নীলাঞ্জনার দুটি কন্যা। ৯ বছরের অর্পিতা এবং ৭ বছরের অনন্যা। তারা দু’জনেই যথেষ্ট বুদ্ধিমান এবং বিবেচক। ছোটোমেয়ে অনন্যার প্রতি নীলাঞ্জনা ও তার স্বামী অর্ণব হয়তো একটু বেশিই আশকারা দেখিয়ে ফেলেন মাঝেমধ্যে। কিন্তু তা-সত্ত্বেও অনন্যা কেন যে নিজের দিদি অর্পিতার প্রতি হিংসাকাতর মনোভাব পোষণ করে, তা তাঁদের বোধগম্য হয় না। কেউ যদি অর্পিতার প্রশংসা করে অথবা পরীক্ষা কিংবা নাচের কম্পিটিশনে অর্পিতার প্রথমস্থান অধিকার করা নিয়েই একেক সময় ঘটনার সূত্রপাত ঘটে। অনন্যাকে দেখা যায় মুখ গুঁজে বসে আছে কিংবা অকারণে দিদির সঙ্গে ঝগড়া করছে, দিদির বই লুকিয়ে রাখছে, দিদির যত্ন করে করা কোনও কাজ মুহূর্তে নষ্ট করে ফেলতে অনন্যা দ্বিধাবোধ করে না। খুব খারাপ ব্যবহার করে দিদির সঙ্গে। প্রায়শই দু’জনকে লড়াই করতে দেখা যায়। সবসময় অনন্যা চায়, অর্পিতাকে প্রতিটা ব্যাপারে টেক্বা দিতে। বোনে-বোনে অথবা ভাই-বোনে এই ধরনের শত্রুভাবাপন্ন Jealousy-র মনোভাব কিন্তু কোনও নতুন গজিয়ে ওঠা সামাজিক সমস্যা নয়। বহু পুরোনো সমস্যা যা আমাদের বাবা-মা, ঠাকুরদা-ঠাকুরমারাও বহুযুগ ধরেই সম্মুখীন হয়ে এসেছেন। আর সন্তানদের মধ্যে এই সমস্যা কিন্তু শুধু একটা বয়সের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। সন্তানরা একই বয়সের হোক অথবা দু’জনের বয়সের বিস্তর ফারাক থাকুক, ঘুরেফিরে সমস্যাটা যে-ভাবেই হোক উঠতে বাধ্য।
সন্তানদের মধ্যে একজন যে অপরজনকে টেক্বা দিতে চাইবে এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। কিন্তু এই প্রতিযোগিতা স্বাস্থ্যকর হলে ক্ষতি নেই কারণ এতে বাচ্চাদের লাভই হয়। দাদা বা দিদিকে দেখে ভাই অথবা বোন যদি প্রতিযোগিতায় নামে তাহলে তার নিজের সমস্ত ভালোটুকু সে উজাড় করে দেবার চেষ্টা করে। কিন্তু কখনও বিশেষ ক্ষেত্রে এই মনোভাব বিদ্বেষ এবং Jealousy-র মতো অস্বাস্থ্যকর ইমোশনেরও জন্ম দেয়।
সন্তানদের নিজেদের মধ্যে হিংসামূলক মনোবৃত্তি ঝগড়ার সৃষ্টি করে। এই দ্বন্দ্বের শুরু কিন্তু খুব ছোটো বয়স থেকেই, এমনকী ৪-৫ বছর বয়স থেকেই শুরু হতে পারে, যখনই বাড়িতে নবজাতকের আগমন ঘটে। বেড়ে ওঠার এটা একটা আনুষঙ্গিক ব্যাপার কিন্তু এটাই নর্মাল, যদি না পরিস্থিতির চাপে নেগেটিভ ইমোশনগুলি প্রাধান্য লাভ করতে থাকে। প্রাপ্ত বয়সে এসেও এই মনোবৃত্তি অপরিবর্তিত থেকে যায়।