—এখন দেখলে তোমার কষ্ট হবে। হুইলচেয়ারেই সারা বাড়ি ঘুরে বেড়ায়। যেদিন মন ভালো থাকে ওই অবস্থাতেই আমার জন্যে চা করে, টিফিন বানায়, না হলে গুম মেরে বসে থাকে। প্রথম প্রথম দেখে দুজনেরই খুব কষ্ট হতো। এখন মনে হয় কষ্টটাকেই ও নিজের পোশাক করে নিয়েছে।
শেষের কথাগুলোর সাথে অলোকাদির ফোঁপানির শব্দও সুমনার কানে গেল।
—ঘুড়ির হাজব্যান্ডের চাকরির কিছু হয়নি?
—চেষ্টা করলে হয়ে যেত। কিন্তু এই রকম একজন যার দুটো পা নেই, তার কী করে কাজ হবে বলো? তাছাড়া ওকে নিয়ে বারবার অফিসেই বা কীভাবে যাব? শ্বশুরবাড়ি থেকে টাকা পয়সাও কিছু দেবে বলে মনে হয় না! উলটে ওর নামে নানারকম অপবাদ দিচ্ছে। আমার আর এই সব ভালো লাগে না। তার থেকে মনে হয় এই ভালো আছে। তবে একটা চিন্তা তো সব সময় থাকে, আমার অবর্তমানে ঘুড়ির কী হবে?
—আবার দেখাশোনা করে বিয়ে দিয়ে দাও।
—একটা খোঁড়া মেয়ের কি অতো সহজে বিয়ে হয়? তোমার ব্যাপারটা শুনে তাই তাড়াতাড়ি চলে এলাম। এবার যদি একটু গাইড করে দাও। এখানেও ভয়, যদি সাকসেসফুল হয় তাহলে যে আসবে তারই বা ভবিষ্যৎ কী?
—তোমরা কোনও হাসপাতালে যাচ্ছ না কেন?
—গেছিলাম, কয়েক মাস আগে ঘুড়ি কোনও একটা ম্যাগাজিনে আইভিএফ, আইইউআই, নিয়ে কী সব পড়ছিল। তারপর একদিন ডাক্তারের কাছেও নিয়ে গেলাম। ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়াটাও খুব কঠিন৷ ওকে যে-ডাক্তার দেখছিল তাকেও ব্যাপারটা জানালাম। আসলে সাধারণ ভাবে তো ওর কিছু হবে না। দুটো পায়ের থাইয়ের নীচ থেকে বাদ হয়ে গেছে। তার উপর অ্যাক্সিডেন্টের সময় একটা ওভারিতেও একটু সমস্যা হয়।
—তাহলে তুমি কিন্তু ভালো ভাবে ডাক্তারের সাথে কথা বলে এগোবে। আমাকেও ডাক্তারের সাথে কথা বলতে হয়েছে, একটা সার্টিফিকেট নিতে হয়েছে।
—সে ঠিক আছে। তুমি আমাকে পুরো প্রসেসটা একবার বলে দাও।
—সে রকম কিছু না। ইনসেমিনেশন কিট অর্ডার দিলাম। ওটা পৌঁছোনোর পর অনলাইনে স্পার্ম অর্ডার দিলাম। এটা একটু দেখেশুনে দিতে হবে। আইইউআই, রেডি স্ট্র স্পার্ম— এই হোম ইনসেমিনেশনের জন্যে খুব এফেক্টিভ। আইসিআই-এর দু’গুন বা আইইউআই মোটো টেন স্ট্র স্পার্মের প্রয়োজন হয়। মোটো টেন মানে প্রতি মিলিলিটারে টেন মিলিয়ন মুভিং স্পার্ম সেল। পিরিয়ডসের দিনটা একটু খেয়াল রাখতে হবে।