সাংসারিক অশান্তি কিংবা ঝগড়া-ঝামেলার কারণে স্ত্রী যদি আত্মহত্যা করে নেন, তাহলে স্বামীর জেলজীবন প্রায় নিশ্চিত। সাধারণ ভাবে আইনের এই রীতিনীতিই প্রচলিত আছে। মৃত স্ত্রী-র মা-বাবা সাধারণত এই অভিযোগ করেন যে, তাদের মেয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকেদের অত্যাচারে এবং প্ররোচনাতেই বাধ্য হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হয়েছে মেয়েকে। ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুসারে, যদি কেউ কাউকে আত্মহত্যায় মদত দেয়, সাহায্য করে কিংবা বাধ্য করে, তাহলে সেই ব্যক্তি অপরাধী হিসাবে গণ্য হবে।
স্ত্রী-র আত্মহত্যার কারণে অনেক স্বামী আজ জেলবন্দি। শুধু তাই নয়, জেলবন্দি ব্যক্তির পরিবারের লোকেদেরও হয়তো কাটাতে হচ্ছে বন্দিজীবন। সুইসাইড নোট যদি না-ও পাওয়া যায়, তাহলেও শুধু মৃত মহিলার মা-বাবার অভিযোগের ভিত্তিতেই গ্রেফতার করা হয় মেয়েটির শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে এবং বিচারে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করার কোনও সুযোগ না পেয়ে, কারাদণ্ড ভোগ করতে হয় অভিযুক্তদের।
স্বামী-স্ত্রীর বিবাদে সাধারণত দেখা যায়, দুর্বল মনের মহিলারা আত্মহত্যা করে স্বামীকে বিপদে ফেলে দেন। আর মেয়ে আত্মহত্যা করলে, মেয়ের বাবা-মা সঠিক তথ্য অনুসন্ধান না করেই সাধারণত অভিযোগ দায়ের করেন মৃত মেয়ের স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকেদের বিরুদ্ধে। আর স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া-ঝামেলা হলে স্ত্রী যদি আত্মহত্যা না-ও করেন, তাহলে 'বিষ খেয়ে নেব', 'জলে ঝাঁপ দিয়ে দেব', 'গায়ে আগুন দিয়ে দেব' কিংবা 'রেল লাইনে ঝাঁপ দেব' বলে প্রতি মুহূর্তে ভয় দেখিয়ে মানসিক চাপে রাখেন স্বামীকে। এক্ষেত্রে সরলীকরণ করা উচিত নয়, তবে কিছুসংখ্যক মহিলা ভয় দেখানো কিংবা সত্যিই আত্মহত্যার পথ বেছে নেন এবং অবশেষে ফেঁসে যান স্বামী বেচারা।
আসলে শুধু সাংসারিক ক্ষেত্রেই নয়, এই ভয় দেখানো কিংবা কাউকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার রীতি-রেওয়াজ চলছে সব ক্ষেত্রে। স্কুল, কলেজ, চিকিৎসাক্ষেত্র, রাজনৈতিক ক্ষেত্র, বিনোদনের জগৎ সর্বত্র চলছে দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার।
সত্যিই যদি স্বামী কিংবা শ্বশুর বাড়ির লোকেরা অত্যাচার করেন কোনও কারণে, তাহলে সেই সম্পর্ক ভেঙে বেরিয়ে এসে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা তো নেওয়াই যায়। অবশ্য শুধু দুর্বল ব্যক্তিরাই নয়, হিটলারের মতো নিষ্ঠুর ব্যক্তিও গ্রেফতারী এড়াতে বেছে নিয়েছিলেন আত্মহত্যার পথ। তাহলে হিটলারের আত্মহত্যার জন্য এক্ষেত্রে কি তার দেশের প্রসাশনকে দায়ী করা হবে নাকি দায়ী করা হবে হিটলারের দ্বারা অত্যাচারিত নাগরিকদের? অতএব, কাউকে দোষী সাব্যস্ত করার আগে, সঠিক তদন্ত এবং বিচার-বিশ্লেষণ জরুরি।





