ধপাস করে একটা শব্দ। আর তারপরেই ঘুমটা ভেঙে গেল অনিতা দেবীর। তিনি চোখ মেলে দেখলেন মাটিতে শুয়ে আছেন। ওঠার চেষ্টা করলেন। পারলেন না। কোমরে কেমন যেন একটু ব্যথা লাগছে। এসবের কিছু কারণ খুঁজে পেলেন না তিনি। শুধু স্মরণে এল ঘুমের মধ্যে কে যেন তার চুলের বিনুনি ধরে টানছিল। হয়তো মনের ভ্রম ভেবে পাত্তা দিলেন না অনিতা।
ঘরের দেয়াল ঘড়িটা টিক টিক আওয়াজ করে সময় জানান দিচ্ছে। কিন্তু অন্ধকার ঘরে কিছু ঠাওর করতে পারলেন না তিনি। একটা নাইট ল্যাম্প নিদেনপক্ষে ফুট ল্যাম্প কতবার লাগাতে বলেছেন কর্তাকে কিন্তু ওনার ঘুমের ব্যাঘাত হবে বলে তা আর হয়নি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। তাই বাধ্য হয়ে মেনে নিয়েছেন। কষ্ট করে খাটে ভর করে বিছানায় উঠে বসলেন তিনি। আর তখনই ব্যাপারটা ঘটল।
অজিতবাবু গোঙাতে গোঙাতে ‘সাপ, সাপ... বলে চিৎকার করতে লাগলেন। ব্যাপারটা কী হল! অনিতাও খানিকটা ভয় পেয়ে ঘরের আলোটা জ্বালাতে উঠতে যাবেন, সেই সময় অজিতবাবু এক কাণ্ড করে বসলেন। চিৎকার করে বিছানায় ছটফট করতে করতে অনিতা দেবীর বিনুনি ধরে এমন টান মারলেন যে, তিনি এক্কেবারে স্বামীর বুকের উপর। এমত অবস্থার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না অনিতা দেবী। তাড়াতাড়ি করে চুলের বিনুনি বাঁচিয়ে কোমরের ব্যথা সামলে এই বেআক্কেলে লোকটার জন্য গজগজ করতে করতে ঘরের আলোটা জ্বাললেন।
চোখে আলো পড়তে খানিকটা যেন প্রকৃতিস্থ হলেন অজিতবাবু। মনের ভয়টা এখনও যায়নি। খাটের তলায় ঝাঁকি দিয়ে দেখতে লাগলেন। খাটের নীচে কী খুঁজছ? একেবারে হুংকার ছাড়লেন অনিতা। রাগে ফুঁসছেন তিনি। স্ত্রীর দিকে ভীত দৃষ্টিতে তাকালেন অজিতবাবু, 'না, মানে...' !
—কী? মাঝ রাত্তিরে কী নাটক শুরু করেছ! খুব বাড়াবাড়ি হচ্ছে। আমার চুল ধরে টানছিলে কেন?
—একটা সাপ। কেমন যেন ভয়ে ভয়ে বললেন অজিতবাবু।
—কী? সাপ? শরীরের কলকব্জাগুলো তো গেছে। মাথাটাও খারাপ হল? একেবারে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেছেন গিন্নি। অনিতার এই রাগের একটা প্রচ্ছন্ন কারণ আছে। বেশ কয়েকদিন ধরে রাতে বিছানায় এই লোকটা একেবারে নির্লিপ্ত আচরণ করে। যেন এসব করা অন্যায়! গা জ্বলে যায় একেবারে তাই এই তির্যক মন্তব্য তার।