অনিয়মিত মলত্যাগ, শক্ত মল ও পেট ফাঁপার মতো সমস্যার ক্ষেত্রে চিকিৎসা নিতে উৎসাহিত করার জন্য প্রতি বছর ডিসেম্বর-এ ‘ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর ফাংশনাল গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ডিসঅর্ডারস’ (IFFGD) সংস্থার নেতৃত্বে ‘ইন্টারন্যাশনাল কনস্টিপেশন অ্যাওয়ারনেস মান্থ’ পালিত হয়। কিন্তু এখনও কোষ্ঠকাঠিন্যের বিষয়ে সম্পূর্ণ এবং সঠিক ধারণা নেই অনেকের। তাই এই বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন ফর্টিস হাসপাতাল-এর রোবোটিক্স এবং জিআই সার্জন এবং বিভাগীয় পরিচালক ডা. উদীপ্ত রায়।
প্রথমেই মনে রাখবেন, কোষ্ঠকাঠিন্য একটি সাধারণ গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা। সাধারণ ভাবে সপ্তাহে তিনবারের কম মলত্যাগ হওয়া, অতিরিক্ত চাপ দিয়ে মলত্যাগ, শক্ত মল কিংবা মলত্যাগের পরও অসম্পূর্ণতার অনুভূতিকে কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়। বিশ্বব্যাপী প্রায় ৯–২০ শতাংশ মানুষ এই সমস্যায় ভোগেন এবং এটি নারীদের ও বয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। তা সত্ত্বেও, কোষ্ঠকাঠিন্যকে প্রায়ই একটি রোগ হিসেবে ধরা হয়, অথচ এটি আসলে জীবনশৈলী কিংবা অন্তর্নিহিত কোনও শারীরিক সমস্যার লক্ষণ।
ভারতে অনেকেরই মনে হয়, প্রতিদিন সকালে পেট পরিষ্কার না হলে শারীরিক ও মানসিক অস্বস্তি থাকে। অন্যদিকে, ঠান্ডার দেশের মানুষদের ক্ষেত্রে দুই–তিন দিন অন্তর মলত্যাগ স্বাভাবিক বলে ধরা হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে, কোষ্ঠকাঠিন্য শুধু কতবার মলত্যাগ হচ্ছে সেই বিষয় নয়, বরং মলত্যাগের সময় কষ্ট ও অসুবিধার ভিত্তিতেই নির্ধারিত হয়।

কোষ্ঠকাঠিন্যের পেছনে একাধিক কারণ কাজ করে। বংশগত প্রভাবও গুরুত্বপূর্ণ। একই পরিবারের একাধিক সদস্যের মধ্যে এই সমস্যা দেখা যায়। আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে, অন্ত্রে স্নায়ু ও নিউরোট্রান্সমিটারের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক রয়েছে এবং সামান্য ভারসাম্যহীনতাও অন্ত্রের কার্যকারীতাকে প্রভাবিত করতে পারে। তবে সবচেয়ে সাধারণ কারণ হল--- জীবনযাত্রার ধরণ। শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা, দীর্ঘ সময় বসে থাকা এবং চলাফেরার অভাব, বিশেষকরে বয়স্কদের ক্ষেত্রে অন্ত্রের স্বাভাবিক সংকোচনকে ধীর করে দেয়। চিকিৎসকদের ভাষায়, শরীর নিষ্ক্রিয় হলে অন্ত্রও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে।
খাদ্যাভ্যাস মলত্যাগে বড়ো ভূমিকা রাখে। পরিশোধিত ও রেডি-টু-ইট খাবার খাওয়ার অভ্যাস এবং শাকসবজি ও ফল কম খাওয়ার ফলে ফাইবার-এর ঘাটতি হয়, যা অন্ত্রের কার্যকারিতায় বিঘ্ন ঘটায়। এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত জলপান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ ভাবে প্রতিদিন শরীরের প্রতি ২০ কেজি ওজনের জন্য ১ লিটার জল প্রয়োজন, যদিও আবহাওয়া ও অন্যান্য শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে এই পরিমাণ কমবেশি হতে পারে। ঘুমের অনিয়ম, নাইট শিফট ও অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম শরীরের স্বাভাবিক পরিপাক ছন্দকে ব্যাহত করে।





