সম্পর্ক রক্তের বাঁধনে নয়, অনুভূতির বাঁধনে তৈরি হয়! যেখানে অনুভূতির বাঁধন থাকে, সেখানে পরও আপন হয় আর যেখানে অনুভূতির বাঁধন থাকে না, সেখানে আপনও পর হয়। —রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
সংসারে রক্তের সম্পর্কটাই শেষ কথা নয়। রক্তের সম্পর্কের চেয়েও যদি কোনও সম্পর্ক অবশিষ্ট থাকে এই পৃথিবীতে তাহলে সেটা হল হৃদয়ের সংযোগে গড়ে ওঠা প্রাণের সম্পর্ক। সেটা কেবল গড়ে ওঠে সহানুভূতি এবং একে অন্যের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসার বিনিময়ে।
আহিরের সঙ্গে অমিতার সম্পর্কটাও ঠিক সেইরকম। উভয়ের সঙ্গে রক্তের কোনও সম্পর্ক না থাকলেও আছে অপার স্নেহ ও অকৃত্রিম ভালোবাসার অচ্ছেদ্য বন্ধন। সেটা কেমন করে আর কীভাবে গড়ে উঠেছিল তা আজ আর কারওরই স্পষ্ট মনে নেই। প্রথম সাক্ষাতে অমিতাকে আহির বউদিমণি বলেই সম্বোধন করেছিল। বউদিমণি বলে সম্বন্ধ স্থাপন করার একমাত্র কারণ আহির অমিতার শ্বশুরবাড়ির কোনও আত্মীয় না হোক খুবই পরিচিত জন। সেদিন বউদিমণি বলে সম্বোধিত হওয়ায় অমিতাও খুব খুশি হয়েছিলেন, এক কথায় তিনি আপ্লুত হয়ে গিয়েছিলেন। এমন আন্তরিক ডাক তিনি ইতিপূর্বে আর কখনও শোনেননি।
অথচ চাকরি পেয়ে এই সুদূর দিল্লিতে আসার আগে মনে কত শঙ্কা ও ভয় ছিল। কোনওরকম সম্পর্ক থাকা তো দূরের কথা সামান্য পরিচয়টুকু পর্যন্ত ছিল না। স্বভাবতঃই মানুষগুলো কেমন হবে, না হবে এই ব্যাপারে মনের কোণে ছিল নানান সংশয়। মাত্র এক টুকরো কাগজে লেখা ঠিকানাটাই ছিল আশাভরসা। তারপর পরিচয় হয়ে যাওয়ার অব্যবহিত পরেই সর্বাগ্রে আহিরের মনে যে-ভাবনাটি উদয় হয়েছিল সেটা হল, এরা মানুষ না, মহামানব? মানুষের অন্তরে কি এত স্নেহ ভালোবাসা থাকা সম্ভব?
পারিবারিক অনেক অসুবিধে থাকা সত্ত্বেও আহিরকে তাঁরা নিজেদের কাছেই রেখেছিলেন। মাস দুয়েক পরে অবশ্য দালাল মারফত কাছাকাছি একটি বাসস্থান খুঁজে নিয়ে আহির নিজেই একদিন আলাদা হয়ে গিয়েছিল। আলাদা হওয়ার বিশেষ কারণ তাঁর পরম শ্রদ্ধেয়া বউদিমণি খাওয়ার খরচটা পর্যন্ত নিতে অস্বীকার করতেন। আহিরের বিবেক দংশন হতো।