যায় ছাতার দিঘির বিস্তৃত জলরাশি। ভিতরের দিকের প্রাচীরের গায়ে একজায়গায় পুরানো ইট ঢিবি হয়ে আছে। তাতে পা দিয়ে অনায়াসে সীমানা প্রাচীরের উপর বসে সৗন্দর্যে বিভোর হয়ে কবিতার কথা ভাবা যায়। জায়গাটা খুব পছন্দ পথিকের। সেদিকেই হাঁটছিল ও। হঠাৎ জঙ্গলের ভিতর খুক খুক কাশির শব্দে থমকে দাঁড়াল সে। পিউ আর কেমিস্ট্রির রুষা। রুষার হাতে একটা কল্কে, যা থেকে দু’জনেই একবার করে টান মারছে। পথিককে দেখে পিউ ডাকে, ‘এই গুড বয়, শোন শোন, এদিকে আয়, একা একা কোথায় যাচ্ছিস? তোর সখীরা কই?’

 

পথিক বুঝতে পারে পিউয়ে-র নেশা হয়ে গেছে। এই কারণে ও সব ক্লাস করে না আজকাল।

 

‘তোরা কল্কে নিয়ে…’

 

‘সিগারেটে পুরে হয় না রে মাইরি। গাঁজা খেলে কল্কেতে ফেলেই খাওয়া উচিত…উঁহ…কী স্বাদ । মাইরি! দু’টান মেরে দ্যাখ…’

 

‘আমি গাঁজা খাই না, নট ইভন বিড়ি, সিগারেট, চা…’

 

‘চা খাস না… হি হি… চা খায় না…দুধ তো খাস…’

 

‘না, তাও খাই না।’ নাকের পাটা ফুলিয়ে জবাব দেয় পথিক।

 

‘অলে বাবা… কচি ছেলে দুদুও খায় না…।’ হঠাৎ তড়াক করে রুষার গায়ের হেলান ছেড়ে উঠে বসে পিউ। ‘সেদিন তাহলে লেনাদির ঘরে গিয়ে কী খেয়ে এলি?’

 

পিউ আর রুষা দুজনেই হাসতে থাকে হো হো করে।

 

চমকে ওঠে পথিক। তার লেনাদির ঘরে গোপন অভিসারের কথা এরা জানল কী করে!

 

‘শালা ভাবছিস চুপি চুপি করে গেলাম, এরা জানল কী করে?

 

হা-হা-হা… এমন অভিসারের কথা এই মফস্সলে চাপা থাকে না সোনা…। গেছিলি তো একা একা…পায়ে হেঁটে। আসার সময় যে স্কুটিতে চড়ে একেবারে কলেজের গেট পর্যন্ত চলে এলি…হি হি… কচি ছেলেটার খিদে পেয়েছে রে রুষা, একটু দুদু খাওয়া…’

 

মাথা ঘুরতে থাকে পথিকের। সময়টা বড়ো দ্রুত বদলে যাচ্ছে। তার সাথে তাল রেখে হাঁটতে পারে না সে… ছোট্ট থেকেই দেখেছে তার শিক্ষক বাবা সমাজতন্ত্রের আদর্শে বিশ্বাসী। তাদের ঘরে রুশ দেশের বাংলা পত্র-পত্রিকা, বই-সাহিত্য ছিল ঠাসা। সেগুলো ছোটো থেকে গোগ্রাসে গিলেছে সে। তাদের মতাদর্শের অনুসারী এই অঙ্গরাজ্যের হাত ধরে সারা দেশে একদিন সমাজতন্ত্র আসবে এমন স্বপ্ন ছিল বাবার, যা ক্রমশ ফিকে হয়ে যাচ্ছে। এখন ভোটে জিতে ক্ষমতায় টিকে থাকাই আসল। কলেজগুলোতেও ভোটে জেতার জন্য কী সুবিশাল আয়োজন! বাবা যে কমিউন গড়ার গল্প শোনাতেন তা আজ প্রলাপ বা বিলাপের মতন শোনায়…

 

‘উরুর তিলটা দেখেছিস… লেনাদির উরুর সেই বিখ্যাত তিল…’

 

‘বিদ্যুতের শক খাওয়ার মতো চমকে ওঠে পথিক। লেনাদির ডান দিকের ফরসা উরুর মাঝ বরাবর কপালের বড়ো টিপের সাইজের একটা ঘোর কালো তিল…সেদিন হাত বুলিয়ে দেখেছিল সে…’

 

তার কান গরম হতে থাকে…কী করে সম্ভব…

 

‘তুইও যেমন… শালা একটা প্রসের সাথে শুতে গেছিস…গোটা কলেজ জানে ওর সারা শরীরের কোথায় ক’টা তিল আছে…’ ভক ভক করে গাঁজার ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বলে রুষা।

 

মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকা কবিতাটা কোথায় চলে যায়… শাল জঙ্গলের মধ্যে ধপ করে বসে পড়ে পথিক।

 

ছয়

 

পরদিন তার কবিতা আশ্রমে যাবার পথে পিউকে একা বসে থাকত দেখল পথিক। খেলার মাঠের শেষে। শাল জঙ্গলের শুরুতেই। টান মারার জন্য জাস্ট আড়াল নেওয়া আর কি!

 

‘আসতে পারিস। কোনও পরিশ্রম করাব না… নেশালু কণ্ঠে বলে পিউ।’

 

বিনা বাক্যব্যয়ে পাশে গিয়ে বসে পথিক। বুঝতে পারে আগে থেকেই টান দিচ্ছে পিউ। তাই ক্লাসে যায়নি।

 

‘তোদের তো ভালোই হল…’ জড়ানো গলায় বলে পিউ।

 

‘কেন?’

 

‘শুনিসনি?

 

‘না তো, কী?’

 

‘তোদের কিছু ক্যান্ডিডেট পারচেজ করতে চাইছে বিপ্লব বাবুদের দল। দু’হাতের উপর পিঠ হেলিয়ে বিড়বিড় করে পিউ।

 

এরকম কথা আগে একবার শুনেছিল পথিক।।

 

‘সেজন্য নমিনেশন জমা দেবার পরই তোদের গাড়ি করে নিয়ে চলে যাওয়া হবে মাইথনের একটা হোটেলে। চারবেলা খাওয়া,

 

মউজ-মস্তি। তোদের পাহারায় থাকবে সঞ্জয়দা, লেনাদি। কটা দিন লেনাদির কাছাকাছি থাকবি…’

 

‘বেশ করব থাকব।’ রাগ দেখিয়ে বলে পথিক। ‘আমারও একটা গার্ল ফ্রেন্ড-এর দরকার আছে…’

 

‘মাই গড, লেনাদি তোর গার্ল ফ্রেন্ড! থার্ড ইয়ারে তিনবছর ড্রপ… পার্টির নির্দেশে ও আর সঞ্জয়দা কলেজ দেখছে। ছাত্র না থাকলে ‘বহিরাগত’ হয়ে যাবে, তাই…’

 

‘হোক ছ’বছরের বড়ো, তবু তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে পারব আমি।’

 

রাগ দেখিয়ে বলে পথিক। পিউ-র প্রত্যাখানের জ্বালা মেটাতে। কিন্তু সে জানে আর তার লেনাদিকে চুমু খাওয়া হবে না। চারদিন আগেই সে দেখেছে সেকেন্ড ইয়ারের লম্বা বীরুকে। স্কুটি চড়ে লেনাদির সাথে ক্ষণিকায় যেতে। তখনই সে বুঝতে পারে, কেন ক’দিন ধরে কাছাকাছি ঘুর ঘুর করলেও তাকে আর ডাকছে না লেনাদি, তার সফেন সমুদ্রের জোয়ারের জলে নামতে। এদিকে জীবনের প্রথম নারী সঙ্গমের পর পথিকের তখন পাগলের মতো অবস্থা। চোখ বুজলেই সফেন সমুদ্র… কালো টিপের মতো তিল। তাল তাল নরম মাংসের মধ্যে স্বর্গের সমস্ত সুখ। অথচ লেনাদি কী নিস্পাপ ভাবে কবিতার কথা, ইউনিয়ন ভোটের কথা, সমাজবাদের কথা আওড়ে যায়! যেন তাদের মধ্যে কিছুই হয়নি কোনওদিন! লেনাকে জানার ইচ্ছা তাকে পাগল করে দিয়েছিল। সেই ইচ্ছাই তাকে জানিয়েছে কলেজের লেকচারার জাহিরবাবুর ভাড়া বাড়িতে প্রায়ই রাত কাটায় সে। আর কলেজের লালটুস দেখতে জুনিয়র, সিনিয়র অনেকেই চেনে তার শরীরের ঘাত প্রতিঘাত, চড়াই উতরাই। সেদিনের জড়নো গলায় বলা কথাটার মানে এদ্দিনে বুঝতে পারে পথিক, ‘হোয়াই ইউ পিপল ডোন্ট ডু ইট ফর আওয়ারস!’

 

লেনাদি এক পুরুষে তৃ৫ হবার মতো মেয়েই নয়। তবে তার এই আবিষ্কার সে পিউ-র কাছে চেপে যায়।

 

‘খা শালা, কত চুমু খাবি পিসিমাকে, ফ্রি তে খেয়ে নে…হা-হা-হা-হা, হাসির দমকে কাশতে থাকে পিউ।

 

‘হাসির কী হল?’ জিজ্ঞেস করে পথিক।

 

‘আমার সেই দিনটার কথা মনে পড়ছে। মুখে ‘আই লাভ ইউ’ বলতে না পারা সেই ছেলেটার কথা…. একটা চিরকুট কাগজ নিয়ে আমার পিছু পিছু ঘুরে বেড়াচ্ছিল…’

 

হঠাৎ ধবক করে জ্বলে ওঠে যেন পিউর চোখ। কিড়মিড় করে দাঁত। পথিকের বুকের কাছের জামা খামচে ধরে বলে ওঠে, ‘ক্যান ইউ ব্রিং দ্যাট গাই ব্যাক টু মি…?’

 

‘ছাড়…বোতাম ছিঁড়ে যাবে…’

 

‘পারবি না বল? জানতাম…’ শিথিল হয়ে যায় পিউ এর হাত।

 

একটা সিগারেট বের করে লাইটার জ্বালায় পিউ। টান দিতে দিতে বলে, ‘ডু ইউ নো, হু ইজ মাই ফার্স্ট ক্রাশ?’

 

পথিক কিছু না বলে চুপ করে থাকে।

 

‘ইউ… ব্লাডি শিলি ইউ… পথিক রায়… মাই ক্লোজ কম্পিটিটর ইন দ্য ক্লাস। বাট দেয়ার ইন দ্য ভিলেজ ইজ নো অ্যাটমোস্ফিয়ার ফর আওয়ার লাভ। নাইদার ইউ কুড টেল মি এনিথিং, নর আই…’

 

শূন্যে ক’বার ধোঁয়া ছাড়ে পিউ।

 

‘তখন রাতদিন পড়ছি জয়েন্টের জন্য। স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হব।

 

যে-স্যারের কাছে টিউশন নিতাম… বায়োলজির সুনীল স্যার…তাঁর ছেলে উদ্দী৫ তখন ডাক্তারির সেকেন্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট। মাঝে মাঝে ছুটিতে বাড়ি আসত… জয়েন্ট অ্যাস্পিরান্ট আমাদের কাছেও তখন হিরো। ওই শালা আমাকে বলেছিল রাতে ঘুম পেলে সিগারেট খাবে…। সেই থেকে…’

 

পথিক অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে পিউয়ে-র দিকে।

 

‘আর কী বোকা ছিলাম আমি! ওর বাবা মা দু’জনেই টিচার। ফাঁকা বাড়িতে একদিন ডাকল। আমিও গেলাম গাইডেন্স-এর লোভে। বাঁধভাঙা ভালোবাসার কথা শুনতে শুনতে নিজেকে হারিয়ে ফেলল একটা সতেরো বছরের মেয়ে। টোটালি আন প্রিপেয়ার্ড অবস্থায় একটা আন প্রোটেক্টেড সেক্স। সব মিটে গেলে নিজের ভুল বুঝতে পারলাম। ও তখন ডেট-ফেট কী সব হিসেব করে বলল আমার সেফ পিরিয়ড চলছে… ওরিড হবার কিছু নেই। তারপরও ওর ডাকে সাড়া দিয়ে পাঁচবার মিলিত হয়েছি। তবে প্রত্যেকবার উইথ প্রোটেকশন। কিন্তু দেড়মাসের মাথায় আমি বুঝতে পারলাম আই ওজ মিসিং মাই পিরিয়ড…’

 

‘ওই টার্মিনেশনের জন্য অ্যারেঞ্জ করেছিল একটা নার্সিংহোমে। তারপর কুড়ি দিন বাড়ি থেকে বেরোতে পারিনি। মা-কে ঝুড়ি ঝুড়ি মিথ্যা বলেছি। আর তারপর থেকেই ওর সুইচ অফ। সারাদিন শুধু অঝোরে কেঁদেছি। এমন সময় একটা মেয়ের মনের অবস্থা কী হয়… সেসময় কাকে পাশে দরকার হয়…। তোর ওই ‘মেয়েরা যেমন হয়’ কবিতা পড়ে বোঝা যাবে না কোনওদিনও, রাস্কেল…’

 

হঠাৎ কেঁদে ফেলে পিউ। আই ওয়াজ টোটালি ডিভাস্টেটেড। অ্যাট দ্যাট টাইম ইউ কেম টু টেল মি ‘আই লাভ ইউ’। ইট ওয়াজ আ লেট কল, পথিক…’

 

‘স্যারের কাছে একদিন সব বলে কান্নায় ভেঙে পড়ি। স্ত্বান্নার জন্য তাঁর হাতের স্পর্শ মাথা থেকে নেমে ক্রমশ আমার সারা শরীর ঘুরতে শুরু করে… ছেলের সাথে শুয়েছি শুনেই ওঁর চাউনি কেমন যেন বদলে গেল। ভাবছিলাম… সেদিন ওই বাস্টার্ডের মুখে থুতু ছিটিয়ে বেরিয়ে আসি। জয়েন্টের স্বপ্ন ফিনিশড…’

 

‘যে-ছেলেটা মুখে বলতে পারে না ‘আই লভ ইউ’, তার হাতে একটা অ্যাবরশন হওয়া মেয়েকে তুলে দিতে মন চায়নি সেদিন। তাই ফিরিয়ে দিয়েছিলাম।’

 

‘কিন্তু সে যদি আজও চায়?’ পিউয়ে-র একটা হাত খপ করে নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে প্রশ্ন করে পথিক। ‘সেও তো একটা ভুল তোরই মতো করে বসেছে? তোকে একজন পুরুষ ব্যবহার করেছিল, আমাকে একজন নারী। যে-দুটোর কোনওটার মধ্যে ভালোবাসা ছিল না…’

 

‘তোকে ফিরিয়ে দিয়ে কতরাত কেঁদেছি জানিস, রাস্কেল…।’ তারপর ডিপ্রেশন শুরু হয়। বন্ধুদের কাছ থেকে মদ গাঁজা সব খাওয়া আস্তে আস্তে শিখে যাই।’

 

‘এখনও কি ফিরে আসা যায় না?’

 

‘কে ফেরাবে তারে… সব স্বপ্ন লুঠিত হয়ে গেছে যার, সবার অগোচেরে…’

 

‘আছে একজন।’

 

‘সে ইউনিয়নের পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত।’

 

‘ছেড়ে দেবে সে ইউনিয়ন।’

 

‘বেট?’

 

‘বেট।’

 

ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে পিউ।

 

পিউয়ে-র হাতে ধরা রুমাল নিয়ে চোখের জল মুছিয়ে দেয় পথিক। নির্জন চরাচরে দু’জন মানব মানবী দু’জনকে নতুন করে দেখতে থাকে। চার চোখের মুগ্ধতায় তখন ভর করে হাঁটতে থাকে ভাষাহীন শব্দেরা। অনেক না বলা কথা যেন বলা হয়ে যায় মুহর্তে। একে অপরকে পরম আশ্লেষে বুকে জড়িয়ে ধরে ওরা। পিউ-র কাঁধে পথিক-এর মাথা। তার হাতে ধরা রুমালে একটা মৗমাছি এসে বসে। পথিক ফিসফিস করে বলে, ‘পিউ তোর রুমালে মৗমাছি…’

 

পিউ নেশা ধরানো গলায় প্রশ্নের স্বরে আওয়াজ দেয়, ‘উমমম…’

 

পথিক পিউ এর কানের কাছে মাথা রেখে অস্ফুটে বলতে থাকে,

 

‘দুহাতে কোনও কাজ ছিল না, দুটোই মারকুটে

 

দুহাত ভরে সেলাই এলো নাইন-টেনে উঠে

 

এহাতে এল রান্নাঘর, ওটায় তানপুরা

 

হাতের কথা জেনেও গেল দাদার বন্ধুরা

 

দুহাতে আজ ভরা সেলাই, আঙুলে সুতো কাঁচি

 

টেবিল ক্লথে ভ্রমর এলো, রুমালে মৗমাছি…’

 

আরও গভীর ভাবে পথিককে চোখ বুজে জড়িয়ে ধরল পিউ। শালের পাতায় পাতায় তখন লুটোপুটি খাচ্ছে শীতের রোদ। দূরে কোথাও একটা সুখপাখি ডেকে উঠল। তিনবার।

(কবিতার ঋণছ ‘সেলাই খাতার নকশা’ –শিবাশিস মুখোপাধ্যায়)

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...