বিবাহিত জীবনে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সঠিক বোঝাপড়া, বিশ্বাস এবং পরস্পরকে সম্মান প্রদর্শনের বিষয়টি যদি গুরুত্ব না পায়, তাহলে তাসের বাড়ির মতো ভেঙে পড়তে পারে দাম্পত্য। আর বিবাহিত জীবনে যৌনতা যেহেতু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, তাই এ বিষয়ে অবহেলা যেমন চলবে না, ঠিক তেমনই এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তৃপ্তিলাভ করতে হবে উভয়কে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল এই যে, যৌনতার ক্ষেত্রেও যে পরস্পরকে সম্মান দিতে হয়, এই বিষয়টা মনে রাখেন না অনেকে। এই যেমন রাধিকা একটি কলেজের প্রফেসর। তার বয়স ৩৮ বছর। দুটি সন্তান। স্বামী বিজ্ঞাপন কোম্পানির ম্যানেজার। রাধিকা জানান, তিনি স্বামীকে খুবই ভালোবাসেন কিন্তু বেডরুমে স্বামীর সঙ্গে যৌনসঙ্গমের কথা ভাবলেই তার মনে ভীতির সঞ্চার হয়। নামকরা মনোবিদ ডা. মৃণালিনী রাও এবিষয়ে জানান, তাঁর কাছে আসা কেসের দিকে তাকালেই এটা পরিষ্কার যে, এখন এধরনের সমস্যা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে গেছে।
দাম্পত্যে ফোবিয়া
ডা: মৃণালিনী বিশদে জানান, দাম্পত্য সম্পর্ক নষ্ট করা এধরনের ভীতিকে একধরনের মনের অসুখ বা ফোবিয়া বলা হয়। অর্থাৎ ‘সেক্সোফোবিয়া’। এই অসুখ দেশের বড়ো শহরগুলিতে দ্রুত ছড়াচ্ছে। এর অনেক কারণ আছে। তার মধ্যে মুখ্য হল, অসন্তুষ্টি। প্রাত্যহিক একঘেয়ে জীবনে যৌনতায় নুতনত্ব না পেয়ে এই অসন্তুষ্টি আসে। যৌনতায় অবাস্তব কিছু পাওয়ার ইচ্ছে জন্মায়, বাজারের সহজলভ্য কিছু বই ও ব্লু-ফিল্ম থেকে। এতে বর্ণিত স্ত্রী পুরুষের সম্পর্কের বিষয়ে পড়ে বা দেখে, তা নিজের জীবনের সঙ্গে মিলছে না বুঝে এখনকার মানুষের মনে একপ্রকারের অতৃপ্তির ক্ষোভ জমে। এতে দাম্পত্যের সম্পর্ক নষ্ট হয়।
শরীর নয় মনের প্রয়োজন
পুনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ডা. অনিরুদ্ধ বেংসরকার জানান, যৌনতা নিয়ে মানুষের মনে অনেক ভুল ধারণা আছে। মানুষ ভাবে, সেক্স কেবল এক শারীরিক ক্রিয়া। আসলে এটি একটি মানসিক প্রক্রিয়া যা শরীরকে মাধ্যম করে পরিপূর্ণতা পায়। আমাদের সমাজ পুরুষপ্রধান। তাই যৌনবিষয়েও পুরুষ কেবল নিজের সুখের দিকটিই দেখে। সঙ্গিনী যৌনানন্দ পেল কিনা, সে বিষয়ে অনেকসময়ই খতিয়ে দেখা হয় না। এর ফলেই অনেক সময় স্ত্রীদের মধ্যে সেক্সোফোবিয়া এসে যায়। উদাহরণস্বরূপ রাধিকার কেসটা দেখা যাক। রাধিকার স্বামীর অফিসে তার এক বন্ধু এসে তার সঙ্গে দেখা করে। যাওয়ার আগে সে একটি ব্লু-ফিল্মের সিডি দিয়ে যায়। সেই সিডি-তে যৌনসঙ্গমের অনেক অদ্ভুত ও আজগুবি পদ্ধতি দেখানো হয়েছে। এগুলির মধ্যে বেশকিছু পদ্ধতি নারীর পক্ষে অমানবিকও। রাধিকার স্বামী যৌনজীবনের একঘেয়েমি কাটাবার জন্য, রাধিকাকে সেই অমানবিক ধরনের পদ্ধতিতে সহবাসে বাধ্য করে। রাধিকার অনেক আপত্তি সত্ত্বেও তার স্বামী এতে জোর করায়, রাধিকার কাছে যৌনজীবন দুঃসহ হয়ে ওঠে। ফলে সেক্সোফোবিয়া এসে গিয়ে সঙ্গম ক্রিয়াটাই তার কাছে ভীতিজনক হয়ে যায়। এতে আস্তে আস্তে তার শরীর খারাপ হতে শুরু করে। তার ছোটো বোন তার শারীরিক পরিবর্তন দেখে আশ্চর্য হয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে, আসল কারণটা জানতে পারে। সেই-ই রাধিকার স্বামীকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলে। এতে রাধিকার স্বামীর মনের পরিবর্তিত হয়। এখন তারা ফের একটি সুখী পরিবার।