পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সংক্রান্ত সু-অভ্যাস শৈশব থেকেই বাচ্চাকে শেখানো দরকার, যাতে ভবিষ্যতে সে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে পারে এবং তার আত্মবিশ্বাসও বাড়ে। শৈশবে যে অভ্যাস বাচ্চার মধ্যে গড়ে তোলা হয়, সারাজীবনেও বাচ্চা সেই অভ্যাস ছাড়তে পারে না।

ওরাল হাইজিন – প্রত্যেক শিশুর দৈনন্দিন জীবনে ওরাল হাইজিন মেনে চলাটা একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। ওরাল হাইজিন মেনে চললে, বাচ্চা অনেক রকমের অসুখ থেকে পরিত্রাণ পেতে পারবে যেমন ক্যাভিটি, নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ এবং হার্টের অসুখ।

কী করা উচিত

১)  সারা দিনে ২ মিনিট করে অন্তত দু-বার বাচ্চাকে শেখান দাঁত ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করতে, বিশেষ করে খাবার খাওয়ার পর দাঁত পরিষ্কার করা অত্যন্ত জরুরি

২)  শৈশব থেকেই বাচ্চাকে রোজ দাঁত ব্রাশ করতে এবং কুলকুচি করতে শেখানো উচিত

৩)  টাং ক্লিনার দিয়ে জিভ কীভাবে পরিষ্কার করতে হবে, বাচ্চাকে ছোটো থেকেই শেখাতে হবে

৪)  নিয়মিত বাচ্চার দাঁত ডাক্তার দিয়ে পরীক্ষা করানো উচিত

বডি হাইজিন

১) বাচ্চার মধ্যে রোজ স্নান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। রোজ স্নান করলে শরীর যেমন পরিষ্কার থাকবে তেমনি ত্বকের মৃত কোশও উঠে যাবে

২)  স্নানের সময় বাচ্চারা যেন শরীরের বিভিন্ন অংশ যেমন হাত, পা, বগল, কোমর, নাভি, হাত ও পায়ের জয়েন্টস, কুঁচকি এবং হাত ও পায়ের আঙুলের মধ্যের অংশগুলি ভালো ভাবে পরিষ্কার করার অভ্যাস গড়ে তোলে, সেটা অভিভাবকদেরই খেয়াল রাখতে হবে

৩)  স্নানের পর বাচ্চাকে পরিষ্কার ধোয়া জামাকাপড় পরাবার অভ্যাস করান এবং এটাও খেয়াল রাখুন রোজের ইনার গারমেন্টস্ যেন বাচ্চা রোজ বদলায়

৪)  সপ্তাহে দু’বার বাচ্চার চুল শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার রাখার অভ্যাস করানো দরকার, যাতে বাচ্চার স্ক্যাল্পে তেল, ধুলোময়লা জমতে না পারে

হ্যান্ড হাইজিন

১)  বাচ্চাকে হাত ধোওয়ার অভ্যাস করান। প্রতিবার খেতে বসার আগে হাত ধোয়া দরকার। হাত ধুলে রোগের জীবাণু যেমন ছড়ানো থেকে আটকানো যায় তেমনি সংক্রমণ এবং অসুস্থতা থেকে বাঁচার জন্যও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়

২)  দৈনন্দিন জীবনে বাচ্চার মধ্যে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। বিশেষ করে বাইরে থেকে ফেরার পর, কাশি অথবা হাঁচি হলে, খেলাধুলো করার পর অথবা ওয়াশরুম থেকে বেরোলে হাত ধোয়াটা খুব দরকার

৩)  হাত ধোয়ার সময় সাবান, হ্যান্ডওয়াশ এবং জলের সঠিক ব্যবহার শেখান বাচ্চাকে

ফুট হাইজিন

১)  বাচ্চাকে শেখানো উচিত, পা-ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখাটা খুব দরকার। নোংরা পা থেকে দুর্গন্ধ বেরোয়। এছাড়াও দাদ এবং অন্যান্য সংক্রমণের ভয়ও বেড়ে যায়।

২)  সারাদিনে দুবার অন্তত বাচ্চাকে পা ধোয়ার অভ্যাস করাতে হবে। আঙুলের মধ্যের অংশগুলো ভালো করে পরিষ্কার করে ধুয়ে ভালো করে শুকিয়ে মুছে নিতে শেখাতে হবে। কারণ আঙুলের মধ্যের অংশ ভিজে রয়ে গেলে ফাংগাস হওয়ার ভয় থাকে

টয়লেট হাইজিন

১)  শৌচকৃত্য করার সঠিক পদ্ধতি বাচ্চাকে শৈশবেই শেখানো দরকার। সবসময় সামনের দিক থেকে পিছন দিকটা ধোয়া উচিত। পিছন থেকে সামনের অংশ ধুলে, সংক্রমণ হওয়ার বিপদ থেকেই যায়। এগুলো বাচ্চাকে আগে থেকেই শিখিয়ে রাখা বাঞ্ছনীয়

২)  টয়লেট ব্যবহার করার পর বাচ্চাকে ফ্লাশ করার অভ্যাস করান

৩)  সবসময় বাচ্চাকে মনে করান যখনই সে টয়লেট থেকে আসবে, সংক্রমণ আটকাতে অবশ্যই হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে যেন হাত ধুয়ে নেয়

নেল হাইজিন

১   বাচ্চাকে শেখাতে হবে নখ পরিষ্কার রাখার তাৎপর্য, কারণ নখে ময়লা জমলে, নানারকম রোগের জীবাণু তার মধ্যে বাসা বাঁধবে, ফলে বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়বে

২)  খেয়াল রাখতে হবে, বাচ্চা যেন দাঁত দিয়ে নখ না চিবোয়। বাচ্চার জেনে রাখা ভালো, দাঁত দিয়ে নখ খেলে, নখের ভিতরে থাকা ময়লা এবং রোগজীবাণু সব তার পেটে গিয়ে তাকে অসুস্থ করে তুলবে

স্লিপ হাইজিন

১)  ৮ থেকে ১০ ঘন্টা বাচ্চাকে ঘুমোবার অভ্যাস করান। বাচ্চাকে জানিয়ে রাখুন ভালো ঘুম হলে বাচ্চার শারীরিক এবং মানসিক বিকাশ সঠিক হবে

২)  ঢিলেঢালা পোশাকে বাচ্চাকে শোয়ার অভ্যাস করান যাতে আরামে বাচ্চা গভীর ভাবে ঘুমোতে পারে

৩)  পরিষ্কার বিছানায় বাচ্চাকে শোওয়ার অভ্যাস করান। সপ্তাহে দু’বার অন্তত বিছানার চাদর বদলে দিন এবং পরিষ্কার কাচা চাদর পেতে দিন

৪)  রাত্রে ব্রাশ করে হাত-পা ভালো করে ধুয়ে বিছানায় যাওয়ার অভ্যাস করান বাচ্চকে

৫)  শোওয়ার আগে মূত্রত্যাগ করে তবেই বাচ্চাকে বিছানায় গিয়ে শুতে শেখান যাতে, রাতে বারবার ওঠার জন্য ঘুমের না ব্যাঘাত ঘটে

ফুড হাইজিন

১)  হাত এবং মুখ মোছার জন্য যেন পরিষ্কার তোয়ালে বা কাপড় ব্যবহার করে

২)  ফল খাওয়ার আগে ভালো করে পরিষ্কার জলে ধুয়ে যেন খায়

সারাউন্ডিং হাইজিন

১)  বাচ্চাকে অভ্যাস করান চটি-জুতো এদিক ওদিক না খুলে, শু-র‍্যাক-এ যেন গুছিয়ে রাখে

২)  নোংরা জিনিস, আবর্জনা ইত্যাদি ডাস্টবিনে ফেলার অভ্যাস করান

৩)  নিজের পোশাক গুছিয়ে আলমারিতে তুলে রাখার অভ্যাস গড়ে তুলুন বাচ্চার মধ্যে

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...