সাধারণত যা বয়স, তার চাইতে বেশি বয়স্ক দেখাবার জন্য তিনটি কারণ মূলত দায়ী। আলাদা আলাদা ভাবে এগুলি লুকস-কে প্রভাবিত করে।
বলিরেখা – ২৫ বা তার বেশি বয়স হয়ে গেলে, মুখের বিভিন্ন জায়গায় বলিরেখার প্রকোপ পড়তে দেখা যায় এবং বলিরেখা দৃষ্টিগোচর হলেই বয়সের একটা অনুমান করা শুরু করে দেয় বেশিরভাগ মানুষ। আসল বয়সের চেয়ে অনেক বয়স্ক দেখতে লাগে বলিরেখার কারণে। সর্বপ্রথম চোখ এবং চোখের আশেপাশের অংশে বলিরেখা পাতলা লাইনের আকারে চোখে পড়া শুরু হয়। এছাড়াও গাল, কপালেও পাতলা লাইনগুলি ধীরে ধীরে দেখা যেতে লাগে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বলিরেখাগুলি আরও বাড়তে থাকে এবং মুখের হাবভাবের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার দৃষ্টিগোচর হয়।
লস অফ ভলিউম – এই সমস্যা অনেক সময় বোঝাটাই মুশকিল হয়ে যায়। ত্বকে এই সমস্যা তখনই প্রকট হয় যখন ত্বক নিজের ইলাস্টিসিটি হারিয়ে ফেলে এবং ত্বক ঢিলে হওয়া আরম্ভ হয়। এর কারণ গলার ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে এবং রং-ও ফ্যাকাশে হতে থাকে। মুখের ভাবভঙ্গিতে এই সমস্যা ধরা পড়ে।
ঘনত্বের অভাব – মেনোপজ হয়ে যাওয়ার পর মহিলাদের মধ্যে এই সমস্যা দেখা দেওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। কারণ ওই বয়সে ত্বক ঢিলে ও নিস্তেজ হয়ে পড়ে। বলিরেখার কারণেই এমনটা হয় ফলে ত্বকও নিজের স্বাভাবিক রং হারিয়ে ফেলে।
বয়স্ক দেখাবার অভ্যন্তরীণ কারণ – বয়সের তুলনায় বেশি বয়স্ক দেখাবার কারণ হিসেবে, ত্বকের গঠনও অনেকাংশে দায়ী। ত্বকের গঠন পরিবর্তন করাও সম্ভব নয়। শরীরের অর্গানিক (জৈব) পরিকাঠামো, ত্বকের পরিকাঠামোর মধ্যে পরিবর্তন আনে এবং এটা নির্ভর করে কোশগ্রন্থির কর্মদক্ষতার উপর। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোশগ্রন্থির কর্মদক্ষতা কম হতে থাকে। এছাড়াও ত্বকে রক্ত চলাচল কম হয়ে যাওয়া মানে, ত্বকের ভিতর পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন এবং পুষ্টির অভাব থেকে যাওয়া।
বংশগত কারণেও অনেক সময় কাউকে বয়সের তুলনায় বেশি বয়স্ক বলে মনে হয়। আমাদের ত্বকের প্রকৃতি কী রকম হবে জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই সেটা ঠিক হয়ে যায়। যেমন স্বাভাবিক ত্বকের থেকে যাদের ত্বক ফরসা, তাদের ত্বকে সময়ের আগেই বলিরেখা পড়তে দেখা যায়।
বয়স্ক দেখাবার বাহ্যক কারণ – বহিরাগত অনেকগুলি কারণ মানুষকে বয়সের তুলনায় বেশি বয়স্ক করে তোলে। যেমন–
সূর্যের আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি – সূর্যের রশ্মি শরীরের জন্য যেমন প্রয়োজন তেমনি ক্ষতিকারকও বটে। সরাসরি রোদ ত্বকের উপর পড়লে ত্বকের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা হারিয়ে যায় এবং ত্বকের বয়সও বেশি বলে মনে হয়। আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মির কারণে ত্বকে যে ক্ষতি হয়, তাকে ফোটো প্রোলংগড্ এক্সপোজার বলা হয়।
দূষণ – দূষণ-ও ত্বকের ক্ষতি করে। শহরে এই সমস্যা সবথেকে বেশি। দূষণের কারণে সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মির প্রভাব ত্বকে তীব্রভাবে পড়ে, ফলে ত্বক আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ধূমপান – সিগারেটে কেমিক্যাল এবং নিকোটিন থাকে। মানুষের ইমিউন সিস্টেমের উপর নিকোটিনের ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ে ফলে বয়সজনিত সমস্যায় ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ধূমপান বেশি করলে শরীরে অক্সিডেন্ট-এর লেভেলও কম হতে থাকে।
আমাদের জীবনশৈলীর প্রভাবও পড়ে ত্বকের উপরে। সময়ের আগেই বেশি বয়স্ক দেখাবার জন্য আমাদের জীবনশৈলী এবং খাওয়াদাওয়া সবকিছুই দায়ী। কয়েকটি বিষয়ে খেয়াল রাখলে বয়স বেশি দেখাবার প্রক্রিয়া রোধ করা যেতে পারে।
চিনি কম খান – চিনি শরীরের ইনসুলিন লেভেল বাড়িয়ে দেয় ফলে সারা শরীরে তৎক্ষণাৎ প্রদাহের সৃষ্টি হয়। এই প্রদাহের ফলে শরীরে এনজাইম তৈরি হয় যেটি কোলাজেন এবং ইলাস্টিনকে ভেঙে দেয়। এরই ফলস্বরূপ ত্বক জীর্ণ হয়ে পড়ে এবং বলিরেখায় ভরে যায়।
সবজি বেশি করে খান – বয়স বাড়ার প্রক্রিয়া দ্রুততর করে টক্সিন এবং মেটাবলিজম, কারণ এগুলি শরীরের অক্সিডেন্ট লেভেল কমিয়ে দেয়। সুতরাং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যুক্ত সবজি বেশি করে খাওয়া প্রয়োজন।
ভিটামিন ‘ডি খান – পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে, ভিটামিন ‘ডি’ বয়স বাড়ার প্রক্রিয়াকে আস্তে করতে সাহায্য করে। এই ভিটামিন ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে, অধিক মাত্রায় ভিটামিন ‘ডি স্বাস্থ্যের সঙ্গে সঙ্গে সৗন্দর্যেরও ক্ষতি করতে পারে।
ডেয়ারি প্রোডাক্ট ক্ষতিকারক – বহু পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে দুধ এবং দুধের তৈরি অন্যান্য প্রোডাক্ট বেশি খেলে ব্রণ, মেচেতা ইত্যাদি হওয়ার প্রবণতা বাড়ে, যে কারণে বয়স বেশি হয়েছে বলে মনে হয়।
ফাউন্ডেশন এবং মেক-আপ পাউডার লাগাবেন না – ত্বকে সরাসরি মেক-আপ লাগালে ত্বক, লালিত্য এবং আর্দ্রতা হারিয়ে ফেলে রুক্ষ হয়ে ওঠে। তাই সপ্তাহে এক-দু’বারের বেশি মেক-আপ লাগানো ঠিক হবে না। মাস্কারা এবং লিপস্টিক দিয়েই প্রয়োজন মেটাবার চেষ্টা করুন।
পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খান – জীবনযাপন এবং পুষ্টির জন্যই শুধু নয়, সুস্থ থাকার জন্যও জলের ভূমিকা অপরিসীম। জল, ত্বকে পুষ্টি জোগায়, ফলে ত্বক স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হয়ে ওঠে এবং ত্বকের যৌবনও বজায় থাকে।