বয়স থেমে থাকে না। ত্বকে ভাঁজও পড়তে থাকে। কিন্তু চেষ্টা করলে ত্বকের ভাঁজ বা বলিরেখার পরিমাণ এবং গতি কমানো যায়। অ্যান্টি এজিং প্রোডাক্টকে মাধ্যম করে এবং অন্যান্য উপায়ে বার্ধক্যের ছাপ আটকানো যায় অবশ্যই। আর এটা করা জরুরি। কারণ, কোনও শারীরিক অসুস্থতা কিংবা অযত্নের জন্য অনেকসময় অকালে ভাঁজ পড়ে ত্বকে এবং দৃষ্টিকটু লাগে। বিশেষকরে মুখমণ্ডলে কিংবা গলায় যদি বলিরেখার সমস্যা দেখা দেয় অল্প বয়সে, তবে তা আপনার তারুণ্যের সৌন্দর্য নষ্ট করে দেবে নিশ্চিত ভাবে। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, মুখমণ্ডলের মতো গলাও দৃশ্যমান, তাই গলার ত্বকের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
বলিরেখা পড়ার কারণ
নানারকম কারণে গলায় বলিরেখা পড়ে। বাহ্যিক কারণগুলির মধ্যে অন্যতম হল– সূর্যের ক্ষতিকারক আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি। যারা গরমকালে স্কার্ফ দিয়ে গলা না ঢাকেন কিংবা কোনওরকম সানসি্্ক্রন লোশন ব্যবহার না করে রোদে ঘোরেন, তাদের গলায় বলিরেখা পড়ার সম্ভাবনা প্রবল। আর অভ্যন্তরীণ কারণগুলির মধ্যে রয়েছে বদহজম এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো পেটের সমস্যা, ঘুমের ব্যাঘাত ঘটা, অতিরিক্ত ধূমপানের শারীরিক কুপ্রভাব প্রভৃতি। এছাড়া, জল কম খেলে কিংবা ধুলো-ধোঁয়ার দূষণের ফলেও ত্বকের তারুণ্য নষ্ট হয়ে ভাঁজ পড়তে দেখা যায়। তবে, কিছু সতর্কতা এবং যত্ন দূর করতে পারে ত্বকের অকাল বলিরেখা।
স্কিন কেয়ার
শরীরের দৃশ্যমান অংশের মধ্যে গলা অন্যতম। কারণ, গলার সৗন্দর্য নষ্ট হলে বার্ধ্যক্য প্রকট হয়। তাই গলার ত্বকের যত্ন নেওয়াও জরুরি।
মুখের জন্য যে ভাবে যতটা যত্ন নেন, ঠিক সেইভাবেই নিন গলার যত্ন। বাইরের ধুলো, ধোঁয়া, রোদ থেকে বাড়ি ফিরে ভালো করে মুখ, হাত-পা ধোয়ার সময় গলাও ধুয়ে নিন পরিস্কার জল দিয়ে। এরপর নরম কাপড়ে জল মুছে শুকিয়ে নেওয়ার পর ময়েশ্চারাইজার মেখে নিন। এতে ত্বকের কোমলত্ব বজায় থাকে। আর যারা ঘরোয়া প্যাক ব্যবহার করতে চান, তারা নারকেলের দুধ, অলিভ অয়েল এবং জোজোবা অয়েল-এর মিশ্রণ তৈরি করে গলায় লাগিয়ে দশ মিনিট পর ধুয়ে, মুছে নিন। এছাড়া, বাড়িতে যদি অ্যালোভেরা গাছ থাকে তাহলে তার থেকে জেল বের করে সরাসরি গলায় প্রলেপ দিয়ে রেখে কিছুক্ষণ বাদে ধুয়ে নিন।
বাড়ি থেকে রোদে বেরনোর আগে অবশ্যই গলায় মাখুন সানস্ক্রিণ লোশন। রোদে দীর্ঘ সময় থাকতে হলে ব্যাগে রাখুন সানস্ক্রিণ লোশন এবং মাঝেমধ্যে তা ব্যবহার করুন।
বন্ধ করুন ধূমপান। কারণ, ধোঁয়া শরীরের আভ্যন্তরে হার্ট, লাং ও লিভারে কুপ্রভাব ফেলে এবং সেই কুপ্রভাবে গলার ত্বকও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এক্ষেত্রে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকে না, ফলে ত্বকে ভাঁজ পড়তে থাকে অকালে।
পরিমাণমতো জল পান করুন। কারণ, শরীরে জলের প্রয়োজন না মিটলে ত্বকে তার কুপ্রভাব পড়বেই এবং ত্বক রুক্ষ্ম হয়ে উঠবে।
রাতে কমপক্ষে আট ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন। ঘুম ভালো না হলে লিভারে চাপ পড়বে, ফলে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
খাদ্য-তালিকায় শাকসবজি এবং ফলমূল রাখুন অবশ্যই। কারণ, ফাইবারজাতীয় খাবার খেলে পেট পরিষ্কার থাকবে এবং পেট পরিষ্কার থাকলে ত্বক ভালো থাকবে।
নিয়মিত পান করুন গ্রিন টি। আখরোট, বাদাম, বিন্স, টম্যাটো প্রভৃতি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট-যুক্ত খাবার খেলেও ত্বক ভালো থাকবে।
ঘরোয়া উপায়
পাকা কলা (কাঁঠালি) এবং পাকা পেঁপের মিশ্রণ বানিয়ে গলার ত্বকে ভালো ভাবে লাগিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ। তিরিশ মিনিট রাখার পর ঠান্ডা জলে ধুয়ে নিন।
ডিমের সাদা অংশ, লেবু এবং মধু মিশিয়ে গলার ত্বকে লাগিয়ে রেখে কিছুক্ষণ বাদে লিকুইড সোপ দিয়ে ধুয়ে দিন। এতে মিনারেল্স, ভিটামিন সি এবং জলের অভাব দূর হবে, ফলে ত্বকের তারুণ্য বজায় থাকবে।
প্রতিদিন রাতে ঘুমোনোর আগে গলার ত্বকে হাত দিয়ে হালকা মাসাজ করুন। এতে গলার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন ভালো হবে এবং ত্বক ভালো থাকবে।
কস্মেটিক পদ্ধতি
ত্বকে যদি অতিরিক্ত ভাঁজ বা বলিরেখা পড়ে ত্বক প্রায় ঝুলে পড়ার অবস্থা হয়, তাহলে কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট কিংবা কস্মেটিক ট্রিটমেন্ট ছাড়া উপায় থাকে না। আর এই কস্মেটিক ট্রিটমেন্টগুলির মধ্যে রয়েছে–
মাইক্রোডার্মাব্রেশনঃ ফাইন লাইন্স এবং ভাঁজ দূর করার জন্য এক বিশেষ মেশিন দিয়ে গলার ত্বকের স্বাস্থ্য ফেরানো হয়। আর এই পদ্ধতিকে বলা হয় মাইক্রোডার্মাব্রেশন।
ফোটোফেসিয়ালঃ এই বিশেষ পদ্ধতিতে রোদে পুড়ে যাওয়া গলার ত্বক ঠিক করা হয়। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে ত্বকের স্বাস্থ্য ফিরে আসবে এই পদ্ধতিতে।
লেজারঃ ত্বকের ঔজ্জ্বল্য এবং তারুণ্য ফিরিয়ে আনার জন্য লেজার পদ্ধতিকে মাধ্যম করা হয়।
বোটুলিনম টক্সিন বোটক্সঃ গলার ত্বকের যদি ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গিয়ে থাকে, অর্থাৎ ত্বক ঝুলে যায়, তাহলে এটাই একমাত্র পদ্ধতি, যার দ্বারা ত্বকের স্বাস্থ্য ফেরানো যায় দ্রুত।
এইসব পদ্ধতি ছাড়াও, অ্যান্টিরিংকল্স ওষুধ-যুক্ত লিকুইড ইনজেক্ট করা হয় গলার ত্বকে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ট্যাবলেট এবং অ্যান্টিরিংকল্স ক্রিম, রেটিনোইড ক্রিম প্রয়োগ করেও গলার ত্বকের স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করা হয়ে থাকে।