পেরেন্টিং Tips

প্রত্যেকটি শিশু তার মা-বাবার সঙ্গে হেসেখেলে কিছুটা সময় কাটাবে, এটাই কাম্য। কারণ, বাবা-মায়ের মতো প্রকৃত বন্ধু আর কেউ হতে পারে না। তাই সারাদিনের কর্মব্যস্ততার মধ্যে যতটা সম্ভব বন্ধুর মতো যেমন মেলামেশা করা উচিত সন্তানের সঙ্গে, ঠিক তেমনই সময় সুযোগ বুঝে সুশিক্ষা দেওয়া উচিত সন্তানকে। কারণ, তারা সবচেয়ে বেশি কমফর্টেবল থাকে মা-বাবার সঙ্গে থাকার সময়টাতে। তাই বন্ডিং টাইম-টাকে কাজে লাগিয়ে, সন্তানের মানসিক নির্ভরতার আধার হয়ে উঠুন। আপনি সমস্ত অ্যাটেনশন দিয়ে বাচ্চাকে আগলে রাখলে, সেও ইমোশনালি এবং ফিজিক্যালি অনেক নিশ্চিন্তবোধ করবে। এটাই তাকে মানসিক ভাবে ভালো থাকার রসদ জোগাবে এবং সন্তান সুশিক্ষিত কিংবা বলা যায় প্রকৃত শিক্ষা পাবে।

কখন, কী করবেন:

  • সকাল থেকে রাত— কীভাবে সময় কাটাবেন সন্তানের সঙ্গে, সে বিষয়ে সন্তানের সঙ্গে আলোচনা করে নিন। বেশিরভাগ বাচ্চারা বেশ বুদ্ধিমান। তাদের সম্পূর্ণ পরিস্থিতি বুঝিয়ে বললে তারা ঠিকই বুঝতে পারবে।
  • প্রত্যেকদিন একটা নির্দিষ্ট সময় বের করে নিন, যখন সন্তানের সঙ্গে সময় কাটাবেন। এই সময়টায় দু’জনে একসঙ্গে গান শুনুন কিংবা দাবা খেলুন। কোনও গল্প পড়েও শোনাতে পারেন বাচ্চাকে।
  • এখনকার বাচ্চাদের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস খুব কমে গিয়েছে। আপনার ছুটির দিনে ওদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টা করুন। বই পড়ার অভ্যাস না থাকলে কোনও ভালো গল্প পড়ে শোনান, কিন্তু সম্পূর্ণ করার আগেই থেমে যান। সন্তানকে বলুন বাকি অংশ ও যেন আপনাদের পড়ে শোনায়। শিশু-সাহিত্যিকদের লেখা একটা করে গল্প পড়ে শোনানোর ফলে মাতৃভাষার প্রতি ধীরে ধীরে আগ্রহও বাড়বে।
  • আপনার ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ-এ সন্তানের সঙ্গে সেরা মুহূর্তগুলির ছবি অ্যালবাম-এ সেভ করে রাখুন। খুব মন খারাপের দিনগুলোয় যাতে সে ওগুলো দেখে আনন্দ পায়৷
  • সন্তান মা-বাবার কেয়ার করে, এই ভাবনাটুকুই সন্তানকে বাইরের নানা অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করতে সাহায্য করে। তাই ওর মনের ইনসিকিয়োরিটি দূর করতে, খারাপ-ভালো পরিস্থিতিতে ওর পাশে থাকুন।
  • সন্তানের ছোটো ছোটো সাফল্য সেলিব্রেট করুন।
  • ডিনার করুন একসঙ্গে। এর ফলে সারাদিন সে কী করল, তা শেয়ার করার সুযোগ পাবে।
  • অতিরিক্ত শাসন না করে তার সমস্যাগুলো বোঝার চেষ্টা করুন। এতে সমাধানের পথ খুঁজে পাবেন।
  • একটা ছোট্ট ডায়ারি তৈরি করুন। আপনার সন্তানের ছোটোখাটো কোনও কৃতিত্বের ঘটনা ঘটলে, দু- চার লাইন সেখানে লিখে রাখুন। যদি জীবনের কোনও পর্যায়ে সন্তান ডিমোটিভেটেড হয়ে পড়ে, এই ডায়ারি-টি তাকে মানসিক শক্তি জোগাবে।

কাস্টমাইজড ইন্টিরিয়র

অন্দরসজ্জায় পরিবর্তন আনতে হবে আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী। সবরকম আর্থিক সামর্থ্যের ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে, বিপণিগুলি নিত্যনতুন পণ্যসম্ভারে বাজার ভরিয়ে তুলেছে। বাজেট অনুযায়ী, পছন্দসই ফার্নিশিংস আর আসবাবের কোনও অভাব নেই বাজারে। শুধু বাছাই করে নিতে পারলেই উদ্দেশ্য পূরণ হবে।

কাস্টমাইজড ইন্টিরিয়র ডিজাইনিং : কী রকম অন্দরসজ্জা চান আপনি, তা ঠিক করে নিন প্রথমে। গুরুত্ব দিন আপনার পরিবারের বাকি সদস্যদের পছন্দকেও। এবার ঠিক করুন, সবাই
ট্র‌্যাডিশনাল লুক চান নাকি ফিউশন। এরপর গুরুত্ব দিন আলোর বিকল্প, আসবাব, ফ্লোরিং, বাড়ির বাইরের এবং ভিতরের রং অথবা ওয়ালপেপার। এই সবকিছুরই দাম জেনে নিয়ে কিছুটা
দরদাম করে, বাজেটের মধ্যে যেটা নিতে পারবেন, সেই পছন্দের জিনিস দিয়ে সাজিয়ে তুলুন নিজের একান্ত আপন বাড়িটিকে। অবশ্য বাড়ি সাজাবার আগে, যারা ওই বাড়িতে থাকবেন,তাদের রুচি এবং প্রয়োজন প্রাধান্য পাওয়া উচিত এক্ষেত্রে।

প্রত্যেকটি শোয়ার ঘর, রান্নাঘর, বাথরুম, বারান্দা প্রভৃতি কতটা স্পেস রয়েছে, তা দেখে নিয়ে সাজে বদল আনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই পদ্ধতিকে বলা হয় কাস্টমাইজড ইন্টিরিয়র ডিজাইনিং। এতে ব্যক্তির প্রয়োজন, ঘরের রং, আসবাবের শেপ, ফ্যাব্রিক, মেটিরিয়াল, ডিজাইনিং প্রভৃতি একের সঙ্গে অপরের সামঞ্জস্য বজায় রেখে সোফা, কুশন, দেয়াল, সিলিং, পর্দা সবকিছুরই বিশেষ খেয়ালরাখা হয়।

বাজারে গিয়ে কিছু পছন্দসই জিনিস কিনলেন অথচ বাড়িতে নিয়ে এসে দেখলেন ঘরের আকার অনুযায়ী ঠিকমতো আঁটানো যাচ্ছে না, এমন ঝামেলায় পড়তে হয় অনেক সময়। যেটাই বাড়িতে নতুন তৈরি করা হবে, তা যেন বাড়ির পুরো ডেকরের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে করানো হয় এবং বাজেটও আয়ত্বে থাকে। লিভিং রুমটি হয়তো আকারে ছোটো অথচ দোকানে গিয়ে পছন্দ হল বড়োসড়ো একটি সোফা। কখনওই সেটা মানানসই হবে না, উপরন্তু জায়গাতেও কম পড়বে। তার চেয়ে ভালো, ঘরের আকার অনুযায়ী কাস্টমাইজড সোফা বানিয়ে নেওয়া এবং সেইসঙ্গে, ঘরের অন্যান্য আসবাবও।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কাস্টমাইজড ইন্টিরিয়র হল বিভিন্ন রকমের ডিজাইন নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যম। গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী বাড়ির অভ্যন্তরীণ পরিবেশ, জায়গা ইত্যাদি
দেখে বানানো হয়। এতে গ্রাহকের নিজস্ব পছন্দের বিষয়টিও ঠিক থাকে। সারা বাড়ির ডেকর বদলে ফেলা সম্ভব এই পদ্ধতিতে। লেদারের সঙ্গে সলিড কাঠের আসবাব মানানসই হলেও একটু বেশি গরমের অনুভূতি হয়। কিন্তু যদি কাঠ এবং মোটা তারের জাল ব্যবহার করে সোফা কিংবা খাট তৈরি করা হয়, তাহলে হাওয়া চলাচল সঠিক থাকবে এবং গরম হবে না। এরকম ডিজাইনার ফার্নিচারের প্রচুর বিকল্পও রয়েছে আজকাল। এগুলিকে মডার্ন লুকও দেওয়া যায়, আবার ক্রেতা চাইলে ট্র‌্যাডিশনাল লুক দিয়ে তৈরি করে দেন ফার্নিচার বিপণির কর্মীরা।

পছন্দসই ডেকর : আমরা যে-রঙের পর্দা ব্যবহার করি, সেই রঙের কুশন কভার, বেড কভার ইত্যাদি দিয়ে ঘর সাজাবার চেষ্টা করি, যাতে রং ও স্টাইল-এ একটা মিলমিশ থাকে।
পর্দার ঝালর লাগাতে চাইলে, দেয়ালের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে লাগানো যেতে পারে। ঘর আকারে ছোটো হলে, বড়ো যাতে লাগে, সেইজন্য দেয়ালে ওয়ালপেপার লাগানো যেতে পারে অথবা ওয়ালপেপারে পেন্ট করানো যেতে পারে। ওয়ালপেপার পছন্দ করার প্রথম কারণ হচ্ছে, ঘর দেখতে সুন্দর লাগে। তারপর রং করাবার হলে, ভালো রঙের মিস্ত্রি খুঁজে বার করা এবং হাতে সময় থাকাটাও জরুরি। সময় বাঁচাতে চটজলদি ওয়ালপেপার লাগিয়ে ঘরের অন্দরসজ্জা সেরে ফেলতে ক্ষতি কী? বাড়ির সকলের আলাদা আলাদা পছন্দে এবং ওয়ালপেপারের বৈচিত্রে প্রত্যেকের ঘর সেজে উঠতে পারে সম্পূর্ণ ডিফারেন্ট লুক নিয়ে বাড়তি সুবিধা হল দেয়ালের অন্য
আর কিছু টাঙাবারও প্রয়োজন পড়ে না।

অনেকের মনেই এই ধারণা রয়েছে যে, নিজের পছন্দমতো বাড়ি সাজাতে গেলেই অর্থব্যয় অনেক বেশি হবে। কিছুদিন আগে পর‌্যন্ত হয়তো এই ধারণাটা সত্যি ছিল কিন্তু এখন সময়
বদলেছে। কারণ আর কিছুই নয়, এখন বাজারে ভ্যারাইটি এবং বিভিন্ন রকমের মেটিরিয়ালের
প্রাচুর্য রয়েছে। কাঠের আসবাব কিনতে গেলে, কাঠের মধ্যেই নানা ভ্যারাইটি পাবেন।
তাছাড়া, দামি, কমদামি সবই পেয়ে যাবেন একই ছাদের তলায়। এরকমই ফ্র‌্যাব্রিক, কিচেন অ্যাকসেসরিজ, ডেকোরেশনের জিনিস, সবই ফ্ল্যাট অথবা অ্যাপার্টমেন্ট অনুযায়ী এবং বাজেটের মধ্যেই পেয়ে যাবেন। প্রয়োজন শুধু সঠিক খোঁজখবর নেওয়ার। সুতরাং অন্যের কথায় কান না দিয়ে নিজের প্রয়োজন জানুন এবং বাড়িতে বসবাসের দিনগুলিকে আনন্দময় করে তুলুন।

টুকিটাকি রদবদল : কাস্টমাইজড ইন্টিরিয়র ডিজাইনিং-এর সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতে হাতের কাছে থাকা বিভিন্ন জিনিসের সামান্য রদবদলেও, আপনার ফ্ল্যাটটি উত্সবের রঙে সেজে উঠতে পারে। হাতে সময় কম থাকলে অর্ডার প্লেস করা, জিনিস তৈরি হওয়ার সময় দেওয়া, কোনওটাই সম্ভব নয়। তাই বলে কি অন্দরসজ্জায় পরিবর্তন আনবেন না মাঝেমধ্যে? মন খারাপের কিছু নেই।

আসবাবপত্রের অবস্থান পরিবর্তন করেও ঘরের সাজ বদলে দেওয়া যায়। বারান্দায় অবহেলায় পড়ে থাকা ফুলের টবগুলিকে রঙিন করে ঘরের প্রতিটি কোণায় রাখুন ফুলের গাছ সহযোগে।
ঘরের দেয়ালের রং এবং পর্দার রঙের সঙ্গে মিলিয়ে কুশন কভার, বেড কভার, বালিশ এবং পাশবালিশের কবার বদলে ফেলুন। আজকাল মেঝেতে পাতার জন্য খুব সুন্দর ডিজাইনের
হালকা, সিন্থেটিক কার্পেট কিনতে পাওয়া যায়। নতুন বছরে বসার ঘরে যদি একটা কার্পেট বিছিয়ে নেন, তাহলে ঘরের সৌন্দর্যও বাড়বে এবং শীতকালে মেঝে থেকে ওঠা ঠান্ডাও আপ
পায়ে লেগে সমস্যায় পড়তে হবে না। আর বাড়িতে থাকা ফুলদানিতে টাটকা ফুল রেখেও ঘরের সৌন্দর্য‌ বাড়ানো যেতে পারে এবং ঘরকেও সুগন্ধময় করে রাখা যেতে পারে।

টাইম ম্যানেজমেন্ট

ব্যস্ততার যুগ। মানুষের কছে সময় কম। ঘুমচক্ষু খুলেই কাজে লেগে পড়া। পুরুষ, মহিলা নির্বিশেষে ব্যস্ততায় কেটে যায় সময়। তাই সময়কে মূল্য দিতেই হয়।

সংসারের ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকাটা মেয়েদের তুলনায় কম। তবে সকলের ক্ষেত্রেই যে কথাটা প্রযোজ্য এমনটা নয়। অথচ পুরুষের সমান দায়িত্ব নিয়েই কিন্তু মেয়েদের একশো শতাংশ ইনভলভ্ড হতে হয়, সংসারে এবং দফতরে। তাই বাড়ি এবং অফিস, এই দুই জায়গাতেই পারফরমেন্স বেস্ট রাখতে মেয়েদের সময়ের হিসেব বেশি কষতে হয়। বাড়িতে স্বামী, সন্তান, অফিসের দায়িত্বপূর্ণ কাজের প্রেসার উপরন্তু সমাজের চহিদা—এই তিনের সমন্বয়ে মেয়েদের উপর চাপ সৃষ্টি হয় বেশি। টাইম ম্যানেজমেন্টে তাই মেয়েদের জুড়ি মেলা ভার। সব জায়গায়ই তারা এক্সপার্ট আর তা না হলেই পিছিয়ে পড়ার ভয় মনে উঁকি মেরে যায়। আপনিও সহজেই সময়কে বশ করতে পারবেন। এর জন্য নির্দিষ্ট কিছু ফরমুলা এখানে দেওয়া হল, যা আপনার কাজে লাগতে পারে।

দফতরের নিয়ম, সংসারের এই নিয়মের কিন্তু বাইরে নয়। অফিস মানেই সময়ের সীমাবদ্ধতা আছে, স্পেসিফিক কাজের চাপ রয়েছে। নিজের ক্যাপাবিলিটি প্রমাণ করার এর থেকে ভালো জায়গা আর নেই। পারফেক্ট টাইম ম্যানেজমেন্ট-ই হল খ্যাতির শিখরে পৌঁছোবার মারণাস্ত্র। সঠিকভাবে সময়কে ব্যবহার করতে চাইলে কয়েকটি পয়েন্ট মনে রাখা জরুরি।

জীবনে কী করতে চান তার একটা পরিষ্কার ধারণা থাকা চাই

মানুষ বেশিরভাগই কনফিউশন-এর শিকার হয় কারণ কী কাজ তার করা উচিত তার কোনও সুস্পষ্ট ধারণা তার থাকে না। সময় নষ্ট হওয়ার এটা একটা প্রধান কারণ। সেজন্য প্রথমেই উচিত একটা সুস্পষ্ট গোল অথবা দিশা তৈরি করে নেওয়া– কী করতে চাই এবং তার জন্য কতটা সময় দেওয়া উচিত? একটা পদক্ষেপ নেওয়ার আগেও প্ল্যানিং-এর দরকার। প্ল্যানিং ছাড়া এগোলে বন্যার জলে খড়কুটোর মতোই ভেসে যেতে হবে। দফতরে কী কাজ রয়েছে, আপনার আলটিমেট লক্ষ্য কী, সেটা বিবেচনা করে এগিয়ে যেতে পারলে সাফল্য হাতের মুঠোয় এসে আপনিই ধরা দেবে।

জেগে মিথ্যে স্বপ্ন দেখবেন না

একবার নিজের পথের দিশা ঠিক করে ফেললে বারেবারে তা পরিবর্তন করবেন না। মানুষের মন স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে। কোনও লক্ষ্যে স্থির ধৈর্য রেখে এগিয়ে চলা মানুষের জন্য কষ্টকর।মস্তিষ্কের ইচ্ছেয় নিজেকে সবসময় পরিচালিত হতে দেবেন না। কোনও কাজ করতে মনস্থ করেন, তাহলে সংকল্প দৃঢ় করুন এবং কাজটা অবশ্যই শেষ করুন। থমাস অ্যালভা এডিসন সারাজীবনে বহুবার ব্যর্থ চেষ্টা করে শেষে ইলেকট্রিক বাল্ব বানাতে সফল হয়েছিলেন। উনি যদি চেষ্টা করাই বন্ধ করে দিতেন তাহলে হয়তো ইলেকট্রিক বাল্ব-এর আবিষ্কারই হতো না। সুতরাং আত্মবিশ্বাস বজায় রাখুন এবং লক্ষ্য স্থির রেখে সফল হওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যান।

প্রায়োরিটি সেট করুন

অফিসের বহু কাজের মধ্যে কয়েকটা কাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে। কাজগুলির একটা সরাসরি প্রভাব পড়ে যে-মানুষটি কাজটা সম্পাদন করছে তার সফল হওয়ার উপর। সুতরাং সব কাজকেই একসঙ্গে একই গুরুত্ব দিয়ে মাপা অনুচিত। কোন কাজটার গুরুত্ব বেশি এবং কোনটা সময় নিয়ে করা যাবে এই বিচারে প্রথমেই কাজের মধ্যে বিভাজন করে নেওয়া উচিত। দায়িত্ব নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোই আগে শেষ করে নিন। একেই বলে ‘গুড টাইম ম্যানেজমেন্ট’।

ডেডলাইন অবশ্যই রাখুন

আপনি কাজের প্ল্যানিং করতে করতে হয়তো দেখলেন, বাস্তবে আপনার জীবনে অন্য কিছু ঘটে যাচ্ছে। মানুষের জীবন অনিশ্চয়তার দোলায় সবসময় দোদুল্যমান। পরমুহূর্তে জীবনে কী ঘটতে চলেছে সেটা প্রেডিক্ট করা অসাধ্য। এই অনিশ্চয়তার পরিবেশ যদি এড়াতে চান, তাহলে উচিত, যে-কাজ করবেন ঠিক করেছেন সেটা শেষ করার একটা ডেডলাইন মনে মনে ঠিক করে নেওয়া। কাজের গাম্ভীর্য এবং গুরুত্ব বুঝে কিছু ঘণ্টা অথবা কয়েকটা দিন-ই শুধু সময় হিসেবে বরাদ্দ রাখুন। দেখবেন সময়সীমা বেঁধে দিলেই কাজটি শেষ করার জন্য আপনি নিজেই ব্যাকুল হয়ে পড়বেন এবং সময়ের মধ্যে কাজটা শেষও করে ফেলতে পারবেন। সুতরাং আপনার মহামূল্য সময় অপচয় হবে না।

বন্ধু বাছুন ভেবেচিন্তে

দুঃসময়ের বন্ধু সত্যিকারের বন্ধু। তারা আপনাকে ভালোবেসে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছে, আপনাকে সব দিক দিয়ে সাহায্য করাই তার মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু কিছু মানুষ আছে যারা বন্ধুত্বের মুখোশের আড়ালে আপনার প্রতি ঈর্শাপরায়ণ। অফিসে এই দুই ধরনের মানুষেরই দেখা মেলে। দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষেরা গল্পগুজবের অছিলায় আপনার কাজের ব্যাঘাত ঘটায়। তাই সবসময় এই ধরনের মানুষদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখবেন কিন্তু তাই বলে এই নয় যে, অফিসে সকলের থেকে নিজেকে আলাদা করে রাখবেন। আপনাকেই সকলের মধ্যে, নিজের শুভকাক্ষী-কে খুঁজে নিতে হবে।

এছাড়াও পারিপার্শ্বিক নানা ধরনের মনোরঞ্জনেরও হাতছানি অনেক সময় আকর্ষণের প্রধান বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়ায়। সিনেমা, থিয়েটার, কম্পিউটারে গেম এবং নেট-এর মাধ্যমে অশালীন সাইটগুলির আকর্ষণ আপনাকে আপনার মূল উদ্দেশ্য থেকে ব্যহত করতে পারে। এতে মানুষের চিন্তাও কলুষিত হয়। তাই যথাসম্ভব এগুলি এড়িয়ে চলুন।

কাজ ভাগ করে নিন

যে-কোনও কাজের ভালো ফলাফলের যদি আশা থাকে, তাহলে সেটা নিজে করে নেওয়াই সব থেকে ভালো। কিন্তু একটা মানুষের পক্ষে নিজে সমস্ত কাজ সঠিকভাবে করে ওঠা সম্ভব হয় না। খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছেড়ে বাকি সাধারণ কাজগুলি তাই নিজের অ্যাসিস্ট্যান্ট, কলিগ অথবা সেক্রেটারির মধ্যে ভাগ করে দেওয়া উচিত। কোনও দরকারি কাগজের ফোটোকপি করাবার দরকার হতেই পারে। সেটা এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ নয় যে আপনাকেই করতে যেতে হবে। অফিস বয়-কে পাঠালেই আপনার কাজ সুষ্ঠু ভাবে পালন হতে পারে।

আপনাকে শুধু নিজের কাজের প্রতি প্যাশনেট হতে হবে এবং কয়েকটি পয়েন্ট মাথায়  রাখতে হবে।

টাইম ম্যানেজমেন্ট টিপ্স

  • গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য সময় বেশি দরকার হয়। সকালে তাড়াতাড়ি উঠুন যাতে সময় কম না পড়ে
  • সাকারাত্মক মনোভাব রাখুন, তাহলে বিপদের সম্মুখীন হলেও স্থির থাকতে পারবেন
  • কোনও কাজ শুরু করার আগে, আপনার যা-কিছুর প্রয়োজন সব ঠিকমতো আছে কিনা পরীক্ষা করে নিন
  • কোনও কাজ নিয়ে গড়িমসি করবেন না
  • নিজেকে আহেতুক আড্ডায় জড়াবেন না
  • কী করতে চান এবং সেটি বাস্তবায়িত করার পরিকল্পনা করুন
  • চট করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকা চাই
  • শরীর সুস্থ রাখুন। শরীর সতেজ থাকলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে
  • জেগে স্বপ্ন দেখবেন না, মূল্যবান সময় নষ্ট হবে। হাওয়ায় দুর্গ গড়ে তুলতে চাইলে তা ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে, গড়ে তোলার সময়টাই শুধু নষ্ট হবে।

গ্যাজেটে আধুনিকতা

বাড়ি-গাড়ির চিন্তা এখন অনেকটাই ব্যাকডেটেড। আগে হলে চোখে পড়ত দৈনিক খবরের কাগজে চোখ রেখে নতুন নতুন জমি, বাড়ির সন্ধানে অথবা গাড়ির বাজারে নতুন কী এল তার খবর রাখতেই মানুষ বেশি ব্যস্ত।

এখন ধারণাটা ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে। বাজার ক্যাপচার করছে হালকা ওজনের ছেটোখাটো ইলেকট্রনিকস গুড্-স এর পপুলারিটি এবং চাহিদা। মানুষের পছন্দ বদলাচ্ছে, লাইফস্টাইলেরও আমূল পরিবর্তন ঘটছে। আগে এত কিছুর প্রয়োজন ছিল না। বাড়ি ভর্তি লোকজনের আনাগোনা, বড়ো পরিবার কোনও মানুষকে একাকিত্ববোধের আঁচটুকুও গায়ে লাগতে দিত না। আর এখন সবই প্রায় নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি। সকলেই লাইফটাকে নিজের মতো করে এনজয় করতে চায়। বাড়ির বড়োরা নিজেদের কাজে ব্যস্ত। যে-কাজ আগে বাড়িতে বসেই করে নেওয়া যেত, আজকের যুগে সময়ের অভাবে গাড়িতে, বাসে বসেই অনেক দায়িত্বপূর্ণ কাজ করে ফেলতে হয়। সুতরাং ছোটোদের কোয়ালিটি সময় দেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। তাদের সময় কাটাবার জন্য তাই হাতে তুলে দেওয়া হয় নতুন নতুন গ্যাজেট, যেগুলি ব্যাটারি অথবা ইলেকট্রিকে অপারেট করা যায় এবং এগুলি ব্যবহার করতে গেলে অপরের সাহায্যেরও কোনও প্রয়োজন পড়ে না। বাচ্চা থেকে বুড়ো, সকলেই অনায়াসে এগুলির ব্যবহার করতে পারেন।

গ্যাজেটে বাচ্চাদের হাতেখড়ি বলা যায় প্রথম ভিডিও গেমস্ দিয়ে। টিভি অথবা কম্পিউটার মনিটরের পর্দায় চোখ রেখে সারাদিন ধরে ভিডিও গেমস্ খেলতে বাচ্চাদের কখনওই ক্লান্ত হতে দেখা যায় না। বড়োদের লাইফস্টাইলেও এখন হালকা ওজনের গ্যাজেট ভীষণভাবে ইন কারণ তা ক্যারি করার সুবিধা রয়েছে।

বাজারে কাস্টমার নিড-এর উপর বেস করে পৃথিবীর বড়ো বড়ো কোম্পানিগুলো ঝাঁপিয়ে পড়ছে চাহিদার জোগান দিতে। কোম্পানিগুলির মধ্যে অ্যাপল, স্যামসাং, সোনি, মাইক্রো ম্যাক্স, এইচপি, লেনোভো, ডেল ইত্যাদি অবশ্যই উল্লেখযোগ্য।

মোবাইল এবং ল্যাপটপ, ট্যাব এখন সকলের হাতে হাতে।এগুলি ছাড়া আধুনিকতার দরজায় পৌঁছোনো যেন একপ্রকার অসম্ভব। কানে হয় গান বাজছে নয়তো সময়ে অসময়ে দরকারি কাজ টুক করে সেরে ফেলতে মোবাইল-ই এখন মাধ্যম। তাই এই সব গ্যাজেটস্-এ যত নতুন নতুন ফিচার দেওয়া হচ্ছে, ততই তার চাহিদা এবং দাম বাড়ছে।  এদেশের মধ্যবিত্তদের কথা মাথায় রেখেই বহু ফিচার দেওয়া সত্ত্বেও পকেট ফ্রেন্ডলি দাম রাখার চেষ্টা করে কোম্পানিগুলি বাজারে মোবাইলের রকমফের নিয়ে আসছে।

অ্যাপেল-এর আইপ্যাড মিনি, আইফোন, আইপড ন্যানো ইত্যাদি গ্যাজেটগুলি শুধু দোকানের শেল্ফ-এ শোভা পাচ্ছে না, মানুষের হাতে হাতেও ঘুরছে। এগুলির অত্যাধুনিক ফিচার দৈনন্দিন চাহিদাগুলি পূরণ করছে।

যে- কাজগুলি আগে ছিল সময় সাপেক্ষ, আজ বাটন-এর একটি ছোঁয়ায় তা মুহূর্তে সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে। টাচ্সি্্ক্রন, এলসিডি ডিসপ্লে, একসঙ্গে দু-দুটি ক্যামেরার সুবিধালাভ, ফুল এইচডি ভিডিও রেকর্ডিং, ইন্টারনাল হাই-স্টোরেজ ফেসিলিটি, গান শোনার সুবিধা এবং কম্পিউটারের সবরকম সুযোগ-সুবিধাও এগুলির মধ্যে রয়েছে। আইফোন থ্রিজি, ফাইভএস, আইফোন সিক্স ফোনগুলি ব্যাবসায়িক কাজের সুবিধার জন্যেও ব্যবহার করা হয়। এগুলিতে পার্সোনাল ইনফরমেশন ম্যানেজার উইথ ক্যালেন্ডার, অ্যাড্রেস বুক, স্টক ট্র্যাকিং ইত্যাদি সুবিধাও দেওয়া থাকে। ওয়েদার আপডেট-ও আপনি সহজে পেতে পারেন এই ছোট্ট যন্ত্রটির সাহায্যে।

আইপড ন্যানো, ১৬ এবং ৩২ জিবি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এতে অসংখ্য ছবি,ভিডিয়ো এবং গান স্টোর করা যায়। এগুলিতে গান, এমপিথ্রি প্লেয়ার, অডিয়োবুক, পডকাস্ট, ছবি এবং এফএম রেডিও-র সুবিধা রয়েছে।

অ্যাপেল-এর স্মার্টফোনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাজারে ব্ল্যাকবেরি, স্যামসাং, সোনির মতো কোম্পানি নিজেদের প্রোডাক্টগুলিকে আরও আধুনিক করে তুলছে।

ব্ল্যাকবেরি-র স্মার্টফোন রেঞ্জে রয়েছে জেডটেন– যা বিশেষভাবে কাজের সুবিধার জন্যে অনেকেই বেছে নিচ্ছেন। এটিতে মাইক্রো সিম, ইন্টারনাল রছ জিবি স্টোরেজ, মাইক্রো এসডি কার্ড এট, ওয়াইফাই, ব্লুটুথ, জিপিএস সিসটেম, রিয়ার ও ফ্রন্ট ফেসিং ক্যামেরার সুবিধাও রয়েছে।

স্মার্টফোনের বাজার জুড়ে সবচেয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে স্যামসাং স্মার্টফোনের রেঞ্জগুলি। স্যামসাং গ্যালাক্সি এসথ্রি এবং এসফোর ক্রেতামহলে চূড়ান্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। ক্যামেরা-সহ সবরকম আধুনিক সুবিধাই ক্রেতাদের দিতে চেষ্টা করা হয়েছে এই গ্যাজেটে।

‘ট্যাবলেট’গুলিও এখন ফ্যাশনে ইন। প্রচুর সুবিধাও এতে দেওয়া আছে। স্যামসাং গ্যালাক্সি নোট টু, মাইক্রোম্যাক্স-এর ট্যাবলেট প্রভৃতি ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় উপরের সারিতে স্থান পাচ্ছে। স্মার্টফোন, ট্যাব, সবেতেই ক্রেতারা অ্যানড্রয়েড, টাচস্ক্রিন, ক্যামেরা, এক্সপ্যানডেবল স্টোরেজ ফেসিলিটি, এফএম রেডিও ও ওয়াইফাই (নেট) এর সুবিধা পাচ্ছেন।

সোনি এক্সপিরিয়া তাদের স্মার্টফোনের রেঞ্জে একটু রকমফের এনেছে। এদের জেড আর ব্ল্যাক স্মার্টফোনটিতে জলের তলায় সম্পূর্ণ হাই ডেফিনেশন ফিল্মিং করার সুবিধা পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া গ্যাজেট-এর পরিবারে ল্যাপটপ, আল্ট্রাবুক, নোটবুক, ই-বুক ইত্যাদিরও একটা বড়ো বাজার রয়েছে। স্যামসাং, সোনি, ডেল, লেনোভো, এইচপি, এসার ইত্যাদি বড়ো বড়ো কোম্পানিগুলি– বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্নরকম প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখেই এর প্রচুর ভ্যারাইটি বাজারে ছেড়েছে। স্টুডেন্ট, ডোমেস্টিক ইউজ, শেয়ার বাজার, ব্যাবসা, আইটি সেক্টর, গেমিং ইত্যাদি আলাদা আলাদা প্রয়োজনেই এগুলিতে বিভিন্ন রকমের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এগুলির মধ্যে সেকেন্ড, থার্ড, ফিফ্থ জেনারেশন এর ক্যাটাগরি রয়েছে, ইনটেল (আর) কোর ফেসিলিটি, হাই স্পিড প্রসেসর, উইনডোজ এইট, লেড ব্যাকলিট ডিসপ্লে উইথ এইচভি রিসোলিউশন, র্যাম (বহু ভেরিয়েশনেই পাওয়া যায়) এইচডি গ্রাফিক্স এবং হার্ড ডিস্ক-এর ক্যাপাসিটির বিভিন্ন রেঞ্জও  বাজারে খুঁজে পাবেন আপনার চাহিদা অনুসারে।

ইলেকট্রনিক্স-এর জগতের উপর আমাদের লাইফস্টাইল এতটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে যে, এটা আর এখন শুধুমাত্র বিলাসিতার সামগ্রী নয়, বরং নিত্য প্রয়োজনীয় বস্তুর মতো করে ঢুকে পড়েছে গৃহস্থের অন্দরে।

নো-এন্ট্রি ফর পেস্টস্

বছরের কয়েকটা মাস বাদ দিয়ে বেশিরভাগ সময়টাই এখানকার আবহাওয়া থাকে ভ্যাপসা। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ থাকে অত্যন্ত বেশি। এর সঙ্গে যোগ হয় প্যাচপ্যাচে বৃষ্টি। পোকামাকড়ের সংখ্যা বৃদ্ধি হওয়ার এক আদর্শ আবহাওয়া নিঃসন্দেহে। এছাড়াও অপরিষ্কার, অপরিচ্ছন্নতাও বিশেষ কারণ। যেসব জায়গা নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না, অন্ধকার ঘুপচি জায়গা, ময়লা জমা হয়ে থাকা, ড্যাম্পধরা দেয়াল, কোণ প্রভৃতি স্থানে পোকামাকড় বেশি দেখতে পাওয়া যায়।

পোকামাকড়ের উপস্থিতি যেমন বিরক্তিকর, তেমনি স্বাস্থ্যের পক্ষেও হানিকারক। সুতরাং এর হাত থেকে নিস্তার পেতে হলে কিছু টিপ্স আমাদের মেনে চলা উচিত।

স্যাঁতসেঁতে আর্দ্র আবহাওয়ায় প্রধাণত আরশোলা, উই, পিঁপড়ে, মশা, মাছি, ইঁদুর ইত্যাদি নানা ধরনের পোকামাকড়ের অস্বস্তিকর উপস্থিতিতে আমাদের জীবন উত্যক্ত হয়ে ওঠে। বছরে বারো মাসই আরশোলার উৎপাত, উপদ্রব লেগেই থাকে। প্রথম থেকেই যদি এর বৃদ্ধি রোধ করা না যায়, তাহলে টিবি, ডিসেন্ট্রি, মাঝেমধ্যেই জ্বর, অ্যাজমার মতো অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। সুতরাং নালি, অন্ধকার স্যাঁতসেঁতে জায়গা, ডাস্টবিন ইত্যাদি জায়গায় যেখানে আরশোলা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে, সেখানে বেগন, হিট স্প্রে করে রাখা উচিত।

রান্নাঘরের বেসিনে অথবা বাড়ির অন্যান্য ওয়াশবেসিনের নালিতে ফিনাইল এবং ন্যাপথলিনের বল্স ফেলে রাখা উচিত যাতে নালি দিয়ে আরশোলা বা অন্যান্য পোকামাকড় বাড়িতে প্রবেশ করতে না-পারে। মিক্সি অথবা অন্যান্য ইলেকট্রিকের সরঞ্জামের মধ্যে যাতে আরশোলা ডেরা না-বানায়, তাই তার প্যাঁচ খুলে ন্যাপথলিনের কয়েকটা বল্স ওর মধ্যে রেখে দেওয়া উচিত।

এ ছাড়াও আরশোলার উৎপাত থেকে বাঁচতে, বোরিক অ্যাসিড পাউডারের সঙ্গে সমপরিমাণে সাধারণ কাচার সাবান কুরে নিয়ে মিশিয়ে নিন। এবার এই মিশ্রণ থেকে ছোটো ছোটো বল বানিয়ে বাসনের তাক, চাল-ডালের কৌটোর আশেপাশে ফেলে রাখুন। মাইক্রোওয়েভ আভেন, ইলেকট্রিক আভেন ইত্যাদির নীচেও বলগুলি একটু ভিজিয়ে আটকে রাখুন। আরশোলা পালিয়ে যাবে।

বাড়িতে পিঁপড়ের উপদ্রব নেই, এমন দাবি হয়তো কারও পক্ষেই করা সম্ভব নয়, বিশেষকরে আমাদের এখানকার মতো আবহাওয়ায়। লাল, কালো পিঁপড়ে শীতকাল ছাড়া প্রায় সবসময়েই চোখে পড়ে। শুধু মাত্র মিষ্টি খাবারের প্রতি যে এরা আকৃষ্ট হয় এমন নয়ঃআটা, সুজি, রান্না করা খাবার, রুটি ইত্যাদি আঢাকা থাকলেই পিঁপড়ে তাতে ভরে যায়। লাল পিঁপড়ে এমনই বিষাক্ত যে, শরীরের যেখানে কামড়াবে চুলকানি হয়ে সেখানটা লাল হয়ে ফুলে যাবে। জ্বালাও করবে।

পিঁপড়ের হাত থেকে বাঁচতে, রান্নাঘরের শেল্ফ এবং ফ্লোর পরিষ্কার রাখতে হবে। মাটিতে খাদ্যসামগ্রী কিছু পড়ে গেলে তৎক্ষণাৎ মুছে নিতে হবে। খাবার আঢাকা রাখা যাবে না। এছাড়া যেখানে পিঁপড়ে বেশি হচ্ছে সেখানে ক্রেজি লাইন অথবা লক্ষ্নণ রেখা দিয়ে গোলাকৃতি রেখা বানিয়ে রাখলে পিঁপড়ে মরে যাবে। এরা যেখানটায় বাসা বানায়, সেখানে ক্রেজি পাউডার খানিকটা ঢেলে দিন অথবা সিমেন্ট দিয়ে জায়গাটা সিল করে দিন।

মাঝেমধ্যে রান্নাঘরের বাসনপত্র বাইরে বার করে স্প্রে (বেগন অথবা হিট) মেরে রাখুন এবং কিছুক্ষণ সব বন্ধ রেখে তারপর রান্নাঘর পরিষ্কার করে বাসন রাখুন। জলে কেরোসিন তেল মিশিয়ে মাঝেমধ্যেই শেল্ফ এবং ফ্লোর মুছে নেবেন। বোরেক্স পাউডারে হলুদ মিশিয়ে পিঁপড়ে বেরোবার জায়গায় যদি দিয়ে দেওয়া হয়, তাহলেও উপকার পাওয়া যাবে। জানলায় গন্ধক-এর (সালফার) টুকরো রেখে দিলে বাইরে থেকে রান্নাঘরে পিঁপড়ে ঢুকবে না। আটা, চিনি ইত্যাদির কৌটোর পাশেও যদি লক্ষ্মণ-রেখা টেনে দেওয়া হয়, পিঁপড়ে ধারেকাছে আসতে পারবে না।

মশা, মাছির উপদ্রব বাড়িতে রোগের জীবাণু বহন করে আনে। মাছি থেকে কলেরা, ডায়ারিয়া, টাইফয়েড ইত্যাদি রোগ হয় আর মশা বহন করে আনে ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গুর মতো ভয়ংকর রোগের জীবাণু।

এগুলি যাতে বাড়িতে না-হয় তার জন্য কয়েকটি বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত। ঢাকনা বন্ধ ডাস্টবিন ব্যবহার করা, মশা, মাছি যেখানে হচ্ছে সেখানে ডিডিটি ছড়ানো, ঘরবাড়ি ফিনাইল দিয়ে মোছা ইত্যাদি। একটি ছোট্ট পেঁয়াজে লোবানের তেল (বেনজইন) ঢেলে ঘরে ঝুলিয়ে রাখুন মশা পালিয়ে যাবে। এছাড়া বাজারে মশা তাড়াবার কয়েল এবং শিশিবন্দি লিকুইড-ও পাওয়া যায়। নিমপাতা, লোবান, কর্পূর জ্বালালেও মশা, মাছি ঘর থেকে পালিয়ে যাবে।

রান্নাঘরে মশা মাছি তাড়াতে গরম তাওয়ায় এক চামচ কফি পউডার ঢেলে জ্বালিয়ে ধোঁয়া করুন। খাবার টেবিলের ঠিক মধ্যেখানে এক গুচ্ছ টাটকা পুদিনাপাতা রাখলে মাছি আসা বন্ধ হবে। বাড়ির পাপোশ, কার্পেট ইত্যাদি ফিটকিরি এবং ফিনাইলের জল দিয়ে পরিষ্কার করুন। বাড়িতে মশা, মাছি হবে না।

বাড়ির ভিতর স্যাঁতসেঁতে জায়গায় কাঠের আসবাবপত্র যদি বহুদিন রাখা থাকে তাহলে উই লাগার সম্ভাবনা থাকে। জামাকাপড়, কাগজেও উই লাগতে পারে। কাপড় এবং কাগজে নিয়মিত রোদে দেওয়া প্রয়োজন। এছাড়া শুকনো নিমপাতাও রেখে দিতে পারেন। কাঠের আসবাবপত্রে উই লাগলে চুন ছড়িয়ে দিন। বাজারেও উই মারার ওষুধ পাওয়া যায়।

টিকটিকির উপস্থিতিও খুবই বিরক্তিকর সব গৃহস্থের কাছেই। দেয়ালে, ছবির পিছনে, দরজার পাল্লায় হামেশাই টিকটিকির দেখা মেলে। খাবারে পড়ে গেলে, খাবার বিষাক্ত হয়ে যায়। টিকটিকির সমস্যা দূর করতে হলে দেয়াল পরিষ্কার রাখতে হবে। এর উপর কীটনাশক স্প্রে করে ঝাড়ু দিয়ে মেরে বাইরেও ফেলে দিতে পারেন। বাড়িতে যাতে টিকিটিকি না ঢোকে তার জন্যে অনেকে দেয়ালে ময়ূরের পালক লাগিয়ে রাখে।

 

মাকড়সা-র উপদ্রব কমাতে হলে, একটা কাপড়ের টুকরো কেরোসিন তেলে ডুবিয়ে লম্বা লাঠির মুখে লাগিয়ে নিন। লাঠির সাহায্যে তেল লাগানো কাপড়টা সিলিং-এর গায়ে বুলিয়ে দিলে মাকড়সা জ্বাল বানাবে না। একই উপায়ে দরজা, ঘরের কোনা, আলমারির ভিতরেও কোরোসিন তেলে ডোবানো কাপড় বুলিয়ে রাখুন।

বাড়িতে ইঁদুর মারার জন্যে, ইঁদুর মারার ওষুধ অথবা ইঁদুর ধরার খাঁচা ব্যবহার করুন। এছাড়া ন্যাপথলিন বল্সও ব্যবহার করতে পারেন। কাঠের আসবাবে ছারপোকা হলে ফুটন্ত গরমজল ঢালতে হবে। কীটনাশক ওষুধ এবং কেরোসিন তেলও ছড়াতে পারেন। শোবার তোশক পুরোনো হয়ে গেলে ছোটো ছোটো পোকা তাতে বাসা বানায়। তোশকের নীচে গোলমরিচের দানা ফেলে রাখলে পোকা চলে যাবে এবং আপনাকেও বিরক্ত করবে না।

এই টিপ্সগুলি মেনে চললে বাড়িঘর পোকামাকড় থেকে মুক্ত রাখতে পারবেন এবং শরীরকেও রোগমুক্ত করতে পারবেন।

সম্পত্তি বন্ধক নাকি বিক্রয়?

নিজের একটা ভালো বাড়ি থাকবে, একটা গাড়ি থাকবে, ভবিষ্যৎ সুরক্ষার জন্য ব্যাংক-এ মোটা টাকা জমা থাকবে, ছেলেমেয়েদের ভালো স্কুল-এ পড়ানো যাবে এমন স্বপ্ন বা ইচ্ছে থাকে প্রায় প্রতিটি মানুষেরই। কিন্তু, এই স্বপ্ন পূরণ হয় না সকলের। কারণ, টাকার মূল্য যে-ভাবে কমছে, তাতে সংসারের ব্যয়ভার বহন করার পর, খুব বেশি টাকা সঞ্চয় করা সকলের পক্ষে সম্ভব হয় না।

তাছাড়া, কোনওরকমে মোটা টাকা জমিয়ে কিংবা জমানো টাকা নিঃশেষ করে বড়ো বাড়ি কিংবা দামি গাড়ি কিনলেই তো আর সমস্যা মিটল না। বরং ঝামেলা বাড়ল। কারণ, বড়ো বাড়ি মানেই জমা দিতে হবে বেশি টাকা সম্পত্তি কর, দামি গাড়ি মানেই মেন্টেনেন্স খরচও বেশি পড়বে। আর এই বিলাসবহুল জীবনযাপনের বিপুল খরচ মেটাতে গিয়ে অনেকসময় আর্থিক সমস্যায় পড়েন অনেকে এবং ঠিক তখনই সম্পত্তি বন্ধক কিংবা বিক্রির বিষয়টি সামনে এসে দাঁড়ায় দুর্ভাগ্যক্রমে।

এই প্রসঙ্গে প্রথমেই জানিয়ে রাখি, কোনও বিপদ কিংবা প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হলেও, চট করে জমি-বাড়ি বিক্রি না করে, বন্ধক রাখার সিদ্ধান্ত নেবেন। কারণ, আপনি যে দামে জমি-বাড়ি বিক্রি করবেন, সেই দামে আর জমি-বাড়ি কিনতে পারবেন না। তাছাড়া, জমি কিংবা বাড়ি বিক্রির পর আপনার আর্থিক সমস্যা মিটতে নিশ্চয়ই অনেকদিন গড়িয়ে যাবে এবং ওই সময়ের ব্যবধানে জমি-বাড়ির দাম আরও বেড়ে যাবে। অবশ্য যদি একাধিক জমি-বাড়ি থাকে, সেক্ষেত্রে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কিন্তু যদি তা না থাকে, তাহলে বাড়ি বিক্রির পর পুনরায় বাড়ি কেনা পর্যন্ত ভাড়াবাড়িতে আশ্রয় নিতে হবে এবং বাড়ি ভাড়া বাবদ যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে, তা বাড়ি বন্ধক রেখে টাকা নিয়ে সুদ মেটানোর থেকে অনেক বেশি। কিন্তু মুশকিল হল এই যে, বেশিরভাগ মানুষ দেনার দায়ে জমি-বাড়ি হারানোর ভয়ে বন্ধক রাখতে চান না। আসলে এই ভয়ের কারণ হল অজ্ঞতা। সঠিক নিয়মকানুন জেনে বুঝে, সঠিকভাবে চুক্তিপত্রকে মাধ্যম করে জমি-বাড়ি বন্ধর রেখে ঋণ নেন না অনেকে। অতএব, জমি-বাড়ি বিক্রি না করে, বন্ধক রেখে ঋণ নিতে হলে কী কী বিষয় গুরুত্ব সহকারে দেখে নিতে হবে, তা জেনে নিন বিশদে।

প্রাথমিক বিষয়ঃ  আপনার সম্পত্তির ভ্যালু অনুযায়ী আপনি তা বন্ধক রেখে কত টাকা ঋণ হিসাবে পেতে পারেন, সেই বিষয়টি জেনে নিন ঋণদাতা অর্থাৎ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের থেকে। এবার আপনি ঠিক করুন আপনার প্রয়োজনমতো কত টাকা ঋণ নেবেন। ঋণের পরিমাণ নির্ধারণ করার পর জেনে নিন সুদের পরিমাণ কত। কতদিনে আপনি ঋণ শোধ করবেন (অর্থাৎ পাঁচ, দশ কিংবা কুড়ি বছর) তার ওপর সুদের হার নির্ভর করবে। শুধু তাই নয়, ফ্লোটিং এবং ফিক্সড এই দু’ভাবে ঋণ নেওয়া যায়। ফ্লোটিং অর্থাৎ যখন যেমন সুদের হার হবে, তখন তেমন ভাবেই সুদ মেটাতে হবে। এক্ষেত্রে ইএমআই একই থাকবে কিন্তু সুদ বাড়লে ঋণের মেয়াদ বাড়বে এবং কমলে ঋণের মেয়াদ কমবে। আর যদি ফিক্সড রেট-এ ঋণ নেন, তাহলে সুদের পরিমাণ অপরিবর্তিত থাকবে। তবে ফিক্সড রেট অন্তত ৪ থেকে ৫ শতাংশ বেশি থাকে ফ্লোটিং রেট-এর থেকে। অতএব, বুঝে-শুনে বন্ধকি ঋণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিন এবং শর্তাবলি ভালোভাবে পড়ে নিয়ে ঋণের চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করুন। তবে মনে রাখবেন, গৃহঋণ, ব্যক্তিগত ঋণ এবং বন্ধকি ঋণ– প্রতিটি ক্ষেত্রেই কিছু নিয়মকানুন একই থাকে। যেমন, যে রকম ঋণই নিন না কেন, ঋণ গ্রহীতার মাসিক আয় পনেরো হাজার টাকার বেশি হতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে, ইএমআই-এর (মাসিক প্রদেয় অর্থ) থেকে ঋণগ্রহীতার মাসিক আয় যেন দু’গুণের বেশি হয়। আর বাড়ি কিংবা জমি যাই বন্ধক রাখুন না কেন, সম্পত্তির আসল দলিল (ওরিজিনাল ডিড) ঋণদাতা অর্থাৎ ব্যাংক-এ জমা (বন্ধক) রাখতে হবে এবং লোন শোধ করার পর ওই দলিল ফেরত নিতে হবে।

অনেক সময় দেখা যায় যে, লোন নিয়ে জমি-কিংবা বাড়ি কিনেছেন এবং লোন শোধ করার আগেই হয়তো দুর্ভাগ্যবশত টাকার প্রয়োজন হল। এমন পরিস্থিতিতেও বন্ধকি ঋণ নেওয়া যায়। তবে এক্ষেত্রে যে-ব্যাংক আগে ঋণ দিয়েছে, তাদের থেকে লিখিত অনুমতি নিতে হবে। যদি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দেখেন যে, দীর্ঘদিন আপনি ঋণের টাকা ঠিকঠাক শোধ করে চলেছেন, তাহলে আপনাকে ভালো গ্রাহক ধরে নিয়ে পুনরায় বন্ধকি ঋণ নেওয়ার অনুমতি দিতে পারে।

বন্ধকি ঋণ শোধ করার ক্ষেত্রে কিছু সুবিধা নিতে পারেন আর্থিক ক্ষমতা থাকলে। যেমন, যে-পরিমাণ ইএমআই আপনি দেবেন, তা বাদ দিয়ে পাঁচ হাজার, দশ হাজার যখন যেমন সুযোগ পাবেন সেই পরিমাণ টাকা জমা দিয়ে প্রিন্সিপাল অ্যামাউন্ট (সুদ ছাড়া লোনের আসল টাকা) কমিয়ে দিতে পারেন। এতে আপনার ঋণের মেয়াদ কমে যাবে এবং কম সুদ দিতে হবে। আর যদি কোনও কারণে ঋণ শোধ না করতে পারেন, তাহলে বন্ধকি জমি কিংবা বাড়ি নিজে বিক্রি করাই লাভদায়ক। কারণ ঋণদাতা-ব্যাংক যদি ঋণের টাকা না পেয়ে বন্ধকি জমি কিংবা বাড়ি বিক্রি করতে বাধ্য হয়, তাহলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদের প্রাপ্য বকেয়া টাকা পেয়ে যাওয়ার পর আর বেশি মাথা ঘামায় না। এতে ঋণগ্রহীতার ক্ষতি হতে পারে। তাই ঋণগ্রহীতার উচিত, ঋণের টাকা শোধ করতে না পারলে, বন্ধকি সম্পত্তি বিক্রির বন্দোবস্ত করে, ক্রেতার কাছ থেকে অগ্রিম (অ্যাডভান্স) বাবদ কিছু টাকা নিয়ে ঋণ শোধ করে কিংবা ক্রেতার নামে লোন ট্রান্সফার করে সমস্যার সমাধান করতে পারেন।

ওয়ার্কিং মাদার

সমাজ বদলাচ্ছে। মানুষের চিন্তাধারাটাও চিরাচরিত নিয়মের শিকলে আজ আর আবদ্ধ পড়ে নেই। কিছুটা নিজেদের ইচ্ছেতে এবং আংশিক সময়ের প্রেশারে নিজেদের মানসিকতাকে বদলে নেওয়াই বুদ্ধিমানের রাস্তা বলেই বুঝে গিয়েছেন সকলে।

সন্তানের দায়িত্বে মায়ের অবদানের তুলনা চলে না। অতীত বর্তমান উভয়কালেই মা-ই সন্তানের সবথেকে কাছের প্রিয় মানুষ। তাই বহু যুগ থেকেই এই ধারণা মানুষের মনে বদ্ধমূল হয়ে গেছে যে, মা-কেই শিশুর পুরো দায়িত্ব নিতে হবে। সমাজের নিয়মটাই এমন হয়ে গিয়েছিল যে সন্তানের দেখভালের দায়িত্ব পুরোপুরি মা-কেই একা সামলাতে হতো– তা সংসার অথবা বাইরে তার যতই কাজ থাকুক না কেন। এই দায়িত্ব ভাগ করে নিতে সকলেই নারাজ। খুশি মনে মায়েরা একাই এই দায়িত্ব নিজেদের উপর তুলে নিয়েছিল কারণ তখন খুব কম সংখ্যক মহিলাই চাকরি করত। বাড়িতেই তাদের সময় কাটত বেশি।

সময়ের সঙ্গে প্রয়োজন হয়েছে অর্থ উপার্জনের। শিক্ষার প্রসারতা বেড়েছে। মেয়েরাও শিক্ষিত হয়ে উঠেছে এবং প্রয়োজনের তাগিদে আজ স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই চাকরি-র পথ বেছে নিতে হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে সন্তানের প্রতি দায়িত্ব কি কিছু কম হয়েছে? কখনওই না। পরিবর্তন যেটার হয়েছে, সেটা জীবনকে পরখ করার দৃষ্টিভঙ্গীর। লাভের লাভ হয়েছে চাকুরিরতা মায়েরা সন্তানের দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়ার নতুন উপায়, অবলম্বন খুঁজে পেয়েছে। স্বামীরা চেষ্টা করছেন স্ত্রীয়ের ব্যস্ত জীবনে অল্পবিস্তর হলেও রিলিফ এনে দেওয়ার। বাচ্চার দায়িত্ব স্ত্রীয়ের সঙ্গে শেয়ার করছেন স্বামীরা। সমাজও এখন অনেক বেশি তৎপর। ক্রেশ, ডে-বোর্ডিং স্কুল তৈরি হয়েছে, যেখানে বাচ্চাদের সারাদিন দেখাশোনা করা হয়। বাচ্চার অভিভাবকেরা দুজনেই চাকুরিরত হলে, এ এক অনন্য বিকল্প।

ক্রেশঃ  বেশ কিছু বছর হল ভারতেও ক্রেশ-এর কনসেপ্ট শুরু হয়েছে। যেখানে মা-বাবা দুজনেই চাকরি করতে বেরোন, সেখানে বাচ্চার একা থাকাটা একটা সমস্যা। সুতরাং মায়েরা ক্রেশে নিজের বাচ্চাকে নির্দ্বিধায় রেখে যেতে পারেন কারণ ক্রেশে বাচ্চাদের সারাদিনের দেখাশোনা করার সুব্যবস্থা থাকে। অর্থের বিনিময়ে এই পরিষেবা দেওয়া হয়। সংখ্যায় কম হলেও বর্তমানে এদেশে সরকারি ও বেসরকারি কিছু অফিসে নিজস্ব ক্রেশ আছে। এখানকার কর্মরতা মহিলারা নিজেদের সন্তানকে সারাদিন সেখানে রেখে কাজ করার সুবিধা পায়। আবার আসার সময় সন্তানকে সঙ্গে করে বাড়ি নিয়ে চলে আসে। এর বদলে অফিস সামান্য পরিমাণ অর্থ চার্জ করে।

অফিস ছাড়াও বহু পাড়াতেও প্রাইভেট ক্রেশ আজকাল পাওয়া যায়। সাধারণত ক্রেশগুলিতে ২ মাস বয়স থেকেই বাচ্চাদের দেখাশোনা করার ব্যবস্থা থাকে। সদ্য মায়েরা অফিসে ৩-৪ মাসের বেশি ছুটি পান না সুতরাং তারপর থেকেই তাদের ক্রেশের খোঁজ করা শুরু করে দিতে হয়।

এখন ওয়ার্কিং মাদারের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা দেখে ক্রেশ খোলাটা একটা কেরিয়ার অপশনে দাঁড়িয়ে গেছে। প্রতিটি বড়ো শহরে, এমনকী মফস্সলেও ক্রেশের রমরমা এখন লক্ষণীয়।

ডে-বোর্ডিং স্কুলঃ  ক্রেশের অনেক পরে ডে-বোর্ডিং স্কুলের কনসেপ্ট এসেছে। ডে-বোর্ডিং-এ ৩ বছরের বেশি বয়সের বাচ্চাদের নেওয়া হয়ে থাকে।

বোর্ডিং স্কুলের সুবিধা হল, ক্রেশে যেখানে বাচ্চাদের খালি দেখাশোনাই করা হয়, বোর্ডিং স্কুলে দেখাশোনার সঙ্গে সঙ্গে পড়াশোনাও করানো হয় এবং ডিসিপ্লিন-ও শেখানো হয়। খেলাধুলো, গঠনমূলক কাজও তাদের শেখানো হয়। অনেক সময় বোর্ডিং স্কুলে যা-যা শেখানো হয়, স্কুলে ভর্তি হতে গেলে সেগুলি থেকে প্রচুর সাহায্যও পাওয়া যায়। অনেক জায়গায় বড়ো স্কুলগুলোর সঙ্গেই

ডে-বোর্ডিং ফেসিলিটি দেওয়া হয়। স্কুলে পড়াশোনার পর ছুটি হয়ে গেলে বোর্ডিং-এ ব্যবস্থা থাকে খাওয়াদাওয়া, বিশ্রামের। তারপর স্কুলের সমস্ত হোমওয়ার্ক, পড়াশোনা ওখানেই করিয়ে দেওয়া হয়, যাতে বাচ্চাদের বাড়ি এসে আর কিছু পড়াশোনা করতে না হয়। অফিস ছুটি হলে বাবা-মার সঙ্গেই বাচ্চা বাড়ি চলে আসতে পারে অথবা বোর্ডিং স্কুল থেকেই তাদের নিজস্ব কনভেয়ন্স-এ বাচ্চাদের বাড়ি পাঠাবার ব্যবস্থা থাকে। এক্ষেত্রে বাড়িতে বাচ্চাকে পড়াশোনা করাবার দায়িত্ব থেকেও মা মুক্ত হতে পারেন। ডে-বোর্ডিং-এ রাখতে হলে আর্থিক সঙ্গতি থাকা প্রয়োজন কারণ অর্থের পরিমাণ ডে-বোর্ডিং-এর ক্ষেত্রে একটু বেশি।

আপনজনের দায়িত্বে বাচ্চাকে রাখাঃ  সময়ের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে, পরিবার-পরিজনও এগিয়ে আসছেন চাকুরিরতা মায়েদের সমস্যা হ্রাস করার জন্যে। মেয়েদের বাপের বাড়ি, শ্বশুরবাড়ি দু’পক্ষই এখন অনেক বেশি সচেতন, যাতে বাড়ির মেয়ে, বাড়ির বউ নিশ্চিন্তে কর্মস্থানের কর্তব্য পালন করতে পারে। বাড়ি, সন্তান নিয়ে অযথা তাকে দুশ্চিন্তা না করতে হয়। শাশুড়ি, শ্বশুর এখন অনেক মডার্ন, তারা তৎপর নাতি-নাতনিকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য। তাদের মনোভাব ছেলের বউয়ের প্রতি অনেক উদার হয়েছে। বউমা অফিস বেরিয়ে গেলে বাচ্চারা ঠিকমতো খেলো কিনা, স্কুলের সময় হলে স্কুলবাস না এলে স্কুল অবধি এগিয়ে দিয়ে আসা, নিয়ে আসা, জলখাবার খাইয়ে অল্প বিশ্রামের পর পড়তে বসানো এসব দায়িত্ব এখন অনেক

ঠাকুমা-ঠাকুরদাই পালন করছেন। বাপের বাড়ি কাছাকাছি হলে মেয়ের মায়েরা এসেও বাচ্চার সারাদিনের দেখাশোনা করছেন। চাকুরিরতা মায়েরাও সম্পূর্ণ নিশ্চিন্ত থেকে বাইরের কাজে মন দিতে পারছেন কারণ বাড়ির আপনজনের কাছেই বাচ্চারা সুরক্ষিত রয়েছে।

সুতরাং ক্রেশ, ডে-বোর্ডিং স্কুল এবং নিজের বাড়ির সদস্যরা এখন ওয়ার্কিং মাদারদের সাহায্যে এগিয়ে আসছে। কিন্তু প্রথম দুটো জায়গায় বাচ্চাকে রাখতে হলে নিজেকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত করতে হবে এবং বাচ্চাকেও বোঝাতে হবে যে নিজেদের থেকে দূরে রাখা মানে তাকে একলা ছেড়ে দেওয়া, এমন নয়। বাচ্চা যদি একবার ভেবে নেয় মা-বাবা তাকে ভালোবাসে না বলেই ক্রেশ বা বোর্ডিং-এ দিয়েছে তাহলে সমস্যা কমার বদলে বাচ্চার পক্ষে এই ভাবনা ক্ষতিকারক হয়ে দাঁড়াবে।

সাবধানতা অবলম্বন করতে হবেঃ

  •   বাচ্চাকে দেওয়ার আগে ক্রেশের খোঁজখবর নিন। সেখানে গিয়ে বাচ্চা সুস্থ ও সুরক্ষিত থাকবে নিশ্চিত হলে তবেই ক্রেশে দিন।
  •   ক্রেশের মালিকের মোবাইল নম্বর নিয়ে রাখুন এবং নিজের নম্বর তাকে দিন। ক্রেশে যে মহিলা কাজ করেন তিনি কেমন খোঁজখবর নিন।
  •   বাচ্চার কোনও অসুস্থতা থাকলে ক্রেশের সঞ্চালক-কে আগে থেকেই জানিয়ে রাখুন।
  •   ঠিক সময় বাচ্চাকে ক্রেশে ছাড়ুন। চেষ্টা করুন যতটা কম সময় বাচ্চাকে ক্রেশে রাখা যেতে পারে। বাচ্চার পছন্দের খাবার তার সঙ্গে দিয়ে দিন।
  •  সারাদিনে ফোনে অন্তত কয়েকবার বাচ্চার খবরাখবর করুন। বোর্ডিং স্কুলও দেখেশুনে বাছুন।
  • ক্রেশে বাচ্চাকে রাখতে বাধ্য হলেও, নিজের কাছে বাচ্চাকে যতক্ষণ রাখবেন মাতৃস্নেহে ভরিয়ে তুলুন যাতে আপনাকে না-পাওয়ার কষ্ট তার মনে না-থাকে।
  • অসুস্থ অবস্থায় বাচ্চাকে ক্রেশে পাঠাবেন না।
  • ক্রেশে আপনার বাচ্চার ঠিকমতো দেখাশোনা হচ্ছে কিনা চেক করতে মাঝেমধ্যে ক্রেশে যান।

করোনা-আবহে স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট জরুরি

এই করোনা-আবহেও কেরিয়ারের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী রাখার প্রয়াস জারি রাখতেই হবে আপনাকে। তাই, রক্তচাপও বাড়তে পারে। বসের রক্তচক্ষু, দুঃস্বপ্নের মতো তাড়া করবে নিরন্তর। মুসিক দৌড়ে ‘এ’, ‘ও’, ‘সে’– সবার মতো শামিল হবেন আপনিও। এই প্রতিযোগিতার যুগোপযোগী না হয়ে উঠতে পারলে, আপনাকে খেসারত গুনতে হবে। আবার, এখেলায় পা দিলে মাসুল দিতে হবে তারও। স্ট্রেসের কারণে আপনার শরীরে বাসা বাঁধবে রোগ, মাথায় চাপবে পিছিয়ে পড়ার ভয়, কপালে পড়বে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। এছাড়াও শরীরে জমবে কোলেস্টেরলের স্তর, রক্তে বাড়বে শর্করা, হৃদয়ে রক্তস্রোত। কখনও কখনও ভুলে যেতে পারেন প্রিয়জনের মুখ, নাম কিংবা অবশ্যকরণীয় কোনও কাজ। আপনার প্রফেশনাল মুভ আপনাকে সাফল্যের শিখরে নিয়ে যেতে যেতে, প্রতিবর্ত ক্রিয়াস্বরূপ দিয়ে যাবে নানা অসুখ। সুখের ঠিকানা অধরাই থেকে যাবে হয়তো। তাই শুরু থেকেই খুঁজে নিতে হবে স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টের পথ। না হলে ফল হতে পারে মারাত্মক।

কী করে বুঝবেন আপনি স্ট্রেস্ড?

সুস্পষ্ট লক্ষণ

স্মৃতি বিভ্রম, মনঃসংযোগে সমস্যা, বিবেচনা ক্ষমতা লোপ পাওয়া, নেতিবাচক মনোভাব, উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তার প্রাবল্য, নিরন্তর উৎকণ্ঠা।

শারীরিক লক্ষণ

ব্যথা-বেদনার অনুভূতি, ডায়ারিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য, নসিয়া ও মাথাঘোরা, বুকে ব্যথা, হৃদপিণ্ডের দ্রুতগতি, যৌনতা বিমুখতা, বারবার ঠাণ্ডা লাগা প্রভৃতি।

আবেগজনিত লক্ষণ

মুডের তারতম্য, চট করে রেগে যাওয়া, বিরক্ত হওয়া, খিটখিটে স্বভাব, আবেগের আতিশয্য, একাকীত্ববোধ ও বিচ্ছিন্নতাবোধ, ডিপ্রেশন ও আনন্দের অভাব।

আচরণগত লক্ষণ

অতিরিক্ত বা স্বল্প আহার, অতিরিক্ত ঘুমোনো বা ঘুম কম হওয়া, সকলের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া, দায়িত্ব থেকে পশ্চাদপসরণ, মদ-সিগারেট-ড্রাগ্স-এর শরণাপন্ন হওয়া, স্নায়ুর দুর্বলতাজনিত আচরণ, যেমন- নখ খাওয়া, হাঁপানো প্রভৃতি।

কীভাবে করবেন স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট ?

  • জীবনের কোনও পর্যায়ে হঠাৎই অনুভব করতে পারেন আপনি অসম্ভব ক্লান্ত। ভীষণ টেনশনের মুহূর্ত, হয়তো সবচেয়ে তৎপর হয়ে কাজ করার সময় সেটা– অথচ আপনার মস্তিষ্ক, হাত, পা কিছুই যেন ঠিক সায় দিচ্ছে না পরিস্থিতি মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে। এই সংকটময় সময়টাই হল বুঝে নেওয়ার যে, আপনি কমপ্লিটলি স্ট্রেস্ড-আউট। এরকম সিচুয়েশন যাতে তৈরিই না হয় তার জন্য নীচের পয়েন্টগুলি মাথায় রাখুন।

ইংরেজি বর্ণমালার নিরিখে চারটে ‘এ’ মেনে চলুন।

অ্যাভয়েড, অল্টার, অ্যাডাপ্ট এবং অ্যাকসেপ্ট।

  • অ্যাভয়েডঃ  সেই সব মানুষজন বা পরিস্থিতি এড়িয়ে চলুন যারা বা যা আপনাকে অযথা স্নায়ুর চাপের শিকার হতে বাধ্য করে।
  • অল্টারঃ  যদি একান্তই স্ট্রেসফুল সিচুয়েশন-এ এসে পড়েন, চেষ্টা করুন আপনার বুদ্ধি বিবেচনার সাহায্যে পরিস্থিতি অনুকূলে আনতে। প্রায়োরিটি সেট করে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রবলেম সল্ভ করা শুরু করুন। দরকার হলে বিশ্বস্ত কারও কাছে সমস্যা শেয়ার করুন! নিজের আবেগকে রুদ্ধ করে না রেখে, বলে হালকা হোন। একান্তই যদি সমস্যা হাতের বাইরে চলে গেছে মনে হয়, কিছুটা কমপ্রোমাইজ করুন। কিছু কিছু আপোস, কূটনৈতিক পদক্ষেপ হিসাবেও দেখা যেতে পারে।
  • অ্যাডাপ্টঃ  যে-ব্যক্তির দ্বারা স্ট্রেস তৈরি হচ্ছে, তাকে বদলানো যখন আপনার পক্ষে সম্ভবপর নয়, তখন নিজেকে বদলান। জীবনের সদর্থক দিকগুলি বিবেচনা করুন। আপনার কাজটা যতই কেন-না আপনার টেনশনের কারণ হয়ে থাকুক, চেষ্টা করুন সেটির ভালো দিকগুলি খুঁজে দেখতে। কাজটা এনজয় করতে শিখুন।
  • অ্যাকসেপ্টঃ  যে-জিনিসগুলি আপনি পরিবর্তন করতে পারছেন না, সেগুলিকে অ্যাকসেপ্ট করে নেওয়াই বুদ্ধিমত্তার প্রকাশ। বিদগ্ধজনেরা বলেন ‘ইভন দ্য মোস্ট স্ট্রেসফুল সারকামস্ট্যান্স ক্যান বি অ্যান অপারচুনিটি ফর লার্নিং অর পার্সোনাল গ্রোথ’। সুতরাং যে-কোনও প্রতিকূল পরিস্থিতিকেই ব্যবহার করুন নতুন কিছু শেখার সুযোগ হিসাবে।

এছাড়া আরও কিছু নিয়ম মেনে চললে তবেই স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট সম্পূর্ণ হবে। যেমন—

রিল্যাক্সঃ  কিছুটা সময় অবশ্যই রাখুন নিজের রিল্যাক্সেশন-এর জন্য। মেডিটেশন, যোগব্যায়াম, ডিপ ব্রিদিং প্রভৃতি নিয়মিত করুন, ভেতর থেকে রিল্যাক্সড্ হবার জন্য।

এক্সারসাইজঃ  প্রতিদিন ব্যায়াম করুন, কারণ ব্যায়াম স্ট্রেস কমাতে প্রভূত সাহায্য করে। স্ট্রেস কমাতে অ্যারোবিক এক্সারসাইজ-এর কোনও বিকল্প নেই।

হেলদি ডায়েটঃ  পুষ্টিকর খাদ্য আপনাকে স্ট্রেস-এর সঙ্গে লড়ার শক্তি দেবে। তাই দিনের শুরুটা করুন হেলদি ব্রেকফাস্ট দিয়ে। ক্যাফিন ও সুগার ইনটেক কমান। অ্যালকোহল ও নিকোটিনের প্রভাবমুক্ত হয়ে মদ্যপান ও সিগারেট সেবনে নিয়ন্ত্রণ আনুন।

পর্যাপ্ত ঘুমঃ  শরীরের শ্রান্তি এবং স্নায়ুর চাপ কমাতে পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন। রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমোনো অভ্যাস করুন। ঘুমের আগে কোনও দুশ্চিন্তাকে মাথায় আশ্রয় দেবেন না। হালকা মিউজিক চালিয়ে সম্পূর্ণ রিল্যাক্সড হয়ে ঘুমোতে যান।

——-

মডেলঃ গার্গী কুণ্ডু।

 

১৫টি স্মার্ট কিচেন ম্যানেজমেন্ট টিপ্স

বাড়িতে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ জায়গার কথা মনে হলেই রান্নাঘরের কথাটাই আগে মনে হয়। শরীর কর্মক্ষম রাখতে হলে খাবারের প্রয়োজন। নোংরা অপরিচ্ছন্ন জায়গায় যদি রান্না করতে হয়, তাহলে তা অস্বাস্থ্যকর তো বটেই।

আজকাল মহিলা এবং পুরুষ উভয়েই নিজেদের কর্মজগৎ নিয়ে ব্যস্ত। বাড়িতে তেমনভাবে সময় কেউ দিতে পারেন না। অথচ চাহিদা কিন্তু থেকেই যায়। অফিসেও যেরকম আপনার ‘বেস্ট’-টা আপনার কাছে আশা করা হয়, সেরকম বাড়িতেও কিন্তু মুখে না বললেও আপনার কর্মকুশলতার প্রদর্শনেই সকলে খুশি থাকে।

বিশেষ করে কর্মরতা মেয়েরাই মুশকিলে পড়েন বেশি, কারণ অফিসের দায়িত্ব সামলে বাড়ির দায়িত্বও কাঁধে তুলে নিতে হয়। সমস্যা হয় সেখানেই। এই পরিস্থিতিতে যদি রান্নাঘর সামলাবার কয়েকটা টিপ্স জেনে নেওয়া যায়, তাহলে মন্দ হয় না। নিঃসন্দেহে সমস্যার সমাধান হবে।

পরম্পরাগত অথবা মডিউলার কিচেন, যাই হোক না কেন, রান্নাঘর পরিষ্কার এবং ব্যবহারযোগ্য রাখতে হবে।

বিভিন্ন কৌটোতে জিনিস গুছিয়ে রাখুন। যে-কৌটোতে যে-জিনিস থাকে এবং যে-জায়গায় রাখা থাকে, প্রতিবারই সেই একই নিয়ম মেনে চলুন।

কৌটো বা বোতল, যাই ব্যবহার করুন না কেন, ব্যবহারের পরেই পরিষ্কার করে তবেই জায়গায় রাখুন। কালকের জন্যে ফেলে রাখবেন না, তাহলেই একসঙ্গে পরিষ্কার করতে হলেই করার ইচ্ছে থাকবে না।

কিচেন পরিষ্কার রাখার জন্যে কাগজের কিচেন ন্যাপকিন ব্যবহার করতে পারেন। কাপড়ের ন্যাপকিন ধুয়ে শুকোবার ঝামেলা থেকে মুক্তি।

রান্নাঘারের যা-যা জিনিস ফুরোল, সেগুলো একটা নোটবুকে লিখে লিস্ট তৈরি করুন তৎক্ষণাৎ। মনে রাখার ঝামেলা থাকবে না এবং দোকানে গেলে লিস্ট মিলিয়ে কিনতেও সুবিধা হবে।

ডাল, মশলা, রান্নাঘরের এমন আরও জিনিস কৌটোতে ঢেলে রাখার পরেও অনেক সময় প্যাকেটে কিছুটা বেঁচে থাকে। ঢেলে রাখার পরে আলাদা আলাদা প্যাকেটের মুখ ভালো করে বেঁধে আলাদা একটি দেরাজে গুছিয়ে তুলে রাখুন। দরকার পড়লে সহজেই বার নিতে যাতে অসুবিধা না হয়।

প্রয়োজন অনুসারে রান্নাঘরে জিনিস রাখুন। রান্নাঘরকে স্টোররুম করে তুলবেন না।

ছুটির দিনে সারা সপ্তাহের বাজার করে ফ্রিজে গুছিয়ে তুলে রাখুন। সময় থাকলে, কিছু সবজির খোসা ছাড়িয়ে একদম কেটে জিপব্যাগে ভরে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন।

ফ্রোজেন স্ন্যাক্স আজকাল বাজারে খুব সহজেই পাওয়া যায়। বাড়িতে অতিথিদের জন্যে কিছু প্যাকেট কিনে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। অল্প সময়ে সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করতে পারবেন।

সকালের জলখাবার এবং লাঞ্চ, ডিনারে কী রান্না হবে তা আগের রাতেই ঠিক করে রাখুন। প্রয়োজনমতো জিনিস আছে কিনা তাও চেক করে নিন আগের রাতেই।

রোজের রান্নায় পেঁয়াজ, আদা, রসুনের ব্যবহার করার দরকার পড়েই। রোজ এগুলো বাটার ঝঞ্ঝাটের হাত থেকে রেহাই পেতে, এগুলোর পিউরি বানিয়ে রাখলে অনেক সুবিধা হবে। ২৫০ গ্রাম রসুনের সঙ্গে ১০০ গ্রাম আদা এবং ১/৪ কাপ ভিনিগার মিশিয়ে পিউরি বানিয়ে নিন। টম্যাটো পিউরির জন্যে ১ কিলো টম্যাটো, ২টি বড়ো পেঁয়াজ, ১০ কোয়া রসুন, কয়েকটি লবঙ্গ এবং এলাচ ও ১ টুকরো দারচিনি প্রেশারে দিয়ে সেদ্ধ করে নিন। একসঙ্গে সব মিক্সি করে এয়ারটাইট কৌটোয় ভরে ফ্রিজে তুলে রাখুন। গ্রেভি অথবা শুকনো তরকারি বানাতে এবং তা সুস্বাদু করে তুলতে এর থেকে সুবিধা আর কিছুতে হতে পারে না। রান্নার জন্যে সময়ও খুব অল্প লাগবে।

রান্নাঘরের কাজ তাড়াতাড়ি শেষ করতে হলে রান্নাঘরকে হাইটেক বানান। আজকাল বাজারে রান্নাঘরের জন্য অনেক আধুনিক বৈদ্যুতিক উপকরণ কিনতে পাওয়া যায়। এইসব ব্যবহার করতে পারলে রান্নার সময়ও কম লাগবে এবং নানা ধরনের রান্না করে খ্যাতিও অর্জন করতে পারবেন। তবে সাবধানে যত্ন নিয়ে এগুলো ব্যবহার করতে হবে। ব্যবহারের পর ভালো করে পরিষ্কার করে তুলে রাখতে হবে।

বাড়িতে যদি আভেন, মাইক্রোওয়েভ, ফুড প্রসেসর, রাইস কুকার, ইন্ডাক্শন, মিক্সি ইত্যাদি না থাকে, তাহলে ধীরে ধীরে অল্প অল্প টাকা জমিয়ে তা কিনে নেওয়া উচিত। শাড়ি গয়না ইত্যাদির থেকেও এই জিনিসগুলি অনেক বেশি প্রয়োজনীয়।

রান্নাঘর পরিষ্কার করেই তবে অফিস যান। অফিস থেকে ফিরে পরিষ্কার রান্নাঘর আপনাকে অভ্যর্থনা জানাবে।

রান্নাঘরে পোকামাকড় রোধ করার জন্য তিন মাস অন্তর পেস্ট-কন্ট্রোল করান। আজকাল হার্বাল পেস্ট কন্ট্রোলও শুরু হয়েছে।

বর্ষায় ফার্নিচারের যত্ন

প্রাকৃতিক নিয়মেই বর্ষাকালে কাঠের আসবাবপত্র ময়েশ্চার অ্যাবজর্ব করতে শুরু করে। ফলে দরজা জানালা থেকে শুরু করে কাঠের আসবাবপত্রের স্ট্রাকচারে খানিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় অর্থাৎ এই সময় কাঠ বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। শুধু তাই নয়, ফাংগাসের সমস্যাও পিছু ছাড়ে না। তাই বর্ষায় ফার্নিচার সুরক্ষিত রাখতে হলে দরকার অতিরিক্ত যত্নের।

সরল উপায়ঃ

এই সমস্যা থেকে বাঁচতে হলে বর্ষার প্রাক্বালে-ই কোনও বিশেষজ্ঞকে দিয়ে ঘরের ফার্নিচার দেখিয়ে নিতে পারেন এবং বারবার হওয়া সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা সর্বদাই বলে থাকেন, যে-কোনও আসবাব বানানোর আগে কাঠকে সিজন করে নেওয়া জরুরি। ওয়াটারপ্রুফ প্লাইউড দিয়েও ফার্নিচার বানাতে পারেন, তবে ফার্নিচার জোড়ার আঠাও হতে হবে যথোপযুক্ত, যাতে বর্ষাকালে কোনওরকম ভাবে প্রভাব না পড়ে আসবাবপত্রে।

বর্ষা চলাকালীন আসবাবপত্রের সুরক্ষার জন্য কিছু সহজ আর ব্যবহারিক উপায় নীচে দেওয়া হল–

  •  কোনও অবস্থাতেই কাঠের ফার্নিচার জানালার পাশে রাখবেন না
  • অবিরাম বৃষ্টির ফলে ফার্নিচারের জোড়া অংশ খুলে যেতে পারে। সেই কারণেই সংযুক্ত জায়গাটিতে সর্বদা ওয়াটারপ্রুফ অ্যাডহেসিভ-ই ব্যবহার করুন
  • সোফা বা চেয়ার পরিষ্কার করতে হলে ভিজে কাপড়ের প্রয়োগ করবেন না। বরং নরম আর শুকনো কাপড় কাজে লাগান
  • ওয়ার্ডরোব বা আলমারি যাই হোক না কেন, দেয়াল থেকে এক ইঞ্চি হলেও দূরে রাখুন। এই সময় আলমারির ভিতরে ন্যাপথলিন রাখতে ভুলবেন না। প্রয়োজনে নিমপাতাও রাখতে পারেন। এতে পোকামাকড়ের উপদ্রব কমবে
  • বর্ষায় কাঠের দরজা জ্যাম হয়ে যায়। সহজে দরজা খোলা বন্ধ করতে হলে দরজায় পিতলের হাতল লাগানোটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে
  • যদি উডেন ফ্লোর হয়, সেক্ষেত্রে এই সময় ভালো করে পলিশ করিয়ে নেওয়া উচিত
  • বৃষ্টি থামলেই দরজা-জানালা খুলে দিন
  • আপনার বাড়ির গ্যাজেটের মধ্যে সিলিকনের প্যাকেট রাখুন। সিলিকন আর্দ্রতা টেনে নেয়

এছাড়াও আরও কয়েকটি বিষয়ের উপর খেয়াল রাখুন–

  •  বর্ষায় কলিন ব্যবহার করবেন না
  •  ফাংগাসের কারণে অ্যালার্জিক রি-অ্যাকশন হওয়ার সম্ভাবনা অতিমাত্রায় থাকে, যার মধ্যে অ্যাজমা, কাশি, শ্বাস সম্পর্কিত বিভিন্ন রোগ অন্যতম। জল আর ডিটারজেন্ট-এর সহায়তায় অবিলম্বে কালো ফাংগাস রগড়ে তুলে ফেলুন
  • আর্দ্রতার কারণে এই সময়ে ফার্নিচারে উইপোকা হওয়ার সম্ভাবনাও থেকে যায়। এই কারণেই অ্যান্টি টার্মাইট সলুউশন প্রয়োগ করুন বা পেস্ট কন্ট্রোলের বিশেষজ্ঞকে খবর দিন।
পড়ার জন্য সীমাহীন গল্প-নিবন্ধসাবস্ক্রাইব