( এক )
রবিবারের সকালটা আলস্যে মুড়ে কাটিয়ে দেয় সোনালি। এইদিন কাজের লোকদের ছুটি। কলিংবেলের আওয়াজ নেই। কী রান্না হবে? বারান্দার টবগুলো সরিয়ে মুছবে কিনা! এই সব হাজার প্রশ্নের উত্তর দেওয়া নেই। সপ্তাহে এই একটা দিন সোনালি নিজের মতো করে কাটায়। ইচ্ছা হলে রান্না করে, নাহলে হোম ডেলিভারিতে একটা ফোন করে দেয়। আবার এসব ইচ্ছা না করলে ফ্রুট জুস আর ফ্রুট স্যালাড নিয়ে কাটিয়ে দেয়।
কলিংবেলটা দু'বার বাজতে তাই একটু অবাক হল। কে এল এত সকালে? আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে খুব একটা যোগাযোগ নেই, তাদের বিপদে আপদে অবশ্য সোনালি সবসময় পাশে দাঁড়ায় কিন্তু তা বলে হুটহাট করে তারাও কেউ চলে আসবে না।
আসার আগে অন্তত তৃতীয়বার কলিংবেলটা বাজতেই সোনালি বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ল। হাউসকোটটা পরে দরজার দিকে এগিয়ে গেল। দরজা খুলতেই অবাক। ঝুনুদি এত সকালবেলা? আর তার ঠিকানাই বা পেল কার কাছে? সোনালিকে ঠেলে ভিতরে ঢুকে পড়ে ঝুনুদি। তারপর চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ওর সুসজ্জিত ড্রয়িংরুমটা দেখতে দেখতে ধপ করে সোফায় বসে পড়ে।
সোনালির সঙ্গে শেষ দেখা বছর দশেক আগে, আগের থেকে অনেকটা মোটা হয়ে গেছে, তবুও চিনতে অসুবিধা হল না।
—বাপরে কুম্ভকর্ণের মতো ঘুম তোর, কতবার যে কলিংবেল বাজালাম!
সোনালি এখনও বুঝতে পারছে না ঝুনুদির এই সাতসকালে আসার কারণ। আর তাছাড়া মুর্শিদাবাদ থেকে কি সাতসকালে সোজা তার কাছেই উঠল নাকি অন্য কোথাও ছিল? হাজার প্রশ্ন সোনালির মাথায় ভিড় করছে।
—আদা দিয়ে কড়া করে এক কাপ চা বানিয়ে দে তো! উফ মাথাটা ধরে গেছে।
সোনালি এই সব হুকুমে অভ্যস্ত নয়, একা থাকতে থাকতে খুব একটা অতিথি আপ্যায়নেও আগ্রহী নয়। তবু চোখে মুখে জল দিয়ে কিচেনে ঢুকল। কিছুক্ষণ পরে দু'কাপ চা নিয়ে ঝুনুদির মুখোমুখি বসল। তারপর সরাসরি জিজ্ঞেস করেই ফেলল, “তারপর কী মনে করে?”