এই অতিমারির আবহে স্বাস্থ্য নিয়ে সকলেই কমবেশি চিন্তিত। কিন্তু অনেক হবু দম্পতি আবার এই সময়টাই বেছে নিচ্ছেন দুই হাত একত্রিত করতে। তবে অবশ্যই সবরকম প্রতিবন্ধকতা স্বীকার করে নিয়ে। যেখানে একাধিক অতিথির উপস্থিতি ঘটতে চলেছে সেই পরিবেশে অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করাটা একান্ত জরুরি। একই কথা প্রযোজ্য বিয়ে পাত্র-পাত্রীর ক্ষেত্রেও। আবার একথাও ঠিক, বিয়ের দিনটা বারবার ফিরে আসবে না। সুতরাং প্যান্ডেমিকের আবহ থাকুক আর না-ই থাকুক, নিজেকে বিশেষ দিনটির জন্য সুন্দর করে তোলার চেষ্টা মেয়েদের মনে থাকবেই।
এখন যেহেতু জিম-ই বলুন বা স্যালনগুলিও বলুন, প্রি-ওয়েডিং শরীরচর্চা বা রূপচর্চার জন্য মানুষ ওই সব জায়গায় যেতে ভয় পাচ্ছে, বাড়িতে থেকেই যতটা সম্ভব নিজেদের শরীর-স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে হবে। আর এটা সকলেই জানেন যে, সুস্বাস্থ্যের প্রতিফলন ঘটে সৌন্দর্যে।
- প্রথমেই মনে রাখতে হবে জিমে না যেতে পারার ফলে বাড়িতে বসে থাকতে থাকতে, শরীরে মেদ জমাটা কিছু আশ্চর্যজনক নয়। এর জন্য দরকার বাড়িতে থেকেই কিছু ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ করা। যারা যোগাসন করতে পারেন, তারা আসন প্রাকটিস করতে পারেন। এতে শরীর ফিট থাকবে
- শরীরে কোথাও যাতে মেদ না জমে তার জন্য ডায়েট প্ল্যান বানিয়ে সেটা ফলো করুন। মেয়েদের স্বাভাবিক ভাবেই পেটে মেদ জমার প্রবণতা দেখা যায়। সাধারণত বিয়ের কনেকে একটা রুটিন ডায়েট চার্ট বানিয়ে চলতে হবে, যেটা কিনা দৈনন্দিনের ক্যালোরির প্রযোজনীয়তা মেটাবে।
- এছাড়াও ফাইবার-যুক্ত খাবার যেমন, টাটকা ফল-সবজি, দানাশস্য, লো-ফ্যাট ডেয়ারি প্রোডাক্টস, লিন মিট, হেলদি ফ্যাট এগুলো ডায়েটের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন। টাটকা ফল-সবজিতে প্রচুর পরিমাণে প্রযোজনীয় ফাইবার ও নিউট্রিযে্টস থাকে, যা ক্যালোরি বার্ন করতে সাহায্য করে
- বাড়িতে থাকা সহজলভ্য হেলদি ফুড ট্রাই করুন
- জাংক ফুড এবং প্রসেসড ফুড এড়িয়ে চলুন
- রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেটস যেমন হোয়াইট ব্রেড, পিত্জা, পাস্তা, ভাত (হোয়াইট রাইস), মিষ্টি, ব্রেকফাস্ট সিরিয়ালস এগুলো এড়িয়ে চলুন। এছাড়াও চিনি খাওয়া বন্ধ করুন
- সারাদিনে প্রচুর জল খান। এতে হাইড্রেটেড থাকবেন এবং মেটাবলিজম বুস্ট করতে সাহায্য করবে। ফলে শরীরের ওজনও নিয়ন্ত্রিত হবে
- জলখাবার স্কিপ করবেন না এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন। বারেবারে অল্প অল্প করে খান
- ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি অবশ্যই ডেলি রুটিনে থাকা একান্ত কাম্য। রাস্তায় হাঁটতে পারেন, জগিং অথবা সিঁড়ি ওঠানামাও করতে পারেন। এই নিয়মগুলো মানলেই দেখবেন শরীরের ইমিউনিটি পাওয়ার যেমন বাড়বে, তেমনি স্বাস্থ্যোজ্জ্বল সৌন্দর্যও ফুটে উঠবে। আপনার ত্বক, নখ, চুল উপকৃত হবে
- ঘুম আমাদের শরীর স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য খুবই দরকার। পর্যাপ্ত ঘুম এবং প্রতিদিন সময় দেখে একইসময় ঘুমোতে যাওয়া ও ঘুম থেকে ওঠার নিয়ম, কনের শরীর-স্বাস্থ্য সঠিক রেখে মুখের ও ত্বকের গ্লো বজায় রাখবে।
হেলদি ব্যালেন্সড প্লেট
এক প্লেট খাবারে থাকা উচিত অর্ধেক প্লেট সেদ্ধ সবজি বা স্যালাড, অর্ধেকের অর্ধেক প্লেট প্রোটিন জাতীয় খাবার। যেমন চিকেন, ডিম, তোফু এবং বাকি অর্ধেকটা আনরিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেটস। যেমন ব্রাউন রাইস, আটার রুটি বা মাল্টিগ্রেন ব্রেড, ওটমিল ইত্যাদি রাখুন। সামান্য হেলদি ফ্যাট এর সঙ্গে যোগ করুন, যেমন অ্যাভোকাডো, ডার্ক চকোলেট, বাদাম (আমন্ড, আখরোট, চিয়া সিডস) অথবা এক টেবিল চামচ অলিভ অয়েল।
ডায়েটের সঙ্গে সঙ্গে ত্বকচর্চাও কনের রোজকার রুটিনের একটা বিশেষ দিক। স্যালনে গিয়ে সেটা এখন করা সম্ভবপর না হলে, বাড়িতেই নেওয়া যেতে পারে একটু বিশেষ যত্ন। দেওয়া রইল প্রি-ওয়েডিং বিউটি বজায় রাখার ঘরোয়া ৫টি টিপস।
- বিশেষ দিনটিতে নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলতে ত্বকের গ্লো বজায় রাখাটা খুব দরকার। প্রপার ডায়েটের সঙ্গে সঙ্গে ক্লিনজিং, টোনিং এবং ত্বককে মযে্চারাইজিং করাটা একান্ত জরুরি। এতে রোমছিদ্রে জমে থাকা ময়লা দূর হবে এবং ত্বক ঠিকমতো নিঃশ্বাস নিতে পারবে। টোনিং ত্বককে টাইট রাখবে, ত্বকের ফাইন লাইনস রোধ করবে। মযে্চারাইজার ত্বককে কোমল রাখবে
- ত্বককে এক্সফলিয়ে করাটা খুব জরুরি। এটি ত্বকের মৃত কোশ দূর করতে সহায়ক। এছাড়াও ত্বকে ব্ল্যাক হেডস-ও রোধ করে। এক্সফলিয়েট করার আগে ত্বক মাইল্ড ফেস ওয়াশ দিয়ে পরিষ্কার করে নেওয়া বাঞ্ছনীয়। এরপর বাড়ির তৈরি স্ক্রাব দিয়ে ত্বক এক্সফলিয়েট করতে পারেন, বিশেষ করে ত্বক যদি খুব স্পর্শকাতর হয়। আটা এবং চালের গুঁড়ো দিয়ে স্ক্রাব তৈরি করে নিন
- বিয়ের অনুষ্ঠানের দিনটির অন্তত ৫-৬ মাস আগে থেকে চুলের যত্ন নিতে শুরু করে দিতে পারেন। বাড়িতেই উপযুক্ত প্রোডাক্ট দিয়ে হেয়ার স্পা করুন। এরপর দরকার ডিপ কন্ডিশনিং করানো। হেয়ার এক্সপার্ট-এর কাছে গিয়ে জেনে নিতে পারেন আপনার চুলের ধরন এবং কী ধরনের প্রোডাক্ট আপনার চুলের পক্ষে উপযুক্ত। প্রোডাক্টগুলি সংগ্রহ করে বাড়িতেই চুলের পরিচর্যা করুন
- হাত এবং পায়ের যত্নেরও অবহেলা করবেন না। শোওয়ার আগে অলিভ অয়েল দিয়ে হাত ও পায়ের মাসাজ করাটা জরুরি। এতে ত্বক রুক্ষ হবে না এবং চামড়া উঠবে না। পিউমিস স্টোন দিয়ে পা ঘষুন। হালকা গরমজলে সামান্য শ্যাম্পু ফেলে তাতে পা ডুবিয়ে রাখুন। ১০ মিনিট পর ভালো করে পা ঘষে, পরিষ্কার জলে পা ধুয়ে ফেলুন
- সবশেষে চোখের ডার্ক সার্কল এড়াতে ৮ থেকে ১০ ঘন্টা টানা ঘুমোন।
তাহলেই দেখবেন এই অতিমারির আবহেও আপনি হয়ে উঠতে পেরেছেন সকলের আকর্ষণীয়। বিয়ের পিঁড়িতে আপনার চোখ প্রিয় মানুষটির উপর ন্যস্ত থাকলেও বাকি সকলের দৃষ্টি থাকবে আপনার উপরেই।