দু’চোখের পাতা এক হল না। চোখ বুঝলেই সন্দীপের কথা মনে আসছিল। একজন শিল্পীকে ওরা মেরে ফেলল। শিল্পীর অপরাধ, প্রিয়াকে সে ভালোবেসেছিল। ওরা কি জানে না, ভালোবাসার বাস হৃদয়ে, মগজে বা টাকা-পয়সায় নয়!
পরের দিন অফিস থেকে ফেরার পথে সন্দীপ দেখা করতে গেল সেই প্রপার্টি ডিলারের দোকানে, যে তাকে এই বাড়িটার খোঁজ দিয়েছিল। সেখানে পৌঁছে ভদ্রলোককে জিজ্ঞাসা করল— আচ্ছা, আপনি ওই বাড়িটার সম্পর্কে ঠিক কী জানেন আমাকে বলুন তো। আমি এত তাড়াতাড়ি হেরে যাওয়ার পাত্র নই।
—দেখুন, শিল্পী সন্দীপবাবুর মৃত্যুর পর ওই বাড়িতে একজন ভাড়াটে দিয়েছিলাম। কিন্তু কি আশ্চর্য, সে একদিন রাস্তায় গাড়ির তলায় চাপা পড়ে মারা গেল! মৃত্যুর আগে সে বলেছিল, ভূত নাকি তাড়া করেছিল তাকে। এর পরে একজন শিক্ষিত ইঞ্জিনিয়ার-কেও পাঠিয়েছিলাম৷ কিন্তু সেও নাকি মারা গেছে। তাঁর মৃত্যুটা আজও রহস্যাবৃত। ওই ইঞ্জিনিয়ার ভদ্রলোক একদিন আমাকে এসে বলেছিলেন, প্রিয়া নামে বাড়িওয়ালার মেয়েটি তাকে ওই বাড়ি ছেড়ে দিতে বলেছিল। কিন্তু উনি ছাড়েননি। উনিও ভূতপ্রেতে বিশ্বাস করতেন না। ওই ভদ্রলোকের দেহটা পাওয়া গিয়েছিল লাজপত নগর সেন্ট্রাল মার্কেটের কাছে। ওর শরীরে কোথাও কোনও আঘাতের চিহ্ন ছিল না। পোস্টমর্টেম রিপোর্টে বলা হয়েছিল হার্ট ফেলিয়োর। এর আসল কারণ আজও অনেকের কাছেই অজ্ঞাত। অনেকের অনুমান, সন্দীপের প্রেতাত্মা এমন ভয় দেখিয়েছে যে, মাঝরাতে পালাতে গিয়ে পড়ে গিয়ে তাঁর হৃদযন্ত্র হঠাৎই বন্ধ হয়ে যায়।
—তাই বলছি আপনি বাড়িটা ছেড়ে দিন। আমারও ইচ্ছে ছিল না আপনাকে ওখানে পাঠানোর। জেদ ধরলেন তাই পাঠিয়েছি।
একথা শুনে অনিমেষ ঠিক করল খুব শীঘ্রই সে বাড়িটা পালটে ফেলবে। প্রপার্টি ডিলারকেও বলল অন্য একটি বাড়ি খুঁজে দিতে। তারপর বেরিয়ে পড়ল সেখান থেকে।
কিন্তু অনিমেষ মনে হয় সিদ্ধান্ত নিতে একটু দেরিই করে ফেলেছিল। ফলে যা হওয়ার তাই হল। সে রাতেই অনিমেষ রহস্যজনক ভাবে কীসের ছায়া দেখে আর্ত চিৎকার করে উঠেছিল। এরপর দেয়ালের ছায়ামূর্তি নেমে আসে তার ঘাড়ে। এক জান্তব চিৎকারে নার্ভাস ব্রেকডাউন হল ওর।