মাস ছয়েক হল সাতপাকে বাঁধা পড়েছে অরিত্রি। সবে সবে এমএ কমপ্লিট করেছে, তারপরেই সম্বন্ধ করে বিয়ে। বরানগরের সাহা বাড়ির জ্যেষ্ঠ পুত্র ঋদ্ধির সঙ্গে। অফিস কলিগের ছেলের বিয়েতে গিয়েই ঋদ্ধির বাবা-মায়ের চোখে পড়ে যায় অরিত্রি। পড়বে না-ই বা কেন, ফরসা, টিকোলো নাক, টানাটানা চোখ, যাকে বলে একেবারে প্রকৃত সুন্দরী। ব্যস তারপরেই পাকাদেখা, আর চারহাত এক করা।
অরিত্রির নতুন পরিবার বলতে ঋদ্ধি, শ্বশুর-শাশুড়ি আর সমবয়সি এক দেওর। ভীষণ ফিচেল। হবি বলতে সময় পেলেই শার্লক হোমস্-এর বই নিয়ে বসে পড়া। কেমন যেন সন্দেহপ্রবণ। সবেতেই নাকি রহস্যের গন্ধ পায় সে। আর একজন বিবাহিত ননদ। সাংসারিক কিছু সমস্যার জন্য ইদানীং বাপের বাড়িতেই থাকছে। তবে ভীষণ মিষ্টি স্বভাবের। যাই হোক অরিত্রি এগুলো বেশ এনজয়ই করে। এযুগের মেয়ে হলেও নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি অরিত্রির একেবারেই পছন্দের নয়। বরং বরাবরই সংযুক্ত পরিবারের প্রতিই তার ঝোঁক বেশি। সে তার পছন্দ মতোই পরিবার পেয়েছে বটে। সারাদিন কাজ বলতে শাশুড়ির হাতেহাতে টুকটাক কিছু। আরও একটি ব্যাপারে অরিত্রি বেশ প্রাচীনপন্থী। এই ফেসবুক, টুইটারের যুগেও সে পত্রমিতালিতেই আস্থাশীল।
সেদিনও বেলা এগারোটা নাগাদ শাশুড়ি আর দেওরের সঙ্গে বসার ঘরে গল্প করছিল অরিত্রি। শ্বশুর ধৃতিমান আর স্বামী ঋদ্ধি তখন অফিসে। সেই সময় কলিংবেলটা বেজে উঠল। সোহম-ই দরজা খোলার জন্য উঠে গেল। খানিক পরে একটা গোলাপিরঙা খাম নাকে দিয়ে শুঁকতে শুঁকতে ঘরে ঢুকল। খামটা অরিত্রির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, ‘এই নাও বউমণি তোমার চিঠি।’ ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি।
মুহুর্তেই অরিত্রির মুখচোখের রঙই বদলে গেল। একপ্রকার লাফিয়ে উঠেই সোহমের হাত থেকে চিঠিটা ছিনিয়ে নিল সে। নিজের ঘরের দিকে যাবার উপক্রম করতেই শাশুড়ি বিমলাদেবী প্রশ্ন করে বসলেন, ‘কার চিঠি বউমা?’
‘আমার বন্ধুর’ কোনওমতে জবাব দিয়েই নিজের ঘরের দিকে চলে গেল অরিত্রি।
বউমণির হাবভাব দেখে অবাক হয়ে গেল সোহম। এমনিতে তো অষ্টমঙ্গলার দিন-দুয়েক পর থেকেই চিঠি আসা শুরু হয়েছে। তবে সোহমের মারফত এই প্রথম। মনে মনে ভাবতে থাকল, এমন কার চিঠি যে হাতে পাওয়া মাত্রই বউমণির মুখে এক অদ্ভুত বিদ্যুৎ খেলে গেল? অমন ভাবে ছিনিয়েই বা নিল কেন? তার উপর খামের ওই সুগন্ধী! আরও যেন উসকে দিল সোহমের সন্দেহপ্রবণতাকে।
ভাবনায় বাধ সাধলেন বিমলাদেবী। চিন্তিত কণ্ঠে বলে উঠলেন, ‘হ্যাঁরে সোহম আজও দিদির কোনও ফোন বা চিঠিপত্তর কিছু এল না নারে?’
‘মা এব্যাপারে আমাদেরও তো কোনও তৎপরতা নেই বলো। আমরাও যেমন ভাবছি ওদিক থেকে কোনও সাড়া পেলে আমরা এগোব, তেমন ওরাও হয়তো সেটাই ভাবছে। তাছাড়া ওরা দিদিকে যেভাবে হেনস্থা করেছে, তাতে করে ওর আর ওবাড়িতে না যাওয়াই ভালো। ও এখানেই থাক।’ কথা বলতে বলতেই কানে ভেসে এল রবীন্দ্রসংগীত। সম্ভবত বউমণির ঘর থেকেই। ‘দ্যাখ সংসার থাকলে একটু-আধটু অশান্তি হয় বটে। পরে সব ঠিকও হয়ে যায়। তাছাড়া মা-বাবা যেমনই হোক জামাই তো আমাদের খুব ভালো। লজ্জায় হয়তো ফোন করতে পারছে না। চিঠি পাঠালেও তো পাঠাতে পারে। আচ্ছা বউমা তো মাঝেমধ্যেই পোস্ট অফিসে যায়, না? তা ওকে বললেই তো একটু খোঁজ নিতে পারে।’
‘তোমার বউমা তো তার বন্ধুকে চিঠি দিতে যায়। ননদের কথা ভাবার কি তার সময় আছে? এই দ্যাখো না পনেরো দিনের মাথায় দু-বার চিঠি এল বউমণির। সেদিন তো নিজেই নিল। আর আজ… সেই একই গোলাপি খামে সুগন্ধী দেওয়া চিঠি।’ সোহম বেশ গম্ভীর ভাবেই বলল।
‘বউমার এই চিঠির কথা ঋদ্ধি জানে? নিশ্চয়ই জানে।’ আশঙ্কা প্রকাশ করেও নিজেকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলেন তিনি। এমনিতে অরিত্রিকে নিয়ে অভিযোগের জায়গাই ছিল না বিমলাদেবীর। দেখতে যেমন, তেমনই মিষ্টি ব্যবহারও। সকলকে যত্ন করে খাওয়ানো, কেউ কষ্ট পেলে তা লাঘব করার চেষ্টা, একেবারে আপন করে নেওয়ার ক্ষমতা ছিল ওর। তবু মা তো। ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ডরাবে সেটাই তো স্বাভাবিক। এমনিই মেয়েকে নিয়ে যথেষ্ট চিন্তায় আছেন, তার উপর এখন আবার ছেলে। সোহমের কথাগুলো বেশ ভাবিয়ে তুলেছিল বিমলাদেবীকে।
‘ঠিকানাটা দেখলি? কোথা থেকে এল চিঠিটা?’
সোহম কাঁধ ঝাঁকিয়ে জবাব দিল, ‘আমি কী করে জানব, বউমণির পেন ফ্রেন্ড। কাজেই ওটা বউমণিই জানবে।’
‘পেন ফ্রেন্ড’ আবার কী জিনিস রে?’ ভুরু কোঁচকালেন বিমলাদেবী।
‘মা তুমিও না! কী করে বোঝাই বলো তো? মানে পত্রমিত্র।’
‘আচ্ছা আচ্ছা, এবার বুঝতে পেরেছি। ঋদ্ধি যখন ছোটো ছিল, তখন বাচ্চাদের পত্রিকা থেকে ঠিকানা খুঁজে খুঁজে ও তাদের চিঠি লিখে পাঠাত।’
‘মা, তুমি না খুব সহজ সরল। তোমাকে বোকা বানানো খুব সোজা। মানুষ বছরের পর বছর একসঙ্গে স্কুলে পড়ার পর সেইসব বন্ধুদের একটা সময় পর ভুলে যায়, আর এ তো কোন পত্রমিত্র। বউমণির মতো নিয়মিত পত্রমিত্র-র চিঠি আসতে কখনও দেখিনি।’
সোহমের কোথাও বেরোনোর ছিল বোধহয়। বন্ধু ডাকতে হনহন করে বেরিয়ে গেল। বিমলাদেবী খানিকক্ষণ সেখানেই বসে রইলেন। হয়তো কিছু ভাবছিলেন। তারপর গতানুগতিক ভাবে সাংসারিক কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
ঋদ্ধি আবার খিদে সহ্য করতে পারে না। খিদের সময় খাবার না পেলে ওর মেজাজ সপ্তমে চড়ে যায়। তাই বিকাল বিকাল জলখাবার বানাতে শুরু করে দেন বিমলাদেবী। সন্ধ্যাবেলা অফিস থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে খেতে বসে, ‘ওহ্, অরিত্রি তোমার দাদা ফোন করেছিল। তোমাকে ফোনে না পেয়ে আমাকে কল করেছিল। কাল রমামাসি নাকি কে যেন আসবে ওবাড়িতে। তাই আমাদের যাওয়ার জন্য বলছিল। আমার তো সময় হবে না, তুমি ঘুরে এসো।’
‘ঠিক আছে। তুমি গেলে ভালো হতো। কিন্তু সময় না পেলে আর কী করা যাবে। সময় করে আমিই একবার দেখা করে আসব।’
পরদিন ঋদ্ধি অফিস যাবার পর অরিত্রি পরিপাটি হয়ে সেজেগুজে বাপের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল। রমামাসি অরিত্রির ছোটোমাসির বড়োজা। ছোটোমাসি মারা গেলেও ওনার জায়ের সঙ্গে অরিত্রির মায়ের ভীষণ ভালো সম্পর্ক। একেবারে মায়ের পেটের বোনের মতো। অসুস্থ থাকায় অরিত্রির বিয়েতে আসতে পারেননি। তাই আসার সময় আদরের অরিত্রির জন্য একছড়া সোনার মালা আর কানের দুল এনেছেন। সেটা পেয়ে অরিত্রি একেবারে আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠে।
রমামাসির সঙ্গে অনেকদিন পর দেখা হওয়ায় সকলে গল্পে মশগুল হয়ে গেল। গল্পের মাঝে হঠাৎই অরিত্রির মা বিভাদেবীর কিছু মনে পড়ে যাওয়াতে ‘একটু আসছি’ বলে ভিতর ঘরে গেলেন। খানিক পরে একটা খাম হাতে করে নিয়ে এসে মেয়ের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘এই নে অরি, পরশুদিন এটা এসেছিল। বলব বলব করে আর বলা হয়ে ওঠেনি।’ সেই গোলাপিরঙা খাম দেখে একপ্রকার মায়ের হাত থেকে কেড়েই নিল অরিত্রি।
‘কার কার্ড রে?’ অরিত্রির নেওয়ার ভঙ্গিমা দেখে প্রশ্ন করে বসল বউদি অনিন্দিতা।
‘কেন তুমি আমার পত্রমিত্র-র কথা জানো না? নতুন নাকি?’
‘বাবা, তোরা যে কীভাবে না দেখেশুনে একজন অচেনা লোকের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতাস কে জানে। এইভাবে আবার…’ বলতে বলতে হঠাৎই থেমে যায় অনিন্দিতা। মাথায় বিদ্যুৎ খেলে যায় তার। কোনও এক অশনিসংকেতের আভাসে মুহূর্তেই মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে যায় তার।
‘হ্যাঁরে ওবাড়িতে এইরকম কোনও চিঠি যায় না তো?’ শঙ্কা প্রকাশ করে অনিন্দিতা।
‘কেন, না যাওয়ার কী আছে?’
‘তোর এই পত্রমিত্রের কথা ঋদ্ধি জানে?’
‘নাহ্। আর জানলেই বা কী হবে? আমি তো কোনও অন্যায় করছি না।’ সহজ ভাবে উত্তর দেয় অরিত্রি।
‘ভুলে যাস না অরি, তুই এখন বিবাহিত। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ভীষণ স্পর্শকাতর। সামান্য থেকে সামান্য জিনিসও অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। কাজেই এমন কিছু করিস না, যেটাতে ওর বা ওর বাড়ির লোকের মনে সন্দেহের সৃষ্টি করে। ছেলেমানুষি ছাড়, এসব চিঠিপত্র দেওয়া-নেওয়া বন্ধ কর।’ অরিত্রিকে বোঝানোর চেষ্টা করে অনিন্দিতা।
‘বউদি তুমি ভালো করেই জানো আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব ছাড়া আর অন্য কোনও সম্পর্ক নেই। এই সামান্য একটা কারণে আমার আর ঋদ্ধির সম্পর্কে ফাটল ধরবে, ঋদ্ধি আমাকে সন্দেহের চোখে দেখবে এটা আমি কিছুতেই মানতে পারছি না। সরি বউদি, তোমার এই অ্যাডভাইস-টা মানতে পারলাম না।’
গল্প আর কথার মাঝে বিকাল গড়িয়ে সন্ধে নেমেছে। বাড়িতে ফেরারও তাড়া ছিল। তাই আর কথা না বাড়িয়ে মাসির দেওয়া উপহারগুলো সঙ্গে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি ফিরে গেল অরিত্রি।
দেখতে দেখতে আরও দুটো মাস কেটে গেল। শীত গড়িয়ে গরম হাওয়া বইতে শুরু করেছে। এইরকমই এক গ্রীষ্মের দুপুরে অরিত্রি স্নান সেরে ঘরে ঢুকে দেখল ঋদ্ধি মুখটা ভার করে বসে রয়েছে। তার দিকে ফিরেও দেখছে না। অথচ অন্যান্য দিন ভিজে চুলে অরিত্রিকে দেখে ঋদ্ধির যে কী হয় কে জানে। নিজেকে একদম কন্ট্রোল করতে পারে না। অরিত্রি নানা অছিলায় তাকে আকর্ষিত করার চেষ্টা করে। ইচ্ছে করেই বুক থেকে আঁচলটা খসিয়ে দেয় সে। কিন্তু কিছুতেই কোনও লাভ হচ্ছে না দেখে চিন্তিত স্বরে বলে ওঠে, ‘আজ কী হয়েছে তোমার? এত নির্লিপ্ত কেন?’
অরিত্রির গলার আওয়াজ শুনে ঘাড়টা ফিরিয়ে ঋদ্ধি বউয়ের হাতে একটা খাম ধরিয়ে দিল, ‘তোমার চিঠি’। ঋদ্ধির কপালে অসন্তোষের ভাঁজ স্পষ্ট।
‘আমার চিঠি!’ চিঠির দিকে চোখ যেতেই আনন্দে হাসতে হাসতে খামটা খুলতে খুলতে বলল, ‘আরে এটা তো সুরজের চিঠি।’ বলেই চিঠিটা পড়তে শুরু করল।
সিগারেট ধরিয়ে টান দিতে দিতে প্রশ্ন করল, ‘সুরজ কে? এর কথা তো আগে কখনও বলোনি!’
‘আমার পত্রমিত্র। ভীষণ ভালো। ওর গুণের তুলনা হয় না।’ পড়তে পড়তেই জবাব দিল অরিত্রি। তারপর আবার চিঠির মধ্যে ডুবে গেল। পরে আয়নার সামনে বসে গুনগুন করে গাইতে থাকল। ঋদ্ধি আড়চোখে অরিত্রিকে পরখ করছিল। পরপুরুষের প্রতি স্ত্রীর প্রীতি কোন পুরুষই বা মেনে নিতে পারে? রাগ হওয়াটাই স্বাভাবিক। কোনওমতে নিজেকে সংযত করে বেশ দৃঢ় ভাবেই বলল, ‘আজ খাবারদাবার পাওয়া যাবে নাকি?’
‘খাবার তো রেডিই আছে,’ বলে রান্নাঘরে চলে গেল সে। স্ত্রীর এত খুশির কারণ কী? ওই চিঠিতে কী এমন লেখা রয়েছে? কৌতূহল ধরে রাখতে না পেরে অরিত্রি যাওয়া মাত্রই আলমারি থেকে চিঠিটা বার করে পড়তে শুরু করল ঋদ্ধি। হিমাচল প্রদেশের কোনও এক গ্রাম থেকে চিঠিটা এসেছে। প্রতিটি ভাষায় রয়েছে পর্বতীয় সংস্কৃতির ছাপ। অরিত্রিকে সপরিবারে ওখানে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছে সুরজ। নতুন বছরে কার্ড পাঠাবার জন্য অরিত্রিকে ধন্যবাদ জানিয়েছে, সঙ্গে ওর কিছু প্রশ্নের উত্তরও। চিঠির ভাষা আর লেখনী সত্যিই তারিফযোগ্য।
অরিত্রি খাবার দেওয়ার পর একে একে সকলে এসে টেবিলে খেতে বসে গেছে। ঋদ্ধি খেতে বসলেও খাওয়ায় বিন্দুমাত্র মন নেই তার। কেমন যেন উদাস। সোহম শুরু থেকেই দাদাকে খেয়াল করছিল। কারণ এই খাম আসার সাক্ষী সে নিজেও, তাই হয়তো দাদার কষ্টটা ও ফিল করছিল। মনে মনে বউমণিকে দূষতে ছাড়েনি সে।
দাদার মন ঘোরাতে মটর পনিরের বাটিটা এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘দাদা এটা তো খেলেই না। দারুণ টেস্ট, খেয়ে দ্যাখো।’
‘না না দিস না। পেটটা ভারভার লাগছে।’ বলে টেবিল থেকে উঠে চলে গেল ঋদ্ধি।
দাদার অবস্থা দেখে সোহম মনে মনে ঠিক করেই নিয়েছিল এবার কোনও চিঠি এলে সে তার বউমণিকে না দিয়ে দাদা ঋদ্ধির হাতেই তুলে দেবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই রহস্য ভেদ করতেই হবে।
সোহমের পরিকল্পনা অনুযায়ী দিন পনেরো পরে সেই শুভক্ষণ উপস্থিত হল। বন্ধুদের সঙ্গে সিনেমা দেখতে যাবে বলে বেরোচ্ছে, এমন সময় গেটের মুখে ডাকপিয়োন হরিদার সঙ্গে দেখা। দাদার অফিসের একটা চিঠির সাথে সাথে বউমণির সেই গোলাপিরঙা খাম পকেটস্থ করে বেরিয়ে গেল সোহম।
সিনেমা, খাওয়াদাওয়া সেরে সোহম যখন ফিরল তখন ঋদ্ধিও অফিস থেকে বাড়ি ফিরে গেছে। বউমণি রান্নাঘরে আর মা বারান্দায় বসে বসে রেডিয়োতে পুরোনো দিনের গান শুনতে ব্যস্ত। সেই সুযোগে সোজা দাদার কাছে গিয়ে, ‘দাদা, এগুলো নাও। এটা বোধহয় তোমার অফিসের, আর এটা বউমণির। দুপুরে বেরোনোর সময় রাস্তাতেই হরিদার সঙ্গে দেখা হয়ে গিয়েছিল।’
‘ওহ্, ঠিক আছে। টেবিলে রেখে যা। আমি দেখে নেব।’ সোহম যাওয়ার পর অফিসের চিঠিটা নিজের কাছে রাখল। অরিত্রির-টা ওর বালিশের নীচে।
ডিনার সেরে অরিত্রি যখন শুতে এল তখন ঋদ্ধি তার চিঠির কথা তাকে জানাল, সঙ্গে এও জানাল সেটা তার বালিশের নীচে রয়েছে।’
‘আমার চিঠি এই সময়?’ অরিত্রি বেশ আশ্চর্য হয়েই কথাগুলি বলে বসল।
‘ওটা দুপুরেই এসেছে। ছোটোন নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল। এখন দিয়ে গেল।’ ঋদ্ধির মুখের দিকে তাকাল অরিত্রি। ‘সুরজ-এর চিঠি তাই তো?’ তাচ্ছিল্যের সুরেই বলল সে।
‘হ্যাঁ, তুমি কেমন করে জানলে?’ হাসতে হাসতেই প্রশ্ন করল অরি।
‘খাম দেখে। তা, যে আমার বউয়ের মনের এত কাছে, সেই মহাশয়ের সম্পর্কে আমারও তো জানার অধিকার রয়েছে নাকি?’ বিছানায় বসে পড়ল ঋদ্ধি।
‘অবশ্যই রয়েছে। সুরজের সম্পর্কে তোমাকে কী বলব, ঠিক ভাষা খুঁজে পাই না। আমারই সমবয়সি হবে। যেমন সুন্দর তেমনি ব্যক্তিত্ব, আকর্ষকও বটে। ভীষণ ভালো লেখে। মনে হয় পড়তেই থাকি। আর ওর চোখ দুটো…’ বলতে বলতে থেমে যায় অরি। বোধহয় ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। এমনটা মনে হয় ঋদ্ধির। সন্দেহ আর ঈর্ষায় জ্বলে যেতে থাকে সে। তারপর আর মুখ খোলেনি ঋদ্ধি। পাশ ফিরে শুয়ে পড়েছে সে। অরিত্রি একবার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু সাড়া দেয়নি ঋদ্ধি। সেও পাশ ফিরে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।
এই কদিনে ঘর সংসারের কোনও পরিবর্তন না হলেও, ঋদ্ধির আচার-ব্যবহারে বেশ একটা পরিবর্তন এসেছে। দেরি করে বাড়ি ফেরে। অরিত্রি না খেয়ে বসে থাকলেও ‘বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি’ বলে হাত-পা ধুয়ে সোজা বিছানায় চলে যায়।
বিমলাদেবী আর সোহমও ঋদ্ধির এই আকস্মিক পরিবর্তনে চিন্তান্বিত হয়ে উঠেছিল। চোখের সামনে ছেলেটা সিগারেটের পর সিগারেট খেয়ে চলেছে। বাড়িতে কারওর সঙ্গে ঠিক করে কথা পর্যন্ত বলছে না। চিন্তা হওয়াটাই স্বাভাবিক।
একদিন সন্ধ্যাবেলা কোনও কারণে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরেছে ঋদ্ধি। ফেরা থেকেই ঘর থেকে এক পা বেরোয়নি। চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে সিগারেটে টান দিয়েই চলেছে। একটা শেষ হলে আরেকটা। সামনে টিভি চালিয়ে বসেছে, কিন্তু একবারের জন্যও সেদিকে তাকিয়ে দেখছে না। যেন অন্য কোনও জগতে রয়েছে।
চোখের সামনে এসব আর দেখতে পারছিল না অরিত্রি। রাগে হাত থেকে সিগারেট কেড়ে নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিল সে, ‘কী হয়েছে তোমার? আমাকে খোলসা করে বলোতো। আমাকে দেখলে তুমি মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছ কেন? বেশ কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করছি। আমি কি এতটাই অবহেলার পাত্রী? নাকি আমাকে আর পছন্দ হচ্ছে না তোমার?’
টুঁ-শব্দটি পর্যন্ত করল না ঋদ্ধি। তাই দেখে রাগে গা জ্বালা করে উঠল অরিত্রির। কিন্তু তাতেও স্বামীর কোনওরম তাপোত্তাপ নেই দেখে একটু নরম হয়েই জিজ্ঞাসা করল, ‘কী এত ভাবো তুমি? কারণটা আমাকে বলা যায় না? আগে তো এত সিগারেট খেতে না। কী এমন হল বলো না?’ চোখ ছলছল করে উঠল অরিত্রির।
‘তুমি আগেও যেমন সুন্দর ছিলে, এখনও তেমনি সুন্দর আছ। বরং আমিই তোমার যোগ্য নই। সুরজের মতো আমি সুন্দরও নই, অত সুন্দর কথাও বলতে পারি না, আর আকর্ষকও নই।’ কথাগুলো কানে গিয়ে লাগল অরিত্রির।
‘এসব কী বলছ তুমি?’
‘ঠিকই বলছি। তোমাকে আমি আর বেশিদিন ধরে রাখব না। যাতে খুব তাড়াতাড়ি পাকাপাকি ভাবে সুরজের কাছে যেতে পারো, সেই ব্যবস্থাই করছি।’ ঠান্ডা মেজাজে জবাব দিল ঋদ্ধি।
‘তুমি কী পাগল হলে? এসব কী আবোল-তাবোল বকছ তুমি?’ বলেই হাউহাউ করে কেঁদে উঠল অরিত্রি। সে ভালোমতোই বুঝে গিয়েছিল ঋদ্ধির মনে সন্দেহ বাসা বেঁধেছে। সহজে এটা যাওয়ারও নয়।
‘তুমি যেটা মুখ ফুটে বলতে পারোনি, আমি সেই সত্যিটা-ই বলছি। প্লিজ আমাকে ভালোবাসার নাটকটা এবার বন্ধ করো।’ কঠোরভাবেই ঋদ্ধি কথাগুলো বলে গেল।
‘এমন করে কেন বলছ। সুরজ শুধুই আমার পত্রমিত্র। আমি তোমাকে ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসি না। শুধু শুধু সন্দেহ করছ।’ দু-গাল দিয়ে জল বয়ে নেমে এল অরিত্রির।
‘তুমি যতই সাফাই দাও না কেন, আমি জানি তোমাদের সম্পর্কটা কী। স্ত্রীকে পরপুরুষে প্রেমপত্র পাঠাচ্ছে, এটা কোন স্বামী মেনে নেবে।’ একই ভঙ্গিমায় বলে যাচ্ছিল ঋদ্ধি।
‘তুমি পড়ে দ্যাখো, এগুলো প্রেমপত্র নয়।’ দৌড়ে আলমারি থেকে চিঠিগুলো নিয়ে এসে স্বামীর হাতে ধরিয়ে দিল অরিত্রি।
কিন্তু ঋদ্ধির সেই এক গোঁ। অরিত্রির কোনও কথাই সে শুনবে না। ‘ওগুলো নিজের ভবিষ্যতের জন্য রেখে দাও।’ বলেই চিঠিগুলো অরিত্রির মুখের উপর ছুড়ে মারল।
‘তুমি জানো না ঋদ্ধি, আমাদের সম্পর্ক এই কাগজের চিঠিপত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তোমাকে কী করে বোঝাব।’
‘বোঝানোর আর আছেটা কী? কী বোঝাবে আমাকে? ধরা পড়ে গেছ অরি। এত বোকা ভেব না আমাকে।’ রাগে বিছানা থেকে বালিশটা নিয়ে সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ল ঋদ্ধি।
কাঁদতে কাঁদতে অরিত্রি আওড়ে যেতে থাকল, ‘তুমি ভুল বুঝছ। ফোটো ছাড়া আমি তাকে কোনওদিন দেখিনি পর্যন্ত, বন্ধুত্ব ছাড়া কোনও সম্পর্ক নেই আমাদের। প্লিজ ট্রাস্ট মি।’ অরিত্রির পৌনঃপুনিক কাতর স্বীকারোক্তি ঋদ্ধির কান পর্যন্ত পৌঁছাল কিনা কে জানে। অনেক রাত পর্যন্ত ওই ভাবেই বসে রইল অরিত্রি। ভোরের দিকে গা এলিয়ে দিল বিছানায়।
পরদিন সাততাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙে যায় ঋদ্ধির। অরিত্রি তখনও অবচেতন ভাবে ঘুমিয়ে রয়েছে। প্রায় সাতটা নাগাদ বাড়ির ল্যান্ড ফোনের আওয়াজে ঘুম ভাঙে তার। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে তড়াক করে লাফিয়ে উঠেই কোনওরকমে হাত-পা মুখ ধুয়েই ছোটে রান্নাঘরের দিকে। ব্রেকফাস্ট রেডি করে আনতে আনতেই বেরিয়ে যায় ঋদ্ধি। প্লেট হাতে দাঁড়িয়ে থাকে অরিত্রি। ছেলেকে বেরিয়ে যেতে দেখে, ‘কী হল বউমা?’ প্রশ্ন করেন বিমলাদেবী।
‘কিছু না মা।’ লোকানোর চেষ্টা করে অরিত্রি।
‘বাবু না খেয়েই চলে গেল?’
‘তাড়া ছিল তাই…’
‘এত কীসের তাড়া, যে না খেয়ে চলে যেতে হল। বেশ কয়েকদিন ধরেই লক্ষ্য করছি তোমাদের দুজনের কিছু একটা হয়েছে। যাই হোক ঝামেলা মিটিয়ে নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। ভেবে দেখো’ বলে অন্যত্র চলে গেলেন বিমলাদেবী।
সেইদিন ঋদ্ধি বাড়ি ফিরলও বেশ রাত করে। সকলে অপেক্ষা করছিল তার জন্য।
ফ্রেশ হয়ে যখন খাবার টেবিলে এল, তখন বিমলাদেবী ছেলেকে পাশে বসিয়ে একপ্রকার চেপে ধরলেন, ‘হ্যাঁরে বাবু আগে তো অফিস থেকে ফিরতে এত দেরি করতিস না। কদিন ধরে কী হচ্ছে, রোজই দেরি করছিস, ঠিক করে খাচ্ছিস না।’
‘মা, অফিসে ভীষণ কাজের চাপ। তাই দেরি হচ্ছে।’
‘কেন জানি না, আমার মনে হচ্ছে তুই ভালো নেই।’ ছেলের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন বিমলাদেবী।
‘না-না মা। সেরকম কিছু নয়।’ হাসার চেষ্টা করল ঋদ্ধি।
‘জানিস বাবু তুই তো তাড়াহুড়োতে না খেয়ে চলে গেলি। তারপর থেকে মেয়েটা সারাটা দিন কিচ্ছুটি মুখে দিল না।’
‘পতিব্রতা নারীদের মতো?’ কথার মাঝেই ঝাঁপিয়ে পড়ে তীর্যক উক্তি করল সোহম। ছোটোছেলের রসিকতার জন্য বিমলাদেবী তাকে বকাও দিলেন। ওদিকে অরিত্রি লক্ষ্য করল শাশুড়ি বলার পর থেকেই ঋদ্ধি আড়চোখে তাকেই দেখে যাচ্ছে। ভালো করে খাচ্ছে না দেখে এবার শাশুড়িই ছেলেকে খাওয়াতে উদ্যোগী হলেন। হাতে খানিকটা ভাতের দলা তুলে ছেলের মুখে দিতে দিতে বললেন ‘তোর মনে আছে বাবু, ছোটোবেলায় তুই একটা গল্প শুনতে খুব ভালোবাসতিস। বামুন আর পাঁঠার গল্প। সেই যে বলি দেবে বলে বামুন হাট থেকে একটা স্বাস্থ্যবান পাঁঠা কিনে ফিরছিল। ফেরার পথে একদল দুষ্টু লোক বামুনকে বোকা বানিয়ে পাঁঠা নিয়ে কেটে খাবে বলে তাকে বলল, ‘এমা পুরুতমশাই আপনি একটু কুকুর ঘাড়ে করে কোথায় চললেন?’ বামুন তো একপ্রকার তাদের গালমন্দ করে ভাগিয়ে দিলেন। ‘অন্ধ মুখপোড়ার দল কিছুই কি তোদের চোখে পড়ে না?’
ঋদ্ধি ছেলেমানুষের মতো গল্প শুনতে শুনতে ভাত মুখে পুরতে থাকে। বিমলাদেবী গল্পের জাল বুনতে থাকেন। তারপর আরেকদল ছেলে একই উদ্দেশ্যে বলে, ‘ও পুরুতমশাই এই গাধাটাকে ঘাড়ে নিয়ে কোথায় চললেন?’ এই শুনে পুরোহিত তাদের এই মারে তো সেই মারে। কিন্তু তৃতীয়বার একই উদ্দেশ্যে একদল চাষী যখন বলে ওঠে ‘ও ঠাকুরমশাই ব্রাহ্মণ হয়ে আপনি শেষে কিনা একটা মরা বাছুর ঘাড়ে নিয়ে চললেন’। এবার পুরুতমশাই তাদের কথায় বিশ্বাস করে ওখানেই পাঁঠাটাকে নামিয়ে দিয়ে বাড়ির পথ ধরলেন। এই গল্পের নীতিবাক্যটা মনে আছে বাবু? সত্যতা যাচাই করে তবেই কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছানো উচিত। চল উঠে পড় খাওয়া শেষ তোর।’
ঋদ্ধি যেন ঘোর ভেঙে উঠে পড়ল। পরিবেশ হালকা করার জন্য এবার বিমলাদেবী বললেন, ‘তাহলে আজকে একটা সায়গলের গান হয়ে যাক, কী বলিস বাবু।’
অন্যমনস্ক থাকায় হঠাৎই মায়ের কথা শুনে চমকে উঠল ঋদ্ধি। কোনওমতে জবাব দিল, ‘ঠিক আছে।’
ডিনার সেরে ওঠার পর হালকা করে সায়গলের গান চালিয়ে দিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল। শরীরটাও খুব একটা ভালো নেই ঋদ্ধির। হয়তো মানসিক অশান্তিও এর একটা কারণ। ঘরে ঢুকে আলো জ্বালতেই বিছানায় থাকা বিয়ের অ্যালবামগুলো নজরে পড়ল। স্বাভাবিক ভাবেই হাত চলে গেল অ্যালবামগুলোর দিকে। বিছানায় বসে অ্যালবামগুলো হাতে নিয়ে অন্যমনস্ক ভাবে ওলটাতে পালটাতে থাকল সে। বিয়ের সেইসব সুখের মুহূর্তগুলো ভেসে উঠল চোখের সামনে। সারাদিনের ক্লান্তি এক নিমেষে ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গেল।
সমস্ত কাজ গুছিয়ে ঘরে ঢুকে সোজা স্বামীর পাশে গিয়ে বসল অরিত্রি। ‘বিশ্বাস করো আমার মনে কোনও পাপ নেই। হ্যাঁ পত্রমিত্র-র ব্যাপারটা আমি আগাগোড়াই সহজভাবে নিয়ে এসেছি। এটা নিয়ে কোনওদিন গভীর ভাবে ভাবিইনি। এটাই আমার সব থেকে বড়ো ভুল। প্রতিটি ক্ষণে যার মাসুল গুনছি আমি।’
ঋদ্ধি অ্যালবামের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ বসে ছিল। অরিত্রি বলে চলেছিল তার কথা। ‘আজ সারাদিন ভেবেছি, এই সামান্য একটা ভুলের জন্য আমার সংসারটা আজ ভাঙতে বসেছে। আমার ভালোবাসা প্রশ্নচিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই ঠিক করেছি এই কাগজের সম্পর্ক আমি আজই শেষ করব’ বলে সমস্ত চিঠিগুলো টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলে দিল অরিত্রি। তারপর একটু এগিয়ে ঋদ্ধির গা ঘেঁষে বসে তার হাতটা নিজের হাতে নিয়ে বলে, ‘আমি শুধু তোমার… শুধু তোমার। ভুল বুঝে আমাকে দূরে সরিয়ে দিও না প্লিজ। একটা মুহূর্ত তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারব না আমি।’
বারবার মায়ের বলা গল্পটা ঘুরপাক খাচ্ছিল মাথার মধ্যে। অরিত্রির কথা শুনে জমে থাকা সব অভিমান গলে জল হয়ে গেল ঋদ্ধির। চোখ ছলছল করছিল তার। অরিত্রির হাত দুটো নিজের মুঠোয় শক্ত করে চেপে ধরে, ‘তুমি জানো না অরি এই কয়েকদিনে তোমার থেকে বেশি কষ্ট পেয়েছি আমি। প্রতিটি মুহূর্তে ছটফট করেছি। সুরজের প্রতি তোমার অ্যাটেনশন, কথায় কথায় ওর প্রশংসা, মেনে নিতে পারছিলাম না। সুরজের নাম শুনলেও কেমন একটা আশঙ্কা তাড়া করে বেড়াচ্ছিল আমাকে।’ খানিক চুপ করে যায় ঋদ্ধি। অরি-র হাতদুটো আরও শক্ত করে চেপে ধরে বলে, ‘জানো ছোটোন যখন তোমার চিঠিটা লুকিয়ে আমাকে দিতে এল, তখন লজ্জায় ওর চোখের দিকে তাকাতে পর্যন্ত পারিনি। শুধু মনে হয়েছে ওরা তোমাকে কত ছোটো নজরে দেখছে। তোমার চরিত্র নিয়ে… বিশ্বাস করো তোমাকে কেউ ছোটো করুক সে আমি চাইনি।’ মাথা হেঁট করে নেয় ঋদ্ধি।
স্বামীকে কাছে টেনে নেয় অরিত্রি। ‘দুঃস্বপ্ন ভেবে সব ভুলে যাও। দেখো আমরা খুব সুখী হব।’ একে-অপরের খুব অন্তরঙ্গ হয়ে আসে ওরা। দেখতে দেখতে রাত গড়িয়ে ভোর হয়ে যায়। তখনও দুজনের চোখে গভীর ভালোবাসার সঙ্গে সুদূর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন জ্বলজ্বল করছে।