দিল্লির সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স-এর এক ৩০ বছর বয়সি মহিলা কনস্টেবল, তাঁর সহকর্মীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন।

ওই কনস্টেবল-এর বক্তব্য, সিআরপিএফ-এ সেক্স র‌্যাকেট চলছে। মহিলা কনস্টেবল-এর স্নানের দৃশ্য কিংবা পোশাক বদলানোর দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করে ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু, অভিযোগকারিণী কুস্তি প্রতিযোগিতায় পদকজয়ী হওয়া সত্ত্বেও, এমন দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার শিকার হয়েছেন।

আর এই ঘটনা থেকে প্রমাণিত হয় যে, আমাদের পুলিশ ফোর্স কোনও নিশ্চয়তা দিতে পারে না মহিলাদের সুরক্ষার ক্ষেত্রে। এমনকী তাদের মহিলা সহকর্মীরাও সুরক্ষিত নয়।

একবার প্রকাশ্যে আদালতে সেনা আধিকারিকরা বিরোধীতা করেছিলেন মহিলাদের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার বিষয়ে৷ বিরোধীদের ভয় ছিল যে, মহিলারা যুদ্ধে গেলে প্রতিপক্ষ ছাড়বে না তাদের। আর মহিলাদের প্রতি এই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের মনোভাব এবং তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার যারা করছেন, তাদের লজ্জা হওয়া উচিত। আসলে, মহিলাদের কীভাবে গৃহবন্দি করে রাখা যায়, সেই চেষ্টা চলছে সর্বত্র। ধর্মীয় রীতি-নীতিতেও এই একই উদ্দেশ্য বলবত করার নির্দেশ দেওয়া আছে সেই প্রাচীনকাল থেকেই।

রাজা এবং জমিদারের আমলেও মহিলাদের সমানাধিকার এতটা লঙ্ঘিত হতো না। কারণ তাঁরা চাইতেন যেভাবেই হোক উত্পাদন বৃদ্ধি পাক এবং ট্যাক্স বাবদ আরও টাকা আসুক।

সব ধর্মের ইতিহাসে দেখা গেছে যে, যারা মহিলাদের দোষী সাব্যস্ত করেন, তাদেরই গুণগান করা হয়। সীতাকে রাবণের লঙ্কা থেকে উদ্ধার করার পর, রাম সীতার উদ্দেশ্যে যা বলেছিলেন, তা খুবই নিন্দনীয় ছিল। কিন্তু, সেই রামকেই পুজো করা হয়।

বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে, মহিলাদের এক যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য তুলে ধরার মতো। তাদের মতে, পুলিশ-প্রশাসন ঠিক থাকলে ধর্ষণের মতো পৈশাচিক ঘটনা আটকানো যাবে অনেকটাই। আর একটা বিষয় খুবই দুঃখজনক যে, পুলিশ ফোর্স-এর কিছু মহিলা কনস্টেবল কিছু পুরুষ সহকর্মীর লালসা এবং শয়তানির শিকার হয়ে মুখ বুজে থাকেন, মোটা বেতন হাতছাড়া হওয়ার ভয়ে৷

আসলে, নির্মম সত্যিটা বোধ হয় এই যে, যৌনসম্পর্ক স্থাপনকে যদি তুচ্ছ বিষয় ধরে নেওয়া হয়, তাহলে হয়তো ধর্ষণের বিষয়টি এত গুরুত্ব পাবে না। কিন্তু তাই হওয়া উচিত কি? মেয়েরা কি কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি? মেয়েদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে যে-কেউ কি তার শরীর ছুঁতে পারে? অন্য কেউ বিনা অনুমতিতে কোনও নারীর সঙ্গে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করলে, তার কুপ্রভাব কি মেয়েটির বিবাহিত জীবনে পড়বে না? ধর্ষকরা এখন তো আবার ওই সময়ের ভিডিয়ো রেকর্ডিং করে রাখে এবং ওই ভিডিয়ো পাবলিক করে দেওয়ার ভয় দেখিযে বারবার যৌনসম্পর্ক স্থাপন করে।

অনেকে হয়তো বলবেন, যৌনতার ব্যাপারে মেয়েরা রক্ষণশীলতা ভেঙে বেরিয়ে এলে বা আরও উদার হলে শ্লীলতাহানি কিংবা ধর্ষণের ঘটনা কমবে। তাই কি? তাহলে যেখানে মেয়েরা উদার মনস্ক, সেখানে কেন পতিতালয় আছে এখনও? আসলে, সত্য এটাই যে, আমরা মানসিকতার পরিবর্তন না করলে, মহিলাদের অসম্মান করার প্রবণতা কমবে না।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...