যে-দেশে দারিদ্র্যের তাড়নায় মানুষের দু’মুঠো অন্ন জোটে না, প্রতি বছর বহু মানুষ অনাহারে মারা যায়, দুধের অভাবে শিশুমৃত্যু আকচার ঘটনা, প্রসূতি মা প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার না পেয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেন—সেদেশে ধর্মীয় ভাবাবেগের জিগির তুলে নির্মাণ হতে চলা মন্দিরের ভিতের মধ্যে দুধ ঢালার ঘটনা নিশ্চিত ভাবে নিন্দনীয়৷
প্রায় ১১ হাজার লিটার দুধ ও ঘি, বাজারে যার মূল্য প্রায় ১ লক্ষ টাকার উপরে।আর এমন ভাবে এই বহু মূল্যবান উপকরণের অপচয়, কোনও যুক্তিতেই মেনে নেওয়া যায় না।মন্দিরের ভিত নির্মাণে মাটির গর্তের ভিতরে দুধ ঢেলে দেওয়ার ঘটনাটি সম্প্রতি ঘটেছে রাজস্থানের ঝালাওয়ার জেলার রাতলাই এলাকায়। এখানে স্থাপিত হতে চলেছে এক বিশাল দেবনারায়ণ মন্দির যার ভূমিপুজো উপলক্ষেই এই বিশাল আয়োজন হয়। জানা গিয়েছে, মোট এক কোটি টাকা ব্যয়ে আগামী দুই বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ হবে দেবনারায়ণ মন্দির নির্মাণ।
এই বিশাল নৈবেদ্যের মধ্যে ছিল ১৫০০ লিটার দই, প্রায় ১ কুইন্টাল দেশি ঘি আর বাকি পুরোটাই ছিল খাঁটি দুধ যার বাজারমূল্য প্রায় ১.৫ লক্ষ টাকা। মন্দির নির্মাণ কমিটির মুখপাত্র রামলাল গুজ্জর জানান যে, এই বিপুল পরিমাণ দুধ, দই ও ঘি জোগাড় করেছেন গুজ্জর সম্প্রদায়ের মানুষদের কাছ থেকে। এছাড়া অন্য সম্প্রদায়ের মানুষেরাও এগিয়ে এসেছেন এই নৈবেদ্য সংগ্রহের কাজে।এই নৈবেদ্যের জন্য যেভাবে খাদ্যসামগ্রী অপচয় হল, তাতে বহু অভুক্তের পেট ভরানো যেত৷
কেন এই রীতি সে প্রসঙ্গে রামলাল জানিয়েছেন, গুজ্জরদের মন্দির নির্মাণে দুগ্ধজাত পণ্য ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। অতীতে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এই প্রথা তাঁরা পালন করেছেন তবে এখন তা বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু তাঁর দাবি, ঈশ্বরের আশীর্বাদ প্রাপ্তির তুলনায় এই খরচ নেহাতই সামান্য । তাছাড়া, গবাদি পশুপালক গুজ্জররা প্রতিদিনের পুজোয় দেবনারায়ণকে দুধ দিয়ে স্নান করান বলেও তিনি জানিয়েছেন।
এই বিশাল পরিমাণ খাদ্যদ্রব্যের এ হেন অপচয় কেন, এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গুজ্জর সম্প্রদায়ের কাছে এ কোনও অপচয় নয়। প্রভু দেবনারায়ণ আমাদের গবাদি পশুর রক্ষাকর্তা। আমাদের যা কিছু উন্নতি তাঁরই কৃপায়।তিনি খুশি হলেই আমাদের সার্বিক বিকাশ৷ এই কারণেই ভিতপুজোয় আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী তাঁকে দুগ্ধজাত পণ্য উৎসর্গ করেছি।’
ধর্মীয় আচারের স্বপক্ষে রামলাল যতই এসব মতামত প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করুন না কেন, ঘটনাটির ব্যাপারে তীব্র প্রতিবাদ হওয়া উচিত।যে দেশে নিরন্নের অন্ন জোটে না সেখানে মন্দরের দেবতা কে তুষ্ট করার বদলে, নরনারায়ণের সেবা করা প্রয়োজন৷