মন-কে বিশ্বাস করানো খুব কঠিন যে, আমাদের সন্তান যে-কোনও সময়েই যৌনহেনস্থার শিকার হতে পারে। আমাদের জানতে হবে সমাজের সব স্তরেই এমন বহু মানুষ রয়েছে যারা বাচ্চাদের উপর যৌনশোষণ করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করে না, এমনকী তারা আপনার বিশেষ পরিচিত, বিশ্বস্ত পাত্রও হতে পারে। এ ব্যাপারে মায়েদের সতর্ক থাকা একান্ত দরকার। বাচ্চার উপর করা যে-কোনও ধরনের হেনস্থাই বাচ্চার মানসিক দ্বন্দ্বের কারণ হয়ে উঠতে পারে যার ফলে বাচ্চার সার্বিক উন্নয়ন বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং সে মনের শান্তি, আনন্দ শৈশবেই হারিয়ে ফেলে।
অনেক সময় বাচ্চাকে সামাজিক স্তরেও হেনস্থা করা হয় যেমন মানসিক ভাবে তাকে নিগ্রহ করা, বাচ্চার কোনও দুর্বলতা নিয়ে সর্বক্ষণ তার প্রতি আঙুল তোলা হলে, বাচ্চা ইমোশনালি ভেঙে পড়তে থাকে। রাস্তাঘাটে, স্কুলে, বিভিন্ন সামাজিক স্থানে কেউ আপনার বাচ্চার দুর্বলতা নিয়ে তাকে নিগ্রহ করছে কিনা সেটা অভিভাবককেই খেয়াল রাখতে হবে। কন্যাসন্তান অথবা পুত্রসন্তান নির্বিশেষে দুজনের উপরেই যৌনশোষণ যে-কেউই চালাতে পারে। এরফলে বাচ্চার মনে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়। অভিভাবকদের সতর্ক হতে হবে যাতে তাদের সন্তানদের উপর এই সুযোগ কেউ না নেয়। বাচ্চার সঙ্গে খোলাখুলি বন্ধুর মতো মিশতে হবে যাতে বড়োদের কাছে বলতে তারা ভয় না পায়।
অপরাধ কতটা গুরুতর, সেটা খেয়াল রাখাটা একান্ত জরুরি। মনে রাখতে হবে সবসময় অচেনা ব্যক্তিরাই নয়, শিশুর সঙ্গে পরিচিত কোনও ব্যক্তিও শিশুকে যৌননিগ্রহ করতে পারে। এই তালিকায় বন্ধু, আত্মীয়স্বজন, শিক্ষক, বাড়ির প্রাইভেট টিউটর, পরিচারক সকলেই থাকতে পারে। এমনকী বাবার হাতে কন্যাসন্তানের যৗন হেনস্তার খবরও বারবার চোখের সামনে উঠে আসে। সুতরাং সতর্ক থাকুন, আপনার সন্তান সম্পূর্ণ নিরাপদ কিনা লক্ষ্য রাখুন।
বেশিরভাগ যৌনশোষণের ঘটনা প্রকাশ্যে আসতে পারে না। অত্যাচারিত শিশু অত্যাচারীর ভয়ে কিছু বলতে পারে না, হয়তো শারীরিক পীড়নের সঙ্গে সঙ্গে মৗখিক ভয়ও দ্যাখানো হয় তাকে। আবার লজ্জা, ভয়, অভিভাবকেরা তার কথা বুঝতে পেরে প্রপ্রার প্রোটেকশন তাকে দিতে পারবে কিনা, মনের এই দ্বিধার ফলে বড়োদের কাছেও তারা এই ধরনের ঘটনার কথা খুলে বলতে পারে না। সুতরাং সন্তান যৌনশোষণের শিকার কিনা, সেটা বেশির ভাগ মা-বাবাই বুঝে উঠতে পারেন না। এর একটাই উপায়, যৌনহেনস্থার সবরকম লক্ষণ আপনার সন্তানের মধ্যে ফুটে উঠছে কিনা সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখতে হবে মা-কে। লক্ষণ অনেককিছুই, অনেক রকমেরই হতে পারে। বাচ্চার ব্যবহারে বিশেষ কোনও পরিবর্তন হয়েছে কিনা সেটা খেয়াল করতে হবে। যৌনশোষণের শিকার হওয়া বাচ্চাদের, এক-একজনের, এক-এক রকম প্রতিক্রিয়া হতে পারে।